আমার পরিবার একটি মধ্যবিত্য পরিবার। তাই পরিবারে সবসময় কিছু না কিছুর অভাব অনটন লেগেই থাকে। আমরা দু ভাই এক বোন। বাবা একজন শিক্ষকতা করেন । পরিবারে বাবার ইনকাম বা বেতন ছাড়া আর কোন ইনকাম সোর্স নাই। মা গৃহিনী। আমরা তিন ভাই বোন পড়াশুনা করি। আগামী সপ্তাহে আমার ছোট বোনের জন্মদিন। ওর নাম মুন্নি। ও আমাদের সকলের আদরের । আমরা দু ভাই ওকে খুব ভালবাসি। আদর যত্ম করি। ওর এমনিতেই বড় কোন চাওয়া থাকেনা কারন আমরা দু ভাই যখন যা পারি তাকে গিফট দেই। কিন্তু গত বছর থেকে দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে যায়। একটা সময় পর সরকারী সিদ্ধান্তে এবং স্কুল কতৃপক্ষের সিদ্ধান্তে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়ে যায়। কিন্তু আমার বোনের না ছিল কম্পিউটার ল্যাপটপ না ছিল মোবাইল ফোন। সে ক্লাস করতে পারেনা। তাই সে আবদার করেছে তাকে একটি ল্যাপটপ কিনে দিতে হবে এই জন্ম দিনে। কিন্তু বাবার যে ইনকাম তাতে এত টাকা দিয়া ল্যাপটপ কিনে দেওয়ার সাক্ষমতা নাই। এর উপর কোভিড-১৯ এর কারনে সময় মত বেতনও পাননা। অন্যদিকে ছোট বোনের আবদার রক্ষা। তাই আমরা দুই ভাই পরিকল্পনা করলাম এবার জন্মদিন খুব বেশি বড় ও জমকালো করা হবেনা। অল্পসাজে শুধুমাত্র পরিবারের সদস্য নিয়া একটি কেক দিয়ে জন্ম দিন পালন করব। আমি টিউশনি করে আমার উচ্চ শিক্ষার জন্য কিছু টাকা জমিয়েছিলাম। তাই দুই ভাইয়া মিলে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে বড় অনুষ্ঠান খাওয়া দাওয়া না করে সেই টাকা এবং আমার কাছের কিছু টাকা দিয়া একটা মিডিয়াম দামের মোবাইল ফোন কিনে দেব যাহাতে মুন্নির অনলাইন ক্লাস করতে সুবিধা হয়। বাবাকে আমাদের পরিকল্পনা জানালাম। বাবা শুনে একটি দীর্ঘ শ্বাস শুনে আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন বলে সায় দিলেন। বাবার দীর্ঘ শ্বাসের কারন ছিল বাবা খুবই চিন্তায় ছিলেন ছোট মেয়েকে কি করে বোঝাবেন তাহার অক্ষমতা। তাই আমাদের পরিকল্পনায় তিনি যেন অনেক বওর এক বোঝা সামলে নিতে পারলেন। এভাবে আমরা মুন্নির জন্ম দিনের অপেক্ষা করলাম আর একটা শংকায় ছিলাম যে, সে খুশি হবে কিনা। জন্মদিনের আগের দিন সে তার প্রিয় বান্ধবীকে দাওয়াত দিল। যেহেতু পারিবারিক ভাবে আমরা বাজেট প্রণয়ন করলাম তাই মাত্র একজন অতিথির জন্য আমাদের কোন সমস্যা ছিলনা।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মুন্নি জমকালো কিছু না দেখে কিছুটা মন খারাপ করেছিল। কিন্তু কেক কাটার সময় আমাদের উপহার পেয়ে সে খুব খুশি হল। আনন্দে আমার, ছোট ভাইয়ের গলায় চুমা দিয়া আদর করে দিল। আব্বু আম্মুর প্রতিও সে খুব খুশি যে অনলাইনে সে এখন থেকে প্রতিদিন ক্লাস করতে পারবে। মুহুর্তেই ঘরে ভরে উঠল এক খুশির বন্যা। এভাবেই একটি মধ্যবৃত্ত পরিবারের সকলের ছোট ছোট সহযোগীতায় স্বল্প বাজেটে ছোট বোনের জন্ম দিনে হাসি এনে দিতে পারলাম।