আমার বউয়ের বয়স ২০ বছর।তার শরীর হ্যাগলা পাতলা।আমাদের এক বছরের একটা মেয়ে আছে।এখনো মায়ের বুকের দুধ খায়।আমাদের সহবাসে ভুল বসত আমার বউ আবার পেগন্যান্ট হয়ে গেছে!কিন্তু আমারা এখন বাচ্চা নিতে চাচ্ছি না,কারন আমার বর্তমান মেয়ের বয়সের কথা ও বউয়ের শরীরের কথা চিন্তা করে।ইসলামে কি বলে এবং বাচ্চা নষ্ট করা যায়েজ আছে কিনা।সঠিক উত্তর দিবেন,যেন শরিয়ত মোতাবেক হয়।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

মহিলা যদি অত্যাধিক দুর্বল হয়, যার কারণে গর্ভধারণ তার জন্য আশঙ্কাজনক হয় এবং গর্ভধারণের মেয়াদ চার মাসের কম হয়। তাহলে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক গর্ভপাত বৈধ হবে। মেয়াদ চার মাসের অধিক হলে কোনোভাবেই বৈধ হবেনা।

আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, ভ্রুণের বয়স যখন হয় তেতাল্লিশ দিনের কম, তখন ভ্রুণ একটি রক্তপিন্ড হিসেবে মায়ের গর্ভে অবস্থান করে। এ সময় পর্যন্ত তার কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রকাশ পায় না। এ অবস্থায় ভ্রুনটিকে মানুষের শরীরের একটা অঙ্গ হিসেবে ধরে নেওয়া হবে। আর মানুষের প্রতিটি অংশের মালিক স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। অতএব শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো এই অঙ্গটিও নষ্ট করা নাজায়েজ।

তবে যদি স্তন্যদানকারিনী গর্ভবতী হয়ে দুধ বন্ধ হওয়া এবং বাচ্চা মারা যাওয়ার আশঙ্কা হয়, এ অবস্থায় গর্ভে বীর্য জমাট রক্ত কিংবা গোশতের টুকরাকারে থাকলে এবং কোনো অঙ্গ প্রকাশ না পেলে চিকিৎসার মাধ্যমে গর্ভপাত করানো জায়েজ আছে। (ফতওয়ায়ে কাজিখান : ৩/৪১০)।

ভ্রুণের বয়স যখন তেতাল্লিশ দিন হয়ে যায়, তখন থেকে তার প্রয়োজনীয় অরগ্যান, যেমন ফুসফুস, নাক, হাত ও বিশেষ কিছু হাড় ইত্যাদি প্রস্তুত হওয়া শুরু হয়। অতএব তখন থেকে শুরু করে চার মাস পর্যন্ত গর্ভপাতের মাধ্যমে বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় ভ্রুণটি নষ্ট করে ফেলা মাকরুহে তাহরিমি। (আদ্দুররুল মুখতার : ১০/২৫৪)।

ভ্রুনের বয়স যখন ১২০ বা চার মাস হয়ে যায়, তখন আল্লাহ তায়ালা তার মধ্যে রুহ দান করেন। আর রুহ আসার পর বাচ্চা নষ্ট করা কোনো মানুষকে হত্যা করার শামিল। তাই এ সময় ভ্রুণহত্যা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। (ফতহুল আলিয়্যিল মালিক খ. ১/৩৯৯)।

আধুনিক যুগে ভ্রুণহত্যা জাহেলি যুগে কন্যাসন্তানকে জীবন্ত সমাধিস্থ করার নামান্তর। তখন বাবা নিজ মেয়েকে গর্তে পুঁতে ফেলত; আর এখন আধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা মায়ের পেটেই শিশুকে মেরে ফেলা হয়। এ দুই হত্যার মধ্যে বাহ্যত কোনো তফাত নেই।

এজন্য রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ভ্রুণহত্যাকে ‘গুপ্তহত্যা’ বলে উল্লেখ করেছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘স্মরণ কর ওই দিনকে, যেদিন জীবন্ত সমাধিস্থ নিষ্পাপ বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাকে কোন অপরাধের কারণে হত্যা করা হয়েছে? (সূরা তাকভির :৮)।

অন্যত্র এরশাদ হয়েছে, যে একটি জীবনকে হত্যা করা থেকে বিরত থেকেছে, সে যেন সব মানুষের জীবনকে হত্যা করা থেকে বিরত থেকেছে। আর যে একটি আত্মাকে হত্যা করেছে, সে যেন পুরো মানবজাতিকেই হত্যা করেছে। (সূরা মায়েদা : ৩০)।

অনেকে মনে করেন, আগত শিশুকে লালনপালন করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। এই ভয়ে ভ্রুণ মেরে ফেলেন। এ কাজটি নিতান্তই নিন্দনীয় ও বোকামি। কেননা যিনি তার বান্দাকে এত যত করে সৃষ্টি করেছেন, তিনি তার রিজিকেরও ব্যবস্থা করবেন।

আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের সন্তানকে দরিদ্রের ভয়ে হত্যা করো না। আমরা তোমাকে এবং তোমার সন্তানকে দেখেশুনে রাখি। তাই তাদের হত্যা করা সত্যিকার অর্থেই একটি মহাপাপ। (সূরা ইসরা : ৩২)।

তবে হ্যাঁ, গর্ভপাত না করলে যদি মায়ের প্রাণ হুমকির মুখে থাকে, তাহলে গর্ভপাত করতে কোনো বাধা নেই। ফিকহ শাস্ত্রমতে, দুটি মন্দ জিনিসের মধ্যে যেটি কম মন্দ, তাকে বেছে নেওয়া উত্তম। এক্ষেত্রে গর্ভপাতকেই কম মন্দ মনে করা হয়। কেননা মা যদি মারা যায়, তাহলে মা ও ভ্রুণ উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হলো। আর গর্ভপাত করলে মায়ের জীবনটা বেঁচে যাবে। তাছাড়া মায়ের জীবন আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত। তিনি পরিবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মায়ের অন্যান্য দায়িত্বও আছে। এসব দিক বিবেচনা করে অপারগ অবস্থায় গর্ভপাত করাকে বৈধতা দিয়েছে ইসলাম।

সুতরাং। গর্ভে যখন বাচ্চা ৪ মাস হয় তখন এক ফেরেশতা সে গর্ভের বাচ্চাকে রুহ ফুকে দেন, সে বাচ্চার মধ্যে জীবন এসে যায়, সুতরাং তখন সে বাচ্চাকে কোন ভাবেই নষ্ট করার অনুমতি ইসলামী শরীয়ত দেয়না, তবে যদি দ্বীনদার,অভিজ্ঞ ডাক্তার বলে এ বাচ্চা যদি এখনই নষ্ট করা না হয় তাহলে এ বাচ্চা ডেলিভারী হওয়ার সময় হয়ত মা বাঁচবে নাহয় বাচ্চা বাঁচবে, এমন পরিস্থিতিতে শুধু সে বাচ্চা নষ্ট করার অনুমতি আছে মাকে বাঁচানোর জন্য।

এছাড়া অন্য কোন ছোটখাট কারনে যদি ৪ মাস পরে বাচ্চা নষ্ট করে তাহলে ফোকাহায়ে কেরাম বলেছেন যে এটা খুনের শামিল হত্যা করার শামিল।

আর যদি বাচ্চা ৪ মাস থেকে কম বয়স হয় তার মধ্যে এখনো রুহ আসেনি, এমন অবস্থায়ও কোন ছোট খাট কারনে যেন বাচ্চাকে নষ্ট করা ঠিক হবেনা। ©


ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

সন্তান আল্লাহর দেয়া শ্রেষ্ঠ উপহার তাই গর্ভপাত মহাপাপ হারাম। এই উপহারটা খুশি মনে গ্রহন করুন তবে ভবিষ্যতের জন্য সচেতন থাকবেন। আর ডাক্তার যদি পরীক্ষা করে বলে গর্ভধারনের কারনে বড় কোন ঝুকি আছে তাহলে গর্ভপাত করতে পারবেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ