আপনি অত্যন্ত সুন্দর প্রশ্ন করেছেন। সারা বিশ্বে চারটি মাজহাব খুব প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এই মাজহাবগুলোর ইমাম যারা ছিলেন তারা কোরআন হাদিসের নির্যাস বের করে সাধারণ মানুষের জন্য অনেক সহজ করে দিয়েছেন। যারা একান্তই কোরআন হাদিসের বিধি বিধানগুলো জানেন না অথবা অন্য কোনোভাবে যাঁর জানার সুযোগ নেই, তিনি যদি কোনো মাজহাবের অনুসরন করেন, তাহলে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে মূল উদ্দেশ্য একটিই হতে হবে। সেটি হল কোরআন ও সুন্নাহর অনুসরন করা। মাজহাব কোনো দ্বীন নয়। আমাদের সম্মানীত চারজন মাজহাবী ইমামেরা কোরআন এবং সুন্নাহর অনুসরন করেছেন। তাঁদের সময়ে যেসব বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং যেখানে পবিত্র কোরআন এবং সহিহ হাদিসের নির্দেশনা পান নি, সেক্ষেত্রে তাঁরা গবেষণা করেছেন। তাঁরা একথাও বলেছেন, ‘যদি আমার গবেষণার সাথে কোনো সাংঘর্ষিক হাদিস পাওয়া যায়, তাহলে সেটিই আমার মাজহাব, যদি আমার বক্তব্যের সাথে কোনো হাদিসের সাংঘর্ষিক অবস্থা হয়, তাহলে আমার বক্তব্যকে তোমরা দেয়ালের ওপারে ছুঁড়ে মারো।’ যেমন, আমাদের দেশে অতি প্রচলিত হচ্ছে হানাফি মাজহাব। সাধারণ লোক কেউ যদি মাজহাবের মাধ্যমে কোরআন সুন্নাহর অনুসরন করে তাতে কোনো সমস্যা নেই। আবু হানিফা, যিনি এই মাজহাবের ইমাম, তিনিও কিন্তু সুন্দর একটি মূলনীতি দিয়ে গিয়েছেন, তিনি বলেছেন, ‘যদি সহিহ হাদিস পাও, তুমি যদি সেটি আমল করো, কিন্তু বাস্তবে যদি দেখা যায় আমার মাজহাবের একটি সিন্ধান্ত রয়েছে আল্লাহর রাসুলের হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক অথবা একটু উল্টো, রাসুলের (সা.) হাদিসের ওপর যদি আমল করো, তাহলে মনে রাখবে আমি ইমাম আবু হানিফার মাজহাব ঐটিই।’ মাজহাবের ক্ষেত্রে মূল কথাই হচ্ছে, আমাদের মাজহাবের সম্মানিত ইমামরা তাঁরা কোরআন হাদিসসম্মত জীবনযাপন করেছেন, কিছু বিষয়ে গবেষণা করেছেন এবং তাঁরা বলে গেছেন, ‘যদি কোরআন হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তোমরা এই মাজহাবটি মানবে না।’ কারণ তাঁরাতো এই একই দ্বীনের অনুসারী। সাধারণ মানুষ চাইলে যেকোনো একটি মাজহাব মানতে পারেন, কিন্তু মাজহাব মানা বাধ্যতামূলক এমন কথা মাজহাবের সম্মানিত ইমারাও বলে যান নি এবং সেটি সঠিকও নয়। কোনো জিনিসকে ফরজ বলতে হলে শরিয়তের বিধান লাগবে, যে বিষয়টি আল্লাহর রাসুলের (সা.) সময়ে ফরজ হয় নি, সাহাবাদের সময়ে ফরজ হয় নি, তাবিয়ানদের যুগে ফরজ হয় নি, পরবর্তিতে সেটি ফরজ করার মত সাধ্য আমাদের হাতে নেই। বিদায় হজের সময়তো রাসুল (সা.) একদিকে ভাষন দিচ্ছেন, অন্যদিকে আয়াত নাজিল হল যে, দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দেওয়া হয়েছে, দ্বীনের সাথে নতুন কিছু সংযোজন করার প্রয়োজন নেই এবং সেই সুযোগও নেই। আমরা রাসূলের (সা.) মানহাজ কে মানবো, সেভাবেই চলবো। কেউ যদি কোনো মাজহাব মানতে চান, মানতে পারেন কিন্তু এটি বাধ্যতামূলক নয়। ধন্যবাদ।
একটু ভিন্নভাবে উত্তরটা দেয়ার চেষ্টা করছি। কোন মাজহাবেই ফরজ কিংবা ওয়াজিব নিয়ে কোন মতবাদ নেই। যেমন, নামাজ ৫ ওয়াক্ত, এশার নামাজের পর বিতরের নামাজ, দুই ঈদের নামাজ ওয়াজীব প্রভৃতি। সমস্যা তৈরী হয় বিভিন্ন সুন্নাত, নফল নিয়ে। আল্লাহর হুকুম হচ্ছে গরু খাওয়া হালাল, আর আল্লাহর রসুল (স.) দেখিয়ে দিয়েছেন সেই হালাল খাদ্যটিকে কিভাবে নিজের জন্য হালাল করে নিতে হয়। এখন আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন আল্লাহর হুকুম মানবেন, কিন্তু আল্লাহর রসুল (স.) দেখানো পথে নয়। অথবা রসূলের দেখানো পথে চলবেন কিন্তু আল্লাহর হুকুম মানবেন না। নিয়ে আসলেন এক শুকর, এনে আল্লাহর রসুল (স.) এর তরিকা অনুযায়ী জবাই করলেন। হবে কি? না, হবে না। আল্লাহ এবং আল্লাহর রসুল (স.) এর তরিকা উভয়ের সম্মিলনেই আমাদের জীবন, সমাজ ব্যবস্থা, অর্থ ব্যবস্থা প্রভৃতি চালিত করতে হবে। মাজহাবের ইমামগণ তাদেরকে বলা হয় মুজতাহিদ। এই মুজতাহিদগণ বিভিন্ন বিষয়ে অর্থাৎ যেসব সুন্নাহ গুলোর মধ্যে বিতর্কের অবকাশ রয়েছে তাদের নিজ নিজ জ্ঞান ও যুক্তি শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অবস্থান থেকে সেসবের সমাধান দিয়েছেন। আবার আর একটু ভিন্ন ভাবে যুক্তি দিয়ে শেষ করব। মনে করেন, এক সকালে আপনার বাবা বলল, আমি শ্বশুর বাড়ী যাব, আপনার আম্মু বললেন, আমি বাবার বাড়ী যাব, আপনার বোন বলল, আমি মামার বাড়ী যাব এবং আপনি বললেন, আমি নানা বাড়ী যাব। একটি নির্দিষ্ট সময় পর দেখা গেল আপনারা সকলেই এক জায়গায় অবস্থান করছেন। অনুরুপ ভাবে, আপনি যে মাজহাবই অনুসরণ করেন না কেন দিন শেষে আপনি আপনার গন্তব্যে পৌছাতে পারবেন ইন-শা-আল্লাহ। ধন্যবাদ