Call

আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত,
রাসূল (সা) একবার মীম্বরে দাড়িয়ে উচ্চস্বরে বললেন, “হে লোকেরা, যারা কিনা ইসলামকে শুধুমাত্র মুখে গ্রহন করেছ কিন্তু অন্তরে ঈমান আননি এখনো, তোমরা মুসলমানদের অনিষ্ট করা থেকে বিরত থাক, বিরত থাক তাদের ঠাট্টা করা থেকে, আর বিরত থাক তাদের ভুলত্রুটি বলে বেড়ানো থেকে, কারন যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের দোষ অন্বেষণ করে বেড়ায় আল্লাহ্ও তার দোষ অন্বেষণ করবেন এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশ করে দিবেন, এমনকি যদি নিভৃতে কোন এক গৃহকোণেও সংঘটিত হয়ে থাকে পাপটি।” (সহীহ্ আল জামী)

মহান রব্বুল আলামিন মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে তাদের যাবতীয় প্রয়োজনের ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর নিয়ামত সবার জন্য উন্মুক্ত রেখেছেন।  বান্দার শত অপরাধের পরও তার জন্য বরাদ্দ ‘নিয়ামতে আম্মা’ অর্থাৎ ব্যাপক নিয়ামত তিনি বন্ধ করেন না। বান্দার দোষ-ত্রুটি মানুষের মধ্যে প্রকাশ করেন না। বান্দাকে সঠিক রাস্তায় ফিরে আসার সুযোগ দেন। আর মানব জাতিকে কড়া ভাষায় নিষেধ করা হয়েছে তারা যেন মানুষের দোষ-ত্রুটি সমাজে প্রকাশ করে না বেড়ায়। কারণ, মানুষের দোষ-ত্রুটি সমাজে প্রকাশ করার দ্বারা দুনিয়ায় ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি হয়।

আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যেসব লোক চায়, ইমানদার লোকদের মধ্যে নির্লজ্জতা-বেহায়াপনা বিস্তার লাভ করুক, তারা দুনিয়া ও আখেরাতে কঠিন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন, তোমরা জানো না।’ (সূরা নূর :- ১৯)

রাসূল (সা) বলেন, ‘যে বান্দা অন্য বান্দার দোষ-ত্রুটি এ পার্থিব জীবনে গোপন রাখবে, আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন।’

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত,

এক ব্যক্তিকে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ধরে নিয়ে আসা হলো। সে শরাব পান করেছিল। তিনি হুকুম দিলেন, তাকে মারধর কর। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ তাকে হাত দিয়ে, কেউ তাকে জুতা দিয়ে এবং কেউ কাপড় দিয়ে মারধর করল। যখন সে ফিরে গেল, কিছু লোক বলল, আল্লাহ তোমাকে অপদস্থ করেছেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এরূপ বলো না, শয়তানকে তার ওপর বিজয়ী করো না। (বুখারি)

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত, 

একজন লোক রাসূল (সা) এর নিকট আসেলেন এবং বললেন:
“হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি মদিনার থেকে দূরবর্তী এক স্থানে এক মহিলার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছি। সুতরাং, আমাকে আমার প্রাপ্য শাস্তি দেন’। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) তখন বললেন: ‘আল্লাহ্ তো তোমার পাপ গোপন রেখেছিল, তবে কেন তুমি তা গোপন রাখলেনা?’” (সহীহ্ মুসলিম)

উপরক্ত আলচনা থেকে বলা যায় যে,

আল্লাহ সবার পাপ  গোপন রাখেন,কিন্তু যে ব্যাক্তি অন্যের দোষ প্রকাশ করে বেড়ায় আল্লাহ্ও তার দোষ প্রকাশ  করবেন ।যেন সে ব্যাক্তি বুঝতে পারে দোষ প্রকাশ হলে কি হয়  এবং  যেন সে তা থেকে শিক্ষা লাভ করে আর পুনরায়  এই কাজ করা থেকে বিরত থাকে।

 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

প্রিয় নবী (সা:) আমাদের প্রয়োজনীয় সবকিছুই শিক্ষা দিয়েছেন যার একটি হল অন্যের পাপ গোপন রাখা। আমাদের মাঝে কেউ যদি এমন কোন খারাপ কাজ করে বসে যা কিনা আল্লাহ্‌র আদেশ বিরুদ্ধ বা নৈতিক চরিত্র বিরুদ্ধ কিংবা অন্যের জন্য মর্যাদাহানিকর, সেক্ষেত্রে তার উচিৎ তা গোপন রাখা এবং কৃতকর্মের জন্য একান্ত নিভৃতে আল্লাহ্‌র কাছে বারবার ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহ বান্দার কর্মের ফল ঠিকই দেন যারা পাপ নিয়ে দম্ভ করে  বেড়ায় তাদের পাপ গোপন রাখে না তাকে দিয়েই প্রকাশ করায়।  

 প্রিয় নবী (সা:) বলেছেন: “আমার সমগ্র উম্মাহ্‌ নিরাপদ, কেবল তারা ব্যতীত যারা কিনা তাদের পাপ নিয়ে দম্ভ করে বেড়ায়। তাদের কেউ যখন কোন কুকর্ম করে রাতে ঘুমাতে যায় এবং আল্লাহ্ তার পাপ গোপন রাখেন, সকালে ঘুম থেকে উঠার পর সে বলতে থাকে, “এই শোন, আমি না কাল রাতে এই এই (কুকর্ম) করেছি”।  সে যখন ঘুমাতে যাই, আল্লাহ্ তার পাপ গোপন রাখেন, আর সকালে ঘুম থেকে উঠেই আল্লাহ্ যা গোপন রেখেছিলেন তা সে লোকজনের কাছে প্রকাশ করে বেড়ায়”। [সহীহ আল বুখারী]

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Ovictg99

Call

আল্লাহ্ তা’লার এক নাম সাত্তার, অভিধানে লেখা আছে- সাত্তার অর্থ সেই সত্তা যিনি পর্দার আড়ালে আছেন বা যিনি লুকিয়ে আছেন, এছাড়াও আল্লাহ্ তা’লা সম্পর্কে বলা হয় ‘ওয়াআল্লাহু সাত্তারুল উইয়ুব’, অর্থাৎ ‘আল্লাহ্ তা’লাই সেই সত্তা যিনি ভুল-ভ্রান্তি ও দুর্বলতাকে গোপন রাখেন’। আল্লাহ্ তা’লা শুধু মানুষের ভুল-ভ্রান্তি ও দুর্বলতা গোপনই করেন না বরং হাদীসে এসেছে, আল্লাহ্ তা’লা ঢেকে রাখা (দুর্বলতা) ও গোপনীয়তা পছন্দ করেন। মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল এর একটি হাদীসে এসেছে, নবী করীম (সা.) বলেছেন:

إِنَّ اللَّهَ عزّ وجلَّ يُحِبُّ الْحَيَاءَ وَالسَّتْرَ

অর্থাৎ, ‘হযরত ইয়ালা বিন উমাইয়া বর্ণনা করেছেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, অবশ্যই আল্লাহ্ তা’লা লজ্জাবোধ ও গোপনীয়তা পছন্দ করেন।’

(মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃ: ১৬৩)

এছাড়া আল্লাহ্ তা’লা কীভাবে নিজ বান্দার দুর্বলতা ঢেকে রাখেন সে সম্পর্কেও একটি বর্ণিত হয়েছে। সাফওয়া বিন মোহরেয বর্ণনা করেন,

‘এক ব্যক্তি হযরত ইবনে ওমর (রা.)-কে প্রশ্ন করলেন, আপনি রসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর কাছে গোপনীয়তার বিষয়ে কি শুনেছেন? তিনি বললেন: মহানবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ নিজ প্রভু-প্রতিপালকের এতটা নিকটবর্তী হবে যে তিনি তার উপর রহমতের ছায়া ফেলবেন এবং বলবেন তুমি অমুক অমুক কাজ করেছ? সে বলবে, হ্যা আমার প্রভু; আবার বলবেন তুমি অমুক অমুক কাজ করেছ? সে বলবে হ্যা। আল্লাহ্ তা’লা তার স্বীকারোক্তি নিয়ে বলবেন, আমি সেই জগতে তোমার দোষ গোপন করেছিলাম, আজও (কিয়ামত দিবসে) দোষ-ত্রুটি গোপন করছি আর তুমি যে সব মন্দ কাজ করেছিলে সেগুলো ক্ষমা করছি।’

(বুখারী-কিতাবুল আদাব-সাতরুল মু’মিনে আলা নাফসিহী, হাদীস নাম্বার: ৬০৭০)

ইনিই হচ্ছেন সেই প্রিয় খোদা যিনি নিজ বান্দার দুর্বলতা ঢেকে রাখেন ও ক্ষমার আচরণ করে থাকেন। হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) এক স্থানে বলেছেন,

‘অপরাপর ধর্ম আল্লাহ্ তা’লা যে অন্যের দুর্বলতা ঢেকে রাখেন তার ধারণাই উপস্থাপন করতে পারে না, তাদের মাঝে (আল্লাহ্ তা’লা সম্পর্কে) যদি এমন বিশ্বাস থাকত, উদাহরণস্বরূপ যদি খ্রিষ্টানদের মাঝে অন্যের দোষ গোপন রাখার ধারণা থাকত তবে তাদের মাঝে প্রায়শ্চিত্যবাদের ধারণাই সৃষ্টি হত না আর এভাবে আর্যদের মাঝেও পুর্নজন্ম ও জন্মান্তরবাদের বিশ্বাস থাকত না’।

অর্থাৎ, তারা বলে আল্লাহ্ তালা পাপ-পুণ্যের প্রতিদান স্বরূপ বিভিন্ন রূপে মানুষকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন।

‘অতএব একমাত্র ইসলামই আল্লাহ্ তা’লার সাত্তারিয়াতের এ ধারণা উপস্থাপন করে যার প্রকাশ এ পৃথিবীতেও হয় আর পরকালেও।’

কিন্তু, এর এ অর্থ করা ঠিক হবে না যে, আল্লাহ্ তা’লা যেহেতু দোষত্রুটি ঢেকে রাখা পছন্দ করেন এবং বান্দাদের এ বলে ক্ষমা করে দিয়েছেন যে, আমি পৃথিবীতেও তোমাদের দোষ-ত্রুটি গোপন রেখেছিলাম, এবং এখানেও গোপনীয়তা বজায় রেখে ক্ষমা করে দিচ্ছি। এর ফলে যদি আমরা ভ্রুক্ষেপহীন হয়ে যাই, আর ভাল-মন্দের মাঝে কোন ভেদাভেদ না করি, আর ভাবি যে ক্ষমা তো পাবই, পাপ ও মন্দ কাজ করলেই বা কি আসে যায়, যা খুশি কর! একটি হাদীসে এসেছে মু’মিনদের উপর আল্লাহ্ তা’লার এত পর্দা রয়েছে যে, তা গণনা করে শেষ করা যাবে না। আল্লাহ্ তা’লা মু’মিনদের দুর্বলতা গোপন রাখার জন্য তাদেরকে স্বীয় পর্দায় আবৃত করেছেন; একজন মু’মিন যখন কোন পাপকর্ম করে তখন সে গোপনীয়তা এক এক করে প্রকাশ পেতে থাকে, এমনকি সে যদি পাপ অব্যাহত রাখে, লেখা রয়েছে তার উপর আর কোন পর্দা অবশিষ্ট থাকে না। তখন আল্লাহ্ তা’লা ফিরিশ্তাদের বলেন, আমার বান্দাকে ঢেকে দাও তখন তারা তাকে নিজেদের ডানায় পরিবেষ্টন করে। দেখুন! আল্লাহ্ তা’লা কীভাবে অন্যের দোষ গোপন করে থাকেন; কিন্তু মানুষ যদি আল্লাহ্ তা’লার এ ব্যবহার দেখেও স্বীয় অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা না করে তবে আল্লাহ্ তা’লা কি ব্যবহার করেন? এক দীর্ঘ হাদীসে সে অবস্থা বর্ণিত হয়েছে।

‘ফিরিশ্তা বান্দার দোষ গোপন করার পর সে যদি তওবা করে তবে আল্লাহ্ তা’লা তার তওবা গ্রহণ করেন এবং তার অপসারিত পর্দা ফিরিয়ে দেন, বরং প্রত্যেক পর্দার স্থলে তাকে আরো নয়টি পর্দা দান করেন, যাতে তার ক্ষমার উপকরণ তৈরি হতে থাকে এবং তার দুর্বলতা ঢাকা থাকে। কিন্তু বান্দা যদি তওবা না করে এবং পাপে লিপ্ত থাকে তখন ফিরিশ্তা বলবে, আমরা তাকে কীভাবে ঢাকবো? এ ব্যক্তি এতো বাড় বেড়েছে যে আমাদেরকেও কলুষিত করছে। তখন আল্লাহ্ তা’লা বলবেন, একে নি:সঙ্গ ছেড়ে দাও।’

এরপর তার সাথে কী ব্যবহার করা হয়? হাদীসে লেখা রয়েছে,

‘আল্লাহ্ তখন তার সব ভুল-ত্রুটি ও অপরাধ; তা সে অতি সংগোপনে করে থাকলেও তা প্রকাশ করে দেবেন’।

অর্থাৎ, তখন আল্লাহ্ তা’লার দোষ গোপন রাখার পর্দা আর থাকে না। সুতরাং প্রত্যেক মু’মিনকে, আমাদেরকে সর্বদা চেষ্টা করা উচিত, আল্লাহ্ তা’লা যেন আমাদেরকে তওবাকারী বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করেন এবং সব সময় যেন আমরা তাঁর সাত্তারিয়াত হতে অংশ পেতে থাকি।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call
যারা মানুষের পাপ গোপন রাখে, আল্লাহ তাদের পাপ গোপন রাখে । যারা মানুষের পাপ গোপন রাখে না, আল্লাহ তাদের পাপ গোপন রাখে না ।
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ