শিশুর জন্মদিন বা হ্যাপি বার্থ ডে পালন করা এবং সেই দিনে আত্মীয় বন্ধু জমায়েত হয়ে কোন উৎসব ও অনুষ্ঠান সহ খুশী উদযাপন করা, সেদিনে শিশু বা বুড়োকে বিশেষ দোআ, সালাম বা উপহার পেশ করা, বয়স অনুসারে বছর গুনতি করে মোমবাতি জ্বালিয়ে তা ফুঁ দিয়ে নিভানো অতঃপর কেক কেটে খাওয়া প্রভৃতি বিধর্মীয় প্রথা; মুসলিমদের জন্য তা বৈধ নয়। বৈধ নয় ঐ উপলক্ষ্যে পাওয়া দাওয়াতে অংশগ্রহণ করা। বৈধ নয় সে উপলক্ষ্যে ঐ শিশুকে দু’আ,মুবারকবাদ ও উপহার দেওয়া। যেহেতু ইবাদতের মতই যে কোন ঈদ শরীয়তের দলীল সাপেক্ষ। নিঃসন্দেহে এটি একটি সুন্নত; ইহুদী ও খৃষ্টানদের সুন্নত। ইসলাম ও নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সুন্নত বর্জন করে বিজাতির অবলম্বন করা মুসলমানদের জন্য বড়ই ধিক্কার ও ন্যাক্কারজনক। প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সত্যই বলেছেন, ” অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির সুন্নত অনুসরণ করবে বিঘত-বিঘত এবং হাত-হাত (সম) পরিমাণ। এমনকি তাঁরা যদি গো সাপের (সান্ডার) গর্তে প্রবেশ করে, তাহলে তোমরাও তাদের পিছনে পিছনে যাবে। (এবং তাদের কেউ যদি রাস্তার উপর প্রকাশ্যে সঙ্গম করে, তাহলে তোমরাও তা করবে!) সাহাবাগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি ইহুদী ও নাসারার অনুকরণ করার কথা বলছেন?’ তিনি বললেন,তবে আর কার? ” (বুখারী, মুসলিম হা/ ২৬৬৯, সহীহুল জামে হা/ ৫০৬৭) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি যে জাতির আনুরূপ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই দলভুক্ত।” (সহীহুল জামে হা/ ৬০২৫) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেন, ” সে ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি আমাদেরকে ছেড়ে অন্য কারো সাদৃশ্য অবলম্বন করে। তোমরা ইহুদীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করো না, আর খৃষ্টানদেরও সাদৃশ্য অবলম্বন করো না।” (সিলসিলাহ সহীহাহ হা/ ২১৯৪) হে মুসলিম ভাই ও বোন! শুধু জন্ম দিন পালন করাই নয়… জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে বিশেষ করে আনন্দ ফুর্তি অনুসরণ অনুকরণ এসব ক্ষেত্রে এই হাদীসগুলো মনে রাখবেন। যদি রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দলভুক্ত হতে চান তাহলে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী আনন্দ ফুর্তি বর্জন করুন। শয়তানের ধুঁকায় পড়বেন না, নিশ্চয়ই সে আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু, তাঁর কাজই হল আমাদেরকে জাহান্নামের যাত্রী বানানো আর এজন্য সে সকল খারাপ কাজগুলোকে আমাদের চোখে আকর্ষণীয় করে তুলে। দুনিয়ার সামন্য উপভোগের জন্য পরকালের অনন্ত সুখের জান্নাত হারাবেন না। তাছাড়া জন্মদিনে খুশী ও উৎসব করা নেহাতই বোকামী। জীবন থেকে একটি বছর ঝরে গেল তাঁর জন্য আক্ষেপ ও দুঃখ করা উচিত, খুশী নয়। বৈধ নয় লৌকিকতার সাথে উপহার সামগ্রীর আশা । আশা ভঙ্গ হলে নানান সমালোচনা!!!!!!!!!! তদনুরূপ বৈধ নয় বড় বড় ব্যক্তিত্বের জন্মবার্ষিকী অথবা মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা। প্রথমতঃ আমাদের শরীয়তে তা পালন করার বিধান নেই। ইসলামে কত লক্ষ লক্ষ আম্বিয়া, সাহাবী, তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ীন, আয়িম্মা, মুহাদ্দেসীন, মুফাসসেরীন, আওলিয়া, শায়খুল ইসলাম, শায়খুল হাদীস, রাজা বাদশা ও কবি সাহিত্যিকদের জন্ম মৃত্যু ঘটেছে। কৈ তাদের কারো জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালন করা হয়নি সলফদের যুগে। আর দ্বিতীয়তঃ তা পালন করতে হলে প্রায় প্রত্যহ কারো না কারো জন্মদিন পালন করে আনন্দ অথবা কারো না কারো মৃত্যুদিন পালন করে শোক অথবা একই দিনে আনন্দ ও শোক এবং হাসি ও কান্না উভয়ই প্রকাশ করতে হবে। আর সেই সাথে বছরের প্রায় সকল দিনগুলিতে সরকারী ছুটি ঘোষণা করে কাজ বন্ধ করে সমাজকে পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে। অতএব মহান ব্যক্তিবর্গের মহান চরিত্র ও কর্মাবলী নিয়ে আমরা তাদেরকে স্মরণ করব। জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাদের মহান স্মৃতি আমাদের হৃদয়ে জাগরিত রাখব আমাদের চরিত্র ও কর্মের মাধ্যমেই। আর তাদের স্মৃতিকে কেবল আনুষ্ঠানিকতার বেড়াজালে জড়িয়ে রাখব না। এই সংকল্পই হওয়া উচিত প্রত্যেকটি কর্মপ্রিয় খাঁটি মুসলিমের। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুক। আমীন।
ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক জন্মদিন পালন করা জায়েজ। কেননা রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোজা রাখার মাদ্যমে জন্মদিবস পালন করেছেন। যেমন রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশ্ন করা হল আপনি কেন সোমবারে রোজা রাখেন,তিঁনি বলেছিলেন কেননা সোমবারে আমি জন্ম গ্রহন করেছি। আল্লাহ তায়ালা বলেন। بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ 11 এবং আপনার পালনকর্তার নেয়ামতের কথা প্রকাশ করুন। আর যে কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একটি বড় নেয়ামত অপর যায়গায় আল্লাহ তায়ালা বলেন তোমরা আমার নেয়ামত এর শুকরিয়া আদায় কর। অতএব বুঝা যায় যে জন্মদিবস এ কোরান তেলয়াত করা বা যে কোন ভাল কাজের মাদ্যমে জন্মদিন পালন করা জায়েজ। তবে জন্মদিবস এ যদি কোন অনৈসলামিক কাজ করা হয় তাহলে তা হারাম হবে।
আপনি জন্মদিনে আপনার বাসায় উৎসব করলে তা নাজায়েয হবে কেন?
বলতে পারেন- রাসুল (সা) তো কখনো তা পালন করেন নি।
উত্তরে বলবো- রাসুল (সা) পালন করলে তো তা শরীয়তের বিধান হয়ে যেতো। এটা তো ইসলামের কোনো অংশ না। আমরাও তো তা মনে করি না। তাহলে তা নিষেধ হবে কেন?
বলতে পারেন- সাহাবারা (রা) কি কখনো পালন করেছেন?
উত্তরে বলিবো- এটাও তো শরীয়তের দলিল হয়ে যাবে। আপনি কি এমন কোনো হাদিস দেখাতে পারবেন- যেখানে জন্মদিন পালন করা যাবে না বলে হাদিস আছে।
হ্যাঁ এই দিনে যদি পর্দা ছাড়া ঘুরেন, তাহলে তো পর্দ লঙ্ঘনের জন্য পাপ।
দিনটা তো নিজে নিজেই পাপ নয়। বরং অন্য কোনো কারণে পাপ। যেমন বলি-
খেলাধুলায় যদি সতর ঢাকা থাকে, বাজি না থাকে ও নামাযের সময় মিস না হয়, নারীর মেলামেশা না থাকে- তবে সেই খেলা কি পাপ হবে?
এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি-
প্রায় সাত বছর আগে মারকাযুদ দাওয়াতে গেছিলাম- মোবাইলে সাপ খেলা গেমস সম্পর্কে মাসালা জানতে।
সেখানের এক ভাই উত্তর দিলেন-সাপ খেলায় তো কোনো ছবি নেই।
তখন আমি শরীয়তের পরিভাষা ব্যবহার করতে চাইলে তিনি বললেন- সর্বত্র শরীয়তের পরিভাষা ব্যবহার করা ঠিক না। এটাকে নিজের মতই রেখে দেওয়া উচিত।