বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, এদেশের বুক চিরে বয়ে চলেছে বহু নদী। ভাটির দেশ হওয়ায় এসক নদীর জল সারাবছর বঙ্গপসাগরের দিকে প্রবাহমান থাকে। এরফলে নদীতে সামুদ্রিক মাছের বিচরন অনেক বেশি হয়। ফলে নদী থেকে খুব সহজে অনেক অনেক বেশি মাছ ধরা সহজ হয়।
আবার আমাদের দেশ ভাটির দেশ, নিম্নভূমির দেশ হওয়ায় শুধুমাত্র নদী নয়, আছে অসংখ্যা খাল বিল,ঝিল, হৃদ, হাওড়, বাওড়, পুকুর ডোবা ইত্যাদি। এসকল জলাশয়ে নানা ধরনের মাছ বিচরন করে। বিশেষ করে বিল যেখানে কৃষকেরা ধান চাষ করে সেখানে খালে বিনা চাষে প্রচুর জিওল মাছ হয়।
যেহেতু আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ গরীব ও গ্রামে বাস করে, তাদের প্রধান পেশা কৃষি। তাই তারা বিলে বর্ষাকালে ধান চাষের পানি সেচ দিতে প্রচুর মাছ ধরতে পারেন, আবার শীত আসার সময় যখন ধান কাটার সময় আসে তখন খাল বিলের পানি কমে যাওয়ায় প্রচুর মাছ ধরতে পারেন। গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েরা এই মাছ ধরেই আনন্দ খেলা করে। আর এই মাছেই তাদের ভাত খাওয়া হয়। নদীর চরে ছেলেমেয়েরা চিংড়ি, পাসসি ইত্যাদি মাছ ধরতে পারত।
এসকল কারনে গরীব শ্রেণীর মানুষও প্রতিদিন মাছ খেতে পারত।
এটি সকল স্তরে মানুষের এমন এক অভ্যাসে পরিণত হয় যে মাছ ছাড়া তারা ভাত খেতেই পারতনা। সেই অভ্যাস ও মাছের প্রাচুর্যতা থেকে সাংস্কৃতির অংশ হিসাবে নাম জড়িয়েছে "মাছে ভাতে বাঙালি "
বাংলাদেশের মানুষকে মাছে ভাতে বাঙালি বলা হয় কারণঃ আমাদের এই দেশ প্রবন্ধটিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন দিকের বর্ননা দিতে গিয়ে ছোট বড় নানা জাতের মাছের কথা বলা হয়েছে। মাছ আর বাঙালি এ দুটি কথা একের সঙ্গে অন্যটি এমন ভাবে জড়িয়ে আছে যে, মাছ ছাড়া বাঙালি কল্পনা করা যায় না। আমরা বাঙালি। আমাদের প্রধান খাদ্য ভাত, আর সবচেয়ে প্রিয় খাবার হলো মাছ। মাঠভরা সোনালি ধান আর খাল-বিল, পুকুর ও নদী ভরা মাছ এ দেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ দেশের উর্বর মাটিতে উৎপাদিত নানা রকমের ধান থেকে যেমন আমরা ভাতের চাল পেয়ে থাকি, তেমনই খাল-বিল, পুকুর ও নদী থেকে পেয়ে থাকি নানা জাতের, নানা নামের সুস্বাদু মাছ। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য-তালিকায় ভাতের সঙ্গে কোনো না কোনো ধরনের মাছ থাকেই। তাই আমাদের ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ বলা হয়।
বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ । এখানে আছে অসংখ্যা নদ নদী আর এসব নদ নদী বিভিন্ন প্রকার মাছে ভরপুর। মাছগুলো ও খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য এসব পুষ্টির গুরুত্ব অপরিসীম।মাছ আমাদের আমিষের চাহিদা পূরণ করে।মাছ আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা বাঙালি, আমাদের প্রধান খাবার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় ভাত।ভাত এবং মাছ আমরা সহজেই পেয়ে থাকি এবং আমাদের সকল চাহিদা পূরণ হয় । ভাত এবং মাছ খেয়ে আমরা জীবন ধারণ করি এবং এগুলো সহজলভ্য। তাছাড়া প্রাচীন কাল থেকে মানুষ ভাত ও মাছের উপর নির্ভরশীল।ভাত ও মাছ বাঙালির রক্তে মিশে আছে । সুতরাং একথা বলতে পারি যে বাঙালি জাতি "মাছে ভাতে বাঙালি"।
মাছে ভাতে বাঙালি কথাটি প্রকৃত অর্থেই সঠিক, মাছ ও ভাতের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্ক বহুকালের।আদিকাল থেকেই মাছ খেতো বাঙালি। মাছের সঙ্গে ভাতের সম্পর্ক নিবিড় হওয়ার কারণটি হলো বাঙালির মুখ্য খাদ্য ভাত এবং দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় পছন্দের পদ মাছ। আরেকটি প্রধান কারণ হলো বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, ধান ও মাছ দুইই সহজলভ্য। আর খাদ্য উপাদানের সহজলভ্যতা কোনো অঞ্চলের খাদ্যসংস্কৃতির মূল ভিত তৈরি করে। যে অঞ্চলে খাবারের যে উপাদান সহজলভ্য, সে অঞ্চলে সে উপাদানকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে সেই অঞ্চলের প্রধান খাদ্যের পরম্পরা।