আমি যে মসজিদে বা আমার বাড়ির পাশের মসজিদে যে ইমামের পিছনে সালাত আদায় করি ,তো আমি জানতে পারলাম সে ইমামের সুদের সাথে সম্পর্ক রয়েছে।তার পিছনে কি নামাজ হবে?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

নামাজ আদায়ের পূর্বে সাতটি আহকাম ঠিক রাখতে হয়।  যার তিনটি হলো শরীর পাক, নামাজের জায়গা পাক এবং পরিহিত কাপড় পাক। কোন একটি নাপাক থাকলো নামাজ হবে না।  যদিও মন একটি অপেক্ষিক ব্যাপার চিন্তা করলেও শরীরর অংশ ধরা যায়। উপরিউক্ত দুটি কারন নামাজে পবিত্রতার পরিপন্থী বলেই প্রতীয়মান সুতরাং বিষয়টি সুস্পট ।       

আপনার ধারণামতে তিনি সুদ খান, একথা বলে তার পেছনে নামাজ তরক করা যাবে না। বিষয়টি শরীয়ত অনুযায়ী প্রশ্নাতীতভাবে প্রমাণিত হলে তার পেছনে সবার নামাজ মাকরুহ হবে। একা সিদ্ধান্ত নেওয়া শরীয়তসম্মত নয়। এমন অনেক গুনাহ আছে, যেগুলো কবিরা হওয়া সত্তে¡ও অপর ভাইয়ের দায়িত্ব গুনাহগুলো ঢেকে রাখা। নিজে দরদের সাথে তার সংশোধনের চেষ্টা করা। অপারগ হলে কেবল নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া। ইমামের ক্ষেত্রেও মুসল্লীদের দৃষ্টিভংঙ্গি এমন থাকা বাঞ্চনীয়। উত্তর দিয়েছেন : আল্লামা মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভী

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সুদখোরদের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করে বলেন-যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দণ্ডায়মান হবে, যেভাবে দণ্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তার বলেছে : ক্রয় বিক্রয়ও তো সুদ নেয়ারই মত। অথচ আল্লাহ তায়ালা ক্রয় বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপারে আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। আল্লাহ তায়ালা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-খায়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে। সূরা বাক্বারা, আয়াত নং-২৭৫-৭৬। মহান আল্লাহ আরো বলেন- হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তার রসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। সূরা বাক্বারা, আয়ত নং-২৭৮-২৭৯।

এ বিষয়ে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে। সাহবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেগুলো কী? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা। (২) যাদু (৩) আল্লাহ তায়ালা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরীয়াত সম্মত ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের মাল গ্রাস করা (৬) রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরল প্রকৃতির সতী মুমিন নারীদের অপবাদ দেয়া। সহীহ বুখারী-৪/১০, হাদী-২৭৬৬।

তিনি আরো ইরশাদ করেন, সুদ ভক্ষণকারী, তার লেখক এবং সাক্ষী সবার উপর অভিসম্পাত করেছেন। সহীহ মুসলিম; হা. নং ১৫৯৮। তিনি আরো ইরশাদ করেনসুদ দাতা ও গ্রহিতা দুজনকেই অভিশাপ দিয়েছেন। তিরমিযীহা. নং ১৩৩৭। হাদীসটি সহীহ। রাসূল (সা.) আরো বলেন, জেনে-শুনে এক দিরহাম সুদ খাওয়া ছত্রিশবার যিনার চেয়েও নিকৃষ্ট। মুসনাদে আহমদহা. নং ২১৯৫৭। উক্ত হাদীসটিকে আল্লাম মুনযিরী, হায়সামী ও শায়খ আলবানীসহ সকলেই সহীহ বলেছেন। রাসূল (সা.) আরো বলেন, সুদের গুনাহের সত্তুর (৭০) টি ধরণ রয়েছে। তার নুন্নতম ধরন হলো, নিজ মায়ের সাথে অপকর্ম করা। সুনানে ইবন মাজা; হা. নং ২২৭৪। উক্ত হাদীসকে আল্লামা মুনযিরী ও শায়খ আলবানী সহীহ বলেছেন।

সুতরাং যে ইমাম সুদ খায় সে হলো ফাসেক অর্থাৎ পাপাচারী, আর ফাসেক এর পিছনে নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমি অর্থাৎ হারামের কাছাকাছি। তাই অন্য কোন মসজিদ থাকলে উক্ত ইমামের পিছনে নামায পড়া পরিহার করা আবশ্যক। হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত কিতাব ফাতাওয়ায়ে শামী’’ তে এসেছে- ফাসেক ব্যক্তির হুকুম বেদআতির ন্যায়, সর্ব অবস্থায় তার ইমামতি মাকরুহে তাহরীমি। যদি এমন কোন অবস্থা হয় যে, ঐ ইমামকে না রাখলো অন্য কোন ইমামতি করারযোগ্য মানুষ খুজে পাওয়া যাবে অথবা তার জুলুমের আশংকা আছে ইত্যাদি জটিল কারণ থাকে, তাহলে প্রয়োজনের তাগিতে, মাকরুহে তাহরীমি হওয়া সত্ত্বেও তার পিছনে নামায পড়লে হয়ে যাবে। সুনানে আবু দাউদ; হা. নং ৫৯৪, সুনানে দারাকুতনি; হা. নং ৬, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা; হা. নং ৭৫৭৩, ফাতাওয়ায়ে শামি- ১/৫৬০,আহসানুল ফাতাওয়া-৩/২০৯, ইমদাদুল ফাতাওয়া-১/৪১১, আল-মাবসূত ১/৪০,৪১, হিদায়া ১/৫৫, হাশায়াতুত তাবতাবি আলা মারাকিল ফালাহ ২/২৯৯, বাদায়িউস সানায়ে১/৩৮৬

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

ইসলামে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে সুদকে হারাম করা হয়েছে। সুদ দেওয়া বা নেওয়া দুটোই গুনাহের কাজ। যেখানে ইসলাম সুদকে সমর্থন করে না, সেখানে সুদ ব‍্যবসায়ী ইমামকে কিভাবে সমর্থন করবে? তাই কোনো সুদ ব‍্যবসায়ী ব‍্যক্তিকে বা সুদের সাথে সম্পর্কিত ব‍্যক্তিকে মসজিদের ইমাম বানানো যাবে না বা তার পিছনে নামাজ পড়া যাবে না। মসজিদের ইমামকে হতে হবে মুমিন আর সুদ ব‍্যবসায়ী কখনো মুমিন হতে পারে না। অতএব, যে মুমিন নয় তাকে মসজিদের ইমাম হিসেবে নিয়োগ করা বা তার পিছনে নামাজ পড়া জায়েজ নয়। যেহেতু সুদ অনৈসলামিক কাজ, সেহেতু সুদ ব‍্যবসায়ী ইমামকে আপনি ইসলাম বিরোধী বলেছেন, এটা যথার্থ। ধন‍্যবাদ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ