Call

আযান শুনে যে ব্যক্তি তাতে সাড়া না দেয় এবং জামাআতে উপস্থিত না হয় এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু সংখ্যক সাহাবী হতে বর্ণিত আছে, তারা বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনার পরও জামাআতে উপস্থিত হয়নি তার কোন নামায নেই। কোন উপযুক্ত কারণ ছাড়া কারো পক্ষে জামাআতে অনুপস্থিত থাকার অনুমতি নাই। জামাআতে নামাজ আদায় করার ফযিলত সম্পর্কে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একা সালাত আদায় করার চেয়ে জামাআতে সালাত আদায় করা পঁচিশ গুন বেশি শ্রেষ্ঠ। (সূনান নাসাঈ, হাদিস নম্বরঃ ৪৮৬) জামাআত পরিত্যাগের কঠোর পরিণতি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আমার ইচ্ছা হয় যে, লোকদেরকে জামাআতের সাথে নামায আদায়ের নির্দেশ দেই এবং তাদের জন্য একজন ইমাম নিযুক্ত করি। অতঃপর আমি কাষ্ঠ বহনকারী একটি দল আমার সাথে নিয়ে ঐ লোকদের নিকট যাই যারা জামাআতে শরীক হয়নি। অতঃপর তাদের ঘর-বাড়ি জালিয়ে দেই। (সূনান আবু দাউদ হাদিস নম্বরঃ ৫৪৮) জামাআত পরিত্যাগের কঠোর পরিণতি সম্পর্কে তিনি আরো বলেনঃ আবূদ-দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জামি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ যখন কোন গ্রামে বা বনজঙ্গলে তিনজন লোক একত্রিত হয় এবং জামাআতে নামায আদায় না করে-তখন শয়তান তাদের উপর প্রভুত্ব বিস্তার করে। অতএব তোমরা অবশ্যই জামাআতের সাথে নামায আদায় কর। কেননা দলচ্যুত বকরীকে নেকড়ে বাঘে ভক্ষণ করে থাকে। রাবী আস-সায়েব বলেন, এখানে জামাআত অর্থ জামাআতের সাথে নামায আদায় করা। (সূনান আবু দাউদ, হাদিস নম্বরঃ ৫৪৭ হাদিসের মানঃ হাসান) প্রকাশ্য মুনাফিকরা ব্যতীত জামাআতে কেউই অনুপস্হিত থাকত না। আমরা আরো দেখেছি যে, দুর্বল ও অক্ষম ব্যক্তি দুজনের উপর ভর করে মসজিদে এসে জামাআতে নামায আদায়ের জন্য কাতারবদ্ধ হত তোমাদের প্রত্যেকের সুন্নাত ও নফল নামায আদায়ের জন্য নিজ নিজ ঘরে নামাযের স্থান আছে যদি তোমরা মসজিদ ত্যাগ করে নিজ নিজ আবাসে ফরয নামায আদায় কর তবে তোমরা তোমাদের নাবীর সুন্নাত ত্যাগকারী হিসেবে বিবেচিত হবে। আর যদি তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত পরিহার কর তবে অবশ্যই তোমরা পথভ্রষ্ট হবে। ( আবু দাউদঃ ৫৫০, মুসলিম, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

জামাআতের সঙ্গে নামাজ আদায়ে হজরত উম্মে মাকতুমের প্রতি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশনা ছিলো অনেক জোরালো। আর তাহলো-

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে নিবেদন করলেন, ‘হে আল্লহর রাসুল! আমি অন্ধ এবং আমার ঘর মসজিদ থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। আমি কি জামাআতে অংশগ্রহণ না করে আমার ঘরে নামাজ পড়ার অনুমতি পেতে পারি?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন- ‘তুমি কি নামাজের দেয়া আজানের শব্দ শুনতে পাও?

আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম বললেন, ‘জি হ্যাঁ’ শুনতে পাই।

তখন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তবে তুমি সেই (আজানের) ডাকে সাড়া দাও। আজানের শব্দ শুনলে উহার ডাকে তোমার মতো অন্ধকেও তাতে সাড়া দিয়ে মসজিদে নামাজের জামাআতে অংশগ্রহণ করতে হবে।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি তোমার জন্য অব্যহতির কোনো পথ দেখতে পাচ্ছি না।

আজান হওয়ার পর মসজিদে নামাজের জামাআতে না আসা ব্যক্তিদের সম্পর্কে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
‘আমি ইচ্ছা পোষণ করি যে, নামাজ শুরু করার আদেশ দেই, ফলে মুসল্লিগণ নামাজে দণ্ডায়মান হয়। আর তখন আমি একজনকে হুকুম দেই এবং সে এ নামাজের ইমামতির দায়িত্ব পালন করে।

আর আমি সেই সব লোকদের কাছে যাই, যারা নামাজের জন্য (মসজিদে) উপস্থিত হয় নাই এবং (জামাআতে উপস্থিত না হওয়ার কারণে) তাদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেই।’

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওা সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শুনতে পেল এবং ন্যায়সঙ্গত ওজর ছাড়া মসজিদে আসল না, তার নামাজ সিদ্ধ হবে না।’ (ইবনে মাজাহ)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি আগামীকাল আল্লাহর সঙ্গে মুসলিমরুপে সাক্ষাৎ করতে আনন্দ অনুভব করার ইচ্ছা পোষণ করে; তার উচিত যে-
‘যখনই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উদ্দেশ্যে আজান দেয়া হয়, তখনই উহাতে (নামাজে) সাড়া দিয়ে (প্রত্যেক ওয়াক্তের) নামাজগুলোর হেফাজত করা জরুরি।’ (মুসলিম)

পরিশেষে
মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামাজ আদায় প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ। এজন্য জামাতে নামায আদায় করা সুন্নাতে মুআক্কাদা৷

আর যে ব্যক্তি প্রিয়নবির ঘোষণা অনুযায়ী উত্তমরূপে ওজু করে মসজিদসমূহের মধ্যে কোনো একটি মসজিদে গমন করে, সে সময় আল্লাহ তাআলা তার প্রত্যেক কদমে একটি করে নেকি লেখা হয়, তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং একটি গোনাহ মাফ হয়।’

হজরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমরা দেখেছি নামাজের জামাআতে কেউ পিছিয়ে থাকত না কেবল ঐরূপ মুনাফেক ব্যতিত; যারা নেফাকের সঙ্গে জড়িত।’

সুতরাং নামাজের আজান শুনা গেলে ঘরে বা দোকান-পাটে অবস্থান এবং নামাজ আদায় নয় বরং জামাআতে নামাজ আদায়ে মসজিদে যাওয়া প্রিয়নবির সুন্নাতের অনুসরণ আবশ্যক।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জামাআতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ