শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

যিনা করলে হায়াত কমে যায় না। যিনা ব্যভিচার এটি একটি অশ্লীল কাজ। মানুষের মধ্যে লজ্জা-শরম না থাকলে সে মনুষ্যত্ব থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। অতঃপর তার দৃষ্টিতে ভালমন্দের পার্থক্য লোপ পায়। আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যিনাকারী যিনায় লিপ্ত থাকাবস্থায় মুমিন থাকে না, চোর চুরি করার সময় মুমিন থাকে না। তবে তাওবাহ করার সুযোগ আছে। (তিরমিজী ২৬২৫, সহীহ ইবনু মাজাহ ৩৯৩৬, বুখারী ও মুসলিম) দুনিয়াতে বান্দা যখন যিনায় লিপ্ত থাকে, তখন ঈমান তার থেকে বেরিয়ে যায় এবং ছায়ার মতো তার মাথার উপর অবস্থান করে। তারপর সে যখন সেই দুষ্কর্ম হতে সরে আসে তখন ঈমানও তার মাঝে ফিরে আসে। আবূ জাফর মুহাম্মাদ ইবনু আলী (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, অপরাধী ব্যক্তি এ ধরনের পরিস্থিতে ঈমানের স্তর হতে বেরিয়ে ইসলামের স্তরে নেমে আসে। কেউ এই অপরাধে লিপ্ত হলে এবং আল্লাহ তাআলা তা গোপন রাখলে এটা আল্লাহ তাআলার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। তিনি চাইলে কিয়ামাত দিবসে তাকে শাস্তিও দিতে পারেন, ক্ষমাও করতে পারেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

বর্তমানে সমাজে যিনা ব্যাভিচার এবং নারী পুরুষের মাঝে অনৈতিক সম্পর্ক ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ইসলাম এই গুনাহকে এত ভয়াবহ চোখে দেখে।দেখে যে, যদি বিবাহিত পুরুষ বা নারী যদি যিনায় লিপ্ত হয়, তাহলে তাদের শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। এটা শুধু ইসলামে নয়, বরং পূর্বের সকল নবীর শরীয়তেও একই শাস্তির উল্লেখ পাওয়া যায়।

 

মহান আল্লাহপাক সুরা ইসরার ৩২ নং আয়াতে বলেন,“আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।”

 

কুরআনে আল্লাহপাক আরো বলেন,“এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন,সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তিরসম্মুখীন হবে।কেয়ামতের দিন তদের শাস্তি দ্বিগুন হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাসকরবে। কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকেপুন্য দ্বারা পরিবর্তত করে এবং দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (ফুরক্বান, ৬৮-৬৯)

 

আল্লাহপাক আরো বলেন,“ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধানকার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ওপরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।”(আন-নুর, ০২)

 

উপরোক্ত শাস্তি শুধুমাত্র অবিবাহিত নারী পুরুষের জন্য প্রযোজ্য। বিবাহিত নারী পুরুষের ক্ষেত্রে বিধান হল তাদেরকে পাথর মেরে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা। বিবাহিত থাকতে হবে এমনটিও শর্ত নয়। আগে বিয়ে হয়েছিল কিন্তু এখন একা, তাঁদের ক্ষেত্রেও একই হুকুম। আর যদি এ সমস্ত নারী পুরুষ তওবা অথবা শরীয়ত নির্ধারিত শাস্তি ছাড়া দুনিয়া ত্যাগ করে, তাহলে জাহান্নামে তাদেরকে কঠিন শাস্তি আস্বাদন করানো হবে।

 

নিচের হাদীসে এসেছে,

 

যিনাকারী যিনা করার সময় তার ঈমান থাকেনা।” (সহীহ বুখারী)

 

যখন কেউ যিনায় লিপ্ত হয়, তার অন্তর থেকে ঈমান উঠে যায়। এবং যখন সে বিরত হয়, তার ঈমান আবার ফেরত আসে।” (সুনানে আবু-দাউদ)

 

যে কেউ মদ খায় অথবা যিনায় লিপ্ত হয়, আল্লাহ তার থেকে ঈমান এইভাবে উঠিয়ে নেন, যেভাবে মানুষ শরীর থেকে জামা খুলে ফেলে।” (মুসতাদরাকে হাকেম)

 

তিন ধরনের ব্যক্তির সাথে মহামহিম আল্লাহপাক কথা বলবেন না, তাদেরকে পাপ থেকে পবিত্র করবেন না এবং তাঁদের দিকে তাকাবেন ও না। তারা হলঃ বৃদ্ধ ব্যাভিচারী, মিথ্যাবাদি রাজা বা শাসক এবং অহঙ্কারী দরীদ্র ব্যক্তি।” (সহীহ মুসলিম)

 

ইবনে মাসুদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি একবার রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন,“মহান আল্লাহপাকের কাছে সবচেয়ে জঘন্য গুনাহ কোনটি?” রাসুল (সাঃ) উত্তরে বললেন, “আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” এরপর আবার জিজ্ঞেস করলে রাসুল (সাঃ) বলেন, “দারীদ্রের ভয়ে সন্তান হত্যা করা”। আবার জিজ্ঞেস করলে বলেন, “প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে যিনায় লিপ্ত হওয়া”

 

হযরত আ’তা হতে বর্ণিত, যে জাহান্নামের দরজাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য এবং ঘৃণ্য হল সেই দরজা, যেটা দিয়ে সেই সব যিনাকারীরা প্রবেশ করবে যারা যিনার পরিণাম জানা সত্তেও যিনায় লিপ্ত হয়।

 

জ্ঞাতব্য, ‍যিনা করলে হায়াত কমে যায় এমন কথা কুরআনা হাদীসের কোথাও নাই।  যদিও গুনাহের ইহকালীন ও পরকালীন ক্ষতি রয়েছে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ