শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

জাহিলী যুগের মানুষেরা কন্যা সন্তানদেরকে জীবন্ত প্রোথিত করত। কারণ কন্যা সন্তান তাদের নিকট অপমানজনক বলে মনে করত। জাহেলী যুগের আরবরা কয়েকভাবে কন্যা সন্তান হত্যা করত।


১.। প্রসবের পূর্বক্ষণে ঘরের মধ্যে গর্ত খনন করে রাখত, কন্যা সন্তান হলে সাথে সাথে গর্তে পুঁতে দিত।


২.। মেয়ে একটু বড় হলে বাবা তাকে নিয়ে কোন কুয়ায় নিক্ষেপ করত।


৩.। কন্যার বয়স ছয় থেকে সাত বছর হলে পিতা কন্যার মাকে বলত মেয়েকে ভালভাবে সাজিয়ে দিতে। তারপর আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়ানোর কথা বলে মুরুভুমিতে গর্ত খুড়ে পুঁতে দিত।

এসব জীবন্ত প্রোথিত কন্যদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে কি কারণে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে।

আল্লাহ ইরশাদ করেন, যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে? (সুরা আত-তাকভির, আয়াত : ৮-৯)।

জাহেলি যুগের লোকেরা কন্যাসন্তানকে বংশের কলঙ্ক ও অপমানের বিষয় মনে করত। কন্যাসন্তান জন্মের সংবাদ দিলে বাবা অত্যন্ত দুঃখ পেত।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, যখন তাদের কাউকে কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার মুখ কালো হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে না, তাকে মাটির নিচে পুঁতে ফেলবে। শুনে রাখো, তাদের ফয়সালা খুবই নিকৃষ্ট। (সুরা নাহল, আয়াত : ৫৮-৫৯)।

জীবন্ত কন্যাসন্তানের কবর দেওয়া দলের প্রধান ছিলেন দাহিয়াতুল কালবি (রাঃ)। মুসলমান হওয়ার পর তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! আমি আরবের বুকে কন্যাসন্তানকে জীবিত কবর দেওয়া দলের প্রধান। একটি ঘটনা অত্যন্ত কষ্টকর। আমার স্ত্রী আমার অজান্তে একটি কন্যাসন্তান লালন-পালন করছিলেন, ১০-১২ বছর বয়সে তা আমার চোখে ধরা পড়ে। মেয়েটির রূপ-চেহারায় আমিও পিতৃস্নেহে অভিভূত হয়ে গেলাম। কিন্তু জাহিলিয়ার নীতি আমাকে বারবার তাড়া করতে লাগল এই বলে যে তুমি আরবের বুকে মেয়েসন্তান জীবন্ত কবর দেওয়া দলের সরদার হয়ে পিতৃস্নেহের কাছে হেরে গেলে?

পরিশেষে বাধ্য হয়ে মিথ্যা ছলনায় স্ত্রীকে বললাম, মেয়েকে সুন্দর ও পরিপাটি করে সাজিয়ে দাও। তাকে নিয়ে বেড়াতে যাব। মেয়েটিকে নিয়ে মরুময় পথ ধরে অনেক দূরে চলছি। মরুময় পথে আমি ও আমার সন্তানই যাত্রী। মেয়েটি বলল, আব্বা, আমাকে একটু পানি দিন। বললাম, মা, একটু অপেক্ষা করো। এ সুযোগেই আমার কবর দেওয়ার লুকায়িত যন্ত্রপাতি বের করে মাটি খুঁড়তে শুরু করলাম। কবর অনেক গভীর করে ওপরে উঠে এলাম। মেয়েটি তৃষ্ণার্ত নয়নে আমার পানে তাকিয়ে দেখছিল। মেয়েকে বললাম, দেখো তো মা, পানি উঠেছে কি না?

মেয়েটি অধীর আগ্রহে তাকাতেই দুই চোখ বন্ধ করে মেয়েকে কূপের মধ্যে ফেলে দিয়ে মাটি দিতে শুরু করি। হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! মেয়েটির সেই কান্না আর আমাকে ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ বলে ডাকার শব্দ আমার কানে আজও বাজে। হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! কন্যাসন্তানদের জীবিত কবর দেওয়ার যে পাপ আমি করেছি, এমন পাপ নিয়ে ইসলাম কি আমাকে গ্রহণ করবে?

দাহিয়াতুল কালবি (রাঃ)-এর কথা শুনে দয়াল নবীর দুই চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। ওহি না আসা পর্যন্ত তিনি কোনো কথা বলেন না। তিনি চুপ করে থাকলেন, এমন সময় জিবরাইল (আঃ) আগমন করেন এবং বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! আপনি দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করুন, পবিত্র দ্বিন ইসলাম বিগত জীবনের সব পাপরাশি ক্ষমা করে দেয়।

এ ঘোষণার পর দাহিয়াতুল কালবি (রাঃ) পবিত্র দ্বিন ইসলামে দাখিল হন।


ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ