আজকাল অপারেশনের সাহায্যে ভুড়ি বা বেদ কমানো হচ্ছে। লাইপোসাকশন বা অ্যাবডোমিনো ফ্লৎস্টির সাহায্যে মেদ কমানো হচ্ছে। কিন্তু এটার পার্শপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে অনেক। ওজন হ্রাসকারী খাদ্যে ক্যালসিয়াম ও লোহার অভাব ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে ডিম কলিজা লোহার চাহিদা পূরণ করবে। চেষ্টা করবেন লবণ বর্জিত খাদ্যগ্রহণ করতে। এক্ষেত্রে খাবার মেপে মেপে খাওয়ার প্রয়োজন নেই মোটা মোটি একটা হিসাব করলেই চলবে। শরবত, কোকাকোলা, ফান্টা ইত্যাদি মৃদু পানীয় সব রকম মিষ্টি তেলে ভাঁজা খাবার, চর্বি যুক্ত মাংস, তৈলাক্ত মাছ, বাদাম, শুকনাফল, ঘি, মাখন, সর ইত্যাদি পরিহার করা প্রয়োজন। শর্করা ও চর্বি জাতীয় খাদ্য ক্যালরির প্রধান উৎস। অধিক চর্বি যুক্ত কম ক্যালরির খাদ্যে স্থুল ব্যক্তির ওজন খুব দ্রুত কমে। ওজন কমাতে পরিশ্রম ও নিয়মিত ব্যায়েমের পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় পরির্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সকালঃ দুধ ছাড়া চা বা কফি, দুটো আটার রুটি, একবাটি সবজি সিদ্ধ, ১ বাটি কাঁচা শশা। শশা ওজন কমাতে জাদুর মত কাজ করে। দুপুরঃ ৫০-৭০ গ্রাম চালের ভাত। মাছ বা মুরগির ঝোল ১ বাটি। এক বাটি সবজি ও শাক, শশার সালাদ, এক বাটি ডাল এবং ২৫০ গ্রাম টক দই। বিকালঃ দুধ ছাড়া চা বা কফি, মুড়ি বা বিস্কুট ২টা। রাতঃ আটার রুটি তিনটা, একবাটি সবুজ তরকারি, একবাটি ডালম টকদই দিয়ে এক বাটি সালাদ এবং মাখন তোলা দুধ। দৈনিক এক গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করলে দেহে প্রোটিনের অভাব থাকে না। ৬০ কিলোগ্রাম ওজন বিশিষ্ট ব্যক্তির খাদ্য ৬০ গ্রাম প্রটিন হলেই ভাল হয়। প্রতি মাসে একদিন ওজন মাপতে হবে, লক্ষ্য রাখতে হবে ওজন বাড়ার হার কম না বেশী। ওজন বৃদ্ধি অসুখের লক্ষণ। মেদ বা ভূড়ি এদের অতিরিক্ত ওজন কোনটাই স্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়। বরং নানা অসুখের কারণ হয়ে দেখা দেয় একথা সব সময় মনে রাখবেন এবং স্বাস্থ্য সচেতন হবেন।
ওজন কমানোর কিছু নিয়ম: ১. নিজের খাবার নিজেই বানান আপনার রান্নার হাত ভালো নয়? তার পরেও নিজের হাতে স্বাস্থ্যকর খাবার রান্নার কয়েকটি রেসিপি শিখে নিন। ২. অনুশীলনের ডিভিডি সংগ্রহ করুন শারীরিক অনুশীলনের নানা উপায় এখন ডিভিডিতেই পাওয়া যায়। এ ধরনের ডিভিডি সংগ্রহ করে তা দেখে দেখে অনুশীলন করলে যথেষ্ট উপকার পাবেন। ৩. সার্ভিস সাইজ শিখে নিন খাবার গ্রহণ মানেই থালা ভর্তি করে খেতে হবে, এমন ধারণা বাদ দিন। ছোট পাত্রে করে সামান্য খাবার গ্রহণ করুন। ৪. আগের ও পরের ছবি তুলুন আপনার ওজন বিষয়ে সচেতন হওয়ার আগের ও পরের ছবি তুলুন। উভয় ছবির তুলনা করুন। ৫. নাচ নাচ ভালো একটি শারীরিক অনুশীলন। এর মাধ্যমে ওজন কমানো সম্ভব। ৬. খাবারের ভালোমন্দ শিখে নিন কোন খাবারটি আপনার শরীরের জন্য ভালো এবং কোন খাবারটি খারাপ তা শিখে নিন। এরপর সে অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন। ৭. অনুশীলনে বৈচিত্রতা আনুন আপনার শারীরিক অনুশীলন যদি একঘেয়ে হয়ে যায় তাহলে তা কোনো কাজ করবে না। এ কারণে শারীরিক অনুশীলনে বৈচিত্রতা আনতে হবে। ৮. কল্পনা করুন আপনার শারীরকে যেমন বানাতে চান, সে অবস্থার কথা কল্পনা করুন। এতে আপনার আগ্রহ তৈরি হবে। ৯. আঁশজাতীয় খাবার খান আঁশজাতীয় খাবার পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখাসহ নানা উপকার করে। শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এ ধরনের খাবার বেশি করে খেলে তা ওজন কমাতেও সাহায্য করবে। ১০. হাঁটুন বা সাইকেল চালান যান্ত্রিক শক্তিচালিত যানবাহনের বদলে হাঁটা বা সাইকেল চালানো অভ্যাস করুন। ১১. বাস্তববাদী হোন ওজন কমানোর বিষয়ে বাস্তববাদী হতে হবে। মাত্র কয়েকদিন অনুশীলন করেই আপনি শরীর অর্ধেক কমিয়ে ফেলতে পারবেন না। এক্ষেত্রে মাসে প্রায় ১০ পাউন্ড ওজন কমানো সম্ভব। ১২. প্রোটিন বাদ দেবেন না ডিম, মাংস, মাছ ইত্যাদি প্রোটিনের অন্যতম উৎস। ওজন কমানোর সময়েও এসব খাবার শরীরের প্রয়োজন। তবে আপনি যদি নিরামিশাষী হন তাহলে পুষ্টিবিদের সাহায্য নিয়ে অনুরূপ পুষ্টিকর খাবার বাছাই করতে পারেন। ১৩. অনুশীলনের সময় শ্বাস নিতে ভুলবেন না শারীরিক অনুশীলন করার সময় শ্বাস প্রশ্বাস কমাবেন না। বেশি করে অক্সিজেন গ্রহণ করুন। ১৪. পাউরুটি বাদ আপনার খাদ্যতালিকা থেকে পাউরুটি বাদ দিন। ১৫. নিয়মিত মাপ নিন অনুশীলনের ফলে আপনার শরীরের যে পরিবর্তন হচ্ছে, সে বিষয়ে নিয়মিত দৃষ্টি রাখুন। এজন্য হাতের কাছে এটি টেপ রাখুন।
ওজন কমানোর জন্য কিছু পরামর্শ: ক. প্রথমেই ওজন কমানোর জন্য মনস্থির করতে হবে। একটি নির্দিষ্ট দিন থেকে শুরু করার জন্য মনস্থির করুন। যেদিন থেকে শুরু করবেন সেদিনের ওজন নোট করে রাখুন। খ. ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস পানি (সাথে এক চামুচ মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন) খেয়ে ৩০-৪০ মিনিট জগিং করুন। প্রথমদিকে জগিং করা সম্ভব না হলে হাঁটেন। শরীরে ঘাম না ঝড়া পর্যন্ত জগিং বা হাঁটা চালিয়ে যেতে হবে। জগিং-এর আগে-পরে দু-চার মিনিট স্ট্রেচিং করুন। জগিং শেষে নাস্তা করুন। নাস্তাতে আমিষ জাতীয় খাবার বেশী থাকতে হবে। এমন কিছু দিয়ে নাস্তা করা যাবে না যেটি অল্প সময়ের মধ্যেই হজম হয়ে যায়। এজন্য ওটমিল, ডিম, দুধ, ও whole wheat products জাতীয় খাবার দিয়ে নাস্তা করা উত্তম। সাথে কিছু ফল-মূল ও বাদাম রাখতে পারেন। ওজন কমাতে চাইলে কোনো ভাবেই সকালের নাস্তা এড়ানো যাবে না। গ. দুপুর ও রাতের খাবারে ভাতের পরিমাণ যথাসম্ভব কমিয়ে দিয়ে সেই জায়গা মাছ, মাংশ, মিস্টি আলু, ও সব্জি দিয়ে পুরন করুন। ভাতের সাথে শুধু মাছ বা মাংশ জাতীয় একটি আইটেম না খেয়ে সাথে ৩-৪ রকমের সব্জি রাখেন। ঘ. একবারে পেট ভর্তি করে খাওয়া যাবে না। এজন্য নাস্তা ও লাঞ্চের মাঝে, লাঞ্চ ও ডিনারের মাঝে, এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ দিয়ে হালকা নাস্তা করতে পারেন। অর্থাৎ সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত অল্প অল্প করে ৫-৬ বার খেতে হবে। নাস্তা, লাঞ্চ, ও ডিনার ছাড়া বাকি ছোট মিলগুলোতে বাদাম, সীড, ও ফল-মূল খান। ঙ. ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত তিন ঘণ্টা আগে রাতের খাবার সারতে হবে। রাতের খাবারে শর্করা জাতীয় খাবার কমিয়ে দেন। আর ঘুমাতে যাওয়ার আগ দিয়ে ক্ষুধা লাগলে কিছু বাদাম ও এক গ্লাস দুধ খেয়ে নিতে পারেন। চ. দুটি মিল-এর মাঝে ক্ষুধার ভাব জাগলে এক গ্লাস পানি খেয়ে কিছুক্ষণ দেখুন ক্ষুধা যায় কি-না। এর পরও যদি মনে করেন পেটে ক্ষুধা আছে তাহলে কিছু খেয়ে নিন। ছ. ঘুমানোর সময় ছাড়া বাকি সময়টা নিজেকে মুভমেন্ট-এর উপর রাখার চেষ্টা করেন। বসার সুযোগ পেলেই অথর্বের মতো বসে না পড়ে বরং আশেপাশে পায়চারি করুন। হাত-পা ও শরীর স্ট্রেচিং করুন। একজন সুস্থ-সবল মানুষের প্রতিদিন ন্যূনতম ১০,০০০ ধাপ হাঁটা উচিত। কাজেই প্রতিদিন ১০,০০০ ধাপ হাঁটতে হলে নিজেকে অনেকটা সময় ধরে মুভমেন্ট-এর উপর রাখতে হবে। জ. প্রায় প্রতি ঘণ্টায় এক গ্লাস করে পানি পান করেন। প্রতি অর্ধ ঘণ্টায় অর্ধ গ্লাস করেও পান করতে পারেন। খাওয়ার সময় প্রয়োজন ছাড়া পানি পান না করা হজমের জন্য ভালো। তবে প্রতিদিন কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করতেই হবে – দৌহিক গঠন ও কাজের উপর ভিত্তি করে কিছু বেশীও পান করতে হতে পারে।
আপনার যা প্রয়োজন ◌ ৮ কাপ পানি ◌ ৬টি লেবুর রস ◌ ১/২ কাপ মধু ◌ ১০ টি পুদিনা পাতা ◌ কয়েকটি বরফ কুচি মিশ্রণ প্রক্রিয়া ০১।। পানি হালকা গরম করে নিন। খুব বেশি গরম করবেন না। ০২।। পানি, লেবুর রস, মধু, পুদিনা পাতা, সব একসাথে মিশিয়ে নিন। ০৩।। এবার এটি ফ্রিজে রেখে দিন কয়েক ঘন্টা। ০৪।। কয়েক ঘণ্টার পর বের করে পান করুন। ০৫।। এক কাপ পানি একটি বরফ কুচি দিবেন এর বেশি না। কারণ অতিরিক্ত ঠান্ডা শরীরের শক্তি হ্রাস করে থাকে। খাবার নিয়ম • প্রতিদিন নাস্তা খাওয়ার আগে এক গ্লাস লেবুর পানি খান। সকালের নাস্তায় খাবেন সালাদ এবং ফল। • সকাল ১১ টায় আরেক গ্লাস লেবু পানি খাবেন সাথে অল্প কিছু ভাজা বাদাম খেতে পারেন। • দুপুরের খাবারে একটি ডিম সিদ্ধ এবং অলিভ অয়েল ও আপেল সাইডার ভিনেগার দিয়ে লেটুস সালাদ খাবেন। • বিকেল ৪টায় আরেক গ্লাস লেবু পানি খান। এর সাথে আপনার পছন্দের কোন ফল খেতে পারেন। • রাতের খাবারে এক টুকরা মাছ বা মাংস খেতে পারেন। তার সাথে সালাদ খেতে পারেন। • রাতের খাবারের ২ ঘন্টার পর আরেক গ্লাস লেবু পানি পান করুন। এটি ওজন কমানোর সাথে সাথে আপনার শরীরে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে থাকে। তবে আপনি যদি শরীরের টক্সিন উপাদান বের করতে চান তবে দিনে কয়েকবার লেবু পানি খেলে চলবে। লেবু পানির এই ড্রিংকটিকে “Beyonce’s Diet” বলা হয়ে থাকে। কারণ সুপার স্টার বিয়ন্সে এই ড্রিংকটি পান করে ৩৮ কিলোগ্রাম ওজন কমিয়েছিলেন।