এ বিষয়ে ইসলামিক বা গ্রহণযোগ্য ব‍্যাখ‍্যা কী?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

হাশর আরবী শব্দ। এর অর্থ উঠানো ও একত্রীকরণ। প্রচলিত অর্থে হাশর বলতে সমস্ত মানুষকে শেষ বিচারের দিনে একত্রীত করাকে বোঝায়। বিশ্বজগৎ ধ্বংস হওয়ার পর আল্লাহ তায়ালা সবাইকে পাপপুণ্যের বিচারের জন্য পুনরায় জীবিত করবেন। সবাইকে সেদিন আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে ভাল মন্দ বিচারের জন্য। হাশর এবং তার অবস্থান সম্পর্কে হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন মানুষদিগকে নগ্ন পদ, নগ্ন দেহ ও খাতনাবিহীন অবস্থায় সমবেত করা হবে। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূল (সাঃ)! নারী-পুরূষ সকলেই কি একজন আরেকজনের দিকে দেখতে থাকবে? তিনি বললেন, হে আয়েশা! সেই সময়টি এত কঠিন হনে যে, কেউ কারো প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার অবকাশ পাবেনা। হাশরের ময়দানে যখন বিচার শুরু হবে তখন সবাই বলতে থাকবে ইয়া নাফসি! ইয়া নাফসি! যার বাংলা অর্থ দাড়ায় হায় আমার কি হবে! আমার কি হবে! আর তখন আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলতে থাকবেন ইয়া উম্মতি! ইয়া উম্মতি যার বাংলা অর্থ হলো আমার উম্মতের কি হবে! আমার উমমতের কি হবে। এই দিনে নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আমাদের জন্য শাফায়াত করবেন। কুরআন ও সুন্নাহ এই শাফায়াতের বর্ণনা এসেছে। তাওহীদপন্থীগণ এ ধরণের শাফায়াতের হকদার হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ কিয়ামতের দিন কোন ব্যক্তি আপনার শাফায়াতের বেশী হকদার হবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আবু হুরায়রা! তোমার হাদীস শেখার আগ্রহ দেখে আমার ধারণা ছিল যে, তোমার পূর্বে এ বিষয় সম্পর্কে কেউ জিজ্ঞাসা করবে না। যে ব্যক্তি অন্তর থেকে ইখলাসের সাথে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি আমার শাফায়াতের সবচেয়ে বেশী হকদার হবে। এই শাফায়াতের জন্য ৩টি শর্ত রয়েছে। ১। শাফায়াতকারীর উপর আল্লাহর সনষ্টি থাকা। ২। যার জন্য সুপারিশ করা হবে, তার উপরও আল্লাহর সনষ্টি থাকা। ৩। শাফায়াতকারীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে শাফায়াত করার অনুমতি থাকা। আল্লাহ তাআলা এই শর্তগুলো কুরআন মাজীদে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেনঃ আকাশে অনেক ফেরেশতা রয়েছেন, যাদের কোন সুপারিশ ফলপ্রসু হয়না। কিন্তু আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা ও যাকে পছন্দ করেন এবং যাকে শাফায়াত করার অনুমতি দেন তার কথা ভিন্ন। (সূরা নাজমঃ ২৬) আল্লাহ বলেনঃ কে এমন আছে যে, সুপারিশ করবে তার কাছে তার অনুমতি ছাড়া? (সূরা বাকারাঃ ২৫৫) আল্লাহ বলেনঃ দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথায় সন্তুষ্ট হবেন সে ছাড়া কারও সুপারিশ সেদিন কোন উপকারে আসবে না। (সূরা ত্বো-হাঃ ১০৯) আল্লাহ বলেনঃ তারা শুধু তাদের জন্যে সুপারিশ করবেন, যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট। (সূরা আন্বীয়াঃ ২৮) সুতরাং শাফায়াত পাওয়ার জন্য উপরোক্ত তিনটি শর্ত থাকা আবশ্যক। এই শাফায়ত আবার দুই প্রকারঃ ১। সাধারণ শাফায়াতঃ সাধারণ শাফায়াতের অর্থ হল, সৎ বান্দাদের মধ্যে থেকে যাকে ইচ্ছা এবং যার জন্য ইচ্ছা আল্লাহ শাফায়াত করার অনুমতি দিবেন। এই ধরণের শাফায়াত আল্লাহর অনুমতি পেয়ে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, অন্যান্য নবী-রাসূল, সত্যবাদীগণ, শহীদগণ এবং নেককারগণ করবেন। তারা পাপী মুমিনদেরেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বের করে আনার ব্যাপারে সুপারিশ করবেন। ২। বিশেষ ও নির্দিষ্ট সুপারিশঃ এই ধরণের শাফায়াত নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য নির্দিষ্ট। এই শাফায়াতের মধ্যে সবচেয়ে বড় হল হাশরের মাঠের শাফায়াত। হাশরের মাঠে মানুষ যখন বিপদে পড়ে যাবে এবং অসহনীয় আযাবে গ্রেপ্তার হবে, তখন তারা একজন সুপারিশকারী খুঁজে ফিরবে। যাতে করে তারা এই ভীষণ সংকট থেকে রেহাই পেতে পারে। প্রথমে তারা আদম (আঃ) এর কাছে গমণ করবে। অতঃপর পর্যায়ক্রমে নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা (আঃ) এর কাছে যাবে। তারা কেউ সুপারিশ করতে সাহস করবেন না। অবশেষে তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসবে। তিনি মানুষকে এই বিপদজনক অবস্থা হতে মুক্ত করার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন। আল্লাহ তার দুআ এবং শাফায়াত কবূল করবেন। এটিই হল সুমহান মর্যাদা, যা আল্লাহ তাকে দান করেছেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ