চাষার দুক্ষু প্রবন্ধে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন দেখিয়েছেন,তৎকালীন কৃষকদের অবস্থা কত শোচনীয়। পাকা বাড়ি, রেলওয়ে, ট্রামওয়ে, স্টিমার, এরোপ্লেন, মোটর গাড়ি, টেলিফোন, টেলিগ্রাফসহ আরও যে কত আবিষ্কার ভারতবর্ষের শহুরে মানুষের জীবন সমৃদ্ধ ও সচ্ছল করে তুলেছে তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু সেই ভারতবর্ষেই কৃষকদের পেটে খাদ্য জোটে না, শীতে বস্ত্র নেই, অসুখে চিকিৎসা নেই। এমনকি তাদের পান্তাভাতে লবণও জোটে না। সমুদ্র তীরবর্তী লোকেরা সমুদ্রজলে চাল ধুইয়ে লবণের অভাব মেটানোর চেষ্টা করে।কৃষকদের এই শোচনীয় অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন পাঠশালা প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন এবং গ্রামীণ কুটির শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
চাষার দুক্ষু প্রবন্ধ বুঝতে আপনাকে খুব দূরের ইতিহাসে চোখ দিতে হবে না। আপনি বর্তমান সময়ের দিকে তাকালেই দেখতে পারবেন তাদের দুরাবস্থা। আপনি অবশ্যই জানেন যাদের পরিশ্রমের ফলে আমাদের পেটে দানা পানি পড়ে তাদের মজুরি ই কত কম! তাদের প্রতি কি পরিমান অবিচার! মণ মণ চালের দাম মাত্র কতো টাকা ! তাতে তাদের চাষের খরচের হিসাব মিটিয়ে নিজের আয় বলতে থাকে কিছুই ই না। আবার দেখবেন, তাদের কোন আন্দোলন নেই, নেই বিক্ষোভ। হবেই বা কিভাবে আন্দোলন বলেন? শিক্ষা নেই তো। তাই তাদের দুরাবস্থার জন্যে তারা ই দায়ী। অন্য কেও না। রোকেয়া ঠিক এই কথা গুলাই বলে গেছেন। আবার আরেকটি ক্ষেত্রে দেখবেন, নিজের অর্থ সঞ্চয়ের ব্যাপারে তারা উদাস। যার ফলে নিজের আয়ের সব ই চলে যায় তাদের ভুল জীবনযাত্রায়। অর্থাৎ তারা নিজেদের মান টাকে না দেখে কিছু লাভ হওয়ার পরেই সে লাভ উরিয়ে দেয় বিলাসে, পরবর্তী তে খরচ সম্বন্ধে তারা কোন রকম চিন্তা করেই ই না। আর নিজেদের শিক্ষার অভাব থাকায় তারা তাদের উপর শোষণের চিত্রটাও দেখতে পায় না। বেগম রোকেয়া ঠিক এই কথা গুলোই বলে গেছেন।