বর্তমান সমাজের যুবকদের একটি প্রধান সমস্যা হস্তমৈথুন। কীভাবে এই সমস্যা থেকে তাদেরকে মুক্ত করা যায়?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

হস্তমৈথুন বর্তমানে যুবকদের সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এই সমস্যার জন্য ব্যক্তির থেকে সমাজ বেশি দায়ী । বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজ 'Late Marriage ' কে বেশি গুরুত্ব দেয়ায় এই সমস্যা আরো প্রকট হয়েছে। যখন হালালের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই হারামের দিকেই মানুষ বেশি ঝুঁকে।


আমি এখন ইসলামের আলোকে এই নেশা থেকে মুক্তি পাবার কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করব---

১) তাক্বওয়া:
অন্তরে আল্লাহ্‌ তাআলার ভয় থাকতে হবে। আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদের সর্বদা আমাদের দেখছেন , তাই যখনই Sexual Urge অনুভব করবেন তখনই মনে রাখবেন যে আল্লাহ্‌ তাআলা আপনাকে দেখছেন। তাঁর দৃষ্টিকে এড়িয়ে আপনি কখনোই কোন কাজ করতে পারবেন না। আপনার কাজের জবাবদিহি আল্লাহ্‌ তাআলার কাছে করতে হবে।যদি তিনি অসন্তুষ্ট হন তাহলে আপনার পরিণাম হবে জাহান্নাম । -- এই কথাগুলো মাথায় রাখবেন।

আর তাক্বওয়া বৃদ্ধি পায় এমন আমল নিয়মিত করতে হবে। তাক্বওয়া আপনাকে সকল প্রকার হারাম থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম ।

২)বিয়ে : 
 বিয়ে ব্যতীত হস্তমৈথুনের অন্য কোন 'Quick Cure' নেই। বলা যায় বিয়েই একমাত্র উপায় যা কিনা একজন পুরুষকে হস্তমৈথুনের নেশা থেকে পুরোপুরি মুক্তি দিতে সক্ষম। ইসলাম আমাদের বিয়ে করার উৎসাহ দিয়েছে এবং হস্তমৈথুনসহ সকল বিকৃত যৌনাচারের বিরুদ্ধে দমনমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।

ইসলামী সমাজ বিয়েকে সহজ করে তুলে আর পুঁজিবাদী সমাজ বিয়েকে করে তুলে কঠিন যা আমরা আমাদের সমাজে দেখতে পাচ্ছি। বিয়ে কঠিন হয়ে যাওয়ায় সমাজে অশ্লীলতা বৃদ্ধি পায় ও হস্তমৈথুনসহ বিকৃত যৌনাচারের প্রসার ঘটে।

বিয়েই পারে মানুষকে অশ্লীলতার ফিতনা থেকে পুরোপুরি মুক্তি দিতে কারণ নারী-পুরুষের ভালবাসার জন্য বিয়েই হল সবচেয়ে উত্তম ব্যবস্থা।

রসূলুল্লাহ্‌ (সঃ ) বলেন-- 
" দু'জনের পারস্পারিক ভালবাসার জন্য বিবাহের মত আর কিছু নেই। " [সিলসিলাহ সহীহাহ -৬২৪] 

তাই আপনি কখনোই হস্তমৈথুন দ্বারা তৃপ্ত হতে পারবেন না বরং এটা আপনার তৃষ্ণাকে আরো বাড়িয়ে দিবে।

৩) সাওম পালন :
যারা বিয়ে করতে পারছেন না তাদের জন্য উত্তম হল সাওম পালন করা ।কারণ সাওম পালন করলে মানুষের ' Will Power ' বাড়ে এবং মানুষ নিজেকে আধ্মাতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখে ।আর এই দুটি গুণ দিয়ে সহজেই একজন তার Sexual Desire ' কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

রসূলুল্লাহ্‌ (সঃ ) বলেন --- 
" হে যুবক সমাজ! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ে করার সামর্থ রাখে সে যেন বিয়ে করে । কেননা বিয়ে দৃষ্টি ও লজ্জাস্থান হিফাযাতের জন্য সবচেয়ে বেশি সহায়ক । আর যে সামর্থ রাখে না সে যেন সাওম পালন করে ,কেননা সাওম যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী । " [সহীহ মুসলিম] 

আর এই কারণে রমাদান মাসে অনেকেই পুরো এক মাসই হস্তমৈথুন করা থেকে বিরত থাকতে পারে।

৪)নিয়মিত স্বলাত আদায়:
ইসলাম প্রাকটিস করা ছাড়া এই নেশা থেকে মুক্তি পাবার পসিভিলিটি খুবই কম । ইসলাম প্রাকটিস করতে হলে অবশ্যই আপনাকে নিয়মিত স্বলাত আদায় করতে হবে। আর স্বলাতের ফাযীলতগুলোর মধ্য একটি হল যে স্বলাত অশ্লীল কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখে।

মহান আল্লাহ্‌ বলেন-- 
" নিশ্চয়ই স্বলাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। " [সূরা আনকাবূত, আয়াত-৪৫ ] 

হস্তমৈথুন অবশ্যই একটা Erotic Act তাই নিয়মিত যত্নের সাথে স্বলাত আদায় করলে অবশ্যই আপনি এই অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকতে সক্ষম হবেন। বিস্তারিত জানার জন্য আয়াতটির তাফসীর দেখে নিবেন।

৫)দৃষ্টি সংযত রাখা : 
এই বিষয়ে অনেকে যুবকই অসচেতন । একটা কথা আপনাকে মনে রাখতে হবে যে 'Sincerity ' ছাড়া কখনোই আপনি এই নেশা থেকে মুক্তি পাবেন না। আর 'Sincerity ' এর পরীক্ষায় আপনাকে পাশ করতে হলে অবশ্যই যখন আপনাকে আপনার দৃষ্টিকে সংযত রাখতে হবে। অনেকে আছে যারা বেগানা নারীর দিকে এক নজরে তাকিয়ে থাকে হোক তা বাস্তবে বা টিভিতে অথবা কম্পিউটার স্ক্রিনে।

রসূলুল্লাহ্‌ (সঃ ) বলেন-- 
" চোখের যিনা হল দৃষ্টিপাত করা বা দেখা । " [ বুখারী] 

কোন মেয়েকে একনজরে দেখার পর আপনার প্রধান Sex Organ ব্রেন , ইনপুট হওয়া ডাটা এনালাইজ করা শুরু করে । যেহেতু আপনি বিপরীত লিংগকে দেখেছেন সেহেতু আপনার শরীরে অল্প হলেও 'Testosterone ' নিঃসরিত হবে , কতটা নিঃসরিত হবে তা নির্ভর করে ডাটার আকর্ষণীয়তার উপর । আর এইভাবেই যদি আপনি কয়েকজনকে দেখেন তাহলে আপনার ব্রেন সেই ইমেজগুলো অল্পসময়ের জন্য হলেও সেভ করে রাখবে আর এই ইমেজগুলোই আপনার অন্তরে লুকিয়ে থাকা কামনাগুলোকে জাগ্রত করে দিবে এবং আপনার শরীরের সেক্সুয়াল মোড অন করে দিবে যার ফলাফল হতে পারে হস্তমৈথুন।

তাই অশ্লীল মুভি , পর্ণগ্রাফী, অশ্লীল অনুষ্ঠান ও বেপর্দা নারীদের দিকে দৃষ্টিপাত করা থেকে আপনাকে বিরত থাকতে হবে নাহলে হস্তমৈথুন থেকে মুক্তি লাভ করা আর আকাশ-কুসুম কল্পনা করা একই কথা হবে।

৬)অবাধ মেলামেশা:
যেখানে নারীদের দিকে তাকানোই হারাম সেখানে তাদের সাথে প্রেম করা , বন্ধুত্ব করা ,মেলামেশা করার তো প্রশ্নই আসে না। অবাধ মেলামেশাও পুরুষের সেক্সুয়াল মোড অন করে। পুরুষ যখন কোন নারীর সাথে ইন্টারেকশন করে তখনও তার শরীরের ভিতর 'Testosterone ' নিঃসৃত হয় এবং তাকে সেই নারীর সাথে সঙ্গম করার জন্য প্রস্তুত করে।[3]

আর 'Testosterone ' নিঃসরণের লেভেল যদি high হয় তাহলে ব্যক্তি Orgasm এর প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভব করে। তাই অবাধ মেলামেশা থেকে আপনাকে বিরত থাকতে হবে।

৭) বন্ধু নির্বাচন : 
 খারাপ চরিত্রের বন্ধুদের সাথে মেলামেশা একেবারেই কমিয়ে দিতে হবে। আপনার ৫ জন বন্ধুর মধ্যে যদি ৪ জনই সেক্স এডিক্ট হয় , তাহলে আপনার সেক্স এডিক্ট হবার পসিভিলিটি খুব বেশি।

রসূলুল্লাহ্‌ (সঃ ) বলেছেন-- 
" মানুষ তার বন্ধুর স্বভাব-আচরণে প্রভাবিত হয়, সুতরাং যাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে ,তার ব্যাপারে আগে ভেবে নাও। " [আবু দাউদ, তিরমিযী]

তাই বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হবে। যারা ইসলামের পথে সময় ব্যয় করছে তারাই হতে পারে আপনার উত্তম বন্ধু ।

এছাড়া যা যা করতে পারেন-

  • রাতে ঘুমানোর সময় পুরুষদের যৌনাঙ্গ কয়েকবার erect হয়। একে বলা হয় 'Nocturnal Penile Tumescence' । এই erection এর কারণেও অনেকে উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং হস্তমৈথুন করে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রসূলুল্লাহ্‌ (সঃ ) এর সুন্নাহ অনুসরণ করতে হবে। যখন আপনি রাতে ঘুমাতে যাবেন তখন অযু করে ঘুমাতে পারেন, ঘুমানোর সময় যেসব দু'আ পড়তে আমাদের বলা হয়েছে সেগুলো পড়তে পারেন , ডান কাতে শুতে হবে , পেটের উপর শোয়া যাবে না ইত্যাদি।
  • আপনার ব্যক্তিগত রুমে ক্বুর'আনের আয়াত ও হাদীস পোস্টারিং করতে পারেন । এতে করে যখন আপনার Sexual Urge হবে তখন যুক্তি দিয়ে তা সহজে কমাতে পারবেন।



একটা কথা মনে রাখবেন রাতারাতি আপনি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন না, আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে। কখনো ব্যর্থ হলে হতাশ না হয়ে আবার চেষ্টা করতে হবে।

আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদের হস্তমৈথুনের ফিতনা থেকে বিরত থাকার তওফীক দান করুন। আমীন

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ