Jamiar

Call

ফেরেশতা জগৎ অপার বিস্ময়ে ঘেরা আল্লাহ তাআলার অতি সম্মানিত এক সৃষ্টির নাম। তারা নূর (জ্যোতি) থেকে সৃষ্টি। তাদের প্রকৃত সংখ্যা, পরিমাণ, দৈহিক গঠন, শক্তিমত্তা ও প্রকৃত রহস্য সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। আমরা তাদের সম্পর্কে ততটুকুই জানতে পারি যা তিনি কুরআন ও তাঁর নবীর মাধ্যমে আমাদেরকে জানিয়েছেন।

ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস রাখা আরকানুল ইমান তথা বিশ্বাসের ৬টি স্তম্ভের মধ্যে একটি। এতে অবিশ্বাস থাকলে ইমানদার দাবী করার সুযোগ নেই। [পড়ুন: বিখ্যাত হাদিসে জিবরিল]

 ফেরেশতাদের কতিপয় বৈশিষ্ট্য: 

◈ ফেরেশতা মণ্ডলী মহান আল্লাহর একান্ত বাধ্যগত ও অনুগত সৃষ্টি। বিশ্বচরাচর পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে তিনি তাদের মধ্যে যাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন সে তার দায়িত্ব পালনে সদা তৎপর। তারা কখনও তাঁর সামান্যতম অবাধ্যতা করে না। 

কুরআনে আল্লাহ তাআলা তাদের সম্পর্কে বলেন,

لَّا يَعْصُونَ اللَّـهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ

"তারা (ফেরেশতাগণ) আল্লাহ তাআলা যা আদেশ করেন তা অমান্য করে না এবং তাদেরকে যা করতে আদেশ করা হয় তারা তাই করে।" (সূরা তাহরিম: ৬)

◈ তারা সদাসর্বদা তাঁর গুণগান, তসবিহ, তাহলিল ও ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত। তারা এতে মোটেও ক্লান্তি অনুভব করে না।

- আল্লাহ তাআলা বলেন,يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُونَ

"তারা রাত্রিদিন তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করে এবং ক্লান্ত হয় না।" (সূরা আম্বিয়া: ২০)

- তিনি আরও বলেন,وَالْمَلَائِكَةُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِمَن فِي الْأَرْضِ

"ফেরেশতাগণ তাদের পালনকর্তার প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করে এবং পৃথিবী বাসীদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে।" (সূরা শুআরা: ৫)

- হাকিম বিন হিযাম রা. বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের মাঝে ছিলেন। অকস্মাৎ তিনি বলে উঠলেন,

تَسْمَعُونَ مَا أَسْمَعُ ؟

قَالُوْا : مَا نَسْمَعُ مِنْ شَيْءٍ 

قَالَ إِنِّي لأَسْمَعُ أَطِيطَ السَّمَاءِ وَمَا تُلامُ أَنْ تَئِطَّ وَمَا فِيهَا مَوْضِعُ شِبْرٍ إِلا وَعَلَيْهِ مَلَكٌ سَاجِدٌ أَوْ قَائِمٌ

"তোমরা কি তা শুনতে পাচ্ছ, যা আমি শুনতে পাচ্ছি? 

সবাই বলল, ‘আমরা তো কিছু শুনতে পাচ্ছি না।  তিনি বললেন, "আমি তো আকাশের কটকট শব্দ শুনতে পাচ্ছি। আর এ শব্দ করায় তার দোষ নেই। তার মাঝে অর্ধ হাত পরিমাণ এমন জায়গা নেই, যাতে কোন ফেরেশতা সিজদা অথবা কিয়াম অবস্থায় নেই।" [ত্বাবারানীর কাবীর ৩১২২, সিলসিলা সহীহাহ ৮৫২]

◈ ফেরেশতা পুরুষ ও নারী শ্রেণীতে বিভক্ত নন।

আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের নারী ও পুরুষ শ্রেণীতে বিভক্তিকে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন,

جَعَلُوا الْمَلَائِكَةَ الَّذِينَ هُمْ عِبَادُ الرَّحْمَـٰنِ إِنَاثًا ۚ أَشَهِدُوا خَلْقَهُمْ ۚ سَتُكْتَبُ شَهَادَتُهُمْ وَيُسْأَلُونَ

"তারা (কাফেররা) নারী স্থির করে ফেরেশতাগণকে, যারা আল্লাহর বান্দা। তারা কি তাদের সৃষ্টি প্রত্যক্ষ করেছে?" (সূরা যুখরুফ: ১৯)

- তিনি আরও বলেন,

أَمْ خَلَقْنَا الْمَلَائِكَةَ إِنَاثًا وَهُمْ شَاهِدُونَ

"না কি আমি তাদের উপস্থিতিতে ফেরেশতাগণকে নারী রূপে সৃষ্টি করেছি?" (সূরা সাফফাত: ১০৫)

◈ তারা শাহওয়াত তথা কাম ও কু প্রবৃত্তি থেকে মুক্ত। তাই মানব ও দানবের মত তাদের বিয়ে-শাদী করার প্রয়োজন হয় না। স্বভাবতই তাদের স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও সংসার-পরিবার নেই। তারা বংশ বিস্তার করে না। তাদের পানাহারের প্রয়োজন নেই। তারা পেশাব-পায়খানা. ঘুম ও সকল মানবীয় চাহিদা থেকে মুক্ত।

তাফসিরে রাজিতে বলা হয়েছে,

" اتفقوا على أن الملائكة لا يأكلون ولا يشربون ولا ينكحون ، يسبحون الليل والنهار لا يفترون " انتهى .

"আলমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, ফেরেশতা মণ্ডলী পানাহার করে না, বিয়ে-শাদী করে না। দিবানিশি তারা আল্লাহর তসবিহ তথা গুণগান করে। এতে তারা ক্লান্তি অনুভব করে না। আসা করি বুঝেছেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ