শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call
বইঃ কুরআন ও হাদীছের মানদন্ডে সুফীবাদ, অধ্যায়ঃ সূফীবাদ, অনুচ্ছেদঃ সুফীদের যিকির ও অযীফাঃ 
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন মুসলিম ঘুম থেকে উঠে, ঘুমানোর সময়, ঘরে প্রবেশ কিংবা ঘর হতে বের হওয়ার সময় থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে সকল যিকির-আযকার পাঠ করতে হবে, তার সবকিছুই শিক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু সমস্ত সুফী তরীকার লোকেরা এ সমস্ত যিকির বাদ দিয়ে বিভিন্ন ধরণের বানোয়াট যিকির তৈরী করে নিয়েছে। নকশবন্দী তরীকার লোকেরা যিকরে মুফরাদ তথা শুধু الله (আল্লাহ) الله (আল্লাহ) বলে যিকির করে। শাযেলী তরীকার لا إله إلا الله এবং অন্যান্য তরীকার লোকে শুধু هوهو হু হু বলে যিকির করে থাকে। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া বলেনঃ এভাবে আওয়াজ করে বা আওয়াজবিহীন একক শব্দ দ্বারা যিকির করার কোন দলীল নেই; বরং এগুলো মানুষকে বিদআত ও গোমরাহীর দিকে নিয়ে যায়। (মাজমুআয়ে ফতোয়াঃ পৃষ্ঠা নং- ২২৯) আমাদের দেশের বিভিন্ন পীরদের মুরীদদেরকে যিক্রে জলী ও যিক্রে খফী নামে বিভিন্ন ধরণের বিদআতী যিকির করতে দেখা যায়, যেগুলোর কোন শরঈ ভিত্তি নেই।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

◆লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লাহ্ বিল্লাহ্ পাঠ
◆অর্থঃ আল্লাহ্ পাকের সাহায্য ব্যতীত পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা ও নেক কাজ করার কোনো উত্‍স নেই।
◆ফায়দাঃ
১★হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেন, "হে আবু হুরায়রা! লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লাহ্ বিল্লাহ্ অধিক পরিমানে পাঠ করবে। কেননা, ইহা জান্নাতের অমূল্য ভান্ডার।"
২★লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লাহ্ বিল্লাহ্ কালেমাটি আরশের নিচে অবস্থিত জান্নাতের অমূল্য ভান্ডার। জান্নাতের ছাদ হলো আল্লাহ্ পাকের আরশ। ইহা পাঠের দরুন নেক আমল করার এবং গুনাহ্ হতে বিরত থাকার তাওফীক অর্জিত হয়। এই অর্থেই ইহাকে জান্নাতের ভান্ডার বলা হয়েছে।
৩★রাসূল (সাঃ) বলেন, "উক্ত লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লাহ্ বিল্লাহ্ পাঠ ৯৯টি রোগের ঔষধ। তন্মধ্যে সর্বনিম্ন রোগ হলো দুশ্চিন্তা বা পেরেশানী।"
৪★হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেন, "হে আবু হুরায়রা! আমি কি তোমাকে এমন এক কালেমা শিখিয়ে দেবো না, যাহা আরশের নিচে অবস্থিত বেহেশতের অমূল্য ভান্ডার। উহা হলো, লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লাহ্ বিল্লাহ্। বান্দা যখন এই বাক্য পাঠ করে, আল্লাহ্ পাক তখন ফেরেশতাদেরকে বলেন, আমার বান্দা নাফরমানী ছেড়ে দিয়ে আমার অনুগত হয়েছে এবং তার সকল বিষয় আমার উপর অর্পণ করেছে।"
৫★দেখুন, ইহা আল্লাহ্ পাকের কত বড় নিয়ামত, বান্দা দুনিয়ার বুকে এই কালেমা পাঠ করতেছে আর আল্লাহ্ পাক আরশে আজীমে ফেরেশতাদের সামনে তাহার আলোচনা করতেছেন।
◆জিকির ও দোয়া-দরূদঃ
১★ইয়া আল্লাহ্, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)।
২★ইয়া আহাদু, ইয়া নুরু, লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লাহ্ বিল্লাহ্।
৩★সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি
সুবহানাল্লাহিল আজীম
ওয়া বিহামদিহি আসতাগফিরুল্লাহ্।
৪★সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
৫★লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জুয়ালিমিন।
৬★আল্লাহুম্মা আজিরনী মিনান্নারি
আল্লাহুম্মা ইন্নি আস-আলুকা রিজাকা ওয়াল জান্নাহ্।
৭★আল্লাহুম্মা ইন্নি আঊযুবিকা মিন আযাবাল কবর।
৮★হাছবুনাল্লাহু ওয়া নিয়ামাল ওয়াকিল
নিয়ামাল মাওলা ওয়া নিয়ামাল নাছির।
৯★আঊযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বোনির রাজীম
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
১০★আসতাগফিরুল্লাহ্ হারাব্বি মিন কুল্লি জাম্বিউ ওয়াতুবু ইলাইহি
লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজীম।
১১★ইয়া হাইয়্যু হিনালা হাইয়্যু ফি দাইমু মিয়াতি মুলকিহী ওয়া বাকাইহী ইয়া হাইয়্যু।
১২★হাছবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজীম।
১৩★ইয়া গাফ্ফারু ইগফিরলী জুনুবী।
১৪★আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়্যিদিনা ওয়া নাবিয়্যিনা ওয়া শাফীইনা ওয়া হাবীবানা ওয়া মাওলানা মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া আসহাবিহী ওয়া বারিক ওয়া সাল্লিম।
১৫★সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।
১৬★আল্লাহুম্মা ইন্নি আঊযুবিকা মিন দ্বীকিদ দুনিয়া ওয়া মিন দ্বীকি ইয়াওমিল কিয়ামাহ্।
১৭★আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্ আলুকাল আফিয়াতা ফিদ্ দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ্।
১৮★রাদীতু বিল্লাহি রাব্বাওঁ ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনাওঁ ওয়া বি-মোহাম্মাদিন নাবিয়্যাওঁ ওয়া রাসূলান।
১৯★আঊযুবিল্লাহিস সামীইল আলীমি মিনাশ শাইত্বোনির রাজীম।
২০★সুবহানা মান্ তা-আজ্জাযা বিল ক্বুদরাতি ওয়া কাহরিল ইবাদি বিল মাউত।
২১★বিসমিল্লাহি আলা দ্বীনি ওয়া নাফসি ওয়া ওয়ালাদী ওয়া আহলী ওয়া মালী।
২২★বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা আজহিব হাররাহা ওয়া বারদাহা ওয়া ওয়াসাবাহা।
২৩★ফজর নামাজের পরে কুরআন তিলাওয়াত ও আসর নামাজের পরে হাদীস পাঠ।
২৪★আয়াতুল কুরসী (সূরা বাক্বারার ২৫৫ নং আয়াত)।
২৫★সূরা বাক্বারার শেষ ২ আয়াত।
২৬★সূরা আল-ইমরানের প্রথম ২ আয়াত।
২৭★সূরা তওবার শেষ ২ আয়াত।
২৮★সূরা হাশরের শেষ ৩ আয়াত।
২৯★সূরা ত্বোহা, ইয়াসীন, আর রাহমান ও মূলক পাঠ।
৩০★মহান আল্লাহ্'র ১১৪টি পবিত্র নামের জিকির। তন্মধ্যে ১৫টি প্রধান বা খাস নাম এবং ৯৯টি গুণবাচক নাম।

"আর আল্লাহর জন্য রয়েছে, সব উত্তম নামসমূহ। কাজেই সেই নামসমূহ ধরেই তোমরা তাঁকে ডাকো। আর তাদেরকে বর্জন করো, যারা তাঁর নামসমূহের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল খুব শীঘ্রই ভোগ করবে"

(সূরা: আল-আ’রাফ, আয়াত: ১৮০)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দু’টি কলেমা রয়েছে, যে দু’টি দয়াময় আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়, জবানে উচ্চারণে খুবই সহজ, আমলের পাল্লায় অত্যন্ত ভারী। তা হচ্ছে, সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল আযীম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে দুয়া ও জিকিরের ব্যাপারে যতগুলো হাদীস পাওয়া যায় সবগুলোই পূর্ণাঙ্গ বাক্য। যেমন, সুবাহান আল্লাহ, আল হামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লাইলাহা ইল্লাল্লাহ ইত্যাদি। রাসূল (সাঃ) বলেছেন। আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণের বলা শ্রেষ্ঠ জিকির হল, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কদীর। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার একটি মাত্র নাম নিয়ে একক শব্দে যেমন, আল্লাহু আল্লাহু বা আর রাহমানু আর রাহমানু। জিকির করার ব্যাপারে একটি হাদীস পাওয়া যায় না। সাহাবী তাবেঈদের নিকট থেকেও এমন নজির খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই পূর্ণাঙ্গ বাক্য দিয়েই জিকির করা উত্তম।!

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

শুধু আল্লাহ বলে জিকির করা যাবে কি না এ ব্যাপারটিতে উলামায়ে কেরামের মাঝে বেশ শক্ত বিতর্ক রয়েছে। যারা বলেন, জায়েয তাদের প্রমাণ হলো, হাদীসে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যতো দিন পৃথিবীতে আল্লাহ আল্লাহ বলা হবে ততো দিন কিয়ামত সংঘটিত হবে না। সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪৮। ((رواه مسلم (148) لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى لَا يُقَالَ فِي الْأَرْضِ اللَّهُ اللَّهُ ) ) যারা বলেন, জায়েয নেই তাদের অভিমত হলো এখানে আল্লাহ দ্বারা পূর্ণ কালিমা উদ্দেশ্য। উপরন্তু জিকর হতে হলে একটি পূর্ণ বাক্য হতে হবে। আর শুধু আল্লাহ শব্দের সাথে ঈমান কুফর কোনো কিছুরই সম্পর্ক নেই। পূর্বসূরীদের মাঝে এরূপ জিকরের প্রচলন ছিলো না। সাহাবায়ে কেরাম এভাবে জিকর করেন নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এরূপ জিকর করেন নি। আরবের উলামায়ে কেরামে এ ব্যাপারটিতে বেশ কঠোর অবস্থানে আছেন। পক্ষান্তরে উপমহাদেশের উলামায়ে কেরাম এটাকে বেশ শক্ত করেই জায়েয বলেন। আমাদের মনে হয় এ ব্যাপারটিতে শিথিলতা আসতে পারে। কারণ জিকর মানে স্মরণ করা। যে কোনোভাবেই আল্লাহকে স্মরণ করা যেতে পারে। সুতরাং কেউ যদি আল্লাহ আল্লাহ বলে আল্লাহকে স্মরণ করে তাতে বোধ হয় অবিধানিকতার কিছু নেই।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ