আলী ইবনে আবী তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যখন শা‘বানের মধ্যরাত্রি আসবে তখন তোমরা সে রাতের কিয়াম তথা রাতভর নামায পড়বে, আর সে দিনের রোযা রাখবে; কেননা সে দিন সুর্যাস্তের সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন: ক্ষমা চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি ক্ষমা করব। রিযিক চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি রিযিক দেব। সমস্যাগ্রস্ত কেউ কি আছে যে আমার কাছে পরিত্রাণ কামনা করবে আর আমি তাকে উদ্ধার করব। এমন এমন কেউ কি আছে? এমন এমন কেউ কি আছে? ফজর পর্যন্ত তিনি এভাবে বলতে থাকেন”। আবু মূসা আল আশ’আরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘আল্লাহ তা‘আলা শাবানের মধ্যরাত্রিতে আগমণ করে, মুশরিক ও ঝগড়ায় লিপ্ত ব্যক্তিদের ব্যতীত, তাঁর সমস্ত সৃষ্টিজগতকে ক্ষমা করে দেন। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন: এক রাতে আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে খুঁজে না পেয়ে তাঁকে খুঁজতে বের হলাম, আমি তাকে বাকী গোরস্তানে পেলাম। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন: ‘তুমি কি মনে কর, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার উপর জুলুম করবেন?’ আমি বললাম: ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধারণা করেছিলাম যে আপনি আপনার অপর কোন স্ত্রীর নিকট চলে গিয়েছেন। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: ‘মহান আল্লাহ তা’লা শা‘বানের মধ্যরাত্রিতে নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন এবং কালব গোত্রের ছাগলের পালের পশমের চেয়ে বেশী লোকদের ক্ষমা করেন। إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ* فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ – سورة الدخان:3ـ4 আয়াতদ্বয়ের অর্থ হলোঃ “অবশ্যই আমরা তা (কোরআন) এক মুবারক রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি, অবশ্যই আমরা সতর্ককারী, এ রাত্রিতে যাবতীয় প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়”। উপরোক্ত তিনটি হাদিস ও সুরা দুখানের ৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে এই পবিত্র রজনীতে সারারাত নফল নামাজ আদায় করার জন্যে। যারা এই মোবারকময় রজনীতে সারারাত জেগে নফল নামাজ ও অর্থসহ পবিত্র কোরান তেলোয়াত করবে, আল্লাহ তাদের সারা জীবনের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
নফল নামায ছাড়াও কোরআন তেলাওয়াত, যিকির এইসব আমল করতে পারেন। তাছাড়া পবিত্র শবে বরাতের রাত্রে আল্লাহপাকের কাছে সহিহ্ নিয়তে, খাস দিলে আল্লাহর কাছে যা চাইবেন তাই পাবেন। এছাড়াও এই রাত হলো দোয়া কবুলের রাত। তাই রাত্রের শেষ সময়ে আল্লাহপাকের কাছে আপনি আপনার পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু, প্রতিবেশী সবার হেদায়েত কামনা করে দোয়া করতে পারেন।
শবেবরাত এর রাতে আমরা কেবল সে সব মুসল্লিদের-ই দেখতে পাই, যাদের দুই ঈদ আর শুক্রবার ছাড়া ছালাত আদায় করতে দেখা যায়না! এক শ্রেণির মানুষকে সস্তায় রেডিম্যাট জান্নাত কিনার ধান্দায় এ দিন রাতে জামায়াতবদ্ধভাবে মসজিদে একত্রিত হয়ে রাসুলুল্লাহর সহীহ সুন্নাহ পরিপন্থি অদ্ভুত পন্থায় ১০০ থেকে ৩০০ রাকায়াত পর্যন্ত ছালাত আদায় করতে দেখা যায়। যা শরীয়তের নামে মন্দ চর্চারই অংশ মাত্র। যা ৪৪৮ হিজরীর আগে পৃথিবীর কোথাও দেখা যায়নি। রাসুল (সাঃ), সাহাবায়ে কেরামের যুগে যার অস্তিত্ব মিলা ভাড়। হ্যা, এই দিনের বিশেষ ফযিলত আছে যা হাদীছ থেকে জানতে পারি। তার মানে এই নয়, এই দিনে হালুয়া-রুটি আর বিভিন্ন রকম ভাল মন্দ খাবার খেয়ে দলবদ্ধ ভাবে মসজিদে একত্রিত হয়ে শরীয়ত অসমর্থিত পন্থায় ইবাদাত বন্দেগী করতে হবে। আপনি একাকি কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই অন্য সকল রাতের মতো আল্লাহর ইবাদ-বন্দেগীতে কাটিয়ে দিন । যা পরকালের বড় পাথেয় হয়ে থাকবে। আল্লাহ আমাদের হক্ব বুঝার তাওফিক দিন। আমীন!!