শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

Call

বিশ্ব নবী সরওয়ারে কায়েনাত, মুফাখ্খারে মওজুদাদ হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা, আহমদ মোজতবা (সঃ)
মানব জাতির মুক্তির জন্য যে ধর্ম প্রবর্তন করেছেন, তা-ই হলো মোহাম্মদী ইসলাম। এ সম্পর্কে হযরত
মুহাম্মদ (সঃ) হাদীস শরীফে ফরমান, "ইসলামের স্তম্ভ হলো- পাঁচটি বিষয়ের উপর। (১) আল্লাহ্
ছাড়া কোন মা'বুদ নেই এবং নিশ্চয়ই মোহাম্মদ (সঃ) আল্লাহ্র রাসুল- এ কথার সাক্ষ্য দান; (২) সালাত
কায়েম করা; (৩) যাকাত দেয়া; (৪) হাজ্জ করা এবং রমজান-এর সিয়াম পালন করা।" হযরত মোহাম্মদ
(সঃ)-এর এ ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ধর্মই হলো 'মোহাম্মদী ইসলাম' । মানব জাতির ইতিহাস
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- মহান আল্লাহ্ তায়ালা মানুষকে 'আশরাফুল মাখলুকাত'
হিসেবে সৃষ্টি করেছেন । সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী মানুষ দুনিয়াতে এসে নফ্সে আম্মারার তাড়নায়
নানাবিধ পাপাচারে লিপ্ত হয় । ফলে আল্লাহ্ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মানুষ চরম অশান্তির মাঝে নিপতিত
হয় । পৃথিবীর পথহারা মানুষকে হেদায়েত করার জন্য আল্লাহ্ তায়ালা আদিকাল থেকে অগণিত নবী-রাসুল
ও মহামানব প্রেরণ করেছেন । পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- অর্থ-"আমার সৃষ্টির মাঝে এমন একটি সম্প্রদায় রয়েছে, যারা মানুষকে সৎ পথ দেখায় ও সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করে" (সূরা- আরাফ, আয়াত- ১৮১) ।
আল্লাহ্র মনোনীত এইসব মহামানবগণ নবুয়তের যুগে নবী-রাসুল হিসেবে পরিচিত ছিল । আল্লাহ্র প্রেরিত
নবী-রাসুলগণ যুগে যুগে পৃথিবীর মানুষকে হেদায়েতের যে পথ প্রদর্শন করেন, তা-ই ইসলাম ।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তায়ালা ফরমান- অর্থ-"নিশ্চয়ই ইসলাম আল্লাহ্র একমাত্র মনোনীত ধর্ম ।"
তাই দেখা যায়, হযরত আদম (আঃ) থেকে আখেরী নবী (সঃ) পর্যন্ত সমস্ত নবী-রাসুল ইসলামের শাশ্বত
বাণী প্রচার করে গেছেন । একারণেই হযরত আদম (আঃ)-এর উম্মতের কালেমা ছিল,"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু
আদম সফিউল্লাহ্"; হযরত নূহ (আঃ)-এর উম্মতের কালেমা ছিল,"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু নূহ নবী উল্লাহ্";
হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর উম্মতের কালেমা ছিল, "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ্"; হযরত
মুসা (আঃ)-এর উম্মতের কালেমা ছিল, "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুসা কালিমুল্লাহ্"; হযরত ঈসা (আঃ)-এর
উম্মতের কালেমা ছিল,"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ঈসা রুহুল্লাহ্"। আর আখেরী নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-এর
উম্মতের কালেমা হলো, "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্" । অর্থাৎ- সমস্ত নবী-রাসুলের উম্মতই তাঁদের কালেমাতে প্রথমতঃ তাওহীদের স্বীকারোক্তি করেছেন এবং পরবর্তীতে তারা স্বীয় নবীর প্রতি আনুগত্যের সাক্ষ্য হিসেবে সে নবীর নাম উল্লেখ করেছেন । হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে আখেরী নবী (সঃ) পর্যন্ত সমস্ত নবী-রাসুল মানুষকে আল্লাহ্র পক্ষ
থেকে যুগোপযোগী বিধান এনে দিয়েছেন । তাঁদের দেয়া ঐ বিধান সমকালীন যুগের যারা পালন করেছেন,
তারাই ছিলেন আল্লাহ্তে বিশ্বাসী মুসলমান । আর যারা যে নবীর উম্মত, তাঁরা সে নবী নামানুসারে প্রবর্তিত ধর্মের অনুসারী বলে পরিচিতি হয়েছে । যেমন- ঈসায়ী ধর্ম, মুসায়ী ধর্ম, ইব্রাহিমী ধর্ম । বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-ও পূর্ব যুগের সমস্ত নবীগণের ধর্মগুলোকে স্বীকার করে নিয়েছেন । যার ফলে এক পর্যায়ে বলেছেন-"আমি ইব্রাহীম (আঃ)-এর বংশধর ।" তিনি অতীত যুগের নবীগণের দেয়া ইসলামের সর্বাধুনিকতম সংস্করণের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের পূর্ণতা দান করেছেন । তাই
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- অর্থ-"আজ আমি তোমাদের ধর্মকে পূর্ণ করে দিলাম, তাতে আমার নেয়ামত পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে একমাত্র ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম" (সূরা- মায়েদা, আয়াত-৩) ।
আমরা জানি হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে হযরত মোহাম্মদ (সঃ) পর্যন্ত আল্লাহ্র মনোনীত সমস্ত
নবীগণের প্রবর্তিত ধর্মই ছিল ইসলাম । সমস্ত নবী-রাসুলের ধর্মের অন্তর্নিহিত দিক অভিন্ন বলেই
তাঁরা প্রত্যেকেই সমকালীন যুগের মানুষের জন্য সময়োপযোগী জীবন ব্যবস্থা তথা শরীয়তের বিধি-বিধান
প্রবর্তন করে গেছেন । অনুরূপভাবে আখেরী নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) ও সকল মানব জাতির জন্য
যুগোপযোগী ও বিজ্ঞানসম্মত একটি জীবন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন । যেহেতু আমরা পূর্ববর্তী কোন নবীর
ধর্ম অনুসরণ না করে বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-এর দেয়া ইসলামী বিধান অনুসরণ করি,
সুতরাং আমাদের এ ধর্মের নাম 'মোহাম্মদী ইসলাম' নামে পরিচিত হওয়া অধিকতর যুক্তিসংগত । এ
কারণেই আইন শাস্ত্রে ইসলামী জীবন বিধানকে 'Mohamadan Law' হিসেবে পৃথিবীময় স্বীকৃতি লাভ
করেছে । তাছাড়া বিভিন্ন তাফসীরকারক তাদের তফসীরের কিতাবে ইসলাম ধর্মকে 'দ্বীনে মোহাম্মদী'
হিসেবে উল্লেখ করেছেন । মুলতঃ উহাই মোহাম্মদী ইসলাম । ইতিহাস থেকে জানা যায়- ইসলামের স্বর্ণযুগ ছিল- ৫৩ বছর । হযরত রাসুল (সঃ)-এর নবুয়তী জীবনের ২৩বছর এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের ৩০ বছর । এ দীর্ঘ সময়ে হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-এর উম্মত মোহাম্মদী ইসলামের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিল । কিন্তু উমাইয়াদের শাসনামল থেকে যখন
ইসলামী খেলাফতের নাম পরিবর্তন করে উমাইয়া শাসন হিসেবে আখ্যায়িত করা হলো, তখন থেকে এ
ধর্মের নাম 'মোহাম্মদী ইসালাম' থেকে মোহাম্মদ বাদ দিয়ে শুধু ইসলাম রাখা হয়েছে ।
এভাবে মুসলমানদের সুকৌশলে হযরত মোহাম্মদ (সঃ) থেকে বিচ্ছিন্ন করে সমগ্র মুসলিম
জাতিকে কাণ্ডারিবিহীন করে ফেলা হয়েছে । তাই আজ আমরা আমাদের প্রিয় নবী (সঃ)-এর নাম
সম্বলিত মোহাম্মদী ইসলামের কথা শুনলে চমকে উঠি । অথচ দুনিয়াতে যত ধর্ম, মতবাদ ও আদর্শের
প্রবর্তকদের নামানুসারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এমনকি ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন মাযহাব ও তরীকাগুলো এসব এসব মাজহাবের ও তরীকার ইমামগণের নামের অনুকরণ করে নামকরণ করা হয়েছে । যেমনঃ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-এর নামানুসারে হানাফী মাজহাব; ইমাম শাফেয়ী (রহঃ)-এর নামানুসারে হানাফী মাজহাব; ইমাম মালেক (রহঃ)-এর
নামানুসারে মালেকী মাজহাব; ইমাম হাম্বল (রহঃ)-এর নামানুসারে হাম্বলী মাজহাব ।
অনুরূপভাবে গাউসে পাক আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)-এর নামানুসারে কাদেরিয়া তরীকা;
গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশ্তী (রহ)-এর নামানুসারে চিশ্তিয়া তরীকা । খাজা বাহাউদ্দীন নক্শবন্দ (রহ)-এর নামানুসারে নক্শবন্দীয়া তরীকা; হযরত শায়েখ আহমদ মোজাদ্দেদ আলফেসানী (রহঃ)-এর নামানুসারে মোজাদ্দাদীয়া তরীকা; ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহঃ)-এর নামানুসারে সুলতানিয়া-মোজাদ্দাদীয়া তরীকা । অনুরূপভাবে যারা কুরআনের তাফসীর করেছেন তাঁদের স্বনামে তাফসীর গ্রন্থগুলোর নামকরণ করা হয়েছে । যেমন- তফসীরে জালালাইন, তফসীরে ইবনে আব্বাস, তফসীরে তাবারী, তফসীরে ইবনে কাসির ইত্যাদি । অন্যদিকে যারা রাসুল (সঃ)- এর হাদীস সংগ্রহ করে সংকলন করেছেন, তাঁদের স্বনামে হাদীস গ্রন্থসমূহের নামকরণ করা হয়েছে । যেমন-
বোখারী, মুসলিম, তিরমিজি ইত্যাদি । আর যিনি মানব মুক্তির জন্য এলেমে শরীয়ত, তরীকত, হাকিকত ও
মারেফত সম্বলিত পূর্ণাঙ্গ জীবন-বিধান হিসেবে আল কুরআন দিয়ে গেলেন- উহাই মোহাম্মদী ইসলাম ।
সুতরাং মোহাম্মদী ইসলাম নতুন কোন বিষয় নয় । এটা হলো- হযরত মোহাম্মদ (সঃ) প্রবর্তিত আল্লাহ্র
মনোনীত ইসলাম । এতে হেরা গুহা থেকে উৎসারিত শান্তির আদর্শ সূফীবাদ বা তাসাউফের সাধনার
মাধ্যমে স্রষ্টার নৈকট্য হাসিল করে সৃষ্টিকে ভালবাসার দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে । আমরা যদি মোহাম্মদী ইসলামের আদর্শ ও শিক্ষা অনুসরণ করতে পারি, তবে ইসলামের প্রকৃত শান্তি বাস্তব জীবনে লাভ করা সম্ভব ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

আহলে হাদিসরা হচ্ছে কোরআন ও হাদিসের বিশুদ্ধ অনুসারী । তারা ইসলাম পালনে কোনো মাযহাব অনুসরন করেনা। হানাফি মাযহাবের লোকেরা ইমাম হানাফিকে অনুসরন করে। এভাবে শাফেয়ী, মালেকি, হাম্বলিরা ইমাম শাফেয়ী, মালেকি, হাম্বলিকে অনুসরন করে। কিন্তু আহলে হাদিসদের মত অনুসারে মুহাম্মদ (স.) সর্বউওম আর্দশ। ঠিক এ কারনে আহলে হাদিসদেরকে মুহাম্মদি বলা হয়ে থাকে। কারন তারা মুহাম্মদ (স.) কে অনুসরন করে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ