HMMOBAROKBD

Call
ইসলামের দৃষ্টিতে তাবিজ-কবজ ব্যাবহার হারাম৷ বৈধ নয়৷  

কেউ যদি তাবিজ-কবচ, মাদুলি-কড়ি, সামুক-ঝিনুক, গিড়া, হাঁড়, তাগা-তামা-লোহা বা অনুরূপ কোন ধাতব বস্তু গলায় বা শরীরের কোথায়ও ধারণ করে এবং এ ধারণা পোষণ করে যে, ঐ গুলো বালা-মুসিবত দূর করার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ক্ষমতা রাখে, তবে তা বড় শিরক। আর যদি এ ধরনের ধারণা না হয়, তবে তা ছোট শিরক।

আমাদের দেশে কতক পীর-ফকির, আলেম-জাহেল, কি শিক্ষিত, কি অশিক্ষিত অনেকেই তাবিজ-কবচ, তাগা, কড়ি, সামুক, ঝিনুক ও গাছ-গাছালির শিকর-বাকর ইত্যাদি দিয়ে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করেন এবং ইহা বৈধ ও জায়েজ মনে করেন। আমি অত্র নিবন্ধের মাধ্যমে এ বিষয়টির তত্ত্ব ও স্বরূপ উদ্ঘাটন এবং ইসলামের দৃষ্টিতে তার হুকুম বর্ণনার প্রয়াস পেয়েছি।

এক. সাহাবি ইমরান বিন হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত : একদা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির হাতে তামার চুড়ি দেখে বললেন, এটা কি? সে বলল: এটা অহেনার অংশ। {অহেনার অর্থ এক প্রকার হাড়, যা থেকে কেটে ছোট ছোট তাবিজ আকারে দেয়া হয়।} তিনি বললেন: এটা খুলে ফেল, কারণ এটা তোমার দূর্বলতা বাড়ানো ভিন্ন কিছুই করবে না। যদি এটা বাঁধা অবস্থায় তোমার মৃত্যু হয়, তবে কখনও তুমি সফল হবে না।‘ ( সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদীস নং ৩৫৩১; হাদিসটি সহিহ্)

দুই. উকবা বিন আমের আল-জোহানি রাদিআল্লাহু আনহু বলেন : ‘একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে একদল লোক উপস্থিত হল। তিনি দলটির নয়জনকে বায়আত করলেন একজনকে করলেন না। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! নয়জনকে বায়আত করলেন একজনকে করলেন না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তার সাথে তাবিজ রয়েছে। অতঃপর তিনি স্বহস্তে তা ছিড়ে ফেললেন এবং তাকে বায়আত করলেন, আর বললেন, যে ব্যক্তি তাবিজ ব্যবহার করল সে শিরক করল।’ [মুসনাদে আহমেদ; হাদীস নং ১৬৯৬৯, শাইখ আলবানীর মতে এই হাদীসটি সহীহ]

অধিকাংশ সাহাবি ও তাদের অনুসারীদের মতে কুরআন ও হাদিসের তাবিজ ব্যবহার করাও নাজায়েজ। তাদের মধ্যে রয়েছেন: আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ, ইবনে আব্বাস, হুযাইফা, উকবা বিন আমের, ইবনে উকাইম।

যেসব দলিলের মাধ্যমে তাবিজ নিষিদ্ধ প্রমাণিত হয়েছে, সেসব দলিলে পৃথক করে কুরআন-হাদিসের তাবিজ বৈধ বলা হয়নি। যদি বৈধ হত, তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই তা বলে দিতেন। যেমন তিনি শিরক মুক্ত ঝাড়-ফুকের ব্যাপারটি অনুমতি দিয়েছেন। মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের ঝাড়-ফুঁক আমার কাছে পেশ কর, ওটা শিরকের আওতাধীন না হলে তাতে কোন বাধা নেই।’[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২০০]

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

ইসলামে কয়েক প্রকার তাবিজ জায়েজ নয়। যথা-

১. কুরআন হাদীস দ্বারা ঝাড়ফুক দেয়া ছাড়া শুধু তামা, পিতল বা লোহা দ্বারা তাবিজ বানিয়ে লটকিয়ে রাখা। অর্থাৎ শুধু এগুলো লটকানো দ্বারাই রোগমুক্ত হওয়া যাবে বিশ্বাস করে তা লটকানো নাজায়িজ।

২. এমন তাবিজ যাতে আল্লাহর নাম, কুরআনের আয়াত, দুআয়ে মাসূরা ব্যতিত শিরকী কথা লিপিবদ্ধ থাকে।

৩. তাবীজকে মুয়াসসার বিজজাত তথা তাবীজ নিজেই আরোগ্য করার ক্ষমতার অধিকারী মনে করে তাবিজ লটকানো। এ বিশ্বাস জাহেলী যুগে ছিল, বর্তমানেও ইসলাম সম্পর্কে কিছু অজ্ঞ ব্যক্তিরা তা মনে করে থাকে।

৪. যে কালামের অর্থ জানা যায় না এমন শব্দ দ্বারা তাবিজ লেখা।

৫. আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় তাবিজ লেখা।

এ সকল সুরতে সর্বসম্মত মতানুসারে নাজায়িজ ও হারাম এবং শিরক, এতে কোন সন্দেহ নেই।

কিন্তু তাবিজে কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম, দুআয়ে মাসুরা বা শিরকমুক্ত অর্থবোধক থাকলে তা অবশ্যই জায়িজ। একে নাজায়িজ ও শিরক বলা মুর্খতা বৈ কিছু নয়। কেননা এসব তাবিজের ক্ষেত্রে মুয়াসসার বিজজাত তথা আরোগ্যের ক্ষমতা আল্লাহ তাআলাকেই মনে করা হয়। যেমন ডাক্তার প্রদত্ত ঔষদের ক্ষেত্রে মুয়াসসার বিজজাত আল্লাহকে মনে করার কারণে তা নাজায়িজ নয়। যদি মুয়াসসার বিজজাত ঐ ঔষধকে মনে করলে ঔষধ সেবনও শিরক ও হারাম হবে।

হাদীস দেখেই ফাতওয়া দেয়া যায় না। হাদীস সম্পর্কে প্রাজ্ঞতা থাকতে হয়। তাবীজ কবচ সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত হাদীসে সেসব তাবীজকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে যেসব তাবীজের কথা ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখিত ৫ ধরণের নিষিদ্ধ তাতো আমরা আগেই উল্লেখ করেছি। নিষিদ্ধতার হাদীসে কেবল সেসবই উদ্দেশ্য। এ কারণেই আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাঃ তার সন্তানদের তাবিজ দিতেন। যাতে উল্লেখিত শর্তের কোনটি বিদ্যমান নয়।

আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে লিখেন- তামায়েম শব্দটি তামীমা শব্দের বহুবচন। যা পুঁতি বা মালা সাদৃশ্য। মাথায় লটকানো হয়। জাহেলী যুগে বিশ্বাস করা হতো যে, এর দ্বারা বিপদমুক্ত হওয়া যায়, মহিলারা এসব ব্যবহার করতো স্বামীর মোহাব্বত অর্জন করতে। এটি জাদুরই একটি প্রকার। এটি শিরকের অন্তুর্ভূক্ত। কেননা এর দ্বারা আল্লাহ ছাড়া অন্যের থেকে বিপদমুক্ত হওয়া ও উপকার অর্জন করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে; কিন্তু এ শিরকের অন্তুর্ভূক্ত হবে না যেসব তাবীজ কবচে আল্লাহর নাম বা কালাম থাকে। (ফাতহুল বারী-১০/২৯০-২৯১)

মোল্লা আলী কারী (রহঃ) বলেন- যদি তাবীজের মত কাগজ লিখা হয়। রাসূল সাঃ এর বানী “এটি শয়তানী কর্ম” এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল জাহেলী যুগে যদ্বারা চিকিৎসা করা হতো ও যার উপর নির্ভর করা হতো। আর যা কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম, আল্লাহর সিফাত সম্বলিত, দুআয়ে মাসুরা হয়, তাহলে কোন সমস্যা নেই। বরং এটি মুস্তাহাব। চাই সেটি তাবীজ হোক, বা ঝারফুক হোক বা কাগজে লিখা হোক। আর যেসব ইবরানী ও অন্যান্য ভাষায় লিখা হয় তা নিষিদ্ধ। কারণ তাতে শিরকের সম্ভাবনা আছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ-৮/৩৭৩, বর্ণনা নং-৪৫৫৩)

আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (রহঃ) উল্লেখ করেন- নিশ্চয় নিষিদ্ধ তাবীজ হল যা আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় লিখা হয়, বুঝা যায় না তাতে কি আছে? অথবা যাতে জাদু, কুফরী ইত্যাদি কথা থাকে। আর যেসব তাবীজে কুরআন বা দুআ সম্বলিত হয় তা ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই। (ফাতওয়ায়ে শামী-৬/৩৬৩)

আরও বিস্তারিত দেখুনঃ আহলে হক মিডিয়া-তে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজ ইত্যাদি অবশ্যই জায়িয।
**************************************
আমাদের সমাজে ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজ ইত্যাদির ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। বুজুর্গ আলেম ও পির-মাশায়েখগণ জানা-অজানা নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত লোকজনকে ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজ দিয়ে থাকেন। আর বিপদগ্রস্ত লোকজন এসব ব্যবহার করে উপকার লাভ করেন। এসবের প্রচলন আবহমান কাল থেকেই চলে আসছে।
ইদানিং এক শ্রেণীর লোককে ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজকে হারাম, শেরেকী আমলরূপে সাব্যস্ত করতে তৎপর দেখা যায়। সুতরাং ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজ-কবজের বৈধতা শরীয়তের দলীলদ্বারা প্রমাণ এবং তৎসঙ্গে যারা এগুলিকে হারাম সাব্যস্ত করে থাকেন ও এই চরম সিদ্ধান্তের অনুকূলে কিছু দলীল-প্রমাণ ও যুক্তির অবতারণা করেন, সেগুলি অবশ্যই পর্যালোচনার দাবি রাখে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, হালাল এবং হারামের দলীল আমাদিগকে কুরআন এবং সুন্নাহ্ থেকেই গ্রহণ করতে হবে। পবিত্র কুরআনে বা সুন্নায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ বা ইশারা-ইঙ্গিতেও যদি কোন বিষয়ের বৈধতার দলীল থাকে, তবে সে বিষয়টাকে সরাসরি হারাম বলা চরম ধৃষ্ঠতা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। তাছাড়া যুগ পরম্পরায় নির্ভরযোগ্য আলেমগণের আমলও শরীয়তের একটি দলীলরূপে গণ্য। শেষোক্ত এই দলীলটিকে ‘এজমায়ে উম্মত’ বলা হয়।
পবিত্র কুরআনের অনেকগুলি আয়াতে বলা হয়েছে যে, ‘কুরআন হচ্ছে মানবজাতির জন্য শেফা ও হেদায়াতের উৎস।’ আলোচ্য আয়াতগুলোতে উল্লেখিত ‘শেফা’ শব্দের তফসীরে শাহ্ আব্দুল হক মোহাদ্দেস দেহলভী (রহ.) লিখেছেন, ‘কুরআন শরীফের চাইতে ব্যাপক উপকারী এবং মানবজাতির রোগ-ব্যাধি নিরাময়কারী আর কিছু নাযিল হয়নি।’ যেমন বলা হয়েছে, ‘আর আমি কুরআনে এমন কিছু আয়াত নাযিল করেছি যা মু’মিনদের জন্য শেফা এবং রহমত স্বরূপ।’ (বনী ইস্রাঈল: ৮২)
এতদসঙ্গে পবিত্র কুরআনের আয়াতে শেফা নামে পরিচিত আয়াতগুলোর কথা উল্লেখ করা যায়। আয়াতগুলো হচ্ছে :
১. সুরা তাওবার ১৪ নং আয়াত, ২. সুরা ইউনূসের ৫৭ নং আয়াত, ৩. ছুরা নাহ্লের ৬৯ নং আয়াত, ৪. সুরা বনী ইস্রাঈলের ৮২ নং আয়াত, ৫. সুরা আশ্-শোয়ারার ৮৫ নং আয়াত এবং ৬. সুরা হা-মীম ছাজদার ৪৪ নং আয়াত। উপরোক্ত প্রতিটি আয়াতেই কুরআনে মুমিনদের জন্য ‘শেফা’, ‘রহমত’ প্রভৃতির কথা উল্লেখিত হয়েছে। তফসীরবিদ ইমাম বায়হাকী (রহ.) ‘শেফা’ অর্থ আত্মা এবং দেহ উভয়ের শেফা বা নিরাময় বলেছেন। অর্থাৎ পবিত্র কুরআনে যেমন আত্মার যাবতীয় রোগ এবং মন্দ প্রবণতার চিকিৎসা রয়েছে, তেমনি দেহের যাবতীয় রোগ-ব্যাধীরও চিকিৎসা রয়েছে।
কুরআনের আয়াত দ্বারা রোগ-ব্যাধির চিকিৎসা হতে পারে এ কথা অনুধাবন করার জন্য শেষ দু’টি সুরার তফসীর ও শানে-নুযুল পাঠ করাই যথেষ্ট। উল্লেখ্য যে, এই দুইটি সুরা হযরত নবি করীম (সা.)-কে যাদু করার প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছিল। আল্লাহ্পাক যাদুর প্রতিকার করার উদ্দেশ্যে সুরা দু’টি দান করেছিলেন।
ইমাম কুশাইরী (রহ.) তাঁর মারাত্মক অসুস্থ শিশুপুত্রের চিকিৎসার লক্ষ্যে যে আয়াতে ‘শেফা’ পাত্রে লেখে তা পানিতে ধুয়ে পান করিয়েছিলেন। ফলে মৃতকল্প শিশুটি আশ্চর্যজনকভাবে সুস্থ হয়ে উঠেছিল। ইমাম সাহেব এই তদবীরটি একটি মোবারক স্বপ্নের মাধ্যমে প্রাপ্ত নির্দেশের ভিত্তিতে করেছিলেন। তারপর থেকে আয়াতে ‘শেফা’ গুরুতর অসুস্থতা নিরাময়ের লক্ষ্যে যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ইমাম আবু বাকর ইবনে আবী শাইবাহ ‘মুনান্নাফ’ গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন, আমর ইবনে শুআইব তাঁর পিতা ও তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (স.) ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুম অবস্থায় ঘাবড়িয়ে উঠে, সে যেন ******** দো’আটি পাঠ করে। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর তাঁর উপযুক্ত সন্তানদের তা শিক্ষা দিতেন এবং ছোটদের গলায় তা লিখে লটকিয়ে দিতেন। এই হাদীসটি ইমাম আবূদাউদ (রাহ.) তাঁর সুনানে আবূ দাউদের কিতাবু-তিব্বের **** অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন।
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হল-তাবিজ দেয়া জায়েজ। যদি শিরক হত তাহলে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) এর মত বিখ্যাত বুযুর্গ সাহাবী তাবীজ লিখে ছোট ছোট শিশুদের গলায় লটকিয়ে দিতেন না। বিধায় কোন হাদীস পেলেই তার ব্যাখ্যা, মর্মার্থ, প্রয়োগ স্থল না বুঝে কোন কিছুর ব্যাপারে শিরকের সার্টিফিকেট লাগানো আদৌ ঠিক নয়।
ঃ ‘ইবনে আবী শাইবাহ মুজাহিদ (রাহ.) থেকে বর্ণনা করেন যে, মুজাহিদ (রাহ.) লোকদের জন্য তাবিজ লিখে তাদের গলায় লটকিয়ে দিতেন। এ মত তিনি আবু জাফর, মুহাম্মদবিন সীরিন, উবায়দুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর এবং যাহহাক প্রমুখ থেকে লটকানো, অথবা হাতে বাঁকানো বৈধ মনে করতেন।’
ইবনে আবী শাইবাহ মুজাহিদ (রাহ.) থেকে বর্ণনা করেন যে, মুজাহিদ (রাহ.) লোকদের জন্য তাবিজ লিখে তাদের গলায় লটকিয়ে দিতেন। এ মত তিনি আবু জাফর, মুহাম্মদবিন সীরিন, উবায়দুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর এবং যাহহাক প্রমুখ থেকে লটকানো, অথবা হাতে বাঁকানো বৈধ মনে করতেন।’
উপরে যেসব তাবিয়ীর কথা বলা হলো তারা বিখ্যাত সর্বজন অনুসৃত। এসব তাবিয়ীদের থেকেও কি শিরকের কল্পনা করা যায়? না এসব দুনিয়া বিখ্যাক মুহাদ্দিস তাবিয়ীগণ লেখক কর্তৃক উদ্ধৃত হাদীসগুলো সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন?
ঃ আয়িশা (রা.) বলেন, বিপদ আসার পর যা লটকানো হয় তা তামীমা (অর্থাৎ নাজায়েজ তাবীজ) এর অন্তর্ভূক্ত নয়।
(৪) বিশেষত: সালাফিরা যার পদে পদে অনুসরণ করে সেই ইমাম ইবনে তাইমিয়া এর দৃষ্টিতেও তাবিজ-কবচ বৈধ। তিনি ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়ার ১৯নং খন্ডের ৬৪ নং পৃষ্ঠায় লিখেন, বিপগ্রস্থ বা অসুস্থ লোকদের জন্য কালি দ্বারা আল্লাহর কিতাব লিখে তাবিজ দেয়া এবং ধুয়ে পান করানো জায়িজ।
উক্ত আলোচনার শেষদিকে ইবনে তাইমিয়া তাবিজাত বৈধ হওয়ার পক্ষে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) এর একটি আছর পেশ করেন। ইবনে আব্বাস (রা.) কাগজের টুকরায় তাবিজ লিখে দিতেন, তা সন্তানসম্ভবা নারীদের বাহুতে বেঁধে দেয়া হত।
শাফেয়ী মাযহাবের ইমাম তাজউদ্দীন সুবকী (রহ.) রোগ-ব্যাধী নিরাময়ের উদ্দেশ্যে আয়াতে শেফা এবং পবিত্র কুরআনের অন্য কয়েকটি আয়াতের ব্যবহার সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা শেষে মন্তব্য করেছেন যে, ‘আমাদের মাশায়েখগণ রোগ-ব্যাধী নিরাময়ের উদ্দেশ্যে পবিত্র কুরআনের আয়াত ব্যবহার করতেন।’
হাদিস শরীফের সহীহ্ বর্ণনায় বিচ্ছুর দংশনজনিত বিষ নিরাময়ের দোয়ার উল্লেখ আছে। সুতরাং ঝাড়-ফুঁক কুরআন-হাদিস পরিপন্থী, এমন কথা বলা মোটেও বাস্তবতা-সংগত নয়।
সাহাবি হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রা.) শিশুদিগকে সর্বপ্রকার ভয়-ভীতি ও আপদ-বালাই থেকে নিরাপদ থাকার একটি দোয়া শিক্ষা দিতেন। যারা দোয়াটি উচ্চারণ করতে সম হতো না তাদের জন্য দোয়াটি কাগজে লিখে তা ওদের গলায় ধারণ করতে দিতেন। [যাদুল-মাআদ]
হাদিস শরীফের কোনো কোনো বর্ণনায় ‘তাবিজ’ শব্দটিরও উল্লেখ পাওয়া যায়। সুতরাং সন্দেহাতীতভাবেই প্রমাণিত হয় যে, ঝাড়-ফুঁক যেমন একটি মছনূন আমল, তেমনি তাবিজ ব্যবহারও সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে প্রচলিত একটি বৈধ আমল।
আবু দাউদ এবং ইবনে মাজাহ্ শরীফে ‘রোক্বা তামায়েম ও তোলা হারাম’ উল্লেখ করে যে হাদিসটি বর্ণনা করা হয়েছে, সে হাদিসের তিনটি শব্দ রোক্বা অর্থ-দুর্বোধ্য বা শেরেকী শব্দাবলী সম্বলিত ঝাড়-ফুঁক, তামায়েম অর্থ-তন্ত্রমন্ত্র লিখিত তাবিজ এবং তোলা অর্থ-তুক-তাক বা যাদুমন্ত্র। জাহেলিয়াতের যুগে যেমন এসবের প্রচলন রয়েছে। এসব কুফরী যাদুমন্ত্রের ব্যবহার যে হারাম তাতে কারো দ্বিমত নাই।
ইবনে মাজাহ্ শরীফে হযরত আলী (রা.)কর্তৃক বর্ণিত এক হাদিসে আছে যে, সর্বাপো বড় নিরাময়কারী হচ্ছে কুরাআন। ইমাম বায়হাকী (রহ.) ও শাফী (রা.) আয়াতে শেফার তফসীরে পবিত্র কুরআনের আয়াত দ্বারা রোগের চিকিৎসা সম্পর্কিত দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত বিবরণ ‘মাওয়াহেবে রাদুন্নিয়া’ নামক বিখ্যাত কিতাবে আলোচিত হয়েছে। এতদসঙ্গে একথাও বলা হয়েছে যে, কুরআনের আয়াত বা হাদিস শরীফে উল্লেখিত দোয়া কালাম পাঠ করে বা অন্যান্য প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করে সমান উপকার পাওয়া যায়।
ইমাম কুশাইরী (রাহ.) ঝাড়-ফুঁক এবং তাবিজকে দোয়ার বিকল্পরূপে উল্লেখ করেছেন। কারণ, দোয়া তাবিজ এবং ঝাড়-ফুঁক প্রভৃতি সবকিছুতেই আল্লাহর নামের ওছিলা গ্রহণ করে আল্লাহ্র নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করা হয়, যা অবৈধ হওয়ার কোন কারণ নেই। বরং এগুলিও একান্তভাবে আল্লাহ্র নিকটই সাহায্য প্রার্থনার একটি পদ্ধতিরূপে গ্রহণযোগ্য। এই গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিকে কুফুরী ও জাহেলিয়াত যুগের শেরেকী কালামের কুফুরী ও জাহেলিয়াত যুগের শেরেকী কালামের সাথে একাকার গণ্য করা মোটেও যুক্তিযুক্ত হতে পারে না।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ