تعاونوا على البر والتقوى ولاتعانوا على الاثم والعدوان واتقوا الله ان الله شديد العقاب.
অর্থ: তোমরা নেকী ও পরহিযগারীর মধ্যে সাহায্য করো। আর পাপ ও শত্রুতা অর্থাৎ আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের বিরোধিতা বা নাফরমানীর মধ্যে সাহায্য করো না। এ বিষয়ে তোমরা আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি কঠোর শাস্তিদাতা। (সূরা মায়িদা: আয়াত শরীফ-২)
যাকাত কাদেরকে দেয়া যাবে না:
১। উলামায়ে ছূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মাওলানা দ্বারা পরিচালিত মাদরাসা অর্থাৎ যারা জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও অন্যান্য কুফরী মতবাদের সাথে সম্পৃক্ত সেই সমস্ত মাদরাসাতে যাকাত প্রদান করলে যাকাত আদায় হবে না।
২। নিসাব পরিমাণ মালের অধিকারী বা ধনী ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া যাবে না।
৩। মুতাক্বাদ্দিমীন অর্থাৎ পূর্ববর্তী আলিমগণের মতে কুরাঈশ গোত্রের বনু হাশিম-এর অন্তর্গত হযরত আব্বাস, হযরত জাফর, হযরত আকীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের বংশধরের জন্য যাকাত গ্রহণ বৈধ নয়। তবে মুতাআখখিরীন অর্থাৎ পরবর্তী আলিমগণের মতে বৈধ।
৪। অমুসলিম ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া যাবে না
৫। যে সমস্ত মাদরাসায় ইয়াতীমখানা ও লিল্লাহ বোডিং আছে সেখানে যাকাত দেয়া যাবে এবং যে সমস্ত মাদরাসায় লিল্লাহ বোডিং নেই সেখানে যাকাত দেয়া যাবে না।
৬। দরিদ্র পিতামাতাকে, সন্তানকে, স্বামী বা স্ত্রীকে যাকাত দেয়া যাবে না।
৭। প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ইয়াতীমখানা লিল্লাহ বোডিংয়ের জন্য যাকাত আদায়কারী নিযুক্ত হলে তাকে যাকাত দেয়া যাবে না।
৮। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি যদি উপার্জন ছেড়ে দিয়ে নামায-রোযা ইত্যাদি নফল ইবাদতে মশগুল হয়ে যায় তাকে যাকাত দেয়া যাবে না। তবে সে যদি উপার্জন না থাকার কারণে যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত হয় তবে যাকাত দেয়া যাবে।
৯। বেতন বা ভাতা হিসেবে নিজ কর্মচারী, কর্মচারিণী বা কাজের পুরুষ ও মহিলাদেরকে যাকাতের টাকা দেয়া যাবে না।
জি ভাই।আপনি যাকাত এবং ফিৎরার টাকা বা দ্রব্য অমুসলিম যে কোন ব্যাক্তিকে দিতে পারবেন।যাকাতের+ ফিৎরার অর্থ বিলি করার ৮ টি খাত বা জায়গা আল্লাহ তায়ালা নিজে বলে দিয়েছেন সূরা তাওবার ৬০ নং আয়াতে।সেখানে বলেছেন "ইন্ননামা সদাকাতি লিল ফুকারা ওয়াল মাসাকিন ওয়াল আমিলিনা আলাইহা ওয়াল মুয়াল্লাফাতুল কুলু্ব ওয়া ফির রিকব ওয়াল গরিমিনা ওয়া ফি সাবিলিল্লাহ ওয়া ইবনে সাবিল ফারিদা তুম্মিনাল্লাহ ইন্নাল্লাহা আলিমুল হাকিম"(সূরা তাওবা-৬০)
অর্থ্যাৎ ইন্নামা সদাকা=নিশ্চই এই সদাকা গুলো, ১.লিল ফুকারা=ফকিরদের জন্য,
২.ওয়াল মাসাকিন=মিসকিনদের,
৩.ওয়াল আমিলিনা আলাইহা=যাকাত উত্তোলন কারী কর্মচারী-কর্মকর্তাগণ,
৪.ওয়াল মুয়াল্লাফাতুল কুলুব=অমুসলিমদের মন জায় করার জন্য,
৫.ওয়া ফির রিকব=দাস মুক্ত করার,
৬.ওয়াল গরিমিনা=ঋনগ্রস্থ,
৭.ওয়া ফি সাবিলিল্লাহ=আল্লাহর রাস্তায়,
৮.ওয়া ইবনে সাবিল=মুসাফির,
ফারিদা তুম্মিনাল্লাহ=আল্লাহ তায়ালা এটি তোমাদের উপর ফরজ করে দিয়েছেন।
ইন্নাল্লাহা আলিমুল হাকিম=নিশ্চই আল্লাহ তায়ালা সবকিছু জানেন, বিজ্ঞ ও প্রজ্ঞ।
সুতরাং এ আয়াত থেকে স্পস্ট দেখা যাচ্ছে আল্লাহ তায়ালা নিজেই এ আয়াতের মধ্যে ৪র্থ নম্বর খাতটি অমুসলিমদের জন্য দিয়ে দিয়েছেন। তাই আপনি চাইলে আপনার যাকাতের/ফিৎরার দ্রব্য বা টাকা একটা অংশ বা সম্পূর্ণটাই অমুসলিমকে দিতে পারেন।এতে ইসলামে।কোন বাঁধা-নিষেধ নাই।
অমুসলিমদেরকে সাধারণ দান সাদকার ব্যাপারে কোরআনে নির্দেশ: আল্লাহ তায়ালা আল কোরআনে বলেছেন, যেসব অমুসলিম তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে না এবং তোমাদেরকে বাড়িঘর থেকে বের করে দেয় না তাদের সঙ্গে সদাচরণ করতে ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তায়ালা নিষেধ করেনি। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা ইনসাফকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা: মুমতাহিনা, আয়াত নম্বর: ৮)।
উপরোক্ত আয়াতের আলোকে ফকিহরা বলেন, নফল দান-সদকা অমুসলিমকে দেয়া যাবে। (দরসে তিরমিজি, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৩৪)।
ফিতরা দেয়ার বিধান: গরিব অমুসলিমকে ফিতরা দিয়ে সাহায্য করা যাবে এতে কোনো অসুবিধা নেই। যদিও উত্তম হচ্ছে মুসলমানকে দেয়া।
অতএবঃ ফিতরার দ্রব্য বা টাকা ভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে দান করা যাবে।
প্রথমতঃ সে কাফির যে ইসলামের প্রতি অনুরাগী হয়। এমন ব্যক্তিকে সাহায্য করলে আশা করা যায় যে, সে ইসলাম কবূল করবে।
দ্বিতীয়তঃ সে সকল নওমুসলিম যাকে ইসলামে দৃঢ় থাকার জন্য সাহায্য করা হয়।
তৃতীয়তঃ সে লোকও এতে শামিল যাকে সাহায্য করলে আশা করা যায় যে, সে নিজের এলাকার লোকেদেরকে মুসলিমদের ওপর হামলা করা থেকে বিরত রাখবে এবং অনুরূপভাবে সে নিজের নিকটতম মুসলিমদেরকে রক্ষা করবে।
সুতরাং কাউকে এই কারণে দেয়া হয় যে, এর ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাফওয়ান ইবনে উমাইয়াকে হুনায়েনের যুদ্ধে প্রাপ্ত গনীমতের মাল থেকে প্রদান করেছিলেন। অথচ ঐ সময় সে কুফরী অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে বের হয়েছিল। সে নিজেই বর্ণনা করেছেঃ “তাঁর দান ও সুবিচার আমার অন্তরে সবচেয়ে বেশী তাঁর প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি করেছিল। অথচ ইতিপূর্বে তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রু আমিই ছিলাম।
আবার কাউকে এ জন্যে দেয়া হয় যে, এর ফলে তার ইসলামের উপর তার মন বসে যাবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) হুনায়েনের যুদ্ধে প্রাপ্ত গনীমতের মাল থেকে মক্কার আযাদকৃত লোকদের সর্দারদেরকে শত শত উট দান করেছিলেন।