হযরত ইব্রাহিম আ কে কেন জাতির পিতা বলা হয়?হযরত আদম আ তো জাতির পিতা হওয়ার কথা ছিল।কেউ বুঝিয়ে দিন


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Mahadi

Call

হযরত আদম (আ.) ও হযরত ইবরাহীম (আ.) প্রসঙ্গে কুরআন-হাদিস ও সম্মানিত মুফাসসিরগণের বক্তব্য নিচে দেয়া হল:

 ১) আদম (আ.):

আদম (আ.) হলেন প্রথম মানুষ এবং মানব জাতির আদি পিতা। মহান আল্লাহ তাঁকে নিজ হাতে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেন এবং তাঁর বাম পাঁজর থেকে তাঁর স্ত্রী প্রথম মানবী মা হাওয়া (আ.) কে সৃষ্টি করেছেন । আল্লাহ তা'আলা বলেন:
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً
“হে মানব মণ্ডলী, তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একজন মানুষ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। ” (সূরা নিসা: ১)
এখানে "একজন মানুষ" বলতে আদম (আ.) কে বোঝানো হয়েছে। 
 

◍ হাদিসে আছে:

কিয়ামত দিবসে যখন সূর্য নিকটবর্তী হবে এবং মানুষ অসহনীয় দুঃখ-দুর্দশায় নিপতিত হবে তখন বিচার-ফয়সালার জন্য সর্ব প্রথম প্রথম মানুষ আদি পিতা আদম আলাইহিস সালাম এর নিকট ছুটে গিয়ে এভাবে আবেদন পেশ করবে:

يَا آدَمُ أَنْتَ أَبُو الْبَشَرِ خَلَقَكَ اللَّهُ بِيَدِهِ وَنَفَخَ فِيكَ مِنْ رُوحِهِ وَأَمَرَ الْمَلاَئِكَةَ فَسَجَدُوا لَكَ اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ أَلاَ تَرَى إِلَى مَا قَدْ بَلَغَنَا
হে আদম! আপনি মানবকুলের পিতা, আল্লাহ স্বহস্তে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার দেহে রুহ ফুঁকে দিয়েছেন। আপনাকে সিজদা করার জন্য ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাঁরা আপনাকে সিজদাও করেছে। অত:এব আপনি রবের নিকট গিয়ে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি দেখছেন না আমরা কি কষ্টে আছি? আপনি দেখছেন না আমরা কষ্টের কোন সীমায় পৌছেছি?(সহীহ মুসলিম )
 

 ২) ইবরাহীম (আ.):

আল্লাহ তাআলা বলেন:
مِّلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ ۚ
“তোমরা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের আদর্শকে (মজবুত ভাবে ধারণ করো)।” (সূরা আল হজ্জ: ৭৮)

আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কে “তোমাদের পিতা” হিসেবে সম্বোধন করেছেন। এর অর্থ কি?
হ্যাঁ, তিনি আরবদের বংশগত পিতৃপুরুষ ছিলেন। অর্থাৎ আরবদের বংশ পরম্পরা ইবরাহীম আলাইহি সালাম পর্যন্ত গিয়ে মিলিত হয়েছে। কিন্তু মর্যাদার দিক দিয়ে তিনি সমগ্র মুসলিম বিশ্বের পিতৃব্যেরে আসনে আসীন। অর্থাৎ তিনি যদিও বংশ পরম্পরায় সকল মুসলিমের পিতা নন কিন্তু সম্মানের দিক দিয়ে সকলের নিকট পিতৃতুল্য।

◍ তাফসিরে কুরতুবীতে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা এসেছে এভাবে:
وإبراهيم هو أبو العرب قاطبة . وقيل : الخطاب لجميع المسلمين ، وإن لم يكن الكل من ولده ؛ لأن حرمة إبراهيم على المسلمين كحرمة الوالد على الولد .
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সমগ্র আরব জাতীর পিতা।
আর কোন কোনো মুফাসসির বলেন: “সকল মুসলিমকে উদ্দেশ্য করেই তাঁকে ‘পিতা’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে যদিও সকল মুসলিম তার সন্তান নয়। এর কারণ হল, মুসলিমদের নিকট ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর মর্যাদা পুত্রের নিকট পিতার মর্যাদা সমতুল্য।” (তাফসীরে কুরতুবী)

◍ তাফসীরে বাগাভীতে বলা হয়েছে:
فإن قيل : فما وجه قوله : ( ملة أبيكم ) وليس كل المسلمين يرجع نسبهم إلى إبراهيم؟ .

قيل : خاطب به العرب وهم كانوا من نسل إبراهيم . وقيل : خاطب به جميع المسلمين ، وإبراهيم أب لهم ، على معنى وجوب احترامه وحفظ حقه كما يجب احترام الأب ، وهو كقوله تعالى : ( وأزواجه أمهاتهم ) ( الأحزاب : 6 ) [ ص: 404 ] ، وقال النبي صلى الله عليه وسلم : ” إنما أنا لكم مثل الوالد [ لوالده ] ”

যদি প্রশ্ন করা হয় যে, এই আয়াতে “তোমাদের পিতা” বলার কারণ কি অথচ সকল মুসলিমের বংশ পরম্পরা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম পর্যন্ত পৌঁছে না?

এর উত্তরে বলা হয়েছে, “তোমাদের পিতা” এ বাক্যটি দ্বারা আল্লাহ তাআলা আরবদেরকে উদ্দেশ্য করেছেন । কারণ তারাই ছিল ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর বংশধর।

আল্লাহ বলেন:
তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মে কায়েম থাক। তিনিই তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন পূর্বেও এবং এই কোরআনেও, যাতে রসূল তোমাদের জন্যে সাক্ষ্যদাতা এবং তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলির জন্যে। সুতরাং তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে শক্তভাবে ধারণ কর। তিনিই তোমাদের মালিক। অতএব তিনি কত উত্তম মালিক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী। (সূরা আল হাজ্জ্ব (الحجّ), আয়াত: ৭৮)

মূলত, হযরত আদম (আ:) মানবজাতির পিতা হলেও তার বংশধরদের অনেকে শিরকি ধর্মে ধর্মাবলম্বি। কিন্তু হযরত ইবরাহিম (আ:) এর বংশধর যারা তারা বর্তমানে আরব্য মুসলিম। এছাড়াও ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আরবী হওয়ার কারণে ইবরাহীম (আঃ) তারও পিতা ছিলেন। আর এ জন্য তিনি সকল উম্মাতে মুহাম্মাদীরও পিতা হলেন।

তাই, হযরত আদম আ প্রথম মানুষ সত্ত্বেও ইব্রাহিম (আ) কে জাতির পিতা বলা হয়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

 

সমগ্র মানবজাতির আদি পিতা হলেন হযরত আদম আলাইহিস সালাম। মানবজাতির বিস্তার তার মাধ্যমেই হয়েছে। পৃথিবীর সমস্ত ধর্ম, বর্ণ ও মতে বিশ্বাসী লোকেরা তার সন্তান।

পবিত্র কোরআনে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে মুসলমান জাতির পিতা বলে আখ্যায়িত করা হয়।

অর্থাৎ আদি পিতা হলেন হযরত আদম আলাইহিস সালাম।

আর মুসলমান জাতির পিতা হলেন হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম।

যেমন এরশাদ হচ্ছে,  তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের দ্বীন, আল্লাহ তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন। [সূরা হজ্ব, ৭৮ আয়াত]

যেহেতু ইসলাম ধর্ম হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এর দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত, তথা দ্বীনে ইব্রাহীমের সাথে ইসলামের পুরোপুরি মিল রয়েছে, তাই, হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে মুসলিম মিল্লাতের পিতা বলে সম্বোধন করা হয়।

(مِلَّةَ أَبِيْكُمْ إِبْرٰهِيْمَ طهُوَ سَمّٰكُمُ الْمُسْلِمِيْنَ)  

এটাই তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্ম। তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছেন ‘মুসলিম’ অর্থাৎ উল্লিখিত নির্দেশাবলী তোমাদের জাতির পিতা ইবরাহীম (আঃ)-এর ধর্মের অন্তর্ভুক্ত, যা সর্বদা বহাল ছিল।

সুতরাং তোমরা তার মিল্লাত তথা ধর্মকে আঁকড়ে ধরে থাক। এখানে ইব্রাহীম (আঃ)-কে পিতা বলার কারণ হল, আরব জাতি ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধর ছিল। সেই হিসেবে ইব্রাহীম (আঃ) হলেন আরববাসীর পিতা আর অনারবরাও তাকে একজন উচ্চ সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে শ্রদ্ধা করত, যেমন পুত্র তার পিতাকে শ্রদ্ধা করে থাকে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ