৫ ওয়াক্ত ফরজ সালাতের সম্মিলিত মুনাজাত অনেক স্কলাররা বলেন এটা বিদআত যদি বিদআত হয় তার সঠিক রেফারেন্স জানতে চাই। আর যদি সম্মিলিত মুনাজাত জায়েজ হয় তাহলে সেটার সঠিক রেফারেন্স জানতে চাই।     
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Habib96

Call

※কুরআন ও হাদীসের আলোকে সম্মিলিত মুনাজাতের বিধান※ দুআ অনেক বড় আমল, এমনকি হাদীস শরীফে এসেছে যে, ‘দুআই ইবাদত।’ এই দুআ যেমন একা একা করা যায় তেমনি সম্মিলিতভাবেও করা যায়। শরীয়ত যেখানে কোনো একটি পন্থা নির্ধারণ করে দিয়েছে সেখানে ওইভাবে দুআ করতে হবে- একা হলে একা এবং সম্মিলিতভাবে হলে সম্মিলিতভাবে। কিন্তু শরীয়ত যেখানে কোনো একটি পন্থা নির্দিষ্ট করেনি সেখানে উভয় পন্থাই মুবাহ। বিনা দলীলে কোনো একটিকে যেমন নাজায়েয বলা যায় না তেমনি সুন্নত বা জরুরিও বলা যায় না। এধরনের ক্ষেত্রে উভয় পন্থাই মুবাহ ও দুআকারীর ইচ্ছাধীন থাকে। উল্লেখ্য, সম্মিলিত দুআ দুইভাবে হতে পারে। এক. সমবেত লোকদের মধ্যে একজন দুআ করবে এবং অন্যরা আমীন বলবে। দুই. একস্থানে সমবেত হয়ে সবাই দুআ করবে, প্রত্যেকে নিজে নিজে দুআ করবে। এই উভয় ছুরত জায়েয। এছাড়া সমবেত হওয়ারও দুই ছুরত হতে পারে। শুধু দুআর উদ্দেশ্যেই সমবেত হওয়া কিংবা কোনো দ্বীনি বা দুনিয়াবী কাজের উদ্দেশ্যে সমবেত হয়ে মজলিসের শুরু বা শেষে সম্মিলিতভাবে দুআ করা। এই দুই ছুরতই জায়েয। তবে কোথাও যদি কোনো শরয়ী সমস্যা যুক্ত হয় তবে তার হুকুম ভিন্ন। এই সংক্ষিপ্ত মৌলিক আলোচনার পর শরীয়তের দলীলসমূহে সম্মিলিত দুআর সূত্র লক্ষ্য করুন। ১. প্রথম কথা তো হল, শরীয়তে সম্মিলিত দুআর এমন কিছু ক্ষেত্র বিদ্যমান রয়েছে যা একেবারেই সুস্পষ্ট এবং যে বিষয়ে দ্বিমতের কোনোই অবকাশ নেই। যেমন- (ক) জামাতের নামাযের জাহরী (স্বশব্দে) কিরাআতে ইমাম যখন সূরা ফাতিহা সমাপ্ত করেন তো সবাই ‘আমীন’ বলে। নামাযে সূরা ফাতিহা মূলত কিরাআত হিসেবে পড়া হলেও তা একই সঙ্গে দুআও বটে। এজন্যই তা সমাপ্ত হওয়ার পর আমীন বলা সুন্নত। একই কারণে সূরা ফাতিহার অপর নাম ‘দুআউল মাসআলাহ।’ (খ) জানাযার নামায একদিকে যেমন নামায অন্যদিকে তা দুআও বটে। জানাযার নামাযের মূলকথা হচ্ছে দুআ। এই নামাযও জামাতের সঙ্গে আদায় করা হয় এবং তৃতীয় তাকবীরের পর ইমাম-মুকতাদী সবাই একসঙ্গে মাইয়্যেতের জন্য দুআ করে। (গ) অনাবৃষ্টি দেখা দিলে এবং প্রয়োজন সত্ত্বেও যথারীতি বৃষ্টি না হলে শরীয়তে ‘ইস্তিসকা’র (অর্থাৎ আল্লাহর কাছে রহমতের বৃষ্টি কামনা করার) নির্দেশ এসেছে। ‘ইস্তিসকা’র বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। একটি পদ্ধতি  এই যে, সবাই সম্মিলিতভাবে দুআ করবে। যেমন সহীহ বুখারীতে আনাস রা.-এর বর্ণনা এসেছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টির জন্য উভয় হাত উঠিয়ে দোয়া করেছেন এবং তাঁর সঙ্গে উপস্থিত সকলে হাত উঠিয়ে দোয়া করেছেন।-সহীহ বুখারী (ঘ) জুমা ও দুই ঈদের খুৎবায় খতীব দুআ করেন এবং শ্রোতাগণ মনে মনে আমীন বলেন। সম্মিলিত দুআর এই পদ্ধতিও সব জায়গায় প্রচলিত রয়েছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত ‘ইস্তিগফার’ এর মাধ্যমে খুৎবা সমাপ্ত করতেন (মারাসীলে আবু দাউদ; যাদুল মাআদ ১/১৭৯) ২. কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে- قَالَ قَدْ اُجِیْبَتْ دَّعْوَتُكُمَا ‘তোমাদের দুজনের দুআ কবুল করা হয়েছে।’ এ আয়াতে ‘তোমাদের দুই জনের দুআ’ বলতে মুসা আ. ও হারূন আ. এর দুআ বোঝানো হয়েছে। একাধিক সাহাবী ও বেশ কয়েকজন তাবেঈ ইমামের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত মুসা আ. দুআ করেছেন এবং হারূন আ. আমীন বলেছেন। একেই আল্লাহ তাআলা ‘দুইজনের দুআ’ বলেছেন। (তাফসীরে ইবনে কাছীর ২/৪৭০; আদ্দুররুল মানছূর ৩/৩১৫) তো এটা তাঁদের দু’জনের সম্মিলিত দুআ ছিল, যা আল্লাহ তাআলা কবুল করেছেন এবং খোশখবরী শুনিয়েছেন যে- ‘তোমাদের দু’জনের দুআ কবুল করা হয়েছে।’ ৩. সাহাবিয়ে রাসূল হযরত হাবীব ইবনে মাসলামা আলফিহরী রা., যিনি বড় ‘মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ’ছিলেন, একবার তাকে একটি বাহিনীর আমীর নিযুক্ত করা হয়। তিনি যুদ্ধের প্রয়োজনীয় প্রস্ত্ততি সমাপ্ত করার পর যখন যুদ্ধের সময় নিকটবর্তী হল তখন সহযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে বললেন- سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : لَا يَجْتَمِعُ مَلَأٌ فَيَدْعُو بَعْضُهُمْ وَيُؤَمِّنُ سَائِرُهُمْ إِلَّا أَجَابَهُمُ اللَّهُ ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, কিছু মানুষ যখন কোথাও একত্র হয়ে এভাবে দুআ করে যে, একজন দুআ করে এবং অন্যরা আমীন বলে তো আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাদের দুআ কবুল করেন।’ এই হাদীস বয়ান করে তিনি আল্লাহ তাআলার হামদ ও ছানা করলেন এবং দুআ করতে আরম্ভ করলেন। তাঁর দুআর একটি অংশ এই ছিল- اللَّهُمَّ احْقِنْ دِمَاءَنَا وَاجْعَلْ أُجُورَنَا أُجُورَ الشُّهَدَاءِ ‘ইয়া আল্লাহ, আমাদের প্রাণ রক্ষা করুন এবং আমাদেরকে শহীদদের সমতুল্য ছওয়াব দান করুন।’ তাঁরা সবাই দুআতেই মশগুলে ছিলেন ইতোমধ্যে রোমক বাহিনীর সেনাপতি (অস্ত্র ত্যাগ করে) হাবীব ইবনে মাসলামা রা-এর তাবুতে এসে উপস্থিত হল।-মুজামে কাবীর, তাবরানী ৪/২৬; মুসতাদরাকে হাকেম ৩/৩৪৭ বর্ণনাটির সম্পূর্ণ আরবী পাঠ নিম্নরূপ : عَنْ حَبِيبِ بن مَسْلَمَةَ الْفِهْرِيُّ وَكَانَ مُسْتَجَابًا أَنَّهُ أُمِّرَ عَلَى جَيْشٍ فَدَرَّبَ الدُّرُوبَ، فَلَمَّا لَقِيَ الْعَدُوَّ، قَالَ لِلنَّاسِ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ : لا يَجْتَمِعُ مَلأٌ فَيَدْعُو بَعْضُهُمْ وَيُؤَمِّنُ سَائِرُهُمْ إِلا أَجَابَهُمُ اللَّهُ، ثُمَّ إِنَّهُ حَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ، فَقَالَ : اللَّهُمَّ احْقِنْ دِمَاءَنَا وَاجْعَلْ أُجُورَنَا أُجُورَ الشُّهَدَاءِ، فَبَيْنَمَا عَلَى ذَلِكَ إِذْ نَزَلَ الْهِنْبَاطُ أَمِيرُ الْعَدُوِّ،فَدَخَلَ عَلَى حَبِيبٍ سُرَادِقَهُ. رواه الطبراني في الكبير والحكم في المستدرك،والراوي عن ابن لهيعة أبو عبد الرحمن المقري، وهوأحد العبادلة الذين تعد روايتهم عن ابن لهيعةصحيحة. এই রেওয়ায়েতের সনদ কম করে হলেও ‘হাসান’পর্যায়ের। প্রশ্ন এই যে, সম্মিলিত দুআর ভিত্তি প্রমাণের জন্য এরচেয়ে স্পষ্ট বর্ণনার প্রয়োজন আছে কি? ৪. ইতিহাসে ‘আলা আলহাযরামী রা-এর ঘটনা সুপ্রসিদ্ধ। বাহরাইনের মুরতাদদের সঙ্গে ১১ হিজরীতে যে লড়াই হয়েছিল তাতে তিনি সিপাহসালার ছিলেন। সেই অভিযানের একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা এই যে, মুসলিম বাহিনী একস্থানে যাত্রাবিরতি করতেই কাফেলার সকল উট রসদপত্রসহ পলায়ন করল। একটি উটও পাকড়াও করা গেল না। অবস্থা এই দাড়াল যে, পরনের কাপড় ছাড়া কোনো রসদ কাফেলার সঙ্গে রইল না। সবার পেরেশান অবস্থা। ‘আলা আলহাযরামী রা. ঘোষকের মাধ্যমে সবাইকে একত্র করলেন এবং শান্তনা দিয়ে বললেন, ‘তোমরা মুসলমান, আল্লাহর রাস্তায় আছ তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী। অতএব আল্লাহ তোমাদেরকে সহায়-সঙ্গী বিহীন অবস্থায় ত্যাগ করবেন না।’ ইতোমধ্যে ফজরের আযান হল। তিনি নামাযে ইমামতি করলেন। নামাযের পর দোজানু হয়ে বসে অত্যন্ত বিনয় ও কাতরতার সঙ্গে দুআয় মশগুল হয়ে গেলেন। কাফেলার সবাই দুআ করতে লাগল। এ অবস্থায় সূর্য উদিত হল, কিন্তু তারা দুআয় মশগুল রইলেন। একপর্যায়ে আল্লাহ তাআলা তাদের সন্নিকটে একটি বড় জলাশয় সৃষ্টি করে দিলেন। সবাই সেখানে গেলেন, তৃষ্ণা নিবারণ করলেন এবং গোসল করলেন। বেলা কিছু চড়ার পর একে একে সকল উট সমস্ত রসদসহ ফিরে আসতে লাগল। হাদীস ও তারীখের ইমাম ইবনে কাছীর রাহ. বলেন, এটা ওই লড়াইয়ের অনেকগুলো অলৌকিক ঘটনার একটি, যা লোকেরা সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছে। আলোচ্য বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরবী ইবারতটুকু তুলে দিচ্ছি : فلما قضا الصلاة جثا على ركبتيه وجثا الناس،ونصب في الدعاء ورفع يديه وفعل الناس مثله ... দেখুন, আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ৫/৩৪; তারীখে তাবারী ২/৫২৩ মোটকথা, শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্মিলিত দুআর প্রমাণ-সিদ্ধতা একটি স্পষ্ট বিষয়। এসম্পর্কে অতিরিক্ত দলীল-প্রমাণের প্রয়োজন নেই। সম্মিলিত দোয়া সম্পর্কে আরো হাদীস জানতে হলে শায়েখ আব্দুল হাফিজ মাক্কী সংকলিত ‘ইসতিহবাবুদ দোয়া বা‘দাল ফারাইয’ কিতাবটি (পৃ. ৬৮-৭৯) দেখা যেতে পারে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ