তকদির বা ভাগ্য বিশ্বাস করা ঈমানের অংশ। আল্লাহ, এই ভাগ্য পুর্বেই নির্ধারিত করে রেখেছেন। আধুনিক যুগে অনেকেই ভাগ্য বিশ্বাস করেন না। তারা মনে করেন, চেস্টা ও অধ্যাবশায় দ্বারা ভাগ্য পরিবর্তন করা যায়। ওদিকে ইসলাম আমাদেরকে তকদির এর উপরে পুর্ন বিশ্বাস রাখতে বলছে। এখন প্রশ্ন থেকে যায়, ভাগ্য যদি পরিবর্তন না করা যায় তাহলে এত খাটা খাটনি করে লাভ কি? এর চেয়ে চুপ করে বসে থাকলেই তো হয়। ভাগ্যে যেটা লেখা আছে সেটাই হবে। এছাড়া আরো জটিল বিষয়ও এখানে এসে যায়। একজন এর ভাগ্যে যদি অবিশ্বাসী (কাফের) হওয়া লেখা থাকে তাহলে তো সে কোনদিন ঈমান আনতে পারবে না। একজনের ভাগ্যে পাপী হওয়া লেখা থাকলে সে তো কখনোই পুন্যবান হতে পারবে না। এভাবে সে তো তার পুন-নির্ধারিত ভাগ্যের জন্য জাহান্নামের পথে চলে যাচ্ছে। তার ভাগ্যে লেখা আছে পাপ করা। তাহলে সে তো এই পুর্ব নির্ধারিত পাপের জন্য দোযখে যাচ্ছে। একদিকে বলা আছে আল্লাহ ভাগ্য নির্ধারন করে রেখেছেনে। অন্যদিকে বলা হচ্ছে মানুষ তার কর্মদোষে দোযখে যাবে। ব্যাপারটা আসলে কি?

এখানে দুটি মুল প্রশ্ন হল

-ভাগ্য আগেই নির্ধারিত থাকলে আমার পাপের জন্য আমি কিভাবে দায়ী? এজন্য শাস্তি হওয়া কতখানি যুক্তিযুক্ত?

-ভাগ্য আগেই নির্ধারিত থাকলে আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়ে কি লাভ?

আমরা মানুষ এক সীমিত জগতে থাকি। আমাদের জ্ঞানও সীমিত। তাই অনেক কিছু বোঝার ক্ষমতা আমাদের নেই। যে কোন প্রশ্ন এর উত্তর আমরা আমাদের সীমিত জগতের জ্ঞানের ভেতরে খোজার চেস্টা করি। যেটার উত্তর আমাদের এই সীমার মধ্যে পাওয়া যায় না সেটা সম্পর্কে একটা ভুল ধারনা পোষন করি। ভাগ্য কিভাবে লেখা হয়, সেটা দিয়ে কিভাবে আমাদের সীমাবদ্ধ করে রাখা হয় ইত্যাদি আমাদের জাগতিক জ্ঞানের সীমার বাইরে। এ কারনেই আমরা এ বিষয়ে ভুল ধারনা পোষন করি।

ভাগ্য কি? এক কথায় ভাগ্য হল নির্ধারিত ভবিশ্যত। হ্যা, এটা নির্ধারিত থাকে। কিন্তু বিষয়টি আমরা একটু ভুল বুঝি। ধরুন আপনি সকাল ১০ টার সময় আপনার কম্পিউটারে এই লেখাটি পড়ছেন। আপনি জানেন না যে দশ মিনিট পরে আপনার ভাগ্যে কি ঘটবে। এমন হতে পারে যে ১০টা বেজে ১০ মিনিটের ভাগ্য এভাবে লেখা আছে –

-আপনি যদি রান্না ঘরে যান তবে একটি কাচের বাটি ভেঙ্গে ফেলবেন

-যদি রাস্তায় চায়ের দোকানে যান তবে অনেক আগে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর সাথে হটাত দেখা হয়ে যাবে

-একজন বন্ধুকে ফোন দিলে সে টাকা ধার চাইবে

-যদি জানালা বন্ধ করতে যান তবে হাতে ব্যাথা পাবেন

-যদি ঘর গোছাতে শুরু করেন তবে হারিয়ে যাওয়া গুরুত্বপুর্ন একটি ডকুমেন্ট খুজে পাবেন

-ইত্যাদি

আপনি যেটা করবেন বা বেছে নিবেন, সেটার ফলাফল নির্ধারিত আছে। কিন্তু আপনি কোনটা করবেন সেটা সম্পুর্ন আপনার ইচ্ছা। আল্লাহ এখানে আপনাকে কোন জোর করেন না। আপনি কি করলে কি হবে এটা আল্লাহ নির্ধারন করে রেখেছেন কিন্তু আপনি কি করবেন সেটা আপনার ইচ্ছার উপরে ছেড়ে দিয়েছেন । অতএব ভাগ্য বলতে আমরা যে ভবিশ্যত বুঝে থাকি সেটা অবশ্যই পুর্ব নির্ধারিত। কিন্তু পুর্ব নির্ধারিত অনেক ভবিশ্যতের মধ্যে, একটি আমরা নিজেরাই বেছে নেই। আমরা নিজেরাই যখন বেছে নিচ্ছি তখন এর দোষ, গুন, প্রাপ্তি, ক্ষতি সবই আমাদের। এর দায়বদ্ধতা সম্পুর্ন আমাদের। আপনি কি করবেন সেটা নির্ধারিত নয়। আপনি কি করলে কি হবে সেটা নির্ধারিত।

ভাগ্য আগে নির্ধারিত থাকলেও আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করে ভাগ্য পরিবর্তন করেন। আপনি আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাইলেন।আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তিনি সেটা অবশ্যই দিবেন। সেটা যদি আল্লাহ আপনাকে না দেন তবে তার দুটি মুল কারন থাকতে পারে। প্রথম কারন হল – আপনার চাওয়াটা ঠিকমতন হয়নি। চাওয়াটা দায় সারা গোচের হয়েছে। দ্বিতীয় কারন – সেই জিনিসটি আপনার জন্য সুফল নয় বরং দুর্ভোগ বয়ে আনবে। তা না হলে আল্লাহর প্রতি সম্পুর্ন বিশ্বাস স্থাপন করে কোন কিছু চাইলে আল্লাহ সেটা অবশ্যই দিবেন।

হাসরের ময়দানে শেষ বিচারের সময়, দোযখ থেকে বাচতে, অনেকেই আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করবে। এসব মিথ্যা অভিযোগ তো মিথ্যাই। কিন্তু কেউ যদি অভিযোগ করে “হে আল্লাহ, আমি অমুক দিন তোমার কাছে অমুক জিনিস চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে সেটা দাওনি”। এটা কিন্তু সত্য অভিযোগ। সর্ব শক্তিমান আল্লাহর সামনে দাড়িয়ে এমন সত্য অভিযোগ কেউ করতেই পারবে না। কারন কেউ যদি কোন সত্য অভিযোগ করতে পারে তাহলে তো উনার ভুল বা ব্যার্থতা দেখানো হল (নাউজুবিল্লাহ)। তবে তিনি (আল্লাহ) কেমন উপাস্য, কেমন রব, কেমন সর্ব শক্তিমান? কাজেই যারা আল্লাহর কাছে কোন কিছু চেয়ে দুনিয়াতে পায়নি, তারা হাসরের ময়দানে ওই দোয়ার জন্য এত বেশী পুরস্কার পাবে যে তখন সে বলবে “হায়, দুনিয়াতে যদি আমার কোন দোয়াই কবুল না হত তবে আরো কত পুরস্কার পেতাম”। দোয়া – আল্লাহর কাছে বান্দার একটা চাওয়া। এটা কখনো বিফলে যায় না। আল্লাহ কিছু এই দুনিয়াতে দেন কিছু পরকালে দেবার জন্য জমিয়ে রাখেন। কিন্তু তিনি দিবেনই। বান্দা চেয়েছে আর আল্লাহ দেননি বা দিবেন না – এমন কখনো হবে না। বান্দা যত পাপি হোক না কেন আল্লাহ তার দোয়া (চাওয়া) কবুল করেন। এই চাওয়াটা অবশ্যই সরাসরি আল্লাহর কাছে চাইতে হবে।

ভাগ্য হল আমাদের ভবিশ্যত। আল্লাহ এটা নির্ধারিত করেছেন। কিন্তু নির্ধারিত কোন ভবিশ্যত আমরা বেছে নেব সেটা আমাদের ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে। আল্লাহ এখানে আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন। কাজেই এই বেছে নেওয়ার দায়বদ্ধতা (লাভ/ক্ষতি) আমার। আমাদের দোয়া (চাওয়া) কবুল করে আল্লাহ ভাগ্য পরিবর্তন করেন। যদি আমাদের চাওয়া দুনিয়াতে পুরন না হয় তবে সেটা আখিরাতে পুরন হবে। দোয়া কখনো বিফলে যায় না। আসুন আমরা জীবনের ছোট বড় সব চাওয়া বেশী বেশী করে আল্লাহর কাছে চাই। এতে আমাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যান রয়েছে।

লেখাঃ https://atiqr88.wordpress.com

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

মানুষ কোন বিপদ বা পাপ করলে বলে ভাগ্যে ছিল বলেই করেছি, কোন শাস্তি বা কষ্ট ভাগ্যে ছিল বলেই পেয়েছি, জাহান্নাম ভাগ্যে ছিল বলেই পাব এসব বলে তারা ভাগ্যকে দোষারোপ করে অথচ সে নিজে জেনে শুনেই নামাজ পড়ে না, দিনে শত শত মিথ্যা বলে, মেয়েদের দিকে খারাপ নজরে তাকায়, টিভি, গান, নাচানাচি,চুরি, ওয়াদার খেলাফ করা, মানুষকে ধোকা দেয়া, এমনকি পদে পদে সে গোনাহ করছে। যা করছে তা ভুল করছে এসব জেনে শুনে, বুঝেও সজ্ঞানে পাপ করে আর শয়তানের অনুসরন করে জাহান্নামে যায় কিন্তু ঠাস করে বলে দেয় ভাগ্য খারাপ ছিল। ভাগ্যকে গাল দেয় এসব মুলত গোনাহের কাজ। যদি নিজে ঠিক না হয়ে ভাগ্যকে বসে বসে দোষ দেন তাহলে কি হবে? ★ইমানে মুফাসসাল ★ *** আমানতু বিল্লাহি ওয়া মালা-ইকাতিহি, ওয়া কুতুবিহি, ওয়া রুসুলিহি, ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি, ওয়াল কাদরি খায়রিহি ওয়া শাররিহি মিনাল্লাহি তা-আলা ওয়াল বা'সি বা'দাল মাউত। ¤ অর্থঃঃ-আমি ইমান আনলাম- (১) আল্লাহর প্রতি, (২) তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, (৩) তাঁর কিতাবগুলোর প্রতি, (৪) তাঁর রাসূলগণের প্রতি, (৫) আখিরাতের প্রতি, (৬) তাকদিরের প্রতি, যার ভালো-মন্দ আল্লাহ তায়ালার নিকট থেকেই হয় এবং, (৭) মৃতুর পর পুনরুথানের প্রতি। প্রশ্ন : যেহেতু তাকদীর পুর্ব হতে র্নিধারন করা থাকে , তাহলে আমার কোন কাজে যদি বিফলতা ভাগ্যে লেখা থাকে , আমি যতই পরিশ্রম করিনা কেন তাতে কি আমার উক্ত কাজ সফলকাম হবে ? জবাব : ★ আল্লামা নাসাফী (রঃ) শারহুল আকাঈদ নামক গ্রন্থে লেখেনঃ আল্লাহ তায়া’লা কিছু কাজ মানুষের উপর ছেড়ে দিয়েছেন , যদি কেহ ভাল কাজ করে তাহলে সে সওয়াব পাবে, আর যদি কেউ খারাপ কাজ করে তাহলে তার আযাব ভুগ করতে হবে। সুতরাং যদি কাহারো ভাগ্যে বিফলতা লেখা থাকে তাহলে সে পরিশ্রম তথা ভাল কাজের মাধ্যমে সফলকাম হতে পারে। ★ হাদিস শরীফে রাসুল (সঃ) ফরমান- "নিশ্চয় আল্লাহ্ তায়ালা আদম (আঃ)- কে সৃষ্টি করলেন, অতঃপর তিনি (তাঁর) ডান হাত দ্বারা আদম (আঃ)-এর পিঠে স্পর্শ করলেন অতঃপর তিনি তার থেকে একটি বংশধর বের করে আনলেন, অতঃপর আল্লাহ্ বললেন, আমি এদেরকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছি, এরা জান্নাতবাসীদের ন্যায় কাজ করবে, পুনরায় তিনি (আল্লাহ্) আদমের পিঠে স্পর্শ করলেন,অতঃপর তিনি তার থেকে আরেকটি বংশধর বের করে আনলেন, তখন আল্লাহ্ বললেন, আমি এদেরকে সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য, এরা জাহান্নামীদের ন্যায় কাজ করে ।" Reference : ★ তিরমিজি ও ★ আবু দাউদ শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-২১

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
ARZU

Call

সূরা আলে ইমরান ২৬নং আয়াত লক্ষ করুন- রাসূল (সাঃ) কে লক্ষ্য করে - তুমি বলঃ হে রাজ্যাধিপতি আল্লাহ! যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন এবং যার নিকট থেকে ইচ্ছা রাজত্ব ছিনিয়ে নেন; যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন; আপনার হাতে রয়েছে কল্যান, নিশ্চয়ই আপনিই সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান”। আমার নিজের ভাষায়ঃ কর্ম দ্বারা ভাগ্য নিয়ন্ত্রিত হয় না। ভাগ্যে থাকলে কর্ম নিয়ন্ত্রিত হয়ে ভাগ্যের দিকে অগ্রসর হয়। মাতৃগভে যখন 120 দিন তখন জীব্রাইল আঃ এসে ভাগ্য লিখে দিয়ে যান। আর তা পরিবর্তন হয় না।আমাদের মধ্যে এমন লোকও আছে যারা ইবাদত করতে করতে বেহেশতের কাছাকাছি চলে যাবে; ভাগ্যে না থাকায় বেহেশতে যেতে পারবেন না, আবার কর্মের ফল খারাপ হবে যে সে জাহান্নামের কাছাকাছি চলে যাবে। কিন্তু ভাগ্যে না থাকায় সে ফিরে আসবে। জান্নাতি হবে। সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করেছিল তাহলে আমাদের কাজ করে লাভ কী? রাসুল (সাঃ) বলেছেন তবুও তোমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে। সূরা আলে ইমরান তাফসীর নূরুল কোরান।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ