যদি না থাকে তবে উনারা কোন আইন মোতাবেক বিবাহ করেন?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

তৎকালীন সময়ের নিয়ম অনুযায়ী বিবাহ করেন। কারণ, যে সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদিজা রাযিয়াল্লাহু আনহা কে বিবাহ করেন, সে সময় শরীয়াহ আইন চালু ছিলনা। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদিজা রাযিয়াল্লাহু আনহা কে বর্তমান শরীয়াতের সবগুলো নিয়মানুযায়ী বিবাহ করেন। কারণ সে সময়‌ও অনেক বিয়ে এই নিয়মানুযায়ী চালু ছিল। নিম্নলিখিত হাদিস থেকে তখনকার বিয়েগুলো সম্পর্কে অবগত হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিবাহ পদ্ধতি কেমন ছিল তা জানবো।‘উরওয়া ইব্‌নু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, তাঁকে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সহধর্মিণী ‘আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, জাহিলী যুগে চার প্রকারের বিয়ে প্রচলিত ছিল। এক প্রকার হচ্ছে, বর্তমান যে ব্যবস্থা চলছে অর্থাৎ কোন ব্যক্তি কোন মহিলার অভিভাবকের নিকট তার অধীনস্থ মহিলা অথবা তার কন্যার জন্য বিবাহের প্রস্তাব দিবে এবং তার মোহর নির্ধারণের পর বিবাহ করবে। দ্বিতীয় হচ্ছে, কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে মাসিক ঋতু থেকে মুক্ত হবার পর এ কথা বলত যে, তুমি অমুক ব্যক্তির কাছে যাও এবং তার সঙ্গে যৌন মিলন কর। এরপর স্ত্রী তার স্বামীর থেকে পৃথক থাকত এবং কখনও এক বিছানায় ঘুমাত না, যতক্ষণ না সে অন্য ব্যক্তির দ্বারা গর্ভবতী হত, যার সঙ্গে তার যৌন মিলন হত। যখন তার গর্ভ সুস্পষ্টভাবে ইচ্ছে করলে স্বামী তার স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গম করত। এটা ছিল তার স্বামীর অভ্যাস। এতে উদ্দেশ্য ছিল যাতে করে সে একটি উন্নত জাতের সন্তান লাভ করতে পারে। এ ধরনের বিয়েকে ‘নিকাহুল ইস্‌তিবদা’ বলা হত। তৃতীয় প্রথা ছিল যে, দশ জনের কম কয়েক ব্যক্তি একত্রিত হয়ে পালাক্রমে একই মহিলার সঙ্গে যৌনমিলনে লিপ্ত হত। যদি মহিলা এর ফলে গর্ভবতী হত এবং সন্তান ভূমিষ্ট হবার পর কিছুদিন অতিবাহিত হত, সেই মহিলা এ সকল ব্যক্তিকে ডেকে পাঠাত এবং কেউই আসতে অস্বীকৃতি জানাতে পারত না। যখন সকলেই সেই মহিলার সামনে একত্রিত হত, তখন সে তাদেরকে বলত, তোমরা সকলেই জান- তোমরা কী করেছ! এখন আমি সন্তান প্রসব করেছি, সুতরাং হে অমুক! এটা তোমার সন্তান। ঐ মহিলা যাকে খুশি তার নাম ধরে ডাকত, তখন ঐ ব্যক্তি উক্ত শিশুটিকে গ্রহণ করতে বাধ্য থাকত এবং ঐ মহিলা তার স্ত্রীরূপে গণ্য হত। চতুর্থ প্রকারের বিবাহ হচ্ছে, বহু পুরুষ ঐ মহিলার সঙ্গে যৌন মিলনে লিপ্ত হত এবং ঐ মহিলা তার আছে যত পুরুষ আসত, কাউকে শয্যা-সঙ্গী করতে অস্বীকার করত না। এরা ছিল পতিতা, যার চিহ্ন হিসেবে নিজ ঘরের সামনে পতাকা উড়িয়ে রাখত। যে কেউ ইচ্ছে করলে অবাধে এদের সঙ্গে যৌন মিলনে লিপ্ত হত।  লিপ্ত হওয়া সকল পুরুষ তার কাছে সমবেত হত এবং একজন ‘কাফাহ্‌’ (এমন একজন বিশেষজ্ঞ, যারা সন্তানের মুখ অথবা শরীরের কোন অঙ্গ দেখে বলতে পারত- অমুকের ঔরসজাত সন্তান)-কে ডেকে আনা হত। সে সন্তানটির যে লোকটির সঙ্গে সাদৃশ্য দেখতে পেত তাকে বলত, এটি তোমার সন্তান। তখন ঐ লোকটি ঐ সন্তানকে নিজের হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হত এবং লোকে ঐ সন্তানকে তার সন্তান হিসেবে আখ্যা দিত এবং সে এই সন্তানকে অস্বীকার করতে পারত না। যখন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে সত্য দ্বীনসহ পাঠানো হল তখন তিনি বর্তমানে প্রচলিত ব্যবস্থা ছাড়া জাহিলী যুগের সমস্ত বিবাহের রীতি বাতিল করে দিলেন।সহিহ বুখারী, হাদীস নং৫১২৭ হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদিজা রাযিয়াল্লাহু আনহার সঙ্গে বিবাহ কেমন ছিল।

বর্তমান শরীয়া অনুযায়ী বিবাহে কয়েকটি বিষয় পরিলক্ষিত হয়; সেগুলো হচ্ছে, উভয় পক্ষের অভিভাবকের মতামত গ্রহণ,হবু স্বামী স্ত্রীর সন্তুষ্টি, সাক্ষী,মহর নির্ধারণ।

এর সবগুলোই হুজুরের সঃ বিবাহে বিদ্যমান ছিল।বিষয়টি হাদিসের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করি; নাফিসা বিনতে মুনিয়া বলেন, মুহাম্মদ সঃ সিরিয়া ব্যবসা থেকে ফেরার পর, খাদিজা রাঃ আমাকে তাঁর কাছে গোপনে বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে পাঠান।আমি গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার বিবাহে বাঁধা কিসে? তিনি জবাব দিলেন, আমার এতটুকু সম্পদ নেই যা দিয়ে বিবাহ করা যায়।আমি বললাম, যদি এমন হয় যে, বিবাহ করলে সভ্য,মর্যাদাবান স্ত্রী ও সম্পদ পাবেন,তাহলে কি বিবাহ করবেন? তিনি বললেন এমনটা কে করবে?আমি বললাম, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ। তিনি বললেন, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ এমনটা করবে? আমি বললাম, বিষয়টি আমার জন্য ছেড়ে দিন।এরপর আমি খাদিজা রাঃ কে সংবাদ দিলাম। তিনি তাঁর চাচা আমর বিন আসাদ কে বিবাহ করিয়ে দিতে বললেন।এবং মুহাম্মদ সাঃ কে একটি সময়ে আসার জন্য বললেন। মুহাম্মদ সাঃ উক্ত সময়ে তাঁর চাচাগণ সহ আসলে তাদের একজন বিবাহ করিয়ে দেন।.. সংক্ষেপিত। দেখুন, আত-তাবকাতুল কুবরা ইবনু সাআদ ১ম খন্ড রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খাদিজা রাযিয়াল্লাহু আনহার বিবাহ আলোচনা অধ্যায়।

বিবাহে মহর‌ও নির্ধারণ করা হয়েছিল;যেটা আবু তালেবের সেই ঐতিহাসিক বিবাহের খুৎবা দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। দেখুন,সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া পৃষ্ঠা নং ১৯ (উর্দু)

উল্লেখিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হলো যে, রাসূলের সাঃ বিবাহে বর্তমান শরীয়ার সবগুলো শর্ত‌ই বিদ্যমান ছিল।বলা হয় বিবাহের এ নিয়ম পূর্ব থেকেই ছিল। যেগুলো অতিরিক্ত করা হয়েছিল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা মিটিয়ে দেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ