ফযরের সুন্নত নামাজ ফরজ নামাজের পরে পড়লে সমস্যা আছে? ধরেন, আমি মসজিদে গিয়ে দেখলাম, জামাত শুরু হয়ে গেছে, তখন কি সুন্নত পরে জামাতে যোগ দিবো? নাকি জামাত পরে তারপর সুন্নত পড়বো?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

ফজরের সুন্নাতের গুরুত্ব, মর্যাদা ও ফজিলত অনেক বেশি। যেহেতু ফজরের সুন্নাত নামাজের গুরুত্ব, মর্যাদা ও ফজিলত বেশি, সেহেতু আগে আগে মসজিদে যাওয়াই উত্তম। যাতে তাড়াহুড়ো করে কিংবা ফজরের জামাতে মাসবুক হয়ে সুন্নাত পড়তে না হয়।

ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলে সুন্নাত পড়ার নিয়ম হল ইমামের সাথে দ্বিতীয় রাকাতের রুকু পাওয়ার প্রবল ধারণা হলে ফজরের সুন্নাত আগে পড়ে নিবেন। তারপর জামাতে শরীক হবেন। আর যদি দ্বিতীয় রাকাতের রুকু পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে সুন্নাত না পড়েই জামাতে শামীল হবেন।

সেক্ষেত্রে ফজরের সুন্নাতের কাযা করা জরুরী নয়। কেউ পড়তে চাইলে সুর্য উঠার পর পড়ে নিবে। সূর্য ওঠার আগে না পড়া উচিৎ।

ফজরের সুন্নাত নামাজ আদায়ের ব্যাপারে হাদিসে যে তাগিদ দেয়া হয়েছে, তা অন্য কোনো সুন্নাত নামাজের ক্ষেত্রে দেয়া হয়নি।

হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে, তার চেয়ে উত্তম। (সহীহ মুসলিম)

অন্য হাদিসে তিনি আরো বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত নামাজে এতবেশি গুরুত্ব দিতেন, যা অন্য কোনো নফল বা সুন্নাত নামাজে দেননি। (মুত্তাফাকুন আলাইহি)
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

নামাযের জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া কর্তব্য। যাতে ধীরস্থিরতার সাথে সুন্নত পড়া যায় এবং তাকবীরে উলার সাথে প্রথম কাতারে জামাতে নামায আদায় করা যায়। কিন্তু কখনো যদি এমন হয় যে, ইকামত শুরু হয়ে গেছে বা নামায শুরু হয়ে গেছে, তাহলে ফজরের সুন্নত ছাড়া অন্য সুন্নত হলে আর সুন্নতের নিয়ত বাঁধবে না; বরং জামাতে শরীক হয়ে যাওয়া জরুরি। আর যদি ফজরের সুন্নত হয় এবং এ কথা মনে হয় যে, তা পড়ে জামাতের অন্তত এক রাকাত পাওয়া যাবে, তাহলে মসজিদের বাইরে তো তা নিঃসন্দেহে পড়া জায়েয; বরং পড়ে নেওয়াই উত্তম। এমনভিাবে মসজিদের ভেতরে জামাতের কাতার থেকে দূরে বারান্দায় বা মসজিদের এক কোণায় অথবা খুঁটির আড়ালে পড়াও জায়েয আছে। কিন্তু জামাতের কাতারে বা তার নিকটে পড়া মাকরূহে তাহরিমী। ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নত পড়ে যদি জামাতের সাথে দ্বিতীয় রাকাতও পাওয়া যায় তাহলে সুন্নত পড়ে নিবেন। আর দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে সুন্নত পড়বেন না; বরং জামাতে শরিক হয়ে যাবেন এবং সূর্যোদয়ের পর তা পড়ে নিবেন। সুন্নত নামাযের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত। হাদীসে এর প্রভূত ফযীলত বর্ণিত হয়েছে এবং এর প্রতি বিশেষ তাগিদ দেওয়া হয়েছে। যা অন্যান্য সুন্নতের ক্ষেত্রে হয়নি। ফজরের সুন্নত সম্বন্ধে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করছি। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম। (সহীহ মুসলিম, হাদীসঃ ৭২৫)। তিনি আরো বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) নামাযে এত গুরুত্ব দিতেন যা অন্য কোনো নফল (বা সুন্নত) নামাযে দিতেন না। (সহীহ বুখারী, হাদীসঃ ১১৬৩; সহীহ মুসলিম, হাদীসঃ ৭২৪)। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা এই দুই রাকাত কখনো ত্যাগ করো না, শত্রুবাহিনী তোমাদের তাড়া করলেও। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীসঃ ১২৫৮)। আবু মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, (কূফার গভর্নর) সায়ীদ ইবনে আস তাঁকে এবং হুযায়ফা ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) কে ফজরের নামাযের আগে ডাকলেন। তারা (কাজ শেষে) তার কাছ থেকে বিদায় নিলেন। ইতিমধ্যে মসজিদে ফজরের নামাযের ইকামত শুরু হয়ে গেছে। ইবনে মাসউদ (রাঃ) মসজিদের একটি খুঁটির আড়ালে ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) পড়লেন। তারপর জামাতে শরীক হলেন। (শরহু মাআনিল আসারঃ ১/৬১৯)। যায়েদ ইবনে আসলাম থেকে বর্ণিত, ইবনে উমর (রাঃ) মসজিদে এসে দেখেন, ফজরের জামাত চলছে। কিন্তু তার ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) পড়া হয়নি। তিনি হাফসা (রাঃ) এর কামরায় তা পড়লেন। তারপর জামাতে শরীক হলেন। আবু উবায়দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, আবু দারদা (রাঃ) কখনো মসজিদে এসে দেখতেন, ফজরের জামাত চলছে। তিনি মসজিদের এক কোণায় (ফজরের) দুই রাকাত (সুন্নত) পড়ে নিতেন। তারপর জামাতে শরীক হতেন। (শরহু মাআনিল আসারঃ ১/৬২১)।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ