শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Sanjoyrand1

Call

অ্যালার্জি সর্দি একটি নাকের সমস্যা যা আইজিই এন্টিবডির মাধ্যমে নাসিকা ঝিল্লির সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে মূলত উদ্দীপকদের উদঘাটনের ফলে। অ্যালার্জি সর্দি একটি বিশ্বময় স্বাস্থ্য সমস্যা। এর ব্যাপ্তি চারদিকে। শতকরা ১০-২৫ ভাগ জনসমষ্টি এ রোগের শিকার। দিনে দিনে এ রোগের ব্যাপ্তি বাড়ছে। যদিও অ্যালার্জি সর্দি একটি মারাত্মক রোগ নয়, তবে এ রোগের কারণে দৈনন্দিন জীবনপ্রবাহ ব্যাহত হয়। শিশুদের স্কুলের শিক্ষা বাধাগ্রস্ত এবং সর্বোপরি চাকরিজীবীদের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ অপরিসীম। হাঁপানি এবং অ্যালার্জি সর্দি উভয়ই অতি প্রচলিত সহ-ব্যাধি, যা ‘একই শ্বাসনালীর একই সমস্যা’ বলে পরিচিতি। মাঝে মাঝে অ্যালার্জি এক অসহনীয় জটিল রোগ হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে অ্যালার্জির প্রকোপ দিন দিন বেড়ে চলেছে। এ রোগ জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। আবার কখনও কখনও এটি সামাজিক সমস্যাও সৃষ্টি করে। যেমন—আপনি একটি অনুষ্ঠানে গেলেন, হঠাত্ করে শুরু হলো অসহ্য চুলকানি, সমস্যাটি তখন খুবই লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আবার যদি হাঁচিসহ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়, তখন তো এটি একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি। অর্থাত্ এ রোগকে এক অসহ্য বিড়ম্বনা মনে হয়। অ্যালার্জির কারণ ধুলাবালি, ফুলের রেণু, মাইট, খাদ্য, পশু-পাখির লোম ও পাখনা, পোকামাকড়ের হুল ও কামড়, কেমিক্যালস, ওষুধ, কসমেটিক্স এবং কন্টাক্ট এলার্জেন ইত্যাদি। এছাড়াও গাড়ি নির্গত ধোঁয়া, শিল্প-কারখানার বিভিন্ন উপাদানও অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। বিশেষ কিছু পদার্থ যখন শরীরের সংস্পর্শে আসে, তখন শরীরে এক অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। যেমন—সর্দি, চুলকানি, ত্বক ফুলে যাওয়া, হাঁচি-কাশি ইত্যাদি। এই সৃষ্ট অস্বাভাবিক উপসর্গগুলোই হলো অ্যালার্জি। অ্যালার্জির জটিলতা অ্যালার্জির সুচিকিত্সা না হলে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। নাকের অ্যালার্জি সর্দি থেকে শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ রোগীর হাঁপানি হতে পারে। নাকের অ্যালার্জি সর্দি থেকে সাইনোসাইটিস, চোখের কনজাংটিভাইটিস, নাকের পলিপও হতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা অ্যালার্জির সঠিক চিকিত্সার জন্য কিছু ল্যাব-পরীক্ষা প্রয়োজন হতে পারে। যেমন—রক্ত, প্রস্রাব ও মলের রুটিন পরীক্ষা, রক্তের সুগার, আইজিই এন্টিবডি ইত্যাদি। প্রয়োজনে বুকের, নাকের ও সাইনাসের এক্সরে করে দেখা যেতে পারে। অ্যালার্জি প্রতিরোধ ও আধুনিক বৈজ্ঞানিক চিকিত্সা অ্যালার্জি প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো কারণগুলো শনাক্ত করে তা এড়িয়ে চলা। বিশেষ করে রোগীকে খুব সতর্কতার সঙ্গে খুঁজে বের করতে হবে তার শরীরে কী কী কারণে অ্যালার্জি হয়। অ্যালার্জি চিকিত্সার বিভিন্ন ধাপ হলো—হেলথ এডুকেশন, ওষুধপত্র এবং অন্যান্য চিকিত্সা করা। রোগের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস জানতে হবে এবং অ্যালার্জির প্রকৃত কারণ শনাক্ত করে পরে ভ্যাকসিনের মাধ্যমে ডিসেনসিটাইজেশন করা যেতে পারে। তবে তা প্রচলিত আধুনিক চিকিত্সার সঙ্গে সমন্বয় করে করতে হবে। এ রোগের চিকিত্সা একজন অভিজ্ঞ অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে করতে হবে। আগে এমন ধারণা ছিল যে, অ্যালার্জি হলে আর ভালো হয় না। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক বৈজ্ঞানিক চিকিত্সা সে ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করেছে। মনে রাখতে হবে, হাতুড়ে ডাক্তারের খপ্পরে পড়ে ভুল চিকিত্সা দীর্ঘস্থায়ী জটিলতার সৃষ্টি করে, এমনকি মৃত্যুও ঘটাতে পারে। নিজে নিজে অথবা ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে অ্যালার্জির চিকিত্সা করা ঠিক নয়। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ সেবন করলে অনেক সময় জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে অ্যালার্জির চিকিত্সা অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ, ত্বক ও অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে নিতে হবে। তাহলে অ্যালার্জির দুঃসহ যাতনা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ