তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা

কাঁকন বিবির সংসার ভাংলো

সিঁথির সিঁদুর হারালো হরিদাসী

– কবি শামসুর রাহমান

এমন লাখো কাঁকন বিবির সংসার আর হরিদাসীর সিঁথীর সিঁদুরের বিনিময়ে অর্জিত ভুখন্ডের নাম বাংলাদেশ। তিরিশ লাখ শহীদ আর দশ লক্ষ মায়ের অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ যে স্বাধীন সার্বভৌম ভূখন্ডের জন্ম দিয়েছিলো আজ সেই ভূখণ্ড তার ৪৮তম বছর পূর্ণ করলো। বাঙ্গালী জাতির গৌরবান্বিত অধ্যায়, জাতির জনকের আজন্ম লালিত স্বপ্ন “স্বাধীনতা”, আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতা অর্জনের পথে রক্ত ঢেলে দেয়া সেই সকল বীর যোদ্ধাদের জন্যে নিরন্তর বিনম্র শ্রদ্ধা।

বাঙালি জাতি তথা বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজুদ্দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে। তারপর শুরু হয় ইংরেজ শাসনের নামে ঊপনিবেশিক শোষন, লুন্ঠিত হয় মানবতা। ২০০ বছরের অধিক সময় ধরে চলা শোষনের বিরুদ্ধে একসময় প্রতিবাদে ফুসে ওঠে আপামর জনতা। তারই ফলশ্রুতিতে, দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ হয়ে ১৯৪৭ সালে সৃষ্টি হয় পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি রাষ্ট্রের। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে বর্তমান বাংলাদেশ, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান নাম ধারণ করে যুক্ত হয় পাকিস্তানের সাথে। সৌহার্দ্য ও  সমঅধিকারের আশায় যাত্রা শুরু হলেও, বাঙালি জাতি আবার সেই ঊপনিবেশিক শাসনের কবলে পতিত হয়। চাকরি, শিক্ষা এমনকি ভাষার নামে এই জাতির উপড় চালানো হয় অমানবিক অত্যাচার। বাঙালি তখন অনুধাবন করে, তাদের মুক্তির একমাত্র পথ নিজেদের স্বাধীন সার্বভৌম ভূখন্ড। শুরু হয় এক নতুন স্বপ্নের পথে চলা, এক নতুন লক্ষ্য অর্জনের প্রস্তুতি।

পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই এর পূর্ব অংশ পশ্চিম অংশের তুলনায় নানাভাবে বঞ্চিত হতে থাকে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩ বছর ছিল পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস। এই শোষন আর বঞ্চনা থেকেই বাঙালির ভিতরে পুঞ্জিভূত হয় ক্ষোভ, যা পরবর্তীতে রূপ নেয় স্বাধিকার আন্দোলনে।

 

 

১৯৭০-এর নির্বাচন

বাঙালির পুঞ্জিভুত ক্ষোভ অগ্নিস্ফুলিঙ্গে পরিনত হয় ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের পরে। এই নির্বাচনের পরেই বদলে যেতে থাকে এই অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। দলটি পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ টি আসন হতে ১৬৭ টি আসনে জয়লাভ করে এবং ৩১৩ আসনবিশিষ্ট জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, যা আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের অধিকার প্রদান করে। কিন্তু নির্বাচনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো শেখ মুজিবের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিরোধিতা করেন। তিনি প্রস্তাব করেন পাকিস্তানের দুই প্রদেশের জন্যে থাকবে দু’জন প্রধানমন্ত্রী।

নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করার পরেও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সরকার গঠনের পরিবর্তে ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্যে স্থগিত ঘোষনা করে। প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ২রা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে পরিচালিত হয় “অসহযোগ আন্দোলন”। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে, পূর্ব পাকিস্তানে এক ছায়া সরকারের অধীনে পরিচালিত হতে থাকে। এরই মাঝে ২রা মার্চ বাঙালি জাতি পায় তার জাতীয় পতাকা যা উত্তোলন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে। জয় বাংলা ধ্বনিতে প্রকম্পিত তখন সারা বাংলা, বাঙালির চোখে তখন স্বাধীনতার নেশা।

বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এখানে


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে