ইসলাম বলেছে তোমরা তোমাদের সন্তান দের হত্যা করো না। এখানে হত্যা বলতে কি বোঝানো হয়েছে? মানে কারো গরভে বাচ্ছা আসার পর যখন সে বুজতে পারে তখন সেটা কে নষ্ট করলে হত্যা ,নাকি মিলন এর সময় কন্ডম বা পিল এর দারা যেই নিয়ন্ত্রণ হয় সেটা। আর কেও যদি পিল খায়,তবে সেটা ও কি হত্যা করা বুজাবে। 
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call
ইসলাম বলেছে তোমরা তোমাদের সন্তান দের হত্যা করো না।

এখানে জাহেলিয়াত যুগে সন্তানকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা কিংবা হত্যা করার ব্যাপারটি ছিল সন্তানের সাথে অসদ্ব্যবহারের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। আয়াতে তা নিষিদ্ধ করে বলা হয়েছেঃ দারিদ্র্যের কারণে স্বীয় সন্তানদেরকে হত্যা করো না। আমি তোমাদেরকে এবং তাদেরকে উভয়কেই জীবিকা দান করব।

জাহেলিয়াত যুগে এ নিকৃষ্টতম নির্দয়-পাষণ্ড প্রথা প্রচলিত ছিল যে, কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলে কাউকে জামাতা করার লজ্জা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উদ্দেশ্যে তাকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হতো। মাঝে মাঝে জীবিকা নির্বাহ কঠিন হবে মনে করে পাষণ্ডরা নিজ হাতে সন্তানদেরকে হত্যা করত। কুরআনুল কারীম এ কু-প্রথা রহিত করে দিয়েছে। আয়াতের মুল উদ্দ্যেশ্য এটাই।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, তোমরা দারিদ্র্যের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না। আমিই তোমাদেরকে এবং তাদেরকে রিজিক প্রদান করি। (সূরা আনআমঃ ১৫১)

দারিদ্রের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না অর্থাৎ খাদ্য ঘাটতির ভয়ে সন্তান হত্যা করা হারাম।

আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা নির্বুদ্ধিতার দরুন ও অজ্ঞতাবশত নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করে তারা ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা আনআমঃ ১৪০)

ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কোন অপরাধ সবচেয়ে বড়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তুমি আল্লাহ তাআলার সাথে অংশী স্থাপন করলে অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন: তোমার সাথে খাবে এ ভয়ে সন্তান হত্যা করলে। (সহীহ বুখারী হাঃ ৬০০১)।

এখানে সন্তান হত্যা বলতে সন্তান না নেয়ার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অধিক সন্তান না নেয়া। পরিবার বড় হলে সন্তানদের খাদ্য, বাসস্থান ও খরচাদি ইত্যাদি বহন করা কষ্টকর হবে। এসব কারণে সন্তান না গ্রহণ করা হারাম। রিযিকের মালিক আল্লাহ, দুনিয়াতে এমন কোন প্রাণী পাঠান না যার রিযিকের দায়িত্ব তিনি নেন না।

আল্লাহ তাআলা বলেন, পৃথিবীতে যত প্রাণী রয়েছে, সব কিছুর রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহর কাছে। (সূরা হুদঃ ৬)।

তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে ও খাদ্যসহ ভরণপোষণের ভয়ে সন্তান হত্যা তথা বিনা কারণে সন্তান না নেয়া হারাম। তবে যদি মায়ের ও সন্তানের স্বাস্থের দিকে বিবেচনা করে প্রয়োজনে কিছু বিলম্ব করা হয় তাহলে তা দূষণীয় নয়।

কত দিনের বাচ্চা নষ্ট করা জায়েয আছে আর এ বিষয়ে ইসলামের বিধান হচ্ছেঃ

৬০ দিনের বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ নেই। নষ্ট করার কারনে তওবা করতে হবে। আল্লাহ ক্ষমা করবেন।

আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, ভ্রুণের বয়স যখন হয় তেতাল্লিশ দিনের কম, তখন ভ্রণ একটি রক্তপিন্ড হিসেবে মায়ের গর্ভে অবস্থান করে। এ সময় পর্যন্ত তার কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রকাশ পায় না। এ অবস্থায় ভ্রুণটিকে মানুষের শরীরের একটা অঙ্গ হিসেবে ধরে নেওয়া হবে। আর মানুষের প্রতিটি অংশের মালিক স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। অতএব শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো এই অঙ্গটিও নষ্ট করা নাজায়েজ।

তবে যদি স্তন্যদানকারিনী গর্ভবতী হয়ে দুধ বন্ধ হওয়া এবং বাচ্চা মারা যাওয়ার আশঙ্কা হয়, এ অবস্থায় গর্ভে বীর্য জমাট রক্ত কিংবা গোশতের টুকরাকারে থাকলে এবং কোনো অঙ্গ প্রকাশ না পেলে চিকিৎসার মাধ্যমে গর্ভপাত করানো জায়েজ আছে। (ফতওয়ায়ে কাজিখানঃ ৩/৪১০)।

ভ্রুণের বয়স যখন তেতাল্লিশ দিন হয়ে যায়, তখন থেকে তার প্রয়োজনীয় অরগ্যান, যেমন ফুসফুস, নাক, হাত ও বিশেষ কিছু হাড় ইত্যাদি প্রস্তুত হওয়া শুরু হয়। অতএব তখন থেকে শুরু করে চার মাস পর্যন্ত গর্ভপাতের মাধ্যমে বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় ভ্রুণটি নষ্ট করে ফেলা মাকরুহে তাহরিমি। (আদ্দুররুল মুখতারঃ ১০/২৫৪)।

ভ্রুণের বয়স যখন ১২০ বা চার মাস হয়ে যায়, তখন আল্লাহ তায়ালা তার মধ্যে রুহ দান করেন। আর রুহ আসার পর বাচ্চা নষ্ট করা কোনো মানুষকে হত্যা করার শামিল। তাই এ সময় ভ্রুণহত্যা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। (ফাতহুল আলিয়্যিল মালিকঃ ১/৩৯৯)।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ