বিয়ে, পুরো মানবজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সবচেয়ে বড় সামাজিক মাধ্যম। কিন্তু, মাঝে মধ্যে এই মাধ্যমটিরও অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক অনেক সময় শুরুতে মধুর হলেও পরে তিক্ততায় পরিণত হয়। আপাতদৃষ্টিতে, বিয়ের পূর্বে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে সকল সম্পর্ককে মনে হয় বিয়ে করার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে, কিছুদিন পর দেখা যায় সেগুলোতে সবচেয়ে বেশী গড়মিল ছিল। তেমনই কিছু সম্পর্কের প্রতি একটু দৃষ্টিপাত করা যাক।
বিয়ের আগে সবচেয়ে সুখকর দাম্পত্য জীবনের পূর্বাভাস দেয় সহপাঠী। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, বেশীরভাগই ক্ষেত্রেই তা পরিণত হয় দুঃখের ঝড়ো হাওয়ায়। এর অন্যতম কারণ হলো সমবয়স। প্রকৃতিগত কারণেই মেয়েদের সাংসারিক-মানসিক পরিপক্কতা সচরাচর আগে হয় ছেলেদের থেকে। তাই যে সময়ে একজন মেয়ে ঘরের ড্রয়িংরুমের সোফাটা কেমন হবে, তা নিয়ে চিন্তা করে, তখন একজন ছেলে চিন্তা করে, এবারের ব্যলন ডিওরটা রোনাল্ডো না মেসি পাবে। এছাড়াও একজন ছেলের স্বাবলম্বী হতে যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন হয়, সে সময়ে দেখা যায় অন্যান্য অনেক মেয়েই সন্তানের মা হয়ে গিয়েছে। যার কারণে, যে মেয়েটি সহপাঠীকে বিয়ে করেছে বা করবে তাকে হতে হয় অনেক ধৈর্যশীল। আরও একটি ব্যাপার, যদিও সবার জন্য প্রযোজ্য নয়, তবুও হল, সহপাঠী হওয়ার কারণে বিয়ের আগেই দুজনের মধ্যে অনেক বেশী জানাশোনা হয়ে যায়, যা বিয়ের পর আকর্ষন ধরে রাখার বিরুদ্ধে কাজ করে।
বিয়ের আগে এমন সম্পর্ক থাকলে খুব বেশী করে ভাবা উচিৎ। বন্ধু বা বান্ধবীর সাথে আপনার মনের মিল থাকতেই পারে, কিন্তু তাই বলে, এইটা ভাবা ভুল যে তার বোন বা ভাই এর সাথেও আপনার মনের মিল হবে। কারণ, এক একটি মানুষ এক একটি সত্ত্বা, রক্তের সম্পর্ক সবসময় মনের প্রতিফলন ঘটায় না। আরও একটি বিষয়, বিয়ের আগে আপনার বন্ধু বা বান্ধবীটি কিন্তু বিয়ের পরে শুধু আপনার আর সেই আগের মত বন্ধু বা বান্ধবী থাকে না। সে এখন আপনার স্ত্রী বা স্বামীর ভাই অথবা বোনও। আর বন্ধু বা বান্ধবীর সাথে এমন অনেক ব্যাপার শেয়ার করা হয় যা অন্যদের সাথে সম্ভব নয়, যার ফলে অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যার প্রভাব দাম্পত্য জীবনে গিয়ে পড়ে।
এই সম্পর্কটির মধ্যে সবচেয়ে বেশী বিয়ে হয়ে থাকে, যেমন চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুপাতো ভাইবোন। এই সম্পর্কে মানসিক অসুবিধার চেয়ে জিনগত কিছু সমস্যা দেখা যায় বেশী। বিশেষ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে। সবচেয়ে বেশী যে বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করতে হয় সেটি হলো, যদি কখনও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক বেশী খারাপ হয় তখন সেটি আর দুইটি জীবনের মধ্যে থাকে না, ক্যান্সারের মতো তা সমস্ত আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
একজন সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষের সাথে বিয়ের মত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যাওয়ার আগে অন্তত কয়েকশবার ভাবনা চিন্তা করা উচিৎ। শুধু ক্ষণিকের দেখায় হয়তো বা ভালো লাগতে পারে, কিন্তু দুজনের মধ্যে যদি অতীতে এমন কিছু থাকে যা ভবিষ্যতে সংসারের জন্য হুমকি স্বরূপ, তবে সে সম্পর্কে যাওয়ার চেয়ে বোধ হয় না যাওয়াই ভালো। বিয়েতো আর জামা কাপড় কেনা না, যে এখন একটা কিনলেন, দুইদিন পর পছন্দ হলো না, কাউকে ব্যবহার করতে দিয়ে আবার আরেকটা কিনে আনলেন।
সত্যি কথা বলতে, সবচেয়ে বেশী ঝামেলা সহ্য করতে হয় এইরকম বিয়ের ক্ষেত্রে। দুইজনের পরিবারই হাতে গোনা দুই একটা ঘটনা বাদে কখনই মেনে নেয় না। স্বামী-স্ত্রীকে সারাজীবন কাটাতে হয় আত্মীয়-স্বজনদের সান্নিধ্য ছাড়া।
বিয়ের আগে প্রেম ভালবাসা হতেই পারে। তবে, অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রেমিক প্রেমিকা ভালবাসা করলেও বিয়ে আর হয় না। সম্পর্কের ভাঙ্গন ধরে। কিছুদিন পর দুজন দুই দিকে চলে যায়, অনেকসময় নতুন সম্পর্ক হয়। আবার কিছুদিন পর মনে হয়, না, পূর্বজনই বোধহয় ভালো ছিল। এইক্ষেত্রে ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো নামে পরিচিত বিশ্ববরেণ্য তারকা জনি ডিপ এর একটা বিখ্যাত উক্তি আছে-
“যদি তোমার প্রাক্তন প্রেমিক-প্রেমিকা এবং বর্তমান প্রেমিক-প্রেমিকা থেকে কাউকে বেছে নিতে বলা হয় তবে সবসময় দ্বিতীয়জনকে বেছে নিও। কারণ, প্রথমজন যদি তোমার জন্য উপযুক্তই হতো তবে, তুমি দ্বিতীয়জনের কাছে কখনও যেতে না”।
এই ধরণের সম্পর্কের বিয়ে, নাটক সিনেমায় বেশী দেখা যায়। যদিও বাস্তবে অনেক কম, তবুও এই রকম বিয়ে করার আগে ছেলে বা মেয়ের অনেক বেশী চিন্তা করা উচিৎ। অর্থনৈতিকভাবে দুই পক্ষই ভারসাম্যে না থেকে যদি কোন একপক্ষ মাত্রাতিরিক্ত অবস্থাসম্পন্ন হয় তবে সেটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মনোকষ্টের কারণ হয়। যে পক্ষের অবস্থা ভালো তাদের মধ্যে একটু অহংকারবোধ এবং অন্য পক্ষের মধ্যে হীনমন্যতা দেখা দিতে পারে। স্বামী-স্ত্রী হয়তোবা নিজেদের মধ্যে এগুলো মিটমাট করে ফেলতে পারে, কিন্তু আত্মীয়স্বজনেরা অনেক সময় খোটা দিতে পিছপা হয় না।
আমাদের সবারই স্বপ্নের নায়ক বা নায়িকা কমবেশি থাকে। তাদের মধ্যে কেউ বা নাটক সিনেমায় অভিনয় করেন, কেউ গান গায়, কেউ নাচে, কেউ কেউ আবার অন্যের পন্যের জন্য করে মডেলিং। কেউ হয়তো বা লেখালিখি করে, কেউবা করে সিনেমা পরিচালনা। এসকল স্বপ্নের মানুষগুলোর সাথে বাস্তব জীবনে সম্পর্কে যাওয়ার আগে একটা জিনিস মাথায় রাখা উচিৎ, আপনার মতো আরও অনেকের স্বপ্নেই কিন্তু উনি আছেন। তাই বিয়ের পরে, ওনার পেশাগত কারণে আপনার প্রতি সময় কম দেওয়া বা আরও অনেকের সাথে কথা বলা, বিভিন্ন স্থানে যাওয়া, এই বিষয়গুলো যদি আপনি মেনে নিতে না পারেন, তবে স্বপ্নের মানুষকে স্বপ্নেই রেখে দিন। বাস্তবে আর ধরতে যাবেন না।
অবশ্য ব্যতিক্রম সবক্ষেত্রেই আছে। তাই যদি মানিয়ে নিতে পারেন তবে, কোন কিছুই কোন সমস্যা না। আমরা উর্বশী টিম এখানে সমাজে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন স্তরের মানুষের জীবন থেকে যে তথ্য বা উপাত্ত পেয়েছি তার উপরেই লেখার চেষ্টা করেছি। আমরা চাই, প্রতিটি দাম্পত্য জীবন হোক সুখময়, আনন্দময় এবং মধুময়। তাই, দাম্পত্য জীবন শুরু করার আগে একটু ভেবে দেখুন এই বিষয়গুলি। কারণ কথায় বলে-
“ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না”।
অনেকেই হয়তো বিয়ে নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছেন। তাদের জন্য এই কথাটা বলতে চাই!
বিয়ে তাকেই করা উচিত
যার সাথে শেষদিন পর্যন্ত অন্তত ঝগড়া করা যায়