ঠান্ডা পানি পান করার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বলুন ?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

শরীরের তাপ বুঝে পানি পান করা উচিত।বাইরে গরম থেকে এসেই ঠান্ডা পানিতে গোসল বা ফ্রীজের ঠান্ডা পানি পান করা উচিত নয়।এতে আচমকা হার্ড ও পেশীতে সমস্যা হতে পারে।ষ্ট্রোক পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

ঠান্ডা পানি পানের উপকারিতাঃ ঠান্ডা পানি পানের উপকারিতা অতি সামান্য। তবে স্বাভাবিক পানির সাথে কিছুটা ঠান্ডা পানি মিলিয়ে পান করলে সেই পানি দেহে শীতলতা এবং প্রশান্তি আনে। 

ঠান্ডা পানি পান করলে এটির তাপমাত্রা এবং শরীরের তাপমাত্রায় অনেক পার্থক্য থাকায় পানির তাপমাত্রাকে স্বাভাবিক করতে শরীরকে অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় করতে হয়। এই অতিরিক্ত শক্তি ব্যয়ের ফলে শরীর হতে সামান্য পরিমাণে মেদ হ্রাস হয়। 

ঠান্ডা পানি পানের অপকারিতাঃ ঠান্ডা পানি পানের উপকারিতার তুলনায় অপকারিতা এত বেশি যে উপকারিতার অস্তিত্ব না দেখাটাই উত্তম। এতে অনেক প্রকার সমস্যা হতে পারে। 

খাবার পর বা মাঝে ঠান্ডা পানি পান করলে এটি শরীরের চর্বিকে কঠিন করে দেয় যার ফলে পরিপাকের সময় সে চর্বিটুকু বাদ পড়ে যায়। পরবর্তীতে সেই চর্বির কারণে দৈহিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। 

ঠান্ডা পানি পানে আমাদের রক্তে অতিরিক্ত চাপ পড়ে কারণ ঠান্ডা পানির তাপমাত্রাকে ঠিক করতে বেশ পরিশ্রম করতে হয়। এতে হার্টের সমস্যা হতে পারে। 

আর ঘাম অবস্থায় ঠান্ডা পানি পান করলে গলা বসে যাওয়া, সর্দি-কাশির মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে দাঁতের ক্ষতি হয় এবং শরীরের পর্যাপ্ত পানির চাহিদা ঠান্ডা পানি পূরণ করতে পারে না। 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করা পানি পান করলে মেদ ঝরে। এর ব্যাখ্যা হলো, ঠান্ডা পানির তাপমাত্রা আর শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার বিরাট পার্থক্যের কারণে পানির তাপমাত্রাকে স্বাভাবিক করতে শরীর অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় করে, এতে মেদ ঝরতে পারে। তবে এই মেদ হ্রাসের পরিমাণ খুবই সামান্য। তাই এতে খুশি হওয়ার কারণ নেই। বরং ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করার ক্ষতিকর দিকটি এতই প্রকট যে এই সামান্য ভালো দিকটির অস্তিত্ব তার কাছে প্রায় নেই বললেই চলে। 


খাওয়ার মাঝে কিংবা শেষে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করলে তা খাবারের চর্বি অংশটুকুকে কঠিন অবস্থায় নিয়ে যায়। বুঝতেই পারছেন, এতে শরীরে মেদ কমে নাকি বাড়ে। একই সঙ্গে ঠান্ডা পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিক করতে শরীর ব্যস্ত হয়ে পড়ে, আর এ কারণে খাবার পরিপাকের প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে। পরবর্তী সময়ে ঠান্ডা পানির সহায়তায় খাবারের সেই কঠিন হওয়া অতিরিক্ত চর্বিকে পরিপাক করাটা শরীরের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এসব অতিরিক্ত চর্বি কখনো কখনো রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে শোষিত হয়। ধমনিতেও ধীরে ধীরে জমতে থাকে চর্বি। পরিণাম, উচ্চ রক্তচাপ। এই সমস্যা একজন মানুষকে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। 


আরেকটি ব্যাপার লক্ষণীয়, হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনকে আমাদের শরীর সহজে গ্রহণ করতে পারে না। অনেক সময় বাইরের গরম পরিবেশ থেকে এসে ঘরে ঢুকেই ফ্রিজের পানির লোভ আর কিছুতেই সামলানো যায় না। এটি অত্যন্ত ক্ষতিকর। কিছুটা সময় নিয়ে স্বাভাবিক হওয়া প্রয়োজন। সুস্থ থাকার মূলমন্ত্র হিসেবে শরীরের তাপমাত্রা এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশের তাপমাত্রার মধ্যে যোগসূত্র থাকাটা খুব জরুরি। 


ফ্রিজের ঠান্ডা পানি তাহলে কখন পান করবেন? পিপাসা হচ্ছে সেই অনুভূতি, যা খুব সহজেই জানিয়ে দেয়, শরীরে পানির ঘাটতি হয়েছে। তাই তৃষ্ণা মেটাতে তাড়াতাড়ি পানি পান করতে হবে। সুতরাং একমাত্র পরিতৃপ্তির জন্য মাঝেসাঝে স্বাভাবিক পানির সঙ্গে ফ্রিজের পানি মিশিয়ে পান করা যেতে পারে। তবে অবশ্যই সেই পানির শীতলতা থাকবে পরিবেশ ও শরীরের তাপমাত্রার সহ-অবস্থানে। 


যাঁদের অ্যাজমা, টনসিলাইটিস কিংবা ঠান্ডাজনিত সমস্যা আছে, তাঁদের জন্য ফ্রিজের ঠান্ডা পানি একেবারেই নিষিদ্ধ। 


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী আধ্যাপক ডা. ফেরদৌস উর রহমানের ভাষ্যমতে, ঠান্ডা পানির উপকার তো নেইই বরং শরীরের অনেক ধরনের ক্ষতি করে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে হার্টের। তাছাড়া হজমের সমস্যা, ঠাণ্ডা লাগা, সাইনাস ব্লকেজ, এসবও ঠান্ডা পানির কারণেই হয়।


হার্ট এর সমস্যাঃ ঠান্ডা পানি পানের কারণে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় হার্টের। গরম থেকে এসেই ঠান্ডা পানি পান করলে শরীরের শিরা উপশিরা সঙ্কুচিত হয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন করতে হার্টের উপর বাড়তি চাপ পড়ে। এই বাড়তি চাপ হার্টের জন্য একেবারেই ভালো না। সাথে সাথেই কোনো সমস্যা দেখা না দিলেও, দীর্ঘমেয়াদে জটিল হৃদরোগ দেখা দিতে পারে।


জ্বর হওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে: আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। কিন্তু ঠান্ডা পানি পান করলে আমাদের রক্ত হঠাৎ করেই শীতল হয়ে যায়। ফলে শরীরে ভেতরের অংশে হঠাৎ করেই অনাহুত অস্বস্তি দেখা দেয়। এধরনের অস্বস্তি জ্বরের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেয়।


শরীরে পর্যাপ্ত পানির চাহিদা পূরণ হয় না: ঠাণ্ডা পানিতে ত্ষ্ণা মেটে চট করে, তৃপ্তি চলে আসে তাড়াতাড়ি। ফলে শরীর মনে করে তার আর পানি পানের প্রয়োজন নেই।ফলে শরীরের প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা মেটে না। এ ঘাটতি থেকে পানিশূন্যতা তৈরি হয় যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।


টনসিলের সমস্যা হতে পারেঃ ঠান্ডা পানিতে সহজে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকে ফলে টনসিল ফুলে গিয়ে সমস্যা হতে পারে।


খনিজের অনুপস্থিতিঃ সাধারণ পানি স্বাভাবিক অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদানে পূর্ণ থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি। কিন্তু পানি ঠান্ডা হয়ে গেলে এসব খনিজ উপাদানের কার্যকারিতা কমে যায়। তখন শরীরের জন্য এরা আর কোনো কাজ করতে পারে না। ফলে পানি থেকে শরীরের যে খনিজের চাহিদা পূরণ হয় সেটা অপূর্ণই থেকে যায়।


ঠান্ডা পানিতে হজমের সমস্যা হয়ঃ ঠান্ডা পানি পান করার ফলে পাকস্থলী খাবার হজমের চাইতে ঠান্ডা পানিকে শরীরের তাপমাত্রায় নিয়ে আসতে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে পাকস্থলীর যে মূল দায়িত্ব সেই খাবার হজমের প্রক্রিয়ায় ছেদ পড়ে, হজমে সমস্যা দেখা দেয়।


শরীরের শক্তি ক্ষয় করেঃ আমাদের শরীরের তাপমাত্রা যেহেতু স্বাভাবিক মাত্রায় ৯৮.৬  ডিগ্রি ফারেনহাইট। তাই ঠান্ডা পানি যখন পাকস্থলীতে জমা হয় তখন পাকস্থলী তা শরীরের তাপমাত্রায় নিয়ে আসে।ফলে শরীরের অহেতুক শক্তি খরচ হয়।


ব্যায়ামের পরে ঠান্ডা পানি ক্ষতিকরঃ ব্যায়ামের পরে কক্ষতাপমাত্রা বা তার চেয়ে গরম পানি খাওয়া ভাল। কারণ ঠান্ডা পানি খেলে তা শরীরে দ্রুত শোষিত হয়। ফলে শরীরে পানির চাহিদা পূরণ হয় না।


দাঁতের ক্ষতি হয়: ঠান্ডা পানি দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করে মারাত্মক ভাবে।গরম থেকে ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে আসা মাত্রই দাঁতের বহিরাবরণ সংকুচিত হয়। ফলে এনামেলে ফাটল ধরে। এছাড়া মাড়ি ক্ষয়ের অন্যতম একটি কারণও ঠান্ডা পানি।


গর্ভপাতের সম্ভাবনাঃ গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ঠান্ডা পানি পান করার ফলে জরায়ুর সঙ্কোচন হয়। গর্ভাবস্থায় এধরনের সঙ্কোচন গর্ভপাতের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ