"আইন নয় জনসচেতনতাই পারে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে করতে" - এর বিপক্ষে একটি বিতর্ক লিখে দেবেন কি? 

আপনাকে এই সংক্রান্ত আরো কিছু আর্টিকেল পড়া লাগবে।আইনের কার্যকারিতা ও জটিলতা,আইনের ফাঁক-ফোকর,,জনসচেতনতার গুরুত্ব ও ফলাফল ইত্যাদি আরো নানান তথ্য সংগ্রহ করে পয়েন্ট করুন।(আমি কিছু দিচ্ছি)

যেমন ধরুন- আইনের চেয়ে সচেতনতা বেশি জরুরি নতুন এই আইন অনুযায়ী মেয়ে ও ছেলেদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স হবে যথাক্রমে ১৮ ও ২১ বছর। তবে আইনে বিশেষ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটলে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ে ও ২১ বছরের কম বয়সী ছেলের বিয়ের বিধান রাখা হয়েছে। এই বিশেষ বিধান নিয়ে যত তর্ক আর সমালোচনা। এ আইনের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাক্রমে এবং মা-বাবার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ ক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে, উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।

আইনটি পাস হওয়ার আগে দেশের বিভিন্ন নারী, শিশু, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক সংগঠন বিশেষ পরিস্থিতিতে কম বয়সীদের বিয়ের বিধান রাখার বিষয়টির বিরোধিতা করেছিল। তাদের বক্তব্য ছিল আইনে বিশেষ পরিস্থিতিতে কম বয়সী ছেলেমেয়েদের বিয়ের বিধান রাখা হলে তা বাল্যবিবাহকে না কমিয়ে বরং বাড়াবে। তাই এই বিধান বাদ দিতে হবে। ঠিক 

কী ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তা বিশেষ পরিস্থিতি হিসেবে গণ্য হবে, সে ব্যাপারে আইনের একটি বিধিমালার প্রাথমিক খসড়া ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, প্রেমের সম্পর্কের কারণে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে নিজেরা বিয়ে করলে এবং মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হলে বা সন্তানের মা হয়ে গেলে আদালত বিয়ের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারবেন। আবার অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েটির ভরণপোষণের উপযুক্ত নিকটাত্মীয় কেউ না থাকলে সে ক্ষেত্রেও আদালত তাঁর বিশেষ এখতিয়ার প্রয়োগ করতে পারবেন। বিশেষ পরিস্থিতির এই সংজ্ঞা দেখে মনে প্রশ্ন জাগছে, এই আইন কি আদৌ বাল্যবিবাহ রোধ করতে পারবে? মনে হয় না। এখন দেখা যাবে এই বিশেষ পরিস্থিতির উদ্ভব হতে বেশি সময় লাগছে না। সুযোগসন্ধানীরা ঠিকই বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে এবং এর ফলে বাল্যবিবাহের ঘটনা বাড়বে। অতীতের দিকে তাকালে দেখা যায়, এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পর আমাদের দেশে বহু মেয়ের বাল্যবিবাহ হয়েছে। পার্থক্য হলো আগে এ ধরনের বিয়েতে আইনি অনুমোদন ছিল না, এখন হয়েছে। অনেকের আশঙ্কা, এর ফলে শিশু-কিশোরী ধর্ষণের ঘটনা বাড়বে। আর ধর্ষককে শাস্তি দেওয়ার বদলে তার সঙ্গে ধর্ষিতার বিয়ে দিয়ে তাকে পুরস্কৃত করা হবে। এই আইন যে বাল্যবিবাহ রোধ বা বন্ধ করতে পারবে না, তা চোখ বুজেই বলে দেওয়া যায়। বিশেষ পরিস্থিতিতে অল্প বয়সীদের বিয়ের এই বিধান এই আইনের একটি বড় ক্ষতচিহ্ন। আসল কথা হলো, আইন প্রয়োগ করে কিছু হবে না। বাল্যবিবাহ রোধে আগেও আইন ছিল। সে আইন কি বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে পেরেছে? কেউ কি আইনের প্রয়োগ হতে দেখেছে? গত কয়েক বছরে দেশে যে কয়টি বাল্যবিবাহের বন্ধের ঘটনা ঘটেছে, তাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বাল্যবিবাহ সংঘটনকারীদের মুচলেকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বা সতর্ক করা হয়েছে। এর বেশি কিছু নয়। কেউ সাত দিনের জন্যও জেল খাটেনি। নতুন আইনেও আইন ভঙ্গকারীদের জন্য বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু যেখানে আইনের প্রয়োগই নেই, সেখানে আইন করে লাভ কী। আসলে আমাদের সমাজে বাল্যবিবাহকে অপরাধ হিসেবেই মনে করা হয় না। এটি সামাজিকভাবে স্বীকৃত, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। আইন করে বাল্যবিবাহ ঠেকানো যাবে না। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা সৃষ্টি করা। বাল্যবিবাহের কুফল অনেক। কোনো মেয়ের যখন অল্প বয়সে বিয়ে হয়, তখন তার ব্যক্তিগত ক্ষতি হয় অনেক, তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়, তার শরীর গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত না হলেও সে গর্ভধারণ করে। এতে সে নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতায় ভোগে। মা হওয়ার পর সে নিজে ও তার সন্তান আরও সমস্যায় ভোগে। কম বয়সী মায়ের সন্তানেরা প্রয়োজনের তুলনায় কম ওজন নিয়ে জন্মায়। 

দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনার (২০১৬-২০২৫) খসড়া দলিলের তথ্য অনুযায়ী, প্রয়োজনের চেয়ে কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণকারী শিশুর হার এখন ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় এক-চতুর্থাংশ সদ্যোজাত শিশু বড় রকমের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীতে যুক্ত হচ্ছে। আমাদের আনুষ্ঠানিক শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণের হার মাত্র ৩৬ শতাংশ। এর পেছনের অন্যতম কারণ হচ্ছে বাল্যবিবাহ। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) গত বছর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যাতে বলা হয়, মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া প্রায় ৪৬ শতাংশ ছাত্রী দশম শ্রেণি শেষ করার আগেই শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছে। আর এই ঝরে পড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, দারিদ্র্য ও বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহের এসব কুফল সম্পর্কে সবাইকে জানাতে হবে। অল্প বয়সে বিয়ে দিলে সন্তানের ভালো হওয়ার বদলে যে তার ক্ষতি হয়, এটাই সবাইকে বোঝাতে পারলে আমাদের আর কোনো ধরনের আইনের প্রয়োজন হবে না।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

এই পয়েন্ট গুলো থেকে সাজিয়ে নিয়ে তৈরি করতে পারেন আপনার বক্তব্য । 

1 no. point


ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনা, তর্কবিতর্ক ও আপত্তির মুখে গত ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল-২০১৭’ পাস করে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মাধ্যমে এটি আইনে পরিণত হয়েছে।
নতুন এই আইন অনুযায়ী মেয়ে ও ছেলেদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স হবে যথাক্রমে ১৮ ও ২১ বছর। তবে আইনে বিশেষ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটলে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ে ও ২১ বছরের কম বয়সী ছেলের বিয়ের বিধান রাখা হয়েছে। এই বিশেষ বিধান নিয়ে যত তর্ক আর সমালোচনা। এ আইনের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাক্রমে এবং মা-বাবার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ ক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে, উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।’
আইনটি পাস হওয়ার আগে দেশের বিভিন্ন নারী, শিশু, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক সংগঠন বিশেষ পরিস্থিতিতে কম বয়সীদের বিয়ের বিধান রাখার বিষয়টির বিরোধিতা করেছিল। তাদের বক্তব্য ছিল আইনে বিশেষ পরিস্থিতিতে কম বয়সী ছেলেমেয়েদের বিয়ের বিধান রাখা হলে তা বাল্যবিবাহকে না কমিয়ে বরং বাড়াবে। তাই এই বিধান বাদ দিতে হবে।
ঠিক কী ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তা বিশেষ পরিস্থিতি হিসেবে গণ্য হবে, সে ব্যাপারে আইনের একটি বিধিমালার প্রাথমিক খসড়া ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রেমের সম্পর্কের কারণে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে নিজেরা বিয়ে করলে এবং মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হলে বা সন্তানের মা হয়ে গেলে আদালত বিয়ের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারবেন। আবার অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েটির ভরণপোষণের উপযুক্ত নিকটাত্মীয় কেউ না থাকলে সে ক্ষেত্রেও আদালত তাঁর বিশেষ এখতিয়ার প্রয়োগ করতে পারবেন।
বিশেষ পরিস্থিতির এই সংজ্ঞা দেখে মনে প্রশ্ন জাগছে, এই আইন কি আদৌ বাল্যবিবাহ রোধ করতে পারবে? মনে হয় না। এখন দেখা যাবে এই বিশেষ পরিস্থিতির উদ্ভব হতে বেশি সময় লাগছে না। সুযোগসন্ধানীরা ঠিকই বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে এবং এর ফলে বাল্যবিবাহের ঘটনা বাড়বে। অতীতের দিকে তাকালে দেখা যায়, এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পর আমাদের দেশে বহু মেয়ের বাল্যবিবাহ হয়েছে। পার্থক্য হলো আগে এ ধরনের বিয়েতে আইনি অনুমোদন ছিল না, এখন হয়েছে। অনেকের আশঙ্কা, এর ফলে শিশু-কিশোরী ধর্ষণের ঘটনা বাড়বে। আর ধর্ষককে শাস্তি দেওয়ার বদলে তার সঙ্গে ধর্ষিতার বিয়ে দিয়ে তাকে পুরস্কৃত করা হবে।
এই আইন যে বাল্যবিবাহ রোধ বা বন্ধ করতে পারবে না, তা চোখ বুজেই বলে দেওয়া যায়। বিশেষ পরিস্থিতিতে অল্প বয়সীদের বিয়ের এই বিধান এই আইনের একটি বড় ক্ষতচিহ্ন। আসল কথা হলো, আইন প্রয়োগ করে কিছু হবে না। বাল্যবিবাহ রোধে আগেও আইন ছিল। সে আইন কি বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে পেরেছে? কেউ কি আইনের প্রয়োগ হতে দেখেছে? গত কয়েক বছরে দেশে যে কয়টি বাল্যবিবাহের বন্ধের ঘটনা ঘটেছে, তাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বাল্যবিবাহ সংঘটনকারীদের মুচলেকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বা সতর্ক করা হয়েছে। এর বেশি কিছু নয়। কেউ সাত দিনের জন্যও জেল খাটেনি।
নতুন আইনেও আইন ভঙ্গকারীদের জন্য বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু যেখানে আইনের প্রয়োগই নেই, সেখানে আইন করে লাভ কী। আসলে আমাদের সমাজে বাল্যবিবাহকে অপরাধ হিসেবেই মনে করা হয় না। এটি সামাজিকভাবে স্বীকৃত, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। আইন করে বাল্যবিবাহ ঠেকানো যাবে না। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা সৃষ্টি করা।
বাল্যবিবাহের কুফল অনেক। কোনো মেয়ের যখন অল্প বয়সে বিয়ে হয়, তখন তার ব্যক্তিগত ক্ষতি হয় অনেক, তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়, তার শরীর গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত না হলেও সে গর্ভধারণ করে। এতে সে নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতায় ভোগে। মা হওয়ার পর সে নিজে ও তার সন্তান আরও সমস্যায় ভোগে। কম বয়সী মায়ের সন্তানেরা প্রয়োজনের তুলনায় কম ওজন নিয়ে জন্মায়। দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনার (২০১৬-২০২৫) খসড়া দলিলের তথ্য অনুযায়ী, প্রয়োজনের চেয়ে কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণকারী শিশুর হার এখন ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় এক-চতুর্থাংশ সদ্যোজাত শিশু বড় রকমের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীতে যুক্ত হচ্ছে। আমাদের আনুষ্ঠানিক শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণের হার মাত্র ৩৬ শতাংশ। এর পেছনের অন্যতম কারণ হচ্ছে বাল্যবিবাহ। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) গত বছর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যাতে বলা হয়, মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া প্রায় ৪৬ শতাংশ ছাত্রী দশম শ্রেণি শেষ করার আগেই শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছে। আর এই ঝরে পড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, দারিদ্র্য ও বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহের এসব কুফল সম্পর্কে সবাইকে জানাতে হবে। অল্প বয়সে বিয়ে দিলে সন্তানের ভালো হওয়ার বদলে যে তার ক্ষতি হয়, এটাই সবাইকে বোঝাতে পারলে আমাদের আর কোনো ধরনের আইনের প্রয়োজন হবে না।


2 no. Point

উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার কী হওয়া উচিত, তা চিহ্নিত করার লক্ষ্যে গবেষণা করছে কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টার। অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি সামাজিক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত উন্নয়নের ওপরও জোর দিচ্ছে সংস্থাটি। বাংলাদেশের জন্য ভিশন ২০২১ অর্জনে এই গবেষণাভিত্তিক কিছু নিবন্ধ প্রকাশ করছে প্রথমআলো। আজ প্রকাশ করা হলো ঊনবিংশতম নিবন্ধটি।

২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ১৮ বছরের কম বয়সী ১৪ কোটিরও বেশি মেয়ের বিয়ে হবে। এভাবে কম বয়সে বিয়ের কারণে মেয়েদের ওপর এর প্রভাব মারাত্মক হতে পারে এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। বাল্যবিবাহের ফলে মেয়েদের পড়ালেখার মান কমে যেতে পারে। তাদের আয়রোজগার কমে যেতে পারে এবং তারা ব্যাপক হারে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হতে পারে। এ ছাড়া গর্ভকালীন জটিলতা থেকে তারা মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়তে পারে, যা মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার বাড়িয়ে দেবে।

যদিও বাংলাদেশে বিয়ের আইনসম্মত বয়স ১৮ বছর, তারপরও দেশে বাল্যবিবাহের হার বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে দেখায় যে দেশে ২০-৪৯ বছর বয়সী প্রায় তিন-চতুর্থাংশ নারীর বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগেই বিয়ে হয়। এদের মধ্যে অনেকের পরিবারই বরপক্ষকে যৌতুক দেওয়া এড়াতে তাদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়। অল্প বয়সী মেয়েদের ক্ষমতায়ন ও বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতে সর্বোত্তম কৌশলগুলো কী? ‘বাংলাদেশ প্রায়োরিটিজ’ প্রকল্প এই সমস্যাটির এবং আরও অনেক জাতীয় চ্যালেঞ্জের সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করছে। কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টার ও ব্র্যাকের মধ্যকার অংশীদারত্ব চুক্তির এই প্রকল্পটি বিস্তৃত পরিসরে এই অঞ্চলের উন্নয়ন সমস্যাগুলোর সর্বোত্তম সমাধান খুঁজে বের করতে দেশীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বেশ কিছু শীর্ষ অর্থনীতিবিদকে নিযুক্ত করেছে।

ডিউক ইউনিভার্সিটি ও এমআইটির আবদুল লতিফ জামিল পভার্টি অ্যাকশন ল্যাবের অর্থনীতিবিদদের করা নতুন গবেষণায় বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ রোধ করার বিভিন্ন কৌশল অনুসন্ধান করে দেখা হয়েছে। এতে দেখা গেছে যে আর্থিক অনুদান প্রদান বিবাহ বিলম্বিতকরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর। বাল্যবিবাহ দরিদ্র পরিবারগুলোতে বেশি প্রভাব ফেলে। বিশ্বব্যাপী ২০ শতাংশ অতিদরিদ্র মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার সম্ভাবনা ধনী ২০ শতাংশের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে থাকা একটি দেশ। এ দেশের ১০-১৯ বছর বয়সী দেড় কোটিরও বেশি মেয়ে বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে রয়েছে।

বাংলাদেশের পরিবারগুলো প্রায়ই বাল্যবিবাহকে একটি জরুরি আর্থিক প্রয়োজন হিসেবে দেখে থাকে। এটা হয়তো বাল্যবিবাহ ও যৌতুক নিষিদ্ধ করা আইনগুলোর কোনো কার্যকারিতা বাংলাদেশে কেন নেই তা ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করবে। একইভাবে কমিউনিটি গ্রুপগুলো দ্বারা পরিচালিত কর্মসূচিগুলো বাংলাদেশে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। কমিউনিটি গ্রুপগুলো কিশোরীদের দৈনন্দিন জীবনের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান করে যাচ্ছে। কাজেই বলা যায়, নারীর ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে গৃহীত কর্মসূচিগুলোতে ব্যয়িত প্রতি টাকা সম্ভবত এক টাকারও কম উপকার করবে।

ডিউক ইউনিভার্সিটি ও এমআইটির আবদুল লতিফ জামিল পভার্টি অ্যাকশন ল্যাবের অর্থনীতিবিদেরা বাংলাদেশের কাছ থেকে পাওয়া অন্য প্রস্তাবগুলো দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে ও আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে পরীক্ষা করে দেখেছেন। সবচেয়ে আশাপ্রদ হলো বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে সেভ দ্য চিলড্রেন দ্বারা পরিচালিত একটি কর্মসূচি। ওই কর্মসূচিতে কিশোরী মেয়েদের বিয়ে বিলম্বিত করার জন্য মা-বাবাদের উৎসাহিত করতে একটি শর্তযুক্ত উপবৃত্তি চালু করে।

ওই কর্মসূচির আওতায় ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১৫-১৭ বছর বয়সী অবিবাহিত মেয়েদের পিতা-মাতাকে রান্নার তেল দেওয়া হয়। প্রতি চার মাসে অংশগ্রহণকারীরা চার লিটার করে তেল পায়। শর্ত ছিল এই সময়ের মধ্যে তাঁরা তাঁদের কিশোরী মেয়েদের বিয়ে দেবেন না। এতে এক বছরের রান্নার তেল সরবরাহে প্রতিটি মেয়ের পেছনে খরচ হয় ১ হাজার ২৫০ টাকা। দেরি করে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য পরিবারগুলো যে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ত, এই তেল সরবরাহের মাধ্যমে তা কিছুটা পুষিয়ে দেওয়া হয়।

এভাবে আর্থিক প্রণোদনা বাল্যবিবাহ কমানোর ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। যেসব পরিবারে তেল সরবরাহ করা হয়েছিল, সেসব পরিবারের মেয়েদের ১৬ বছরের আগে বিয়ের সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গিয়েছিল এবং তাদের স্কুলে টিকে থাকার সম্ভাবনা ২২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল। এ রকম শর্তাধীন হস্তান্তর কর্মসূচির পেছনে ব্যয়িত প্রতি টাকা প্রায় চার টাকার সামাজিক কল্যাণ সাধন করে। তবে বাল্যবিবাহই বাংলাদেশের একমাত্র সমস্যা নয়। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আহসান জামানের করা একটি নতুন গবেষণায় বাংলাদেশের আরও দুটি গভীর সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে শিক্ষায় অভিগম্যতা ও পরিবার পরিকল্পনা।

মেয়েদের শিক্ষায় প্রবেশ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বেশি শিক্ষা মানেই তাদের নিজস্ব কর্মজীবনে অধিক উৎপাদনশীলতা ও উপার্জন। এটি পরবর্তী সময়ে তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। মানসম্মত শিক্ষা একজন মাকে স্বাস্থ্যসচেতন করে তোলে। গবেষণায় দেখা যায় যে এটি তার সন্তানদের উত্তম পুষ্টি পেতে সাহায্য করে। অপুষ্টির কারণে শিশুদের নানা রোগ হয় এবং মৃত্যুহার বাড়িয়ে দেয়। মেয়েদের আরও বেশি শিক্ষিত করতে ব্যয় করা প্রতি টাকায় তিন টাকার সামাজিক কল্যাণ সাধন করে।

দ্বিতীয় বিষয়টি হলো পরিবার পরিকল্পনা, যা দুই সন্তানের জন্মদানের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধানকে বাড়ানোর মাধ্যমে মা ও শিশু উভয়ের জীবন রক্ষা করতে পারে। এটি মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় স্কুলে থাকতে দেওয়ার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এক বছরের পরিবার পরিকল্পনা সেবায়, যা গর্ভধারণকে বিলম্বিত করে, মাত্র ৬৫৫ টাকা খরচ হয়। যা একটি মেয়ের জীবনে প্রায় অতিরিক্ত অর্ধেক বছরের শিক্ষাজীবন সংযোজন করতে পারে। যখন স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুবিধাগুলো একত্র করলে দেখা যায়, পরিবার পরিকল্পনায় করা ছোট ছোট বিনিয়োগ ব্যয় করা প্রতি টাকায় তিন টাকার সুবিধা প্রদান করে।

কিছু কৌশলী নীতি মেয়েদের বিয়ে বিলম্বিত ও জেন্ডার সমতার প্রচারে সাহায্য করতে পারে। বাংলাদেশের জন্য সর্বোচ্চ কল্যাণ সাধন করতে আপনি কোন খাতে সম্পদের ব্যবহার করতে চাইবেন? আমরা আপনার কাছ থেকে শুনতে চাই এখানে-। ব্যয় করা প্রতি টাকায় কীভাবে সর্বোচ্চ কল্যাণ সাধন করা যায়, তা নিয়ে আমরা আলোচনা চালিয়ে যেতে চাই। 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ