Call

জামাতে সালাত আদায় করার সময় ইমাম যখন সূরা ফাতেহা শেষ করে তখন মুক্তাদিকেও আমিন বলতে হয়। সূরা ফাতিহার পর ‘আমীন’ বলা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।

নামাযে যেমন ইমাম ও মুনফারিদ তথা একা নামায আদায়কারীর জন্য ‘আমীন’ বলা সুন্নত তেমনি মুক্তাদির জন্যও ইমামের গইরিল মাগদূবি আলাইহিম ওয়ালাদ্বোয়াল্লিন শোনার পর ‘আমীন’ বলা সুন্নত।

তবে ফকীহ ও ইমামগণের ইজমা আছে যে, আমীন মুখে উচ্চারণ করতে হবে। অর্থাৎ তা মনে মনে পড়ার বিষয় নয়; বরং নামাযের অন্যান্য তাসবীহের মতো ‘আমীন’ ও সহীহ-শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে হবে।

তবে তাদের মাঝে এ বিষয়ে সামান্য মতপার্থক্য হয়েছে যে, ‘আমীন’ শব্দটি কি আস্তে উচ্চারণ করা হবে, না জোরে। এটা মূলত ‘তানাওউয়ে সুন্নাহ’ বা সুন্নাহর বিভিন্নতা, যাকে ইখতিলাফে মুবাহও বলা হয় অর্থাৎ এখানে দুটি নিয়মই মোবাহ ও বৈধ এবং যে নিয়মই অনুসরণ করা হোক সুন্নত আদায় হবে।

কিন্তু আফসোসের বিষয় এই যে, অন্য অনেক কিছুর মতো একেও মানুষ জায়েয-নাজায়েয ও সুন্নত-বিদআতের পর্যায়ে নিয়ে গেছে, এমনকি একে কেন্দ্র করে বিবাদ- বিসংবাদেও লিপ্ত হয়েছে।

জামাতের নামাযে জোরে আমীন-আস্তে আমীন সম্পর্কে কয়েকটি কথা মনে রাখা কর্তব্য :

☞ এ বিষয়ে মুজতাহিদ ইমামগণের মাঝে ইখতিলাফ রয়েছে, আর তা জায়েয, না-জায়েযের ইখতিলাফ নয়; বরং উত্তম-অনুত্তম নির্ণয়ের ইখতিলাফ।

ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেন, ‘এটা ইখতিলাফে মুবাহর অন্তর্ভুক্ত, যেখানে কোনো পক্ষেরই নিন্দা করা যায় না। যে কাজটি করছে তারও না, যে করছে না তারও না। এটা নামাযে রাফয়ে ইয়াদাইন করা ও না-করার মতোই বিষয়।’ (যাদুল মাআদ: ১/৭০, মিসর: ১৩৬৯ হি., কুনূত প্রসঙ্গ)।

ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) এর বক্তব্য থেকে দু’টো বিষয় জানা যায়:

১। এ বিষয়ে সবাই একমত যে, আমীন আস্তে ও জোরে দু’ ভাবেই বলা যায়। তবে এক পক্ষের নিকট আস্তে বলা উত্তম, অন্য পক্ষের নিকট জোরে বলা।

২। যদি দলীলের ভিত্তিতে একপক্ষের কাছে একটি বিষয় অগ্রগণ্য মনে হয়, অন্য পক্ষের কাছে অন্যটি তাহলে কারোরই আপত্তি করার অবকাশ থাকে না। তাছাড়া আপত্তি তো সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরক করলে হতে পারে, মুস্তাহাব তরক করলে আপত্তি করা যায় না।

আমীন একটি দুআ। আতা ইবনে রাবাহ বলেন, ‘আমীন হচ্ছে দুআ।’ (সহীহ বুখারী: ১/১০৭)।

লুগাতুল হাদীসের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ মাজমাউল বিহারে (১/২০৫) আছে, আমীন অর্থ, ইয়া আল্লাহ আমার দুআ কবুল করুন, বা এমনই হোক।

অতএব প্রথমেই দেখা উচিত, দুআ কি জোরে করা উত্তম, না আস্তে। যদিও জোরে দুআ করাও জায়েয এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোরেও দুআ করেছেন, তবে দুআর মূল তরীকা হল আস্তে করা।

কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ডাক কাতরভাবে ও গোপনে। তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। (সূরা আ’রাফ : ৫৫)।

হযরত যাকারিয়া (আঃ) সম্পর্কে বলা হয়েছে, যখন তিনি তার প্রতিপালককে ডাকলেন অনুচ্চস্বরে। (সূরা মারইয়াম : ৩)।

আমীন যেহেতু দুআ তাই কুরআন মাজীদের উপরোক্ত নীতি অনুযায়ী তা আস্তে ও অনুচ্চস্বরে বলাই উত্তম।

আল্লামা ইবনুত তুরকুমানি ‘‘আলজাওহারুন নাকী’’ কিতাবে আমীন আস্তে বলা সম্পর্কে ইমাম ইবনে জারীর তবারী (রহঃ) (৩১০ হি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, এই নিয়ম আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তেমনি ইবরাহীম নাখাঈ, শাবী, ইবরাহীম তাইমী (রহঃ) থেকেও বর্ণিত। আর আমীন আস্তে বলা ও জোরে বলার দুটো রেওয়ায়েতই সহীহ এবং উভয় নিয়ম অনুসারেই আলিমগণ আমল করেছেন। তবে অধিকাংশ সাহাবা-তাবেয়ী যেহেতু অনুচ্চস্বরে আমীন বলতেন তাই আমি অনুচ্চস্বরে আমীন বলা পছন্দ করি। (আলজাওহারুন নাকী: ২/৫৮)।

আমীন আস্তে বলা সম্পর্কে কিছু আছার পেশ করছি।

১। হযরত ওমর (রাঃ) বলেন, চারটি বিষয় ইমাম অনুচ্চস্বরে পাঠ করবে : আউযু বিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, আমীন ও আল্লাহুম্মা রাববানা ওয়া লাকাল হামদ। (ইবনে জারীর, কানযুল উম্মাল: ৮/২৭৪; বিনায়াহ: ২/২১৯)।

২। আবু ওয়াইল (রহঃ) বলেন, খলীফায়ে রাশেদ আলী (রাঃ) ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বিসমিল্লাহ উঁচু আওয়াজে পড়তেন না। তেমনি আউযুবিল্লাহ ও আমীনও। (আলমুজামুল কাবীর, হাদীস : ৯৪০৪; মাজমাউয যাওয়াইদ : ২/১০৮)।

৩। পাঁচটি বিষয় অনুচ্চস্বরে পড়া হয় : সুবহানাকাল্লাহুম্মা, আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, আমীন ও আল্লাহুম্মা রাববানা লাকাল হামদ। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক : ২/৮৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা : ৬/৮৬)।

উপরোক্ত বিষয়ে এবং এ জাতীয় অন্যান্য বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি মনে রাখা উচিত, যা হযরত মাওলানা আবদুল মালেক সাহেবের ‘সুন্নাহসম্মত নামায : কিছু মৌলিক কথা’ শীর্ষক প্রবন্ধে উল্লেখিত হয়েছে,

যেসব ক্ষেত্রে একাধিক সুন্নাহ আছে, যেহেতু দু’টোই শরীয়তে স্বীকৃত তাই যে অঞ্চলে যে সুন্নাহ প্রচলিত সেখানে সেটিই চলতে দেওয়া উচিত। প্রচলিত সুন্নাহকে প্রত্যাখ্যান করে তার স্থলে ভিন্ন সুন্নাহ জারি করার প্রচেষ্টা যেমন শরীয়তের নীতি ও মিযাজের পরিপন্থী তেমনি মুসলমানদের ঐক্য ও শৃঙ্খলার পক্ষেও ক্ষতিকর। প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ তো হয় বিদআতের ক্ষেত্রে, সুন্নাহর ক্ষেত্রে নয়।


ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ