দলিলসহ উত্তর দিন । (আমি শুনেছিলাম 6 জায়গায় গিবত করা যাবে , এ বিষয়েও বলুন)
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Habib96

Call

গীবত করা হারাম (হুজুরাত ৪৯/১২)। এর ক্ষতিকর প্রভাবে ব্যক্তি থেকে সমাজের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে স্রেফ ইছলাহের উদ্দেশ্যে ও নেকীর আশায় জনকল্যাণার্থে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমালোচনা করা যায়। যেটা আসলে গীবত নয়। বরং সত্য তুলে ধরা। যেমন  (১) অত্যাচারীর অত্যাচার প্রকাশ করার জন্য  (২) সমাজ থেকে অন্যায় দূর করা এবং পাপীকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য (৩)  হাদীছের সনদ যাচাইয়ের জন্য  (৪) মুসলিমদেরকে মন্দ থেকে সতর্ক করার জন্য (৫) পাপাচার ও বিদ‘আত থেকে সাবধান করার জন্য  (৬) প্রসিদ্ধ নাম বলে তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য (নববী, রিয়াযুছ ছালেহীন, ২৫৬ অনুচ্ছেদ, পৃঃ ৫৭৫; মুসলিম হা/২৫৮৯ ‘গীবত হারাম হওয়া’ অনুচ্ছেদ, নববীর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

গীবত করা সাধারণভাবে হারাম হলেও কিছু ক্ষেত্রে গীবত করা কোন সময় জায়েয, আবার কোন সময় ওয়াজিবও হয়ে যায়। ১। মাযলুম ব্যক্তির জন্য গীবত করা জায়েযঃ এটা কুরআন মাজীদের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, কারো ব্যাপারে কোন খারাপ কথা প্রকাশ করা মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে যে নির্যাতিত তার কথা ভিন্ন। আর আল্লাহ তাআলা সব কিছুই শুনেন ও সব কিছুই জানেন। (সুরা নিসা, আয়াতঃ ১৪৮)। ২। পরিচয় দানকারীঃ অনেক সময় কোন ব্যক্তির পরিচয় দিতে গিয়ে বাধ্য হয়ে তার দোষ-গুণ মানুষের সামনে বলতে হয়। যেমন, বলা হয় অমুক অন্ধ হাফেয, অমুক খোঁড়া মানুষ। প্রয়োজনের তাকীদে পরিচয়ের জন্য কোন মানুষের এ ধরণের দোষ-ত্রুটি উল্লেখ করা জায়েয আছে। তবে শুধু পরিচয়ের জন্যেই এ ধরণের দোষ- ত্রুটি বলা যাবে। এ ছাড়া কোন প্রকারে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে এ ভাবে বলা সম্পূর্ণ নিষেধ তথা হারাম হিসাবে গণ্য হবে। মুসলিম শরীফে এসেছে, নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুইজন মুয়াজ্জিন ছিল। একজন বিলাল (রাঃ) আর একজন অন্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ) (সহীহ মুসলিমঃ ৩৮)। অত্র হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ)।কে কেবলমাত্র পরিচিতির জন্যেই অন্ধ বলা হয়েছে। ৩। অপরকে নসিহত করাঃ কোন মানুষের কল্যাণ কামনার উদ্দেশ্যে অন্য কোন চরিত্রহীন ও দুষ্ট লোকের অনিষ্ট বা ক্ষতি থেকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে তাদের দোষ-গুণ মানুষের সামনে বলা জায়েয আছে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলাম ধর্ম উপদেশের উপর ভিত্তিশীল। হাদীস বর্ণনাকারী তামীমুদ্দারী বলেন আমরা বললাম, কাদের জন্য এই উপদেশ? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, আল্লাহর জন্য, তার কিতাবের জন্য, তার রাসূলের জন্য, মুসলমানদের ইমামের জন্য আর তাদের সাধারণ লোকদের জন্য। (সহীহ মুসলিমঃ ১২)। ৪। হাদীস যাচাই-বাছাই এর ক্ষেত্রে হাদীস বর্ণনাকারীদের সম্পর্কে মুহাদ্দেসীনদের আলোচনা-সমালোচনা করা এটাও এক প্রকার বৈধ গীবতের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রকার গীবত করা ওয়াজিব। নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন লোক সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন, আমার মনে হয় না যে, অমুক অমুক লোক আমাদের ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কিছু জানে। (সহীহুল বুখারীঃ ৬০৬৭)। ৪। প্রকাশ্য ফাসেকীতে লিপ্ত ব্যক্তির সমালোচনা করা জায়েযঃ এটা হারাম গীবতের অন্তর্ভুক্ত নয়। যেমন, প্রকাশ্য মদখোর, ডাকাত, গুন্ডা এধরনের লোকদের সমালোচনা করতে কোন দোষ নেই। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) বলতেন, ফাসেক লোকের ক্ষেত্রে কোন গীবত নেই অর্থাৎ তাদের করা দোষের কিছু নয়। হাসান বসরী (রহঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, কোন বিদআতীর ব্যাপারে সমালোচনা করলে যেমন কোন গীবত নেই, এমনিভাবে প্রকাশ্য ফাসেকীতে লিপ্ত ব্যক্তি সম্পর্কে সমালোচনা করলেও তাতে কোন গীবত নেই। (ইমাম লালাকাঈ, শারহু উছূলে ইতেক্বাদে আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতঃ ১/১৪০)। ৫। ফাতাওয়া তলবকারী ও সুপরামর্শ দানকারীঃ ফাতাওয়া তলব করতে গিয়ে কারো দোষ-গুণ আলোচনা করার প্রয়োজন দেখা দিলে, তার জন্য ঐ সমালোচনা করা জায়েয। তবে নিয়ত খালেছ থাকতে হবে। বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে বর্ণিত আছে যে, হিন্দা (রাঃ) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে অভিযোগ করে বলেছিলেন, নিশ্চয়ই আবূ সুফিয়ান (রাঃ) 'স্বীয় স্বামী' একজন কৃপণ লোক, সে আমার ও আমার সন্তানদের জন্য যে পরিমাণ খাদ্য দ্রব্য অর্থাৎ খরচ খরচার প্রয়োজন তা ঠিকমত আমাদেরকে দেয় না। এমতাবস্থায় আমি যদি তাকে না জানিয়ে তার ধন-সম্পদ হতে কোন কিছু নিয়ে ফেলি, তাহলে কি আমার গোনাহ হবে? একথা শুনে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমার ও তোমার ছেলে মেয়েদের জন্য অতিরিক্ত যে জিনিসের প্রয়োজন হয়- ঠিক সে পরিমাণ জিনিস তুমি তোমার স্বামীর ধন-সম্পদ থেকে নিয়ে নিবে। এমনিভাবে যদি কেউ কারো কাছে কারো সম্পর্কে ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে কি না এ সম্পর্কে সুপরামর্শ চায় , তবে তাকে অবশ্যই তার দোষ-গুণ বলে দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার নিকট পরামর্শ তলব করা হয়, সে একজন আমানতদার। (সহীহুল জামেঃ ৬৭০০)। ৬। যে ব্যক্তি শরীয়াত বিরোধী অন্যায় কাজ সমাজ থেকে দূর করার জন্য ক্ষমতাশীল লোকদের নিকট হতে সাহায্য তলব করেঃ তাঁর জন্য প্রয়োজনে অন্যের গীবত করা জায়েয। যেমন কেউ কোন মহল্লার কোন মাস্তানের উৎপাতে বিপদগ্রস্ত। এমতাবস্থায় ঐ এলাকায় মাস্তানদের সকল তৎপরতা অর্থাৎ অন্যায়-অপকর্ম বন্ধের জন্যে থানায় গিয়ে তাদের পরিচয় ব্যক্ত করা জায়েয, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। মোট কথা স্বাভাবিকভাবে অন্যের গীবত করা হারাম হলেও উল্লিখিত ক্ষেত্রগুলিতে গীবত করা জায়েয আছে। তবে একথা সকলের জেনে রাখা উচিত যে, উল্লিখিত ক্ষেত্রগুলিতে অন্যের গীবত করা জায়েয হওয়ার ব্যাপারে ২ টি শর্ত রয়েছে। ১। নিয়ত খালেছ বা সঠিক হওয়া। ২। প্রয়োজন দেখা দেওয়া। (আল-হালাল ওয়াল হারাম ফিল ইসলাম, ২৯০)। অর্থাৎ নিয়তের মধ্যে যদি কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা উদ্দেশ্য হয়, তবে তা গীবত বলে গণ্য হবে। বিনা প্রয়োজনে অন্যের কোন বিষয় নিয়ে সমালোচনা ও পর্যালোচনা করাও গীবতের ভিতর গণ্য হবে। অতএব আমাদের সকলের উপর অপরিহার্য কর্তব্য হবে জিহবাকে সংযত রাখা। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার প্রতি আর পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তার উচিত হবে এটাই- সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ