বিজ্ঞানীদের মতে টাইম ট্রাভেলের মাধ্যমে ভবিষ্যতে যাওয়া সম্ভব কিন্তু অতীতে যাওয়া সম্ভব নয় এই যুক্তিটা আমার কাছে কিছু গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়েছে। তবে সেটা পুরোপুরি সফল হওয়ার জন্য যে প্রযুক্তির কথা উল্লেখ আছে তা সবসময় কল্পনা হিসেবে থাকবে বলে মনে হয়। আপনি টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে বেশি জানতে চাইলে Insterllsteller মুভিটা দেখতে পারেন।
অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুসারেও সময় ভ্রমণ সম্ভব।আলোর আপেক্ষিকতা অনুসারে কোনো বস্তু যখন গতিতে চলবে তখন তা হয়ে যাবে ভরশূন্য। আর যদি আলোর গতিতে চলে যায় তবে সময় স্থির হবে, মানে টাইম ট্রাভেল হবে। তার মানে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা অনুযায়ী তাত্ত্বিকভাবে সময় ভ্রমণ সম্ভব। এখানে t হচ্ছে কোনো স্থির বস্তুর সাপেক্ষে সময়, t হচ্ছে গতিশীল বস্তুর সাপেক্ষে সময় এবং v ও c হচ্ছে যথাক্রমে বেগ ও গতি। এখন v যদি আলোর বেগের কাছাকাছি কোনো বেগ হয় তাহলে t কমতে থাকবে।ধরুন, আপনাকে আলোর গতিতে ছুটে চলতে পারে এমন কোনো একটি মহাকাশযানে উঠিয়ে দেয়া হল এবং আপনি ভ্রমণে বেরিয়ে পড়লেন মহাজগতের এপার থেকে ওপার। কিন্তু পৃথিবীতে এসে দেখবেন অনেক বছর সময় কেটে গেছে যেখানে আপনার কাছে মনে হবে মাত্র অল্প কিছু সময়। এভাবেই আইনস্টাইনের থিওরীতে সময় ভ্রমণের ফর্মুলা লুকিয়ে আছে। আবার ধরুন,আপনাকে একটি টাইম মেশিন বানিয়ে দিলাম, আপনি এই টাইম মেশিন ব্যবহার করে অতীতে চলে গেলেন। আপনি টাইম মেশিনে করে ১৮৮৯ সালে চলে গেলেন। ১৮৮৯ সালের ২০শে এপ্রিল হিটলারের জন্ম। উনি জন্মানোর সাথে সাথেই আপনি তাঁকে গুলি করে হত্যা করলেন।তার তাহলে আর কোনো ইতিহাস থাকবে? যেমন তিনি ইহুদী নিধন করে সারাবিশ্বের খলনায়ক হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। যার জন্য আমরা আজ তাঁকে চিনি। যদি তিনি তৎকালীন অস্ট্রিয়ার কোনো সাধারণ নাগরিক হিসেবেই জীবনধারণ করতেন এবং প্রকৃতিগত কারণে একসময় মারা যেতেন তবে অবশ্যই তাঁকে আজ আমরা স্মরণ করতাম না।আর যেহেতু এই প্যারাডক্স অনুসারে আপনি তাঁকে অতীতে জন্মের পরপরই মেরে ফেলেছেন সুতরাং হিটলার নামক এক শিশু হত্যার দায়ে অস্ট্রিয়াতে আপনার নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হবে। এর বেশি কিছু তো হচ্ছে না? তার মানে যুগের পর যুগ তাকে কেউই মনে রাখবে না। আপনিও না আমিও না। তাহলে আপনি কেন অতীতে ফিরে গিয়ে হিটলারকে হত্যা করবেন? তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়ালো এই যে, হিটলারকে আপনি শিশু অবস্থায় মারতে পারবেন না, যদি পারতেন তাহলে সে ইতিহাসের পাতায় থাকতো না, আর ইতিহাসের পাতায় না থাকলে ‘হিটলার’ শব্দটির সঙ্গেও আপনার কোনো পরিচয় থাকতো না। সুতরাং হিটলার প্যারাডক্স অনুসারে সময় ভ্রমণে করে অতীতে যাওয়া অসম্ভব।আগের প্যারাডক্সটার মতো এইবারও ধরেন আপনি টাইম ট্রাভেল করে অতীতে যাবেন। তবে এই প্যারাডক্সের ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু জিনিস হাতে করে নিয়ে যেতে হবে। টাইম মেশিনের একপ্রান্তে ঢুকে অন্য প্রান্ত দিয়ে বের হয়ে চলে গেলেন অতীতে, ধরুন ৫ বছর বয়সী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে। সেখানে গিয়ে আপনি গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ রবি ঠাকুরের হাতে ধরিয়ে দিলেন। তিনি রীতিমত অবাক! ‘এ আবার কী?’ আপনি বললেন যে ‘এটি আপনারই লেখা’। লক্ষ করুন, আপনি কবিগুরুকে আগেই তার কাব্যগ্রন্থ দিয়ে দিয়েছেন, যা কবি নিজে লেখেননি। তাহলে এটি কে লিখলো? ধরে নিলাম আপনার দেয়া গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ দেখে হুবহু অবিকল একটি কাব্যগ্রন্থ রবি ঠাকুর প্রকাশ করলেন যা আপনার এনে দেয়া গীতাঞ্জলির মতোই, প্রতিটি শব্দে শব্দে মিল। কথা হচ্ছে আপনার দেয়া জ্ঞান ফটোকপি করে রবি ঠাকুর সেই কাব্যগ্রন্থটি রচনা করেন, তাহলে আপনি অতীতে আসার সময় যে কাব্যগ্রন্থটি এনেছিলেন সেটি কার লেখা? ঐ কাব্যগ্রন্থটির উৎপত্তি কোথায়? উত্তর- অসমাধানযোগ্য। তার মানে অস্তিত্বহীন বা মালিকানাহীন কোনো একটি বস্তু বা জ্ঞান বলে কিছু থাকতে পারে না। তার মানে এই প্যারাডক্স অনুসারে অতীতে ভ্রমন কি সম্ভব? অবশ্যই না।