হাদিসের অালোকে প্রশ্ন দুইটার সঠিক উত্তর চাই ১. জেনে শুনে অপবিত্র বা অজু ছাড়া অাল্লাহকে সিজদাহ করা কি শিরকের অন্তর্ভুক্ত নয়? ২..অাত্নহত্যা করা কি শিরকের অন্তর্ভুক্ত নয়? সহিহ হাদিস দ্বারা বলবেন প্লিজ।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

প্রথমেই উত্তর দেই না।। রেফারেন্স → শিরক অর্থ আল্লাহর সাথে অংশীদার সাবস্ত করা। === পৃথিবীতে পাপ নামক যত প্রকারের কার্যক্রম রয়েছে তন্মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর ও বড় পাপ হচ্ছে শিরক। শিরক সবচেয়ে বড় পাপ হওয়ার মূল কারণ হল এটা সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর অস্তিত্ব ও সত্তার প্রতি প্রভাব ফেলে। যা মহান আল্লাহ বরদাশত করতে পারেন না। শিরকের সংজ্ঞা এবং উৎপত্তি ---------------------------------- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়ালা বলেনঃ- “তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক্ করবে না।” (সূরা, নিসা-৪:৩৬) রব ও ইলাহ হিসাবে আল্লাহর সহিত আর কাউকে শরীক সাব্যস্ত করার নামই শিরক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উলুহিয়াত তথা ইলাহ হিসাবে আল্লাহর সাথে শরীক করা হয়৷ যেমন আল্লাহর সাথে অন্য কারো নিকট দোয়া করা কিংবা বিভিন্ন প্রকার ইবাদাত যেমন যবেহ, মান্নাত, ভয়, আশা, মহব্বত ইত্যাদির কোন কিছু গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদন করা৷ এতে ‘ইলাহ’- এর গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যে সৃষ্টিকর্তার সাথে সৃষ্টিকর্তা কতৃক সৃষ্ট বস্তুর তুলনা করা হয়৷ কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করলো, সে প্রকারান্তরে তাকে আল্লাহর অনুরূপ ও সমকক্ষ বলে স্থির করলো৷ আল্লাহ বলেন- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়৷’ (সুরা লোকমানঃ13) জুলুম বলা হয় কোন বস্তুকে তার আসল জায়গা থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় রাখা৷ সুতরাং যে গায়রুল্লাহর ইবাদত করে, সে মূলত: ইবাদাতকে তার আসল স্থানে না রেখে ইবাদাত পাওয়ার উপযুক্ত নয় এমন কারো উদ্দেশ্যে তা নিবেদন করে৷ আর এটা হল সবচেয়ে বড় জুলুম এবং অন্যায়৷ আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘নিশ্চয়ই শিরক একটি বড় জুলুম’(সুরা লোকমানঃ ১৩) অতএব শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় জুলুম এবং তাওহীদ হচ্ছে সর্বোত্তম আদল ও ইনসাফ৷ আর যা বিশ্ব সৃষ্টির এই উদ্দেশ্যের সবচেয়ে বেশী পরিপন্থী, তাই সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহ৷ শিরকের উৎপত্তি : ============== আদম (আঃ) ও নূহ (আঃ)-এর মধ্যকার ব্যবধান প্রায় সহস্রাব্দ ছিল। এ সময় মানুষ তাওহীদের প্রতি বিশ্বাসী ছিল। সে সময় কোন শিরক পৃথিবীতে ছিল না। দুনিয়াতে প্রথম শিরক সংঘটিত হয়েছিল নূহ (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের মধ্যে। আর তা হয়েছিল সৎ ও বুযর্গ লোকদের মাধ্যমে। আল্লাহ বলেন- ‘তারা বলল তোমরা তোমাদের উপাস্যদের ত্যাগ কর না, আর তোমরা ওয়াদ, ইয়াগূছ, ইয়াউক এবং নাসরকেও ত্যাগ কর না’ (নূহ ২৩)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মহানবী (ছাঃ) বলেছেন, এ আয়াতে যে ক'টি নাম এসেছে এগুলো নূহ (আঃ) এর কওমের বুযর্গ লোকদের নাম। তাদের মৃত্যুর পর শয়তান ঐ সম্প্রদায়ের লোকদের প্ররোচিত করল, তারা যেন ঐসব বুযর্গগণ যেসব আসরে বসতেন সেখানে তাদের প্রতিমা বানিয়ে রাখে এবং তাদে নামে এগুলোর নামকরণ করে। তারা তাই করল। তবে এগুলোর উপাসনা হত না। এসব লোক মৃত্যুবরণ করার পর ক্রমান্বয়ে তাওহীদের জ্ঞান বিস্মৃত হল, তখন এগুলোর উপাসনা ও পূজা হতে লাগল (বুখারী, হা/৪৯২০)। “আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক করা গুনাহ মাফ করবেন না। শিরক ছাড়া অন্যান্য যে সব গুনাহ রয়েছে সেগুলো যাকে ইচ্ছা মাফ করে দিবেন।” (নিসাঃ৪৮) ১।আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন, “আল্লাহ ছাড়া এমন কোন সত্তাকে ডেকোনা, যা তোমার কোন উপকার করতে পারবে না এবং ক্ষতিও করতে পারবে না। যদি তুমি এমন কারো তাহলে নিশ্চয়ই তুমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন বিপদে ফেলেন, তাহলে একমাত্র তিনি ব্যতীত আর কেউ তা থেকে তোমাকে উদ্ধার করতে পারবে না।” (ইউনুসঃ ১০৬, ১০৭) “তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে [উপকার সাধন অথবা মুসীবত দূর করার জন্য] ডাকো তারা কোন কিছুরই মালিক নয়।” (ফাতেরঃ ১৩) ২। আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেছেন, “আল্লাহর কাছে রিযিক চাও এবং তাঁরই ইবাদত করো”। (আনকাবুত : ১৭) ৩। আল্লাহ তাআলা অন্য এক আয়াতে এরশাদ করেছেন, “তার চেয়ে অধিক ভ্রান্ত আর কে হতে পারে, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ছাড়া এমন সত্তাকে ডাকে যে সত্তা কেয়ামত পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দিতে পারবে না”। (আহকাফ : ৫) ৪। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন, “বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির ডাকে কে সাড়া দেয় যখন সে ডাকে ? আর কে তার কষ্ট দূর করে?” (নামল : ৬২) ৫। ইমাম তাবরানী বর্ণনা করেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে এমন একজন মুনাফিক ছিলো, যে মোমিনদেরকে কষ্ট দিতো। তখন মুমিনরা পরস্পর বলতে লাগলো, চলো, আমরা এ মুনাফিকের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহায্য চাই। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, “আমার কাছে সাহায্য চাওয়া যাবে না। একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইতে হবে।” এই প্রসঙ্গে প্রবিত্র কোরানে আল্লাহতায়ালা বলেন- “হে মুহাম্মাদ আপনি বলে দিন, আল্লাহ্ যা ইচ্ছা তা করেন। এ ছাড়া আমি আমার নিজের মঙ্গল অমঙ্গল কিছুই করার ক্ষমতা রাখিনা। আমি যদি গায়েবের খবর জানতাম তাহলে প্রভূত কল্যাণ লাভ করতে পারতাম এবং কোন অমঙ্গল ও অকল্যাণ আমাকে স্পর্শ করতে পারতো না। আমি তো শুধু মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য একজন ভয় প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদদাত “ (সূরা আরাফঃ আয়াত ১৮৮) এই আলোচনা থেকে আমরা যা শিখলামঃ- ------------------------------------------------------ ***আল্লাহ ব্যতীত আর কারো কাছে সাহায্য চাওয়া শিরক। ***আল্লাহ ব্যতীত আর কারো কাছে রিযিক চাওয়া উচিত নয় যেমন অনেকে বলে থাকে অমুক বাবার দরবার থেকে কেউ ফেরেনা খালি হাতে (এখানে অমুক বাবা রিযিক দিতে পারেন বলে মনে করা হয়) তেমনি আল্লাহ ব্যতীত আর কারো কাছে জান্নাত চাওয়া উচিত নয়। ***আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকলে সে কুফরী করবে। ***ইখলাসের সাথে একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইতে হবে। ***রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক তাওহীদের হেফাযত, সংরক্ষণ এবং আল্লাহ তাআলার সাথে আদব-কায়দা রক্ষা করে চলার বিষয়টি জানা গেলো। মহান আল্লাহ আমাদেরকে শিরকপূর্ণ কথা, কাজ ও চিন্তা থেকে হিফাজত করুন। আমীন সুতরাং আপনার প্রশ্নের কোনোটাই শিরক নয়।। কারন তাতে কাউকে অংশীদার সাবস্ত করা হয় নি।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

বুখারি ও মুসলিম শরীফের বর্ণনায় মিশকাত শরীফের ৪৪, ৪৫ ও ৪৬ নং হাদিসগুলো দেখতে পারেন। শিরিকি গুনাহ কি, তা বুঝতে পারবেন। তিনটি হাদিসেই এটা স্পষ্ট যে অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করাকে কবিরা গুনাহ গুনাহের অন্তর্ভূক্ত। খাদ্যাভাবে সন্তান হত্যা করাকে কবিরা গুনাহ বলা হয়েছে। "শিরিক" কবিরা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত। শিরিক মানে আল্লাহর সাথে আংশিদারিত্ব করা, বা তুলনা করা। এখন আপনাকে বুঝতে হবে, অপবিত্র বা অজু ছাড়া সিজদাহ করা এবং আত্মহত্যা করা কি আল্লাহর সাথে আংশিদারে সাম্পৃক্ত? মোটেও নয়। একজন আত্মহত্যা করলো, এর মানে কি এটা যে, "সে আত্মহত্যা করে প্রমাণ করলো যে, আমিই সর্বশক্তিমান।" মোটেও নয়। তাই আত্মহত্যাকে আমি শিরিক বলতে পারছি না। এবং বিনা অজুতে সিজদাহ করাকেও না। বরং আমি এসবকে কবিরা গুনাহ/কিংবা গুনাহের কাজ বলতে পারি। হাদিস ঘেটে যা বুঝেছি, তাই আপনাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেম। ভুল হলে সংশোধন করে দিবেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ