শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

পেনিসিলিন আবিষ্কারের কাহিনী আমরা সবাই পেনিসিলিন সম্পর্কে জানি। কিন্তু আমরা কি জানি কিভাবে আবিস্কার হয়েছিল এই পেনিসিলিন? তখন সময় ১৯২১ সাল। একদিন ইংল্যান্ডের সেন্ট মেরিজ মেডিকেল স্কুলের ল্যাবরেটরিতে কাজ করছিলেন আলেকজান্ডার ফ্লেমিং।কয়েকদিন ধরে তিনি সর্দি-কাশিতে ভুগছিলেন। তিনি তখন সেটে জীবানু কালচার নিয়ে কাজ করছিলেন। হঠাৎ হাঁচি এলো।তিনি নিজেকে সামলাতে পারলেন না। সেটটা সরানোর আগেই নাক থেকে কিছুটা সর্দি সেটের উপর পড়ে গেল। পুরো জিনিসটা নষ্ট হয়ে গেল দেখে সেটটা এক পাশে সরিয়ে রেখে নতুন আরেকটা সেট নিয়েকাজ শুরু করলেন। কাজ শেষ করে বাড়ী ফিরে গেলেন। পরদিন ল্যাবরেটরিতে ঢুকে টেবিলের এক পাশে সরিয়ে রাখা সেটটার দিকে নজর পড়লো,ভাবলেন সেটটা ধুয়ে কাজ করবেন, কিন্তু সেটটা তুলে ধরে চমকে উঠলেন। দেখলেন,গতকালের জীবাণুগুলো আর নেই। দেহ নির্গত এই প্রতিষেধক উপাদানটির নাম দিলেন লাইসোজাইম। দীর্ঘ ৮ বছর পর হঠাৎ একদিন কিছুটা আকষ্মিকভাবেই ঝড়ো বাতাসে খোলা জানালা দিয়ে ল্যাবরেটরির বাগান থেকে কিছু পাতা উড়ে এসে পড়ল জীবাণুভর্তি প্লেটের উপর। কিছুক্ষন পরে কাজ করার জন্য প্লেটগুলো টেনে নিয়ে দেখলেন জীবানূর কালচারের মধ্যে স্পষ্ট পরিবর্তন ঘটেছে। ছত্রাকগুলোর বৈজ্ঞানিক নাম ছিল পেনিসিলিয়াম নোটেটাইম। তাই এর নাম দিলেন পেনিসিলিন। এভাবে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং পেনিসিলিন আবিস্কার করেন। রসায়ন সম্মন্ধে জ্ঞান না থাকার কারণে পেনিসিলিন আবিস্কার করলেও ঔষধ কিভাবে প্রস্তুত করা যায় তা তিনি বুঝে উঠতে পারেননি। এরপর ডাঃ ফ্লোরি ও ড. চেইন পেনিসিলিনকে ঔষধে রুপান্তরিত করেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং চিকিৎসা শাস্ত্রের আলক্সান্ডার দ্যা গ্রেট পেনিসিলিনের আবিষ্কারক। তার বাড়ী ছিলো স্কটল্যান্ডে। পেশায় তিনি ছিলেন একজন অনুজীববীদ ( ব্যাকটেরিওলজিস্ট)। ১৯২৮ সাল। ফ্লেমিং দুই সপ্তাহ ছুটি নিয়েছিলেন। দুই সপ্তাহ পরে তিনি কাজে ফিরে এলেন। সব কিছু ঝেড়ে মুছে আবার কাজে যোগ দেয়া যাক। ডিশে তিনি কিছু ব্যাকটেরিয়া রেখে গেছিলেন। চোখ বুলিয়ে দেখতে চাইলেন তাদের কি অবস্থা। ফ্লেমিং এর নজরে এলো তার একটা পেট্রিডিশের উপর কিছু ছত্রাক জন্মে আছে। তিনি অনুজীববীদ। ছত্রাকটাকে তার কাছে অচেনা মনে হলো। আমরা হলে পানি দিয়ে ধুয়ে খালাস করে দিতাম। ফ্লেমিং তা করলেন না। এখানেই তো জিনিয়াসদের সাথে আমাদের পার্থক্য। ফ্লেমিং লক্ষ্য করলেন পাত্রে রাখা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ছত্রাক জন্মানো জায়গায় শূন্য। তার মানে এই ছত্রাকের এমন কোন ক্ষমতা আছে যা কিছু মাইক্রোঅর্গাজমকে প্রতিহত করতে পারে। ফ্লেমিং ছত্রাকগুলো সংগ্রহ করলেন। আরো বেশী পরিমানে চাষ করে ছত্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধি করলেন। যাতে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে কম না পড়ে।

ফ্লেমিং এর আবিষ্কারের সাথে সাথে পেনিসিলিন ব্যবহার শুরু হয়ে যায় নাই। অন্যান্য বিজ্ঞানীদের অসীম অবদান আছে এটার পেছনে। এই ঘটনার ১৩ বছর পর হাওয়ার্ড ফ্লোরে, নরম্যান হার্টলে এবং এন্ড্রু মোয়ার পেনিসিলিন ছত্রাককে আবার আলোয় নিয়ে আসেন। তারপর থেকে চিকিৎসা শাত্রে সূচনা হয় এক নতুন অধ্যয়ের। এন্টিবায়োটিক যুগ।


ইনিই সেই বিখ্যাত , চিকিৎসাজগতের আলেক্সান্ডার দ্যা গ্রেট।
নাম- আলেকজান্ডার ফ্লেমিং।
জন্ম-৬ আগষ্ট ১৮৮১ এবং মৃত্যু-১১ মার্চ ১৯৫৫ ।
বাসস্থান-স্কটল্যান্ড, জাতীয়তা-স্কটিশ।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- সেন্ট মরিস হাসপাতাল মেডিক্যাল স্কুল।

কৃষক পরিবারের সন্তান ফ্লেমিং এর শৈশব কৈশর কেটেছে দারিদ্রের কষাঘাতে। সাত বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হন। অভাবের কারণে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। ভাইদের সাথে ফ্লেমিং লন্ডন শহরে চলে এলো বোনের কাছে। তখন ফ্লেমিং এর বয়স চৌদ্দ। ষোল বছর বয়সে ফ্লেমিং জাহাজ কোম্পানীতে ফাইফরমাশ খাটা শুরু করল। জাহাজের সেই পরাক্রমশালী মালিক, নাবিক সবাই আজ কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। কিন্তু জাহাজের সেই কাজের ছেলেকে ইতিহাস আজো মনে রেখেছে বিনম্র শ্রদ্ধায়। তোমাদের নিশ্চয়ই জানার আগ্রহ হচ্ছে ফ্লেমিং কিভাবে অসাধ্যকে সম্ভব করেছিলেন। আমি তো ভাই জীবনী লিখতে বসিনি। সংক্ষেপে বলি।

ফ্লেমিং এর চাচার বেশ খানিকটা সম্পত্তি ছিলো। কিন্তু তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। সে মারা যাওয়ার পর আইন অনুযায়ী সেই সম্পত্তির মালিক হন ফ্লেমিং ভাইয়েরা। ফ্লেমিং এর বড় ভাই চাইলেন ছোট ভাইকে লেখা পড়া শেখাতে। ফ্লেমিং জাহাজ কোম্পানীর চাকরী ছেড়ে দিয়ে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হলেন। তখনকার দিনে তো আর এখনকার মত এডমিশান টেস্ট দিয়ে ভর্তি হতে হতো না। টাকা আর আগ্রহ থাকলেই ডাক্তারী পড়া যেত। মেধাবী ফ্লেমিং অল্প দিনেই সবাই কে পেছনে ফেলে চলে এলেন সামনের কাতারে। শেষ পরীক্ষায় হয়ে গেলেন প্রথম। অনেকটা বাংলা সিনেমার মত। রেসে নায়ক সবার পিছে দৌঁড় শুরু করলেও প্রথম হয়। এরপর তিনি সেন্ট মেরিজ হাসপাতালে ডাক্তার হিসেবে যোগ দিলেন।


যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখিবে তাই। থুক্কু, যেখানে দেখিবে মোল্ড, ফ্রিজে রেখে তাই করে নেবে কোল্ড।

(গবেষণায় নিমগ্ন ফ্লেমিং)

অসাধারণ প্রতিভাধর ফ্লেমিং ১৯৪৪ সালে ব্রিটিশ রাজার কাছ থেকে ব্রিটেনের সম্মানজনক নাইট উপাধি লাভ করেন। ফ্রান্স সরকার ফ্লেমিংকে প্যারিসে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যায়। প্যারিসের সংবর্ধনা, এটা তখনকার সময়ের বিজ্ঞানীদের জন্য একটা বিরল ঘটনা। ১৯৪৫ সালে ফ্লেমিং ড: চেইন এবং ফ্লোরির সাথে যৌথভাবে পেনিসিলিন আবিষ্কারের জন্য চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পান। ফ্লেমিং নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার পরে বলেন এই পুরষ্কার খোদার পাওয়া উচিত।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ