শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

একজন মানুষকে তখনি ব্রেইন ডেড বলা যাবে যখন তার মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকান্ডে কোন সক্রিয়তা দেখা যাবে না। অর্থাৎ মস্তিষ্কের কোষগুলোর মাঝে কোন রকমের বৈদ্যুতিক কার্যক্রম নেই। ডাক্তাররা অনেক কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তার পরেই একজন মানুষকে ব্রেইন ডেড বলে ঘোষণা করেন। এর মাঝে একটি একেবারেই সাধারণ একটি পরীক্ষা হলো মানুষটি নিজে নিজে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছে কিনা সেটা দেখা। এরকম স্বাভাবিক একটি কাজ করতে পারা মানে মস্তিষ্কে তখনও কিছু প্রাণ রয়ে গেছে। ব্রেইন ডেড হয়ে যাবার পর একজন মানুষকে আইনত জীবিত বলে ধরা হয় না। কিন্তু তার শরীরকে কিছুটা সময় পর্যন্ত যন্ত্রের সাহায্যে বাচিয়ে রাখা সম্ভব হয়। প্রশ্ন হলো, যন্ত্র কতটা সময় পর্যন্ত একজন মানুষের শরীরকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে? আর সেটা করেই বা কিভাবে?

image

  • - একজন মানুষের মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিলেও তার হৃৎপিণ্ড কিছু সময় ধরে কাজ চালিয়ে যেতে পারে। এমনকি শরীরের বাইরেও সচল থাকার ক্ষমতা আছে এর। কিন্তু শরীরে রক্ত এবং অক্সিজেন সচল রাখার জন্য ভেন্টিলেটর ব্যবহার না করা হলে এই সময়ের পরই হৃৎপিণ্ডও অচল হয়ে যাবে এক ঘণ্টারও কম সময়ে।
  • - মস্তিষ্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণের জন্য হরমোন নিঃসরণ করা। মস্তিষ্ক অচল হয়ে যাবার পর পাকস্থলী, কিডনি এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এক সপ্তাহ পর্যন্ত বজায় থাকতে পারে কিন্তু পরে এসব হরমোনের অভাবে এসব ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। যেমন থাইরয়েড হরমোন এবং ভ্যাসোপ্রেসিন হরমোন।
  • - স্বাভাবিক রক্ত চাপেরও ব্যাঘাত ঘটে ব্রেইন ডেড অবস্থায়। এই ব্যক্তিকে তখন রক্তচাপ ঠিক রাখার ওষুধ দিতে হয়। এর পাশাপাশি শরীরের তাপমাত্রাও ঠিক রাখতে হয় কৃত্রিম উপায়ে। তাকে ভারি কম্বল চাপা দিয়ে রাখা হয়, ঘরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয় এবং কখনও কখনও স্যালাইন দেওয়া হয়।

image

ব্রেইন ডেড মানুষের শরীর সাধারনত খুব বেশি সময় ধরে বাঁচিয়ে রাখা হয় না। মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে জানার পর সাধারণত অল্প কিছুদিন ধরে তার শরীর এভাবে বাচিয়ে রাখা হয় এবং এ সময়ের মাঝে তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দান করে দেবার ব্যাপারটা ঠিক করা হয়। অথবা পরিবারের মানুষ যদি তাকে বিদায় জানাতে একটু বেশি সময় নিতে চায় তবেও কিছুদিন তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়।

ব্রেইন ডেড মানুষের শরীর সর্বোচ্চ কত সময় ধরে জীবিত রাখা যাবে সে বিষয়ে খুব একটা গবেষণা করা হয়নি। ব্রেইন ডেথ নিয়ে আলোচনা সর্বপ্রথম শুরু হয় ১৯৫০ সালে, ফ্রান্সে, যেখানে ৬ জন রোগীকে ২-২৬ দিন পর্যন্ত বাচিয়ে রাখা হয় মস্তিষ্কে কোন রকম রক্তপ্রবাহ ছাড়াই। সে সময়ে শুধু ব্রেইন ডেড হওয়াকে একটি মৃত্যু হিসেবে ধরা হয়, এবং হৃৎপিণ্ড এবং শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়াকে আরেকটি মৃত্যু ধরা হয়।

এখনকার সময়ে প্রযুক্তি অনেক উন্নত। ভেন্টিলেটর, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং হরমোন সরবরাহের প্রক্রিয়া এতই উন্নত যে, একজন ব্রেইন ডেড মানুষের শরীর হয়ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু সময় যত বাড়ে, এমন একজন মানুষের শরীর বাঁচিয়ে রাখা তত কষ্টকর হয়ে পড়ে, কারন তার শরীরের টিস্যুতে ইনফেকশনের সম্ভাবনা অনেক বেশি হয়ে যায়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ