শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

তড়িৎ কোষ

 

 

image

 

আজ থেকে ২৩ বছর আগের ঘটনা।সময়টা ১৯৯০ সালের ৭ ই আগস্ট।ওইদিন সকালে নাগপুরে একটি সম্মেলন হচ্ছিল।"স্বদেশী বিজ্ঞান সংশোধন সংস্থা" এর একটি সম্মেলন যেখানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের বিখ্যাত সব বৈজ্ঞানিকগন।সেখানে নাগপুর ইউনিভার্সিটি অব ইন্জিনিয়ারিং এর তত্‍কালীন প্রফেসর Dr. P.P Hole একটি তড়িত্‍ কোষ(ব্যাটারী) প্রদর্শন করলেন।

পাঠকগন নিশ্চয় ভাবছেন এখানে এ কথার প্রাসঙ্গিকতা কি!সেজন্য শুরুর দিকের কিছু ধারনা দেয়া প্রয়োজন মনে করছি।

Dr. M.C Sahastrabuddhe,নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান,সংস্কৃত সাহিত্য সমূহের বিশ্লেষন করাই তাঁর কাজ।একদিন ঋষি অগ্যস্তের রচিত"অগ্যস্ত সংহিতা" পড়ছিলেন।হঠাত্‍ সেখানের কয়েকটা শ্লোক বিশেষভাবে তাঁর নজরে কাড়ল।

সংস্থপ্য মৃন্ময় পাত্রে
তাম্রপাত্রম সুসংস্কৃতম ছদ্যে শিখিগ্রিবেন ছরদ্রভিহ কাষ্ঠপমসুভিহ।
দস্তালস্থ নিধত্যহ পর্দাচ্ছদিতস্থহ সন্যোগজ্জতে তেজো মিত্রবরুনসংগ্যিতম।।
(অগ্যস্ত সংহিতা)

অনুবাদ-একটি মৃত্তিকাপাত্র নাও,তাতে একটি কপার(তাম্র) পাত দাও এবং একটি শিখগ্রীবা স্থাপন কর।এতে কাষ্ঠগুড়ো,জিংক(দস্তা) এবং পারদ ছিটিয়ে দাও,এরপর সেখানে তার সংযুক্ত করলে তুমি মিত্রবরুনশক্তি পাবে।

প্রফেসর সহস্রবুদ্ধি কিঞ্চিত্‍ বিস্মিত হলেন,তাঁর কাছে বর্ননাটা ড্যানিয়েল সেল এর মত মনে হল।তখন তিনি ব্যাপারটা Dr. P.P Hole কে জানালেন এবং অনুরোধ করলেন তিনি যেন ব্যাপারটা অনুসন্ধান করেন।

ড. হোল তাঁর সহকারীদের সঙ্গে নিয়ে বর্ননামত যন্ত্রপাতি সংগ্রহ শুরু করলেন।সমস্যা হল একটা জায়গায় আর তা হল "শিখিগ্রীবা" শব্দটি নিয়ে।সংস্কৃত অভিধান ঘেটে দেখা গেল শব্দটির অর্থ ময়ুরের ঘাড়।তখন তাঁরা স্থানীয় 'দুরিঙ্গা' নামক চিড়িয়াখানায় গেলেন এবং সেখানকার পরিচালকের কাছে সবকিছু বিস্তারিত বর্ননাপূর্বক একটি মৃত ময়ুর চাইলেন।পরিচালক তাঁদেরকে লিখিত দরখাস্ত করতে বললেন এবং সম্ভব হলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন।
এরই মধ্যে একজন আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞের সাথে এ বিষয়ে কথা হল।তিনি সমস্যার কথা শুনেই হাসিতে ফেটে পড়লেন এবং জানালেন 'শিখিগ্রীবা' অর্থ ময়ুরের ঘাড় নয় বরং ময়ুরের ঘাড়ের রঙ এর রাসায়নিক বস্তু যা হল কপার সালফেট।সমস্যার সমাধান হল,তড়িত্‍ কোষ প্রস্তুত হল।ডিজিটাল মাল্টিমিটারে মেপে দেখা গেল যে ব্যাটারীটি Open circuit voltage 1.38Volt এবং Free circuit current of 23 Milli Ampier প্রদান করে।

Dr. M.C Sahastrabuddhe কে সাফল্যের খবরটি জানানো হল।পরবর্তীতে সম্মেলনে তড়িত্‍ কোষটি প্রদর্শিত হল।সেখানে পুরো শ্লোকটির পটভূমি আলোচিত হল।সকলেই স্বীকার করলেন যে উক্ত বর্ননাটি তড়িত্‍ কোষের ই ছিল।এছাড়া এর পরবর্তী শ্লোকসমূহ পর্যবেক্ষনে বোঝা গেল যে ঋষি অগ্যস্ত এর জ্ঞান এতেই সীমাবদ্ধ ছিলনা।পরবর্তী শ্লোকটি ছিল নিম্নরুপ-

আনেন জলভগ্নোস্তি
প্রান দানেসু বায়েসু
ইবম শতনম কুম্ভনমসয়োগকারী অকৃতস্মৃতহ।
অর্থাত্‍ যদি এরুপ একশটি মৃত্তিকাপাত্রের(ব্যাটারী) এর শক্তি আমরা ব্যবহার করি তবে পানি প্রানদানকারী অক্সিজেন ও ভাসমান হাইড্রোজেন এ বিভক্ত হবে।
আধুনিক বিজ্ঞানের বদৌলতে আমরা জানি যে পানিতে তড়িত্‍ চালনা করলে তা অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন এ বিভক্ত হয়!

পরের শ্লোকটি বলছে,

বায়ুবন্ধকবস্ত্রেন নিবদ্ধ য়েনমস্তকে
উদান স্বলঘুত্বে বিভর্তকষ্যয়ন্কম।
অর্থাত্‍ হাইড্রোজেনকে বায়ুনিরোধী কাপড়ে বন্দী করলে তাকে আকাশে উড্ডয়ন সম্ভব!(হাইড্রোজেন বেলুন)

উপস্থিত বৈজ্ঞানিকগন বিস্ময়াবিভূত হলেন।বৈদিক বিজ্ঞানের নির্ভুলতা ও অসাধারনত্ব আরো একবার প্রমানিত হল।

এভাবেই বেদ ও বৈদিক ঋষিদের মহাজাগতিক ও অলৌকিক জ্ঞানসমূহ চিরকাল বিস্মিত করছে মানবসমাজকে,ঝাঁকিয়ে দিচ্ছে বিজ্ঞানমনস্ক ব্যাক্তিদের।

ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ