বিদ্যা বলতে কুরআন, হাদিস সহ সকল প্রকার সুশিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চাকে বুঝানো হয়েছে।
ইসলামে জ্ঞান অর্জনকে সর্বাবস্থায় উৎসাহিত করা হয়েছে। জ্ঞান অর্জনকে ইবাদত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে ইসলামী বিধানে।
“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে, এবং যাদের (অতিন্দ্রীয়) জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ্ তাদের (উপযুক্ত) মর্যাদায় উন্নীত করবেন। তোমরা যা কর আল্লাহ্ সে সম্বন্ধে সম্যক অবগত। (সূরা মুজাদালা-১১)”
“পড়ো, তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন; সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পড়ো এবং তোমার প্রভু সুন্দরতম, যিনি কলমের (ব্যবহার) শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানতো না। (সূরা আলাক-১/২)” এখানে শিক্ষার আহবান যেমন জানানো হয়েছে তেমনি আল্লাহর সৃষ্টিকৌশল নিয়েও ভাবতে বলা হয়েছে।
ইসলামের স্বর্ণযুগে মসজিদে কুরআন, হাদীস ও ফেকাহর ওপর আলোচনার পাশাপাশি রসায়ণ, পদার্থবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, ভেষজ বিজ্ঞান এবং জ্যোতি বিজ্ঞানের উপরও আলোচনা হতো। ইসলামী বিধান অনুযায়ী আমাদের জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্য হওয়া উচিত ইহলৌকিক কল্যাণের পাশাপাশি পরলৌকিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অর্জিত জ্ঞানকে মানুষসহ আল্লাহর সকল সৃষ্টির কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। সকল প্রকার অকল্যাণ ও অশান্তির কাজে যাতে অর্জিত জ্ঞান ব্যবহৃত না হয়, সে দিকে আমাদের লক্ষ্য একান্ত প্রয়োজন।
ইলম বা জ্ঞান অর্জন করা ফরয। দ্বীন হোক দুনিয়া, ইলম ব্যাতীত মানুষ কিছুই লাভ করতে পারে না। তাই নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন : ‘‘জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরয।’’ কুরআন মাজিদে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন : ‘‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানী লোকেরাই আল্লাহকে ভয় করে।’’ (৩৫:২৮) পবিত্র কুরআনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে : ‘‘আর যে ব্যক্তি তার প্রভূর সামনে উপস্থিত হতে ভয় পায়, তার জন্য দু’টি বেহেশত।’’ (৫৫:৪৬) যেন খোদাভীতিই বেহেশতের চাবী। আর এ খোদাভীতি ইলম বা জ্ঞানের মাধ্যমেই সৃষ্টি হয়ে থাকে। কিন্তু ধর্মে যে, জ্ঞান অর্জনকে ফরয বলা হয়েছে, এর দ্বারা পার্থিব সমস্ত ইলমকে বুঝায় না। কেননা পৃথিবীতে নানাপ্রকার বিদ্যা রয়েছে। এ সমস্ত জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মানুষের পক্ষে যেমন সম্ভব নয়, তেমনি তার জন্য ফরযও নয়। যে জ্ঞান অর্জন করা সবার জন্য ফরয বলা হয়েছে, তা হলো শরীয়ত- বিশেষ করে ফরয ও ওয়াজিবসমূহের জ্ঞান লাভ করা, এর সাথে সাথে শরীয়ত বুঝার জন্য যা কিছু শিক্ষা করা প্রয়োজন, তা স্বাভাবিকভাবেই আবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। যেমন মনোবিজ্ঞান, অংক, ভূগোল, রাজনীতি, অর্থনীতি, আইন ব্যবসা ইত্যাদি। কেননা এ সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা করা ব্যতীত মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও ধর্মীয় জীবন পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়না। এছাড়া অতিরিক্ত জ্ঞান অর্জন করা ভাল, তবে ফরয নয়। যে জ্ঞান অর্জন মানুষের জন্য ক্ষতিকর ওঅলাভজনক, আল্লাহ্ স্বয়ং এর অনিষ্টতা বর্ণনা করেছেন। নবী করীম (সা.) এর ধরণের ইলম থেকে আশ্রয় চেয়েছেন। আল্লাহ পাক বলেন : ‘‘তারা এমন কিছু শিক্ষালাভ করে যা তাদের জন্য ক্ষতিকর এবং যা উপকারী নয়।’’ (২: ১০২) নবী করীম (সা.) বলেছেন : ‘‘হে আল্লাহ! আমি ঐ জ্ঞান অর্জন থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি যা উপকারী নয়।’’ সুতরাং এ ধরণের জ্ঞান অর্জন করা থেকে প্রত্যেকের দূরে থাকা উচিত।