শবে বরাত সম্পর্কে বিস্তারিত বলুন। এই দিনের আমল ও আকিদা সম্পর্কে। কতিপয়বর্ণীত হাদিস সম্পর্কে, সেগুলো কি যঈফ বা জাল ? এই দিনের বিদাতি কাজ কর্ম সম্পর্ক অবহিত করুন। তাছাড়া এখানে অনেকেই আছেন, যারা এই দিনটিকে মানে, আবার অনেকেই মানেনা। প্রত্যেকেই নিজের উত্তরের স্বপেক্ষে, কুরআন ও হাদিস থেকে যুক্তি পেশ করুন।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
বছরের একটি ফজীলতপূর্ণ রাত হচ্ছে লাইলাতুন মিন নিসাফি শা’বান তথা লাইলাতুল বারাআত বা শবে বারাআত। এ লাইলাতুল বারাআতে নিহিত রয়েছে মুমিন-মুসলিমের মুক্তি ও কল্যাণের বিভিন্ন উপকরণ। তাই এ রাতকে বলা হয়েছে লাইলাতুল বারাআত বা মুক্তির রাত। অন্যদিকে পবিত্র মাহে রমজানের পূর্বের মাস হওয়ার কারণে শাবান মাসকে বলা হয়েছে রমজান শরীফের প্রস্তুতির মাস।
লাইলাতুল বারাআতের অনেক তাৎপর্য, ফযীলত ও বরকত রয়েছে। মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এরশাদ করেনঃ শাবান মাস হল আমার মাস আর পবিত্র রমজান মাস হল মহান আল্লাহ তাআলার মাস। তিনি আরও বলেন, তোমরা শাবানের চাঁদ সঠিকভাবে হিসাব রাখকেননা শাবানের চাঁদের হিসাব ঠিক হলে, রমজানের চাঁদের হিসাব সঠিক হতে সহায়ক হবে।  ( মিশকাত শরীফ-১১৫পৃ )
শা’বান মাসের ১৪তম তারিখের দিবাগত রাত হচ্ছে- লাইলাতুল বারাআত বা শবে বারাআত। লাইলাতুল বারাআত হচ্ছে-গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের রাত্রি। অর্থাৎ, এ রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করার মাধ্যমে মুমিন-মুসলামনদের গুনাহ মাফ হয়ে থাকে এবং মর্যাদা বৃদ্ধি হয়ে থেকে।
শা’বান এবং শবে বারাআতের করণীয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এরশাদ করেন, শাবান মাসের রোযা আমার নিকট অন্য মাসের তুলনায় অধিক প্রিয়। যখন তোমাদের নিকট শাবানের রাত্রি ( শবে বারাআত ) উপস্থিত হবে, তখন তোমরা সেই রাতটি জাগ্রত থাক ( নামাজ পড়ে, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে, তাসবীহ পড়ে, যিকির করে, দুআ করে ) এবং দিনের বেলা রোযা রাখ। কারণ, এ রাতে মহান আল্লাহ সূর্যাস্তের পর থেকে ফজর পর্যন্ত দুনিয়ার আসমানে তাশরীফ আনেন এবং তিনি ঘোষণা করেন- আছে কি এমন কোন ব্যক্তি যে, তার গুনাহ মাফীর জন্য আমার নিকট প্রার্থনা করবে? আমি তার গুনাহ সমূহ মাফ করে দিব। আছে কি এমন কোন রিযিক প্রার্থনাকারী, যে আমার নিকট রিযিক প্রার্থনা করবে? আমি তার রিযিকের ব্যবস্থা করে দিব। আছে কি এমন কোন বিপদগ্রস্ত, যে আমার নিকট বিপদ থেকে মুক্তি চাইবে? আমি তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করব। এভাবে পূর্ণ রাত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা হতে থাকে এবং বান্দাদের উপর রহমত বৃষ্টির ন্যায় নাজিল হতে থাকে।
                                                                                 ( ইবনে মাজাহ শরীফ )
হযরত আয়েশা সিদ্দীক ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা ) বর্ণনা করেন, মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে আয়েশা! তুমি কি জান? আজ রাত ( নিসাফে শাবান ) কী? হযরত আয়েশা ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা ) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তো জানি না, দয়া করে বলুন।মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বললেন, আজ রাতে আগামী বছরে যে সমস্ত বনী আদম জমীনের বুকে জন্মগ্রহণ করবে এবং আরা মৃত্যুবরণ করবে, তাদের তালিকা লিপিবদ্ধ করা হয়। বিশেষ করে বান্দাদের আমলনামা মহান আল্লাহর নিকট প্রকাশ করা হয়।
হযরত আয়েশা ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা ) থেকে বর্ণিত অপর একটি হাদীসে মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেন, আমি এক রাতে মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ঔয়া সাল্লাম )-কে বিছানায় পেলাম না। তাই আমি অত্যন্ত পেরেশান হয়ে খোঁজাখুঁজি আরম্ভ করলাম। খুঁজতে খুঁজতে দেখি, তিনি জান্নাতুল বাকীর মধ্যে মহান আল্লাহর প্রার্থনায় মগ্ন। তখন তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা! আমার নিকট হযরত জিবরাইল ( আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, আজ রাত হল নিসফে শাবান ( অর্থাৎ, লাইলাতুল বারাআত )। এ রাতে আল্লাহ তাআলা অধিক পরিমাণে জাহান্নামবাসী লোকদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। এমনকি কালব বংশের বকরীগুলোর লোম সমপরিমাণ গুনাহগার বান্দা হলেও।  ( মিশকাত শরীফ-১১৫ পৃ )
হযরত মুআয ইবনে জাবাল ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু ) বলেন, রাসূলে করীম ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে ( শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে ) সৃষ্টির দিকে ( রহমতের ) দৃষ্টি দেন এবংগ মুশরীক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।
উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, এ রাতে আল্লাহর তাআলার পক্ষ থেকে মাগফিরাতের দ্বার ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত করা হয়। কিন্তু শিরকী কর্মকান্ডে লিপ্ত ব্যক্তি এবং অন্যের ব্যাপারে হিংসা বিদ্বেষ পোষণকারী মানুষ এই ব্যাপক রহমত, মাগফিরাত ও সাধারণ ক্ষমা থেকে বঞ্চিত থাকে।
যদি শবে বরাতের ব্যাপারে অন্য কোন হাদীস নাও থাকত, তবুও এ হাদীসটিই এ রাতের ফজীলত ও মর্যাদা প্রমাণ করার জন্য এবং এ রাতে মাগফিরাতের উপযোগী নেক আমলের গুরুত্ব প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট হত। তদুপরি দশজন সাহাবী থেকে শবে বরাতের ফজীলত, মর্যাদ ও আমল সম্পর্কে হাদীস বর্ণিত রয়েছে। অবশ্য এর কোন কোনটির সনদ দূর্বল। আর এই সনদগত দূর্বলতার কারণে কেউ কেউ বলে দিয়েছেন, এ রাতের ফজীলত ভিত্তিহীন। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ ও ফকীহগণের ফয়সালা হল, কোন একটি হাদীস যদি সনদগতভাবে দূর্বল হয়, তারপর বিভিন্ন হাদীস দ্বারা তা সমর্থিত হয়, তাহলে এ সমর্থনের কারণে তার দূর্বলতা দূর হয়ে যায়।
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

★বিভিন্ন তাফসীর থেকে সূরা আদ দুখানের তাফসীর যা কেবল শবে বরাতকেই নির্দেশ করে ======================== বাতিল ফির্কারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য অপপ্রচার চালায় সূরা দুখানের লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা নাকি লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান তথা শবে বরাতকে বুঝানো হয়নি, বরং শবে কদরকে বুঝানো হয়েছে। আসুন আমরা উক্ত আয়াত শরীফের বিশ্ব বিখ্যাত তফসীর সমূহ থেকে স্পষ্ট ভাবে জেনে নিই লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা প্রকৃতপক্ষে কি বুঝানো হয়েছে। বে বরাত বা ভাগ্য রজনীকে স্বয়ং আল্লাহ পাক স্বীয় কুরআন শরীফ-এ সূরা ‘আদ দোখান’ এর ৩-৪ নম্বর আয়াত শরীফে ليلة المبارك (বরকত পূর্ণ রাত) হিসেবে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন- انا انزلناه فى ليلة مباركة انا كنا منذرين. فيها يفرق كل امر حكيم অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি উহা (কুরআন শরীফ) এক রবকতপূর্ণ রাত্রিতে নাযিল করেছি। অর্থাৎ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী, ওই রাত্রিতে সমস্ত হিকমতপুর্ণ কাজসমূহের বণ্টন করা হয় তথা বণ্টনের ফায়সালা করা হয়।” (সূরা আদ দোখান-৩-৪) (১) এখানে فيها তথা মুবারকপূর্ণ রাতের ব্যাখ্যায় সুপ্রসিদ্ধ তাফসীরে উল্লেখ আছে-“বিখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ফায়ছালার রাতই হচ্ছে- অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের রাত। এই শবে বরাতে সামনে এক বৎসরে যাবতীয় কিছুর ফায়ছালা করা হয় এবং তালিকা প্রস্তুত করা হয় মৃত ও জীবিতদের। এমনকি হজ্জ পালনকারীদের তালিকাও করা হয় সেই অর্ধ শা’বানের রাতে। ওই রাতে যার যার ভাগ্যে যা কিছু লেখা হয় তা থেকে কোন কমতিও করা হয়না এবং কোন কিছু বেশিও করা হয় না।( তাফসীরে কুরতুবী-এর ১৬তম খ-ের ১২৬/১২৭ পৃষ্ঠা) (২) এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত “তাফসীরে তাবারী”তে উল্লেখ আছে- “মুফাস্সিরীনে কিরামগণের অনেকেই উল্লেখ করেছেন যে, লাইলাতুল মুবারকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের রাত।” (“তাফসীরে তাবারী” কিতাবের ২৫তম খ-ের ৬৫ পৃষ্ঠা) (৩) উক্ত আয়াত শরীফ সর্ম্পেকে উল্লেখ আছে-“অথবা লাইলাতুল মুবারাকা উদ্দেশ্য হচ্ছে বরাতের রাত তথা শবে বরাত। এই রাতেই লাওহে মাহফুয থেকে কুরআন শরীফ নাযিল হওয়া শুরু হয়। অথবা এই শবে বরাতে লাওহে মাহফূয থেকে দুনিয়ার আকাশে এক সাথে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ নাযিল হয়।” (“তাফসীরে বায়যাবী শরীফ”-এর ৩য় খ-ের ২৮৭ পৃষ্ঠা) (৪) সকল মাদ্রসায় পঠিত কিতাব “তাফসীরে জালালাইন শরীফ”- উল্লেখ আছে- “অথবা লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শাবানের তথা ১৫ই শাবানের রাত।” (“তাফসীরে জালালাইন শরীফ” ৪১০ পৃষ্ঠা) এই উক্তির সমর্থনে উক্ত তাফসীরের ৪১০ পৃষ্ঠার ২৪ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে- “মহান আল্লাহ পাক-উনার বাণী লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাত। এটা হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং অন্যান্য একদল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মতে। বিস্তারিতঃ https://goo.gl/GjnS3O উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, অধিকাংশ অনুসরনীয় মুফাসসিরীণগণ উনারা ‘সূরা দুখানে’ বর্ণিত ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ দ্বারা ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ অর্থাৎ শবে বরাতকেই বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ ‘শবে বরাত’ কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ দ্বারাই অকাট্যভাবে প্রমাণিত। অতএব শবে বরাতের বিরোধিতা করা বা শবে বরাতকে অস্বীকার করা মূলত কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফকেই অস্বীকার করার নামান্তর। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। ★শবে বরাত সম্পর্কে হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছ একদম সহীহ ====   পবিত্র শবে বরাত প্রসঙ্গে অসংখ্য সহীহ হাদীস শরীফ বর্ণিত আছে। এত ব্যাপক সংখ্যক বর্ণনার ফলে লা’মাযহাবীদের গুরুরাও হাদীস শরীফ গুলোকে সহীহ বলতে বাধ্য হয়েছে। তারপরও কিছু কুয়োর ব্যাঙ সালাফী, হাদীস শরীফ সর্ম্পেকে অজ্ঞ হওয়ার করনে সহীহ হাদীস সমূহের বিরোধিতা করে। আসুন তাদের একটা বিরোধিতার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়া যাক- হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, عن حضرت ابى موسى الاشعرى رضى الله تعالى عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله تعالى ليطلع فى ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الا لمشرك او مشاحن رواه ابن ماجه ورواه احمد. عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضى الله تعالى عنه وفى رواية الا اثنين مشاحن وقاتل نفس. অর্থ: “হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেছেন, অর্ধ শা’বানের রাত্রি তথা শবে বরাতে মহান আল্লাহ পাক স্বয়ং নাযিল হন এবং উনার সকল সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন তবে মুশরিক এবং বিদ্বেষভাবাপন্ন ব্যক্তিদেরকে ক্ষমা করেন না। কিন্তু হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এটাকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। আর উনার অপর এক রেওওয়ায়েত রয়েছে, দু’ব্যক্তি ব্যতীত। যথা- বিদ্বেষভাবাপন্ন ব্যক্তি এবং মানুষ হত্যাকারী ব্যতীত সকলকেই ক্ষমা করা হয়।” (ইবনে মাজাহ পৃষ্ঠা ১০১: হাদীস ১৩৯০, বায়হাকী শুয়াইবুল ঈমান ৩/৩৮২: হাদীস ৩৮৩৫, মিসবাহুল জুজাহ ১/৪৪২: হাদীস ৪৮৭, মিশকাতুল মাছাবীহ ১১৫ পৃষ্ঠা: হাদীস ১৩০৬, আত তাগরীব ওয়াত তারহীব ৪/২৪০, কানযুল উম্মাল ১২/৩১৫: হাদীস ৩৫১৮২, মাযমাউয যাওয়াইদ ৮/৬৫: হাদীস ১২৯৬০, জামেউস সগীর : হাদীস ২৭০০, ফাযায়েলে ওয়াক্ত লি বায়হাকী ১/১৩২: হাদীস ২৯, জামিউল মাসানিদ ওয়াল সুনান লি ইবনে কাছীর : হাদীস ১৩০৭৬) উক্ত হাদীস শরীফের সনদ নিম্নরূপঃ ১) হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু- তিনি ছিলেন বিখ্যাত ফক্বীহ সাহাবী। ২) হযরত দ্বাহাক বিন আব্দুর রহমান ইবনে আয়যব রহমতুল্লাহি আলাইহি- ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি বলেন, তিনি ছিলেন তৃতীয় তবকার ছেকাহ রাবী। এছাড়া তিনি একজন তাবেয়ীও ছিলেন। (তাহযীবুত তাহযীব ৪/৩৯২, মিযানুল ইতিদাল ২/৩২৪) ৩) হযরত দ্বাহাক বিন আয়মন রহমতুল্লাহি আলাইহি- ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি বলেন, তিনি অপরিচিত। (তাহযীবুত তাহযীব ৪/৪৮৯) ৪) হযরত ওলীদ বিন মসলিম আল কুরাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি- হযরত ইবনে সাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সর্ম্পেকে বলেন, তিনি হচ্ছেন নির্ভরযোগ্য এবং অধিক হাদীস শরীফ বর্ণনাকারী। (তাহযীবুত তাহযীব ১১/১৩৪) ৫) হযরত রাশেদ ইবনু সায়ীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি- উনার সর্ম্পেকে ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি বলেন, তিনি ছিলেন দশম তবকার ছিকাহ রাবী।” (তাহযীবুত তাহযীব ৩/১৯৬) সালাফীরা উক্ত সনদের তৃতীয় বর্ণনাকারী হযরত দ্বাহাক বিন আয়মান রহমতুল্লাহি আলইহি উনার কারনে হাদীস শরীফকে অস্বীকার করতে চায়। এখানে ফিকিরের বিষয় হচ্ছে উক্ত রাবী ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি উনার কাছে অপরিচিত হলেও সিয়া সিত্তার ইমাম হযরত ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে অপরিচিত ছিলেন না। ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিলাদত ২০৯ হিজরীতে আর রাবী ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি উনার বিলাদত ৮৫২ হিজরীতে। সূতরাং (৮৫২-২০৯)= ৬৪৩ বছর আগের ইমাম হযরত ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে উক্ত রাবীর খবর ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি থেকে ভালো জানার কথা। সূতরাং উক্ত রাবীকে ঢালাও ভাবে মাজহুল বা অপরিচিত বলা মোটেও ঠিক হবে না। উক্ত হাদীস শরীফ সর্ম্পেকে লা’মাযহাবীদের ইমাম মোবারকপুরী উল্লেখ করেছে, رواه لبن ماجه من حديث ابي موسي الاشعري باسناد لا بأس به “ইমাম মুনযির রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উক্ত হাদীস শরীফ খানা ইমাম হযরত ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন। উক্ত হাদীস শরীফের সনদটির মধ্যে কোন অসুবিধা নেই।” (তুহফাতুল আহওয়াজী ৩/৪৪১) তাছাড়া উক্ত হাদীস শরীফ কমপক্ষে ১০ টা সনদে বর্ণিত হয়েছে। যা হাদীস শরীফকে শাহেদ হাদীস হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আহলে হাদীস লা’মাযহাবীদের অন্যতম পুজনীয় নাসির উদ্দীন আলবানী উক্ত হাদীস শরীফ সর্ম্পেকে বলেছে, ورواه ابن ماجه بلفظه من حديث أبي مويي الاشعري : صحيح لغيره হযরত ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক বর্ণিত হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে বর্ণিত হাদীস শরীফ খানা সহীহ লি গাইরিহী। (দলীলঃ সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব ৩ খন্ড: হাদীস ২৭৬৮) এবার আসুন সহীহ লিগাইরিহী কাকে বলে জেনে নিই,- ছহীহ লিগাইরিহীঃ এটা হাসান লিযাতিহী হাদীছ শরীফরে অনুরূপ। ছহীহ হাদীছ শরীফ-এর কোন রাবীর মধ্যে স্বরণ শক্তি কছিুটা কম থাকে। তবে সইে অভাব বা ত্রুটিটুকু অন্যান্য উপায়ে এবং অধকি রওিয়ায়তে দ্বারা পুরণ হয়ে যায়। মোট কথা, উহার সমর্থনে বহু রিওয়ায়েত বর্ণিত থাকায় তাহার ত্রুটি ক্ষতপিুরণ হয়ে গেছে। এরূপ হাদীছ শরীফকে ছহীহ লিগাইরিহী। (তাদরীবুর রাবী, মিজানুল আখবার) লা’মাযহাবীদের গুরুরাই উক্ত হাদীস শরীফকে সহীহ বলে উল্লেখ করেছে এবং বলেছে সনদে কোন অসুবিধা নেই তাহলে এখন কুয়ার ব্যং লা’মাযহাবীরা কোন সাহসে এই হাদীস শরীফের বিরোধিতা করে ? ★শবে বরাতের হাদীস শরীফ একদম সহীহ এ বিষয়ে সবাই একমত ======= সহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা শবে বরাত প্রমাণিত। রেজালবিদগন সনদ সহীহ হওয়ার ব্যাপারে একমত। বিশ্ব বিখ্যাত হাদীছ শরীফের কিতাব “ইবনে হিব্বানে” সহীহ সনদ সহ বর্ণনা করেছেন, أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُعَافَى الْعَابِدُ بِصَيْدَا ، وَابْنُ قُتَيْبَةَ وَغَيْرُهُ ، قَالُوا : حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ خَالِدٍ الأَزْرَقُ ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَبُو خُلَيْدٍ عُتْبَةُ بْنُ حَمَّادٍ ، عَنِ الأَوْزَاعِيِّ ، وَابْنِ ثَوْبَانَ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ مَكْحُولٍ ، عَنْ مَالِكِ بْنِ يُخَامِرَ ، عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : يَطْلُعُ اللَّهُ إِلَى خَلْقِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلاَّ لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ অর্থ: হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, মধ্য শাবানের রাতে মহান আল্লাহ পাক রহমতের ভান্ডার নিয়ে সকল সৃষ্টির প্রতি বিশেষ ভূমিকায় অবর্তীণ হন এবং মুশরিক অথবা হিংসুক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (দলীল: সুনানে ইবনে হিব্বান- হাদীস ৫৬৩৬, মুজামুল কবীর লি তাবরানী ১৬৬৩৯, মুজামুল আওসাত লি তাবরানী ৬৭৭৬, সুনানে ইবনে মাজাহ ১৩৯০, শুয়াবুল ঈমান ৩৫৫২, হুলয়িতুল আওলিয়া ৫/১৯১ পবিত্র এই হাদীছ শরীফ সম্পর্কে বিখ্যাত রিজাল বিশারদ আল্লামা হযরত নূরউদ্দীন ইবনে হাজার হায়ছামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব “মাযমাউয যাওয়ায়েদ ওয়া মানবাউল ফাওয়ায়েদ” কিতাবে বলেছেন, وعن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: "يطلع الله إلى جميع خلقه ليلة النصف من شعبان، فيغفر لجميع خلقه، إلا لمشرك، أو مشاحن". رواه الطبراني في الكبير والأوسط ورجالهما ثقات হাদীস শরীফখানা উল্লেখ করে বলেছেন, “ইমাম তাবরানী উনার মুজামুল কবীর ও আওসাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। হাদীস শরীফের সকল রাবী সেকাহ। (মাযমাউয যাওয়ায়েদ ওয়া মানবাউল ফাওয়ায়েদ ৬/১২৬ : হাদীছ নম্বর ১২৯৬০) বিখ্যাত ইমাম হযরত মুনযিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “আত তারগীব ওয়াত তারহীব” গ্রন্থে উক্ত হাদীছ উল্লেখ পূর্বক বলেছেন, ইমাম হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সহীহ হিসাবে উনার কিতাবে উল্লেখ করেছেন। (আত তারগীব ওয়াত তারহীব – হাদীছ নম্বর ১৫৪৪) ইমাম মুনযিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্ত গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছেন এই কিতাবে যে হাদীছ শরীফ “ওয়া আন” দ্বারা শুরু সেকল হাদীছ শরীফ সমূহ সনদ সহীহ। উক্ত হাদীছ শরীফখানা তিনি ওয়া আন দিয়েই শুরু করেছেন। বর্তমানে যারা শবে বরাত অস্বীকার করে তাদের মূল গুরু  সালাফী লা’মাযহাবীদের অন্যতম ইমাম, নাছির উদ্দীন আলবানী তার “সিলসিলাতু আহাদীসি আস সহীহা” কিতাবে পবিত্র শবে বরাতের হাদীস শরীফকে সহীহ বলে উল্লেখ করে লিখেছে,  حديث صحيح ، روي عن جماعة من الصحابة من طرق مختلفة يشد بعضها بعضا و هم معاذ ابن جبل و أبو ثعلبة الخشني و عبد الله بن عمرو و أبي موسى الأشعري و أبي هريرة و أبي بكر الصديق و عوف ابن مالك و عائشة . أما حديث معاذ فيرويه مكحول عن مالك بن يخامر عنه مرفوعا به “ হাদীসটি সহীহ। কেননা একদল সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বিভিন্ন সূত্রে নিসফে শাবানের মর্যদা ওপর একাধিক হাদীস শরীফ বর্ণিত আছে। বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারনে হাদীস শরীফটি মজবুতি লাভ করেছে। যে সকল সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদীস শরীফ বর্ণিত আছে উনারা হলেন, হযরত মু'আয ইবনে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু , হযরত আবু সালাবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আবু মূসা আল আশ'আরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু , হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আউফ বিন মালেক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা। এছাড়াও অনেক আকাবীর সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুগন হাদীস শরীফ বর্ণনা করেরন। (দলীল: সিলসিলাতু আহাদীসি আস সহীহা ৩য় খন্ড ১৩৫ পৃষ্ঠা: হাদীস নম্বর ১১৪৪ , মূল কিতাবের স্ক্যন কপি দেয়া হলো) সূতরাং প্রমাণ হলো উক্ত হাদীছ শরীফ সহীহ। এখান যারা এমন সহীহ হাদীছ শরীফ অস্বীকার করবে এবং শবে বরাতের বিরোধীতা করবে তাদের জন্য বলতে হবে উক্ত হাদীছ শরীফেই তাদের ফয়সালা বলা আছে। তারা হচ্ছে মুশরিক অথবা হিংসুক। এদের নছীবে শবে বরাত জুটবে না। ★শবে বরাত হাদীছ শরীফ একদম ছহীহ- এ বিষয়ে সকল আসমাউর রেজাল বিশারদগণ একমত ======================== ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা শবে বরাত শরীফ প্রমাণিত। রেজালবিদগণ সনদ ছহীহ হওয়ার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। বিশ্ব বিখ্যাত হাদীছ শরীফ উনার কিতাব “ছহীহ ইবনে হিব্বানে” ছহীহ সনদসহ বর্ণনা এসেছে,  أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُعَافَى الْعَابِدُ بِصَيْدَا ، وَابْنُ قُتَيْبَةَ وَغَيْرُهُ ، قَالُوا : حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ خَالِدٍ الأَزْرَقُ ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَبُو خُلَيْدٍ عُتْبَةُ بْنُ حَمَّادٍ ، عَنِ الأَوْزَاعِيِّ ، وَابْنِ ثَوْبَانَ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ مَكْحُولٍ ، عَنْ مَالِكِ بْنِ يُخَامِرَ ، عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : يَطْلُعُ اللَّهُ إِلَى خَلْقِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلاَّ لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ অর্থ: “হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মধ্য শা’বানের রাতে মহান আল্লাহ পাক তিনি রহমত উনার ভা-ার নিয়ে সকল সৃষ্টির প্রতি বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং মুশরিক ও হিংসুক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।” সুবহানাল্লাহ! (দলীল: সুনানে ইবনে হিব্বান- হাদীছ ৫৬৩৬, মুজামুল কবীর লি তাবরানী ১৬৬৩৯, মুজামুল আওসাত লি তাবরানী ৬৭৭৬, সুনানে ইবনে মাজাহ ১৩৯০, শুয়াবুল ঈমান ৩৫৫২, হুলয়িতুল আওলিয়া ৫/১৯১) এই হাদীছ শরীফ উনার সম্পর্কে বিখ্যাত রেজাল বিশারদ আল্লামা হযরত নূরউদ্দীন ইবনে হাজার হায়ছামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব “মাযমাউয যাওয়ায়েদ ওয়া মানবাউল ফাওয়ায়েদ” কিতাবে বলেছেন, وعن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه وسلم قال "يطلع الله إلى جميع خلقه ليلة النصف من شعبان، فيغفر لجميع خلقه، إلا لمشرك، أو مشاحن" رواه الطبراني في الكبير والأوسط ورجالهما ثقات অর্থ: হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করে বলেছেন, “ইমাম হযরত তাবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘মুজামুল কবীর ও আওসাত’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। পবিত্র হাদীছ শরীফের সকল রাবী সেকাহ। (মাযমাউয যাওয়ায়েদ ওয়া মানবাউল ফাওয়ায়েদ ৬/১২৬ : হাদীছ নম্বর ১২৯৬০) বিখ্যাত ইমাম হযরত মুনযিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “আত তারগীব ওয়াত তারহীব” গ্রন্থে উক্ত হাদীছ উল্লেখপূর্বক বলেছেন, হযরত ইমাম হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছহীহ হিসেবে উনার কিতাবে উল্লেখ করেছেন। (আত তারগীব ওয়াত তারহীব হাদীছ শরীফ নম্বর ১৫৪৪) হযরত ইমাম মুনযিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার উক্ত গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছেন- এই কিতাবে যে হাদীছ শরীফ “ওয়া আন” দ্বারা শুরু, সেসকল হাদীছ শরীফসমূহ সনদ ছহীহ। উক্ত হাদীছ শরীফখানা তিনি ‘ওয়া আন’ দিয়েই শুরু করেছেন। বর্তমানে যারা শবে বরাত শরীফ অস্বীকার করে তাদের মূল মুরুব্বী, সালাফী লা’মাযহাবীদের অন্যতম গুমরাহ নাছির উদ্দীন আলবানী তার “সিলসিলাতু আহাদীসি আস সহীহা” কিতাবে শবে বরাত শরীফ উনার হাদীছ শরীফকে ছহীহ বলে স্বীকার করে উল্লেখ লিখেছে,  حديث صحيح ، روي عن جماعة من الصحابة من طرق مختلفة يشد بعضها بعضا و هم معاذ ابن جبل و أبو ثعلبة الخشني و عبد الله بن عمرو و أبي موسى الأشعري و أبي هريرة و أبي بكر الصديق و عوف ابن مالك و عائشة অর্থ: “হাদীছ শরীফখানা সহীহ। কেননা এক জামায়াত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাদের থেকে বিভিন্ন সূত্রে নিসফে শা’বান উনার মর্যাদা উপর একাধিক পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে। বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারণে পবিত্র হাদীছ শরীফটি মজবুতী লাভ করেছে। যে সকল হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে উনারা হলেন, হযরত মু’আয ইবনে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আবু সালাবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আব্দল্লাহ বিন আ’মর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আবু মূসা আল আশ’আরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, আফদ্বালুন নাছ বায়দ¦ুল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম, হযরত আউফ বিন মালেক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম। এছাড়াও অনেক আকাবীর ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। (দলীল: সিলসিলাতু আহাদীসি আস সহীহা ৩য় খন্ড ১৩৫ পৃষ্ঠা: হাদীছ নম্বর ১১৪৪) সুতরাং প্রমাণ হলো উক্ত হাদীছ শরীফ ছহীহ এবং অনেকগুলো সনদে বর্ণিত। অর্থাৎ শাহেদ ও মুতাবে সূত্রে আরো পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত থাকার কারণে উক্ত ছহীহ হাদীছ শরীফ আরো বহুগুণে শক্তিশালী হয়েছে। এখন যারা এমন ছহীহ হাদীছ শরীফ অস্বীকার করবে এবং পবিত্র শবে বরাত শরীফ উনার বিরোধিতা করবে তাদের জন্য বলতে হবে- উক্ত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেই তাদের ফয়সালা বলা আছে। তারা হচ্ছে মুশরিক অথবা হিংসুক। এদের নছীবে পবিত্র শবে বরাত শরীফ জুটবে না। ★বিখ্যাত খলীফা ও তাবেয়ী হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক গভর্নরকে শবে বরাত পালনের চিঠি ...................................................................................................... বিখ্যাত খলীফা ও তাবেয়ী হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি কিছু বিশেষ দিবস পালন করার জন্য এক গভর্নরকে চিঠি লিখেছিলেন। বিখ্যাত ইমাম হযরত রজব হাম্বলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, بإسناده إلى عمر بن عبد العزيز أنه كتب إلى عدي بن أرطاة: "عليك بأربع ليال في السنة فإن الله يفرغ فيهن الرحمة، أول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة الفطر وليلة النحر অর্থ: “হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি উনার গভর্নর আদী ইবনে আরত্বাতকে চিঠি লিখলেন যে, বছরে চারটি রাত আপনাদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্র্ণ। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক এই পবিত্র রাতে রহমত নাযিল করেন। যথা- পবিত্র রজব মাসের প্রথম রাত, ১৫ শা’বান রাত (লাইলাতুল বরাত), ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদ্বহার রাত।” (লাতায়েফুল মা’য়ারেফ ১৬২) যেহেতু শবে বরাত পালনের আমল সম্মানিত দ্বীন ইসলামে পালিত হয়ে আসছে। তাই খলীফা হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার গভর্নর আদী ইবনে আরত্বাতকে চিঠি লিখে সে বিষয়ে স্মরণ করিয়ে দিলেন। কেননা মহান আল্লাহ পাক বিশেষ দিবস সমূহ স্মরণ করিয়ে দিতে বলেছেন। মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন- وَذَكّرْهُم بِاَيَّامِ اللهِ ۚ اِنَّ فِى ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لّكُلّ صَبَّارٍ شَكُوْرٍ◌ অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দিবসসমূহ সম্পর্কে তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন। নিশ্চয়ই উক্ত দিবসসমূহ উনাদের মধ্যে প্রত্যেক ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ বান্দা-বান্দী-উম্মত উনাদের জন্যে নিদর্শনাবলী তথা ইবরত-নছীহত গ্রহণের বিষয় রয়েছে।” (পবিত্র সূরা ইবরাহীম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫) সুতরাং শবে বরাত বিরোধী অর্থাৎ ইসলাম বিরোধী ওহাবী, সালাফী, আহলে হাদীছ, লা-মাযহাবী ইত্যাদি ধর্মাবলম্বীদের চিহ্নিত করতে হবে, এদেরকে প্রতিহত করতে হবে এবং এদের থেকে নিজেদের ঈমান-আমল হিফাজত করতে হবে। ★খইরুল কুরূনে মক্কা শরীফে অর্থাৎ মসজিদুল হারাম শরীফে লাইলাতুল বরাতে সারা রাত ইবাদত-বন্দেগী হতো  ====== বাতিল ফিরকারা বলে থাকে- পবিত্র লাইলাতুল বরাত বিদয়াত। খইরুল কুরূনে কেউ পবিত্র লাইলাতুল বরাত পালন করেন নাই। নাউযুবিল্লাহ! কেউ এ রাতে ইবাদত-বন্দেগী করেন নাই। নাউযুবিল্লাহ! অথচ ইতিহাস সাক্ষী- খাইরুল কুরুনে পবিত্র লাইলাতুল বরাত পালন হয়েছে। আজ থেকে প্রায় ১২শ বছর আগে মুহম্মদ ইবনে ইসহাক আল মক্কী আল ফাকেহী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ২৭২ হিজরী)  কর্তৃক পবিত্র  মক্কা শরীফ উনার আমল ও  ইতিহাস নিয়ে রচিত কিতাব “আখবারুল মক্কা”। উক্ত কিতাবে পবিত্র মক্কা শরীফে যে লাইলাতুল বরাত পালন হতো তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, وأهل مكة فيما مضى إلى اليوم إذا كان ليلة النصف من شعبان، خرج عامة الرجال والنساء إلى المسجد، فصلوا، وطافوا ، وأحيوا ليلتهم حتى الصباح بالقراءة في المسجد الحرام، حتى يختموا القرآن كله، ويصلوا، ومن صلى منهم تلك الليلة مائة ركعة يقرأ في كل ركعة بـالحمد، و قل هو الله أحد عشر مرات، وأخذوا من ماء زمزم تلك الليلة، فشربوه، واغتسلوا به، وخبؤوه عندهم للمرضى، يبتغون بذلك البركة في هذه الليلة، وروى فيه أحاديث كثيرة (أخبار مكة للفاكهي أبو عبد الله محمد بن إسحاق بن العباس المكي الفاكهي)ي অর্থ: অতীত থেকে বর্তমানকাল অবধি পবিত্র  মক্কা শরীফ উনার অধিবাসীগণ পবিত্র শা’বান শরীফ মাস উনার মধ্যবর্তী রাতে মসজিদে গমন করেন অতঃপর নামায আদায় করেন, তাওয়াফ করেন, পবিত্র মসজিদে হারাম শরীফে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের মাধ্যমে সারা রাত জেগে থাকেন, এমনকি তারা পূর্ণ কুরআন শরীফ খতম করেন। আর যাঁরা একশ রাকাআত নামায আদায় করেন তাঁরা প্রত্যেক রাকাআতে পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার সাথে দশবার পবিত্র সূরা ইখলাস শরীফ তিলাওয়াত করেন। পবিত্র যমযম উনার পানি পান করেন, এর দ্বারা গোসল করেন এবং অসুস্থদের জন্য তা জমা করে রাখেন। এসব আমলের মাধ্যমে উনারা উক্ত পবিত্র রাতের বরকত অন্বেষণ করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! এ সম্পর্কে অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। (আখবারুল মক্কা ৩ খ- ৮৪ পৃষ্ঠা) ২৭২ হিজরী হযরত ইমাম ফাকেহী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ওফাত সন। অর্থাৎ তিনি পবিত্র নববী যুগ উনার অনেক কাছের একজন মানুষ। তিনি বর্ণনা করছেন- অতীত থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত পবিত্র মক্কা শরীফ উনার নারী-পুরষগণ পবিত্র লাইলাতুল বরাত পালন করতেন অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে শুরু করে এই আমল চলে আসছে। শুধু তাই নয়, পবিত্র মসজিদে হারাম শরীফেও এ রাতে ইবাদত হতো। সুবহানাল্লাহ! বাতিলদের কাছে প্রশ্ন- যদি এই আমল বিদয়াত হতো, তাহলে সেই সোনালী যুগে কেউ এই আমল উনার বিরোধিতা করেছে কি? কোনো প্রমাণ কি ওহাবীরা দেখাতে পারবে? কস্মিনকালেও পারবে না। তাহলে আজ ১৪০০ বছর পর এসে কারা এই সুমহান রাত ও আমল উনার বিরোধিতা করছে? কারা বিরোধিতা করে নব্য মতবাদ প্রচার করছে? যারা পবিত্র লাইলাতুল বরাত উনার বিরোধী তারাই বিদয়াতী তার নব্য গুমরাহ ও বিভ্রান্ত মালউন। তারা চায় না- মানুষ নেক আমল করে বিশেষ রাত উনার ফযীলত ও রহমত লাভ করুক। শুধু তাই নয়, ইতিহাসে প্রমাণিত বিখ্যাত খলীফা ও তাবেয়ী হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কিছু বিশেষ দিবস পালন করার জন্য এক গভর্নরকে চিঠিও লিখেছিলেন। বিখ্যাত ইমাম হযরত রজব হাম্বলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, بإسناده إلى عمر بن عبد العزيز أنه كتب إلى عدي بن أرطاة: "عليك بأربع ليال في السنة فإن الله يفرغ فيهن الرحمة، أول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة الفطر وليلة النحر অর্থ: হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উনার গভর্নর আদী ইবনে আরত্বাতকে চিঠি লিখলেন যে, বছরে চারটি রাত আপনাদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্র্ণ। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি এই পবিত্র রাতে রহমত নাযিল করেন। যথা- পবিত্র রজব মাস উনার প্রথম রাত, ১৫ শা’বান রাত (লাইলাতুল বরাত), ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদ্বহার রাত। (লাতায়েফুল মা’য়ারেফ ১৬২) সুতরাং এই রাতের আমল খাইরুল কুরুন উনার সময় থেকে চলে আসছে। এই সুমহান রাত উনার আমল নতুন কিছু না। এই আমল সুন্নত, যা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। আর শরীয়তসম্মত বলেই খাইরুল কুরুনে এই আমল পালিত হয়েছে, এখনো হচ্ছে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত হবে। যারা বিরোধিতা করবে, তারাই বিদয়াতী, ইসলামবিদ্বেষী। এদের চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের থেকে সাবধান থাকতে হবে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

কোরআন পড়ো মনোযোগ দিয়ে।তাহলে সবকিছুই পাবে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

আমার আগে যিনি উত্তর দিয়েছেন। তিনি সর্ম্পূণ কপি করে দিয়েছেন। তিনি কি জানেন তিনি যা দিয়েছেন তা ঠিক।তিনি যে সূরা আদের ৩-৪ আয়াতের কথা বলেছেন তা শবে কদরই হবে শবে বরাত নয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কোরআনে ৮১২ পৃষ্টায় সূরা দুখানের ৩ নং আয়াতে বলা আছে " আমি তো ইহা (কোরআন) অবতীর্ণ করিয়াছি এক মুবারক রজনীতে,আমি তো সতর্ককারী" এর টিকা হিসাবে আপনি সূরা বাকারার ১৮৫, সূরা কাদরের ১ নং আয়াত পড়ুন। বাকারার ১৮৫ আয়াত পড়লেই বুঝতে পারবেন। আর কাদরের ১ নং আয়াত পড়লেই বুঝবেন। আরেকটি বিষয় অনেকে বলেন বরাতের দিনে নাকি রূহ নেমে আসে। দেখি এই বিষয়ে কোরআন কি বলে, কদরের ৪ নং আয়াতে বলা আছে "সেই রাত্রিতে ফিরিশতাগণ ও রূহ অবর্তীণ হয় প্রত্যেক কাজে তাহাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে।" এখানে সেই রাত্রি বলতে কদর রাত্রিকে বোঝানো হয়েছে। ১নং আয়াতের টিকা দেখুন কাদরের রাত্রে কোরআন নাযিল হয়েছে। রূহ এর টিকা নাবা সূরা ৩৮নং আয়াতে দেখুন। এই আয়াতের টিকা নং ১৭৯৬ বলা আছে " কুরআনে উল্লিখিত রূহ শব্দটি এই আয়াতে ফিরিশতাদের মধ্যে যে সবচেয়ে শক্তিশালী ও মর্যাদাসম্পন্ন তাহাকেই বুঝাইতেছে।শবে বরাত পালন করা যাবে না। আমার মোবাইলে আর লেখা যায় না। তাই আমি বাকি উত্তরটা মন্তব্যে যোগ করব।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

এই ভিডিওগুলো দেখুন......।আর বিস্তারিত জানার জন্য কিছু ভালো লেখকের বই পডতে পারেন।



ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

শবে বরাত নিয়ে বর্তমানে বেশ বির্তকমণ্ডিত একটি অবস্থা বিরাজমান- সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কেউ বলতে চাচ্ছেন শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত বলতে ইসলামে (কোরআন-হাদিসে) কিছুই নেই। আবার কোনো কোনো মুসলিম পক্ষ এই বক্তব্য কোনোভাবেই মেনে নিতে নারাজ যে শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত নামে ইসলামে কিছু নেই। এর মাঝামাঝি আরো একটি দল বা গ্রুপের অবস্থান রয়েছে যারা লাইলাতুল বরাতকেন্দ্রিক বিতর্কের কারণে কিছুটা মনক্ষুন্ন। চলুন তাহলে দেখি এর সমাধান আসলে কি?

এক. শবে বরাতের ব্যপারে সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান: বাস্তবতা হল, এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট কোন আলোচনা নাই। কেননা  পবিত্র কোরআনের ২৫ তম পারা ও ৪৪ নং সূরা “ দুখানের ” শুরুতে যে পাঁচটি আয়াত রয়েছে সেখানে উল্লেখিত “লাইলাতুম মুবারাকাহ” (বরকতময় রাত) শব্দের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য তাফসীর হলো শবে ক্বদর; শবে বরাত নয়। তবে এ রাতের ফজিলত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। যদিও হাদিসে শবে বরাত শব্দ নাই। সেখানে আছে “লাইলাতুন নিছ্ফ মিন শাবান”(শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত)। আর “লাইলাতুন নিছ্ফ মিন শাবান”কে এই জন্য শবে বরাত বলা হয় যে, শব অর্থ হলো রাত আর বরাত অর্থ হলো নাজাত তথা মুক্তি। হাদীস দ্বারা যখন প্রমাণিত এই রাতে আল্লাহ তাআলা তার অনেক বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন তাই এই রাতকে মুক্তির রাত তথা শবে বরাত বলা হয়। ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহ. বলেন, “এ রাতকে লাইলাতুল বারাআত করে এ জন্যই নামকরণ করা হয়েছে যে, ট্যাক্স আদায়কারীগণ জনগণ থেকে পূর্ণ কর আদায় করে তাদেরকে “ বারাআত ” অর্থাৎ দায়মুক্ত বলে একটি দলীল হস্তান্তর করতেন, তদ্রূপ আল্লাহ তাআলাও মুমিন বান্দাদেরকে – এ রাতে জাহান্নাম সুতরাং এই রাতকে অন্য সব সাধারণ রাতের মতো মনে করা এবং এই রাতের ফজিলতের ব্যাপারে যত হাদিস এসেছে, তার সবগুলোকে মওযু বা যয়ীফ মনে করা ভুল যেমন অনুরূপ এ রাতকে শবে কদরের মত বা তার চেয়েও বেশি ফজিলতপূর্ণ মনে করাও ভিত্তিহীন ধারণা।

দুই. শবে বরাতের (পনের শাবানের রাত) ফজিলত সম্পর্কিত হাদিস:

عن مالك من يخامر , عن معاذ بن جبل, عن النبى قال : يطلع الله الى خلقه فى ليلة النصف من شعبان, فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن

মুআয ইবনে জাবাল রাযি. বলেন, নবীজী ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)

এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, এ রাতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাতের দ্বারা ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত হয়। কিন্তু শিরকি কাজ-কর্মে লিপ্ত ব্যক্তি এবং অন্যের ব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী মানুষ এই ব্যাপক রহমত ও সাধারণ ক্ষমা থেকেও বঞ্চিত থাকে।

তিন. হাদিসটির সনদ বিষয়ক আলোচনা: হাদিসটির সনদ সহিহ। কেননা উপরোক্ত হাদিসটি অনেক নির্ভরযোগ্য হাদিসের কিতাবেই নির্ভরযোগ্য সনদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হিব্বান তার কিতাবুস সহিহ এ (যা সহিহ ইবনে হিব্বান নামেই সমধিক প্রসিদ্ধ, ১৩/৪৮১ এ) এই হাদিসটি উদ্ধৃত করেছেন। এটি এই কিতাবের ৫৬৬৫ নং হাদিস। যদি শবে বরাতের ফজিলতের ব্যাপারে দ্বিতীয় কোন হাদিস না থাকত, তবে এই হাদিসটিই এ রাতের ফজিলত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এবং এ রাতে মাগফেরাতের উপযোগী নেক আমলের গুরুত্ব প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট হত। অথচ হাদিসের কিতাবসমূহে নির্ভরযোগ্য সনদে এ বিষয়ক আরো একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। বর্তমান সময়ের প্রসিদ্ধ শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী রহ. সিলসিলাতুল আহাদসিস্ সাহিহা ৩/১৩৫-১৩৯ এ এই হাদিসের সমর্থনে আরো আটটি হাদিস উল্লেখ করার পর লেখেন, وجملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلاريب. والصحة تثبت بأقل منها عددا، مادامت سالمة من الضعف الشديد، كماهو الشأن فى هذاالحديث . এ সব রেওয়াতের মাধ্যমে সমষ্টিগত ভাবে এই হাদিসটি নিঃসন্দেহে সহিহ প্রমাণিত হয়। তারপর আলবানী রহ. ওই সব লোকের বক্তব্য খন্ডন করেন যারা কোন ধরণের খোঁজখবর ছাড়াই বলে দেন যে, শবে বরাতের ব্যাপারে কোন সহিহ হাদিস নেই।

চার. এ বিষয়ে আরো হাদিস: ‘হযরত আলা ইবনুল হারিস রহ. থেকে বর্ণিত, আয়েশা রাযি. বলেন, একবার রাতে নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হল তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা অথবা বলেছেন, ও হুমাইরা, তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোন্ রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ তখন ইরশাদ করলেন-

هذه ليلة النصف من شعبان إن الله عز وجل يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرين ويرحم المسترحمين ويؤخر أهل الحقد كما هم.
‘‘এটা হল অর্ধ-শাবানের রাত। (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত।) আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’’(শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী ৩/৩৮২-৩৮৩)
ইমাম বাইহাকী রহ. এই হাদীসটি বর্ণনার পর এর সনদের ব্যাপারে বলেছেন- هذا مرسل جيد

পাঁচ. শবে বরাত ও সাহাবায়ে কেরাম: শবে বরাতের সাথে সংশ্লিষ্ট হাদিসসমূহের বর্ণনাকারীদের মধ্যে অনেক বড় বড় ( এক ডজনের মত ) সাহাবাও রয়েছেন। যাদের কয়েকজনের পবিত্র নাম নিম্নে প্রদত্ত হলো–

 ১. হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাযি. ২. হযরত আলী রাযি. ৩. হযরত আয়শা রাযি. ৪. হযরত আবু হুরায়রা রাযি. ৫. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আ’মর রাযি. ৬. হযরত আবু মুসা আশআরী রাযি. ৭. হযরত আউফ ইবনু মালিক রাযি. ৮. হযরত মুআয ইবনু জাবাল রাযি. ৯. হযরত আবু ছালাবাহ আল খুসানী রাযি. ১০. কাছীর ইবনে মুররা আল হাজরমী রাযি.

ছয়. শবে বরাতের আমল: উল্লেখিত হাদিস থেকে এ রাতের কী কী আমল- তার একটা নির্দেশনা-ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তাহল, ইবাদত করা। নফল নামাজের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী দুই রাকআত করে যত রাকআত সম্ভব হয় পড়তে থাকা। কোরান কারীম তেলাওয়াত করা। দরূদ শরীফ পড়া। ইস্তেগফার করা। জিকির করা। দোয়া করা।

সাত. পরদিন রোজা রাখা সম্পর্কিত হাদিস:  সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে ,

عن على بن ابى طالب رضى الله عنه قال : قال رسول الله   : إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها, فإن الله ينزل فيهالغروب الشمس الى سماء الدنيا, فيقول : ألا من مستغفر فاغفر له على مستزرق فأرزقه, ألا مبتلى فأعافيه , ألا كذا, ألا كذا, حتى يطلع الفجر

হযরত আলী ইবনে আবু তালেব রাযি.থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, পনের শাবানের রাত (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোজা রাখ। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোন রিযিক প্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দেব। এভাবে সুব্হে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদের ডাকতে থাকেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪)

এই বর্ণনাটির সনদ যয়ীফ। কিন্তু মুহাদ্দিসীন কেরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হল, ফাযায়েলের ক্ষেত্রে যয়ীফ হাদিস গ্রহণযোগ্য। তাছাড়া শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখার কথা সহিহ হাদিসে এসেছে এবং আইয়ামে বীয অর্থাৎ প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার বিষয়টিও সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। বলা বাহুল্য, পনের শাবানের দিনটি শাবান মাসেরই একটি দিন এবং তা আয়্যামে বীযের অন্তর্ভূক্ত। এজন্য ফিকহের একাধিক কিতাবেই এদিনে রোজাকে মুস্তাহাব বা মাসনূন লেখা হয়েছে।

আট. এ রাতের নফল আমলসমূহ সম্মিলিত নয়, ব্যক্তিগত: এ বিষয়টিও মনে রাখতে হবে যে, এ রাতের নফল আমলসমূহ, বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকীভাবে করণীয়। ফরজ নামাজ তো অবশ্যই মসজিদে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার কোন প্রমাণ হাদিস শরীফেও নেই আর সাহাবায়ে কেরামরে যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না। (ইক্তিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম: ২/৬৩১-৬৪১; মারাকিল ফালাহ ২১৯)

তবে কোন আহবান ও ঘোষণা ছাড়া এমনিই কিছু লোক যদি মসজিদে এসে যায়, তাহলে প্রত্যেকে নিজ নিজ আমলে মশগুল থাকবে, একে অন্যের আমলের ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণ হবে না।

নয়. এ রাতের আপত্তিকর কাজকর্ম: কোন কোন জায়গায় এই রেওয়াজ আছে যে, এ রাতে মাগরিব বা ইশার পর থেকেই ওয়াজ-নসীহত আরম্ভ হয়ে সারা রাত চলতে থাকে । আবার কোথাও ওয়াজের পর মিলাদ-মাহফিলের অনুষ্ঠান হয়। কোথাও তো সারা রাত খতমে-শবীনা হতে থাকে। উপরন্তু এসব কিছুই করা হয় মাইকে এবং বাইরের মাইকও ছেড়ে দেওয়া হয়। মনে রাখতে হবে, এসব কিছুই ভুল জঘন্যতর বেদআত।

অনুরূপভাবে খিচুরী বা হালুয়া-রুটির প্রথা, মসজিদ, ঘর-বাড়ি বা দোকান-পাটে আলোক-সজ্জা, পটকা ফুটানো, আতমবাজি, কবরস্থান ও মাজারসমূহে ভিড় করা, মহিলাদের ঘরের বাইরে যাওয়া, বিশেষ করে বেপর্দা হয়ে দোকানপাট, মাজার ইত্যাদি স্থানে ভিড় করা-এসবও এ রাতের আপত্তিকর কাজ। এসব কাজের কোন কোনটা তো অন্য সময়েও হারাম। আর কিছু কাজ সাধারণ অবস্থায় জায়েজ থাকলেও (যেমন : খিচুরী পাক করে গরীব-মিসকীনদের মধ্যে বন্টন করা) এগুলোকে শবে বরাতের কাজ মনে করা বা জরুরী মনে করা এবং এসবের পেছনে পড়ে এ রাতের মূল কাজ তওবা, ইস্তেগ্ফার, নফল ইবাদত ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত থাকার কোন বৈধতা থাকতে পারে কি? মূলতঃ এসব কিছুই শয়তানের ধোঁকা। মানুষকে আসল কাজ থেকে বিরত রাখার জন্যই শয়তান এসব কাজ-কর্মে মানুষকে লাগিয়ে রাখে।

দশ. একটি সতর্কবার্তা:  অনেক অনির্ভরযোগ্য ওজিফার বই-পুস্তকে নামাজের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন লেখা আছে অর্থাৎ এত রাকআত হতে হবে, প্রতি রাকআতে এই সূরা এতবার পড়তে হবে – এগুলো ঠিক নয়। হাদিস শরীফে এসব নেই। এগুলো মানুষের মনগড়া পন্থা। সঠিক পদ্ধতি হল, নফল নামাজের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী দুই রাকআত করে যত রাকআত সম্ভব হয় পড়তে থাকা। আর ইবাদত করতে গিয়ে কিছুটা ঘুমের প্রয়োজন হলে ঘুমাবেন। এমন যেন না হয় যে, সারা রাতের দীর্ঘ ইবাদতের ক্লান্তিতে ফজরের নামায জামাআতের সাথে পড়া সম্ভব হল না। হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : قَالَ رَسُولُ اللهِ :لَيْسَ صَلاَةٌ أَثْقَلَ عَلَى المُنَافِقِينَ مِنْ صَلاَةِ الفَجْرِ وَالعِشَاءِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْواً

আবূ হুরাইরা রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, মুনাফিকদের উপর ফজর ও এশার নামাজ অপেক্ষা অধিক ভারী নামাজ আর নেই। যদি তারা এর ফজিলত ও গুরুত্ব জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে বা পাছার ভরে অবশ্যই (মসজিদে) উপস্থিত হত। (বুখারি: ৬৫৭, ৬৪৪, ৬৫৭, ২৪২০, ৭২২৪, মুসলিম: ৬৫১)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে শাবান মাসে সকল গুনাহ ও পাপরাশি থেকে পবিত্র হয়ে যথাযথভাবে রমযান মাসকে বরণ করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

সূত্রঃ http://quranerjyoti.com

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ