যাকাত আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে
আরোপিত একটি ফরজ বিধান। কারো কাছে কমপক্ষে নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকলেই সেই সম্পদের উপর যাকাত দিতে হবে।
নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হওয়ার দিন থেকে এক বছর পুর্তির পর যাকাত ফরজ হয়। ইসলামী শরীয়তে যাকাতের সম্পদ সঠিকভাবে বন্টন করার উপর অধিক
গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এই কারণে আল্লাহ তায়ালা নিজেই যাকাত ব্যয় বন্টনের খাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।
সুরা তাওবার ৬০ নাম্বার আয়াতে সদাক্বাহ তথা যাকাতের সম্পদ ব্যয় করার খাত উল্লেখ করা হয়েছে।
আটটি খাতের সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
১। ফকীর: ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: সদাক্বাহ ধনী ও সুস্থ সবল লোকের জন্য হালাল নয়। (আবূ দাঊদ: ১৬৩৪, তিরমিযী: ৬৫২)।
দুজন লোক রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে স্বদাকার মাল চাইল। তিনি (সাঃ) তখন তাদের আপাদমস্তক লক্ষ করে বুঝতে পারলেন যে, তারা সুস্থ ও সবল লোক। তিনি (সাঃ) তাদেরকে বললেন: তোমরা চাইলে আমি দিতে পারি। কিন্তু জেনে রেখ! ধনী, শক্তিশালী উপার্জনে সক্ষম ব্যক্তির জন্য এতে কোন অংশ নেই। (আবূ দাঊদ: ১৬৩৩, নাসাঈ: ২৫৯৭)।
ফকীর কারা এ হাদীস দ্বারা সুস্পষ্ট হয়ে গেল। অতএব যারা উপার্জনে অক্ষম বা সর্বহারা তারাই ফকীর বলে গণ্য হবে।
২। মিসকীন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: মিসকীন সেই ব্যক্তি নয় যে এক লোকমা বা দুই লোকমা, একটি খেজুর, দুটি খেজুরের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে চেয়ে বেড়ায়। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! তাহলে মিসকীন কে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: যার কাছে এমন কিছু নেই যার দ্বারা সে অমুখাপেক্ষী হতে পারে, যার এমন অবস্থা প্রকাশ পায় না যা দেখে তাকে সদাক্বাহ দেয়া হবে এবং মানুষের কাছেও চায় না। (সহীহ বুখারী: ১৪৭৯)।
হাদীস দ্বারা বুঝ গেল যারা ফকীর থেকে একটু স্বচ্ছল তারাই মিসকীন।
৩। তহসীলদার বা যাকাত সংগ্রহকারী: এ থেকে উদ্দেশ্য সরকারের সে সব কর্মচারী যারা যাকাত ও সদাক্বাহ আদায় ও বণ্টন এবং হিসাব-নিকাশের কাজে নিয়োজিত থাকে। (পারিশ্রমিক ও বেতন স্বরূপ এদেরকে যাকাতের মাল থেকে দেয়া যাবে।)
৪। যাদের মনকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করা আবশ্যক: প্রথমতঃ সে কাফির যে ইসলামের প্রতি অনুরাগী হয়। এমন ব্যক্তিকে সাহায্য করলে আশা করা যায় যে, সে ইসলাম কবূল করবে।
দ্বিতীয়তঃ সে সকল নওমুসলিম যাকে ইসলামে দৃঢ় থাকার জন্য সাহায্য করা হয়। তৃতীয়তঃ সে লোকও এতে শামিল যাকে সাহায্য করলে আশা করা যায় যে, সে নিজের এলাকার লোকেদেরকে মুসলিমদের ওপর হামলা করা থেকে বিরত রাখবে এবং অনুরূপভাবে সে নিজের নিকটতম মুসলিমদেরকে রক্ষা করবে।
আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: নাবী (সাঃ) এর কাছে কিছু জিনিস প্রেরণ করা হল। এরপর তিনি সেগুলো চারজনের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। আর বললেন: তাদেরকে (এর দ্বারা) ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করছি। ...........হাদীসের শেষ পর্যন্ত। (সহীহ বুখারী: ৪৬৬৭)।
৫। দাসমুক্তি: নাবী (সাঃ) বলেন: তিন প্রকার লোকেদের সাহায্য করা আল্লাহ তায়ালার ওপর আবশ্যক।
# ঐ যোদ্ধা যে আল্লাহ তায়ালার পথে জিহাদ করে।
#ঐ চুক্তিবদ্ধ দাস, যে তার চুক্তির টাকা আদায়ের ইচ্ছা করে। এরূপ চুক্তিবদ্ধ দাস যাকাতের সম্পদের হকদার।
#ঐ ব্যক্তি যে বিবাহ করতে চায় পবিত্র থাকার জন্য। (তিরমিযী: ১৬৫৫, নাসাঈ: ৩১২০, সনদ সহীহ)।
৬। ঋণগ্রস্ত লোক: প্রথমত: ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি দ্বারা উদ্দেশ্য যে ব্যক্তি নিজ পরিবারের খরচাদি এবং জীবনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করতে লোকেদের কাছে ঋণ গ্রহণ করেছে। আর তার কাছে এমন কোন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি নেই যা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে পারে।
দ্বিতীয়ত: এমন যামিনদার ব্যক্তি যে কারো যামিন হয়েছে, অতঃপর যামানতের টাকা তার আসল যিম্মাদার আদায় করতে না পারায় তার ঘাড়ে এসে পড়েছে।
তৃতীয়ত: যার ফসলাদি দুর্যোগ এসে ধ্বংস করে দিয়েছে বা বাণিজ্য ও শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত এবং নিঃস্ব হয়েছে ফলে সে ঋণগ্রস্ত হয়ে গেছে।
৭। আল্লাহর পথ: অর্থাৎ যারা আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় জিহাদ করে তাদের সরঞ্জাম, অস্ত্রশস্ত্র ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় বাবদ এবং মুজাহিদদের ব্যয় বাবদ। অন্য একটি হাদীসে হাজ্জ ও উমরাকে ফী সাবীলিল্লাহ’র অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে।
৮। মুসাফির: যদি কোন মুসাফির বৈধ সফরে সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে- অথচ সে তার এলাকায় প্রচুর সম্পদের অধিকারী সে ব্যক্তি প্রয়োজন মিটানোর জন্য যাকাতের হকদার।
উল্লিখিত সব খাতে অথবা যেকোনো একটি
খাতে যাকাত দিলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে। যখন যেথায় বেশি প্রয়োজন হবে তখন সে খাতেই ব্যয় করা উত্তম।