Call

হযরত উমর (রাঃ) বলেন, একদা রাত্রে আমি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে উত্যক্ত করার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হলাম। তখন তিনি কাবার মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি ত্রস্তপায়ে এগিয়ে গিয়ে নামাজ শুরু করলেন। আমি তা শুনবার জন্যে দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি সূরা আল-হাক্কাহ থেকে কিরাআত পড়ছিলেন। আমি সে কালাম শুনে বিস্ময়ে মুগ্ধ হলাম। তার কবিত্বময় ভাষা ও বর্ণনাভঙ্গি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী মনে হলো। আমি মনে মনে ভাবলামঃ খোদার কসম! লোকটি নিশ্চয়ই কবি।

ঠিক এ মুহুর্তেই তিনি এ আয়াত পড়লেনঃ

অর্থঃ এ এক সম্মানিত বার্তাবাহকের কালাম, এ কোনো কবির বাণী নয়, কিন্তু তোমাদের মধ্যে খুব কম লোকই ঈমান এনে থাকে। (আল-হাক্কাহ আয়াতঃ ৪০-৪১)

একথা শোনা মাত্রই আমার ধারণা হলো! ওহো, লোকটি তো আমার মনের কথা জেনে ফেলেছে। এ নিশ্চয়ই কোনো গণক হবে। এরপরই মুহাম্মদ (সাঃ) এই আয়াত পাঠ করলেনঃ

অর্থঃ এ কোনো গণকের কালাম নয়; তোমরা খুব কমই নসিহত পেয়ে থাকো। এতো রাব্বুল আলামীনের কাছ থেকে নাযিল হয়েছে। (আল হাক্কাহ আয়াতঃ ৪২-৪৩)

তিনি এই সূরা শেষ পর্যন্ত পড়লেন। আমি অনুভব করলাম, ইসলাম আমার হৃদয়ে তার আসন করে নিচ্ছে। কিন্তু যতদূর মনে হয়, হযরত উমর (রাঃ) অত্যন্ত শক্ত প্রকৃতির ও দৃঢ় চিত্ত লোক ছিলেন। এজন্যে এবারই তাঁর ভেতরকার পরিবর্তনটা পূর্ণ হলো না। তিনি তাঁর চিরাচরিত পথেই চলতে লাগলেন। এমনকি, একদিন তিনি দুশমনীর তাড়নায় উত্তেজিত হয়ে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে হত্যা করার উদ্দেশ্যে উন্মুক্ত তরবারি নিয়ে ঘর থেকে বেরুলেন। পথিমধ্যে নঈম বিন আব্দুল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হলো। সে জিজ্ঞেস করলো, কোথায় যাচ্ছ উমর?

তিনি বললেন, মুহাম্মদ (সাঃ) কে হত্যা করতে যাচ্ছি। নঈম বললো, আগে তোমার নিজের ঘরের খবর নিয়ে দেখো। তোমার নিজের বোন- ভগ্নিপতিই তো ইসলাম গ্রহণ করেছে।

একথা শুনে উমর (রাঃ) মোড় ফিরলেন এবং সোজা বোনের বাড়ীতে গিয়ে হাযির হলেন। তাঁর বোন- ভগ্নিপতি উভয়েই তখন কুরআন তিলাওয়াত করছিলেন। উমরকে আসতে দেখেই তাঁরা চুপ করে গেলেন এবং কুরআনের অংশটি লুকিয়ে ফেললেন। কিন্তু তারা যে কিছু পড়ছেন, তা উমর (রাঃ) টের পেয়েছিলেনল।

তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কী পড়ছিলে?

তোমরা নাকি বাপ-দাদার ধর্মকে ত্যাগ করেছ?

একথা বলেই তিনি ভগ্নিপতিকে প্রহার করতে লাগলেন। স্বামীর সাহায্যের জন্যে বোন এগিয়ে এলে তাঁকেও তিনি মারতে লাগলেন। এমনকি উভয়ে রক্তাপ্লুত হয়ে গেলেন। কিন্তু এতৎসত্ত্বেও তারা সুস্পষ্ট ভাষায় বললেনঃ

আমরা সজ্ঞানে ইসলাম কবুল করেছি; সুতরাং তোমার কোনো কঠোরতাই আমাদেরকে এ পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না। তাদের এই অটল সংকল্প দেখে উমর (রাঃ) কিছুটা প্রভাবিত হলেন। তিনি বললেন, আচ্ছা তোমরা কি পড়ছিলে আমাকে শোনাও দেখি।

বোন ফাতিমা কুরআনের অংশটি এনে সামনে রাখলেন। সেটি ছিলো সূরা তা-হা। তিনি পড়তে শুরু করলেন এবং ১৪ নাম্বার আয়াত পর্যন্ত এসে পৌঁছলেন।

আয়াত গুলি অর্থ হচ্ছে।

১। ত্বা-হা।

২। আপনি কষ্ট-ক্লেশে পতিত হন – এ জন্য আমরা আপনার প্রতি কুরআন নাযিল করিনি।

৩। বরং সে ভয় করে তার জন্য উপদেশ হিসেবে।

৪। যিনি যমীন ও সমুচ্চ আসমানসমূহ সৃষ্টি করেছেন তাঁর কাছ থেকে এটা নাযিলকৃত।

৫। দয়াময় (আল্লাহ) আরশের উপর উঠেছেন।

৬। যা আছে আসমানসমূহে ও যমীনে এবং দু’য়ের মধ্যবর্তী স্থানে ও ভূগর্ভে তা তাঁরই।

৭। আর যদি আপনি উচ্চকণ্ঠে কথা বলেন , তবে তিনি তো যা গোপন ও অতি গোপন তা সবই জানেন।

৮। আল্লাহ! তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই , সুন্দর নামসমূহ তাঁরই।

৯। আর মূসার বৃত্তান্ত আপনার কাছে পৌঁছেছে কি?

১০। তিনি যখন আগুন দেখলেন তখন তার পরিবারবর্গকে বললেন, তোমরা অপেক্ষা কর, আমি তো আগুন দেখেছি। সম্ভবত আমি তোমাদের জন্য তা থেকে কিছু জ্বলন্ত অঙ্গার আনতে পারবো অথবা আমি আগুনের কাছে ধারে কোন পথনির্দেশ পাব।

১১। তারপর যখন তিনি আগুনের কাছে আসলেন তখন তাকে ডেকে বলা হল, হে মূসা!

১২। নিশ্চয় আমি আপনার রব, অতএব আপনার জুতা জোড়া খুলে ফেলুন, কারণ আপনি পবিত্র ‘তুওয়া’ উপত্যকায় রয়েছেন।

১৩। আর আমি আপনাকে মনোনীত করেছি। অতএব যা ওহী পাঠানো হচ্ছে আপনি তা মনোযোগের সাথে শুনুন।

১৪। আমি আল্লাহ্ আমি ছাড়া অন্য কোন হক ইলাহ নেই। অতএব আমারই ইবাদাত করুন এবং আমার স্মরণার্থে সালাত আদায় করুন।

এ পর্যন্ত আসতেই তিনি এতটা প্রভাবিত হলেন যে, হঠাৎ সজোরে বলে উঠলেনঃ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ। এরপর তিনি সেখান থেকে সোজা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর খেদমতে রওয়ানা হলেন। এ সময় হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) সাহাবী আরকামের গৃহে অবস্থান করছিলেন। উমর দরজার কাছে পৌঁছলে তাঁর হাতে তরবারি দেখে উপস্থিত সাহাবীগণ ঘাবড়ে গেলেন। কিন্তু হযরত হামযা (রাঃ) বললেন, আসুক না, তার নিয়্যাত যদি ভাল হয় তো ভাল কথা। নচেৎ তার তরবারি দ্বারাই তার মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলবো।

উমর (রাঃ) ঘরের মধ্যে পা বাড়াতেই হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এগিয়ে এসে তাকে সজোরে আকঁড়ে ধরে জিজ্ঞেস করলেনঃ কি উমর কি উদ্দেশ্যে এসেছ?

একথা শুনেই যেন উমর ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে জবাব দিলেন, ঈমান আনার উদ্দেশ্যে।

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) স্বতস্ফূর্তভাবে বলে উঠলেন, ‘আল্লাহু আকবার’ সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত সাহাবী তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করলেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ