লম্বা হতে চাই, লম্বা হতে চাই,ছেলে বা মেয়ে সবার মনের বাসনা একই ।যারা বেশ ভালই লম্বা তাদেরও মনে হয় আরও ১-২ ইঞ্চি লম্বা হতে পারলে বেশ ভাল মানাত!আসলে আপনি কতটুকু লম্বা হবেন তা আপনার বংশগতি থেকেই নির্ধারিত হয়।তবে একথাও ঠিক আপনার পূর্বপুরুষেরা লম্বা হলেও আপনি যদি অপুষ্টিতে ভোগেন তবে আপনার বৃদ্ধি ঠিকমত হবে না।আর মানুষের দেহের বৃদ্ধি ঘটে ২৫ বছর বয়স পর্যন্তই।তাই কিশোরকাল থেকেই এ ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে।তিনটি জিনিসের সমন্বয় লম্বা হতে সাহায্য করবে-
১.পুষ্টিকর খাবার
২.নিয়মিত ব্যয়াম
৩.পর্যাপ্ত বিশ্রাম
কি কি থাকতে হবে খাবার তালিকায়:
মিনারেলস:
পর্যাপ্ত পরিমান বিভিন্ন রকমের মিনারেল আমাদের খাবার তালিকায় রাখতে হবে।আমাদের দেহে প্রতিটি কাজে মিনারেলের ভূমিকা রয়েছে ।হাড়ের গঠন ও বৃদ্ধিতে মিনারেল একান্ত প্রয়োজনীয় উপাদান।বিষেশভাবে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস যেন পরিমান মত গ্রহন করা হয় তা লক্ষ্য রাখতে হবে। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, ছোট মাছ,খেজুর,বাধাকপি,ফুলকপি, ব্রোকলি,পালং শাক, পুই শাক ইত্যাদিতে ভাল পরিমান ক্যালসিয়াসম আছে।
দুগ্ধজাত খাবার,মাছ, মাংস, এমনকি সবজিতেও ফসফরাস আছে।আয়রন পাওয়া যায় খেজুর, ডিমের কুসম,কলিজা,পরুর মাংসে।ম্যাগনেসিয়াম আছে আপেল, জাম্বুরা, ডুমুর,লেবু ইত্যাদিতে।জিন্ক পাওয়া যায় ডিম, সূর্যমূখীর বীচিতে।
ভিটামিন :
আমাদের প্রয়োজনীয় সব রকমের ভিটামিনই বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি ও ফল থেকে পাওয়া যায়।কিন্তু খাবারের ভিটামিন দেহে কতটুকু গৃহিত হচ্ছে তা বোঝা বেশ কঠিন। তাই বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি ও ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।Vitamin B-1 আছে চীনা বাদাম,লাল চাল,গমে। Vitamin B-2 আছে মাছ, ডিম, দুধে। Vitamin B-6 রয়েছে বাধাকপি, কলিজা, গরুর মাংসে।
Vitamin D পাওয়া যায় মাছের তেল, দুগ্ধজাত খবার থেকে।Vitamin E আছে ডিম, সয়াবিন, গমে। Vitamin A আছে ডিমের কুসুম, গাজর,দুধ ,কলিজায়।
প্রোটিন:
হাড়ের বৃদ্ধির সাথে সাথে মাংস পেশীরও বৃদ্ধি পেতে হবে লম্বা হওয়ার জন্য।আর মাংস পেশির বৃদ্ধি ও মজবুত হওয়ার জন্য প্রয়োজন প্রোটিন।খাবার তালিকায় ভাল মানের প্রোটিন যেমন- মাছ, মাংস, ডিম রাখুন।বিভিন্ন রকমের ডাল,মটরশুটি, সীমের বীচি, কাঠালের বীচি ইত্যাদি থেকেও প্রোটিন পাওয়া যায়।খাবার তালিকায় সয়া প্রোটিন,বিভিন্ন রকমের প্রোটিন সেইক যোগ করতে পারেন।
কার্বোহাইড্রেট:
অনেকেই লম্বা হওয়ার জন্য কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট জাতীয় খাবার বেশী পরিমানে গ্রহন করে থাকেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, বেশী পরিমান কার্বোহাইড্রেট লম্বা হওয়াকে বাধাগ্রস্থ করে।কারণ বেশী পরিমান কার্বোহাইড্রেট গ্রহন মানে রক্তে বেশী পরিমান গ্লুকোজ।এর ফলে ইনসুলিন নামক হরমোনও নিঃসৃত হবে বেশী।এবং ইনসুলিন দেহের গ্রোথ হরমনের কার্যকারীতা কমিয়ে দেয়।তাই খাবার তালিকায় লাল আটা, লাল চাল, ওট ইত্যাদি রাখুন ময়দা, সাদা আটা, পলিশ চালের পরিবর্তে।
পানি:
পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করতে হবে , প্রায় ১.৫ থেকে ২ লিটার দৈনিক।
কিছু ব্যায়াম :
ছোট বেলা থেকে এ ব্যায়াম গুলো নিয়মিত করা ভালো। তবে দেখা যায় আমরা অনেকে ব্যায়াম করি টানা ১সপ্তাহ, অতিরিক্ত করে অল্প সময়ে ফল পেতে চাই। এটা ঠিক না। অল্প অল্প করে প্রতি দিন ব্যায়াম করা উচিত্। আর যেকোন ব্যায়াম করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত্। আর ব্যায়াম করার আগে শরীর গরম করে নেয়া উচিত। নিচে কয়েকটি সহজ ব্যায়ামের উপায় দেয়া হলো।
০১. মেঝেতে উপুর হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার হাতের তালুর উপর ভর দিয়ে শরীরের উপরের অংশটি আস্তে আস্তে তুলুন। মেরুদন্ড বাঁকা করে মাথাটা পেছনের দিকে যতটা পারা যায় বাঁকান।
০২. হাঁটু ভাঁজ করে, হাতের তালু ও হাঁটুতে ভর দিয়ে বিড়ালের মত হোন। মাথা উপরের দিকে বাঁকিয়ে পিঠ নিচের দিকে বাঁকিয়ে নিন। এরপর মাথা নিচু করে মেরুদন্ড বা পিঠ উপরের দিকে বাঁকা করুন। ৮ সেকেন্ড পর এভাবে কয়েক বার করুন।
০৩. মেঝেতে বসুন। দু পা দুদিকে ছড়িয়ে দিন। এরপর ডান হাঁটু তে নাক লাগানোর চেষ্টা করুন, হাঁটু ভাঁজ না করে যতটা পারা যায়। ৮ সেকেন্ড থাকুন এভাবে। এরপর বা পায়ে একই ভাবে করুন।
০৪. উপুর হয়ে শুয়ে পড়ুন। এরপর হাতের তালু ও পায়ের পাতার উপর ভর দিয়ে শরীরটি উপর দিকে বাঁকিয়ে উঁচু করে তুলে ধরুন মাথা নিচে রেখে। এভাবে ৮ সেকেন্ড থাকুন।
০৫. মেঝেতে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাটু ভাঁজ করে পায়ের গোড়ালী নিতম্বের কাছে নিয়ে আসুন। এরপর গোড়ালী হাত দিয়ে ধরুন। এরপর কোমড় সহ নিতম্ব উপরের দিকে উঠান। মাথা নিচে থাকবে। এভাবে ১০ সেকেন্ড থাকুন।
আপনি আপনার বোনকে দিয়ে এগুলো করাবেন।
আশা করি সফল হবেনা।
লম্বা
হওয়ার উপায়
কিছু জরুরি করনীয় :
আমাদের শরীর বিভিন্ন ধাতুর মিশ্রণ দিয়ে তৈরি। মানুষ ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, যেখানে প্রাপ্ত বয়স্কদের উচ্চতা কখনো কখনো ৪০ বছর পর্যন্ত সংকুচিত হয়। তবে আপনার উচ্চতা বাড়া বা কমা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্ভর করে আপনার বয়সের গণ্ডির ওপর। তবে আপনার কিছু সচেতনতা পারে আপনার উচ্চতা বয়সের সঙ্গে সমান তালে বৃদ্ধি করতে। চলুন জেনে নেই উপায়সমূহ-
ভাজ হয়ে বসা এডিয়ে চলুন :
আপনি যখন চেয়ারে বসেন তখন অবশ্যই সোজা হয়ে বসুন। আপনার কাঁধ থাকা উচিত সোজা এবং পাদদেশ চেয়ারের পেছনের সাথে লাগোয়া। যদি আপনি সবসময় এরকম সংকুচিত ভাবে বসে থাকেন তবে আপনার শিরদাঁড়া অস্বাভাবিক আকার ধারণ করবে। যা আপনাকে আপনার থেকে খাঁটো দেখাতে যথেষ্ট। আপনার শিরদাঁড়ার মাংশপেশি সংকুচিত হতে থাকলে আপনি এক সময় বড় ধরনের রোগে আক্রান্ত পর্যন্ত হতে পারেন। তাই দীর্ঘ সময় বসে কাজ করতে হলে যা করতে পারেন তা হচ্ছে-
* যদি আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য বসে কাজ করতে হয়, তাহলে কাজের ফাঁকে প্রতি ৩০ মিনিট পর পর উঠে হাঁটাচলা করুন।
* আপনি কোথাও বসে কাজ করছেন তখন অবশ্যই আপনার পা ৯০ ডিগ্রি এঙ্গেলে রেখে বসুন এবং সাথে পা যেন মাটি স্পর্শ করে সেটি পর্যবেক্ষণে রাখুন।
ঘুমের সময় মাথায় রাখবেন যে বিষয়গুলো :
ঘুমের সময় আমাদের ২৪ ঘন্টার প্রায় এক তৃতীয়াংশ অংশ সময় কেটে যায়। তাছাড়া ঘুমের সময় আমাদের মেরুদণ্ড সবচেয়ে বেশি সংকুচিত হয় এবং তা একটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত থাকে। বাড়ন্ত বয়সে যা খুবই প্রভাব ফেলে আপনার উচ্চতার উপর। তাই ঘুমোবার সময় আরামদায়ক বিছানার ব্যবস্থা করুন, যাতে মেরুদণ্ড সোজা থাকে। যা আপনার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এই ক্ষেত্রে যে ব্যাপারগুলো মাথায় রাখবেন তা হচ্ছে-
* পিঠের উপর সমস্ত চাপ দিয়ে রাখুন, ঘুমানোর সময়। যদি আপনি পিঠের উপর ভর দিয়ে এক নাগারে ঘুমোতে না পারেন তবে পাশফিরে ঘুমান।
* যখন আপনি পাশ ফিরে ঘুমাবেন তখন মাথার উপর বালিশ এবং দু`পায়ের মাঝামাঝি বালিশ ব্যবহার করুন। এটি আপনার মেরদণ্ডের মাংশপেশি সংকুচিত হতে দেয় না।
দেয়ালের মাধ্যমে উচ্চতা পরীক্ষা করুন :
দেয়ালের সাথে প্রতিদিন উচ্চতা নির্বাচন করলে আপনি আপনার উচ্চতা সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবেন। প্রতিদিন কতটুকু করে বৃদ্ধি পাচ্ছেন তা আপনার কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে। আপনি প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছেন যেভাবে বুঝতে পারবেন:
* আপনার পিঠ দেয়ালের নির্দিষ্ট করা স্থান থেকে ১ বা ২ ইঞ্চ ি বৃদ্ধি পাবে। আপনার ঘাড়ের উচ্চতারও বৃদ্ধি পাওয়া উচিত ২ ইঞ্চি করে। তাহলে বুঝবেন আপনার বৃদ্ধি পাচ্ছেন সঠিকভাবে।
* যা আপনাকে আপনার উচ্চতা মাপতে সাহায্য করবে।
আয়নার সাহায্য পরীক্ষা করুন :
আয়নার সামনে দাঁড়ান। আপনার মাথা সোজা থাকতে হবে না সামনের দিকে ঝুঁকে না পিছনের দিকে ঝুঁকে। আপনার চিবুকের ছায়া ফ্লোরের সাথে সমান্তরাল ভাবে পড়তে হবে। আপনার কাঁধের লাইনের সাথে কানের ছায়া পড়তে হবে। আপনার পিছনের অংশের ছায়া অবশ্যই বাঁকা থাকতে হবে। তাহলেই বুঝবেন আপনার বৃদ্ধি সঠিকভাবে হছে।
প্রতিদিন ব্যায়াম করুন :