হলিউডের বিভিন্ন সিনেমায় এটা একটা সাধারণ দৃশ্য যে অপরাধীদের প্রশ্নোত্তর পর্ব যখন চলতে থাকে, তখন তাদেরকে একটা উজ্জ্বল আলোকিত ঘরে রাখা হয়। ঘরটায় যে কাঁচ থাকে তা দিয়ে সে নিজে বাইরে কিছু দেখতে পারেনা, সেদিকে তাকালে সে নিজের প্রতিবিম্বই দেখে- একদম সাধারণ আয়নার মতো। ঐ রুমের বাইরে বসে থাকা এফবিআই সদস্যরা কাপের পর কাপ কফি গিলতে গিলতে কিন্তু ঠিকই দেখতে পায় ভেতরে কী হচ্ছে। অর্থাৎ তাদের কাছে এটা নিতান্তই একটা কাঁচের জানালার মত, যার মধ্যে দিয়ে তারা দেখতে পায় ভেতরে কী ঘটছে। কিন্তু অপরাধীর কাছে এটা একটা আয়নার মত- যার মধ্যে সে শুধু নিজের প্রতিবিম্বই দেখে। এ ধরনের আয়নাকে বলা হয় ওয়ান ওয়ে মিরর। কিন্তু কিভাবে কাজ করে ওয়ান ওয়ে মিরর ?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
ontu

Call

এই ধরনের মিরর কীভাবে কাজ করে তা বোঝার আগে সহজ কিছু মৌলিক ব্যাপার আলোচনা করে নেই। যে কোনো বস্তুকে আমরা তখনি দেখতে পাই যখন তা থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে এসে প্রবেশ করে। আমরা আয়নাতে নিজেদের প্রতিবিম্ব দেখতে পাই কারণ আমাদের শরীরে কোন আলোক উৎস থেকে (হতে পারে ঘরের এনার্জি সেভার বাল্ব, টিউব লাইট কিংবা সূর্য) আলো এসে পড়ে, সেই আলো আমাদের গায়ে পড়ে প্রতিফলিত হয়, এরপর আয়নার কাঁচে গিয়ে আঘাত করে, সেখান থেকে প্রতিফলিত হয়ে আবার আমাদের চোখে এসে পড়ে। আমরা জানি যে সাধারণত কোনো বস্তুর উপর আলো পড়লে তিনটা ঘটনা ঘটে- বস্তু আলোর কিছু অংশ শোষণ করে নেয়, কিছুটা তার মধ্যে দিয়ে সঞ্চালিত হয়ে যায় (মানে তার মধ্যে দিয়ে চলে যায়, এ সময় প্রতিসরণও হতে পারে) আর বাকিটা সে প্রতিফলিত করে দেয়। এখন এক এক বস্তুর আবার এই তিন ধরনের কাজ করার ক্ষমতাও এক এক রকম। যেমন এক খন্ড পাথরের মধ্যে দিয়ে আলো যেতেই পারেনা; আবার কালো বস্তু প্রায় সবটুকু আলোই শোষণ করে নেয়, কোনো আলোই প্রতিফলিত করেনা তাই আমরা তাকে কালো দেখি। এখন আয়নার কথা ভাবি। আয়নাতে যেহেতু আমরা নিজেদের প্রতিবিম্ব দেখতে চাই এবং তার জন্য আলো প্রতিফলিত হওয়া দরকার, তাই আয়নার যে কাঁচটা রয়েছে তার প্রতিফলন করার ক্ষমতাও বেশি হওয়া জরুরি। যত ভালো আলো প্রতিফলিত করতে পারবে আয়নাটা, আমরা নিজেদের প্রতিবিম্বও তত ভালো দেখতে পাবো। কাঁচের এই প্রতিফলন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যই আয়না বানানোর সময় একটা কাজ করা হয়- যাকে বলা হয় সিলভারিং (বাংলায় পারা দেওয়া)। সিলভারিং হচ্ছে আয়নার পেছন দিকটায় সিলভারের একটা পাতলা প্রলেপ দেওয়া (এখন অ্যালুমিনিয়ামও ব্যবহার করা হয় সিলভারের পরিবর্তে)। এই প্রলেপটা দেয়ার কারণে কাঁচের প্রতিফলন ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। ওয়ান ওয়ে মিররের কাজ করার প্রণালীটা খুবই সহজ। প্রথমত এই ধরনের মিরর বানানোর সময় কাঁচের দুই প্রান্তেই সিলভারিং করা হয়। কিন্তু সাধারণ মিররের চেয়ে এই প্রলেপে সিলভারের পরিমাণ কম হয়- প্রায় অর্ধেক (এ কারণেই হাফ সিলভারিং নাম)। এবার আসি আসল ঘটনায়। আমরা একটু যদি লক্ষ্য করে থাকি মুভি দেখার সময়, সবসময়ই দেখতে পারব যে অপরাধী যে ঘরে থাকে তাতে খুব উজ্জ্বল আলো থাকে। অন্যদিকে বাইরের ঘরটায় আলো প্রায় থাকেনা বললেই চলে। এই উজ্জ্বলতার পার্থক্যই ওয়ান ওয়ে মিররের কাজ করতে পারার রহস্য। যে ঘরে আলো বেশি (অপরাধীর ঘর), সে ঘর থেকে আয়নায় আলো পড়েও বেশি। হাফ সিলভারিং করে দেওয়া থাকায় সে আলোর একটা অংশ প্রতিফলিত হয়ে ঐ ঘরেই ফেরত চলে যায় যার ফলে অপরাধী নিজের প্রতিবিম্ব দেখে। আরেকটা অংশ বাইরের ঘরে চলে যায় কাঁচের মধ্যে দিয়ে, তাই বাইরের অফিসাররাও ভেতরে কী হচ্ছে দেখতে পায়! কিন্তু অফিসাররা যে ঘরটায় থাকে তাতে আলোর পরিমাণ খুব কম থাকে। তাই সেখান থেকে কম আলো গিয়ে কাঁচে পড়ে। এই কম আলোর একটা অংশ আবার প্রতিফলিত হয়ে ঐ ঘরেই এসে পড়ে।আরেকটা অংশ কাঁচের মধ্যে দিয়ে অপরাধীর ঘরে চলে যায়। কিন্তু অপরাধীর ঘরে সেই ঢুকে পড়া আলোর চেয়ে অনেক উজ্জ্বল আলো জ্বলে রয়েছে। তাই এই আলো তার চোখেই পড়েনা! ঠিক যেমন হাই সাউন্ডে Children of Bodom এর গান শোনার সময় কেউ আমাদের পাশে ফিসফাস করে কথা বললে আমরা কিছু শুনতে পারবনা; ব্যাপারটা অনেকটা সেরকমই! যদি কখনো অফিসারদের ঘরে উজ্জ্বল আলো জ্বেলে দেওয়া হয় অথবা অপরাধীর ঘরের আলোর উজ্জ্বলতা কমিয়ে দেওয়া হয় তাহলেই কিন্তু এই মিরর একটা সাধারণ জানালার মত হয়ে যাবে। দুই ঘরের মানুষরাই একে অন্যদের দেখতে পারবে!

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ