টেষ্ট টিউব বেবি বলা হলেও চিকিৎসক বা চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা কিন্তু একে ”ইন ভিন্টরো ফার্টিলাইজেশন বলে থাকেন” সংক্ষেপে একে ”আই ভি এফ ” বলা হয় । ইন ভিন্টরো শব্দটি লাতিন থেকে নেয়া হয়েছে । মূল অর্থ হলো কাচের মধ্যে । আগেকার দিনে জীবিত কোনো প্রাণীর কোষকলা দেহের বাইরে উৎপাদন করার জন্য বিকার- টেস্ট টিউবের মতো কাচের তৈরি পাত্র ব্যবহার করা হতো । তবে আজকের দিনে ”ইন ভিন্টরো” শব্দটি আরো ব্যাপক ভাবে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে । দেহের বাইরে সম্পাদিত যে কোনো জৈব প্রক্রিয়াকেই ”ইন ভিন্টরো” হিসেবে চিহ্নিত করা হয় । নানা কারণে অনেক দম্পতিই সন্তান ধারণ করতে পারেন না । যে সব নারী ”ফেলোপিয়ান টিউবে” কোনো ধরণের সমস্যার কারণে সন্তান ধারণ করতে পারেন না তাদের চিকিৎসা করার জন্য অর্থাৎ তাদেরকে সন্তান ধারণে সক্ষম করে তোলার জন্য ইন ভিন্টরো ফার্টিলাইজেশনের শুরু হয়েছিলো । পরে দেখা গেলো শুধু ফেলোপিয়ান সংকট নয় আরো কিছু সংকটের সমাধান করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে ।টেস্ট টিউব বেবির প্রযুক্তি খুব বেশি দিনের পুরনো নয় । এ নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা চললেও এই প্রযুক্তিতে প্রথম সাফল্য এসেছিলো গ্রেট বৃটেনে ১৯৭৮ সালের ২৫ই জুলাই মাসে। পৃথিবীর প্রথম টেষ্ট টিউব বেবির নাম হলো ”লুইস জয় ব্রাউন ” । কোনো নারীর ফেলোপিয়ান টিউবে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে তার পক্ষে মা হওয়া এককালে অসম্ভব ছিলো । কিন্তু লুইস জয় ব্রাউনের জন্মের মধ্য দিয়ে সে বাঁধা দূর হলো, ফেলোপিয়ান টিউবের সমস্যাকে চিকিৎসকরা আর গর্ভ ধারণের ক্ষেত্রে বাঁধা বলে সাধারণ ভাবে মনে করেন না । ফেলোপিয়ান টিউবের সমস্যায় যে সব নারী ভুগছেন, তাদের জন্য এটা নি:সন্দেহে সুখবর। পৃথিবীর প্রথম টেস্ট টিউব বেবির সন্তান কিন্তু স্বাভাবিক ভাবে জন্ম গ্রহণ করেছিলো । নারীর ডিম্বের সাথে পুরুষের শুক্রাণুর মিলনের সফল মিলনের মাধ্যমে গর্ভে সঞ্চার হয় । এ কথা কম-বেশি সবাই আমরা জানি। কিন্তু আমরা অনেকেই যা জানি না তা হলো যে ডিম্ব-শুক্রাণুর সফল মিলনের পরও সন্তান জন্ম লাভ নাও করতে পারে । প্রাকৃতিক নানা কারণে এ ক্ষেত্রে সফলতার হার মাত্র ৩১ শতাংশ । অর্থাৎ ১০০টি ফার্টিলাইজেশন বা ডিম্ব-শুক্রাণু মিলন ঘটলেও মাত্র ৩১টি সন্তান জন্ম নেয়। টেষ্ট টিউব বেবির সাফল্যর হার প্রায় অনুরুপ ।

যে সব মা ডিম্ব উৎপাদন করতে পারছে না, প্রথমে তাদের ডিম্ব উৎপাদন করতে সাহায্য করে এমন ওষুধ অর্থাৎ কিছু হরমোন প্রয়োগ করা হয় । এ ভাবে মাতৃদেহে হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে যে ডিম্বটি তৈরি হলো তা স্বাভাবিক ভাবে ছেড়ে দেয়া হয় না । অর্থাৎ প্রাকৃতিক ভাবে গর্ভ ধারণের জন্য তাকে ছেড়ে দেয়া হয় না । বরং বিশেষ প্রক্রিয়ায় ডিম্বটি চিকিৎসকরা মাতৃদেহের বাইরে বের করে নিয়ে আসেন । এরপর তাকে ফার্টিলাইজ করার জন্য শুক্রাণুর সাথে মেশানো হয় । এভাবে ফার্টিলাইজ হয়ে যাওয়ার পর ডিম্বটি মায়ের জরায়ুতে আবার প্রতিস্থাপন করা হয় । তবে ডিম্বটি পুনরায় প্রতিস্থাপনের আগে মাকে নানা হরমোন দিয়ে তৈরি করে নেয়া হয়ে থাকে। প্রতিস্থাপনের পর সন্তান ঠিক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখা হয় । খুব সংক্ষেপে এই হল টেস্ট টিউব বেবির জন্মকথা । ১৯৭৮ সালে থেকে এই প্রযুক্তির বিজয় অভিযান শুরু হয় । এর মধ্যে অনেক সময় গড়িয়েছে । উন্নতি ঘটেছে এই প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও ।নানা কারণে অনেক পুরুষ পর্যাপ্ত শুক্রাণু তৈরি করতে পারেন না । এ কারণে অনেকেই পিতা হওয়ার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েন । কিন্তু এবার তাদের সহায়তায় চিকিৎসা বিজ্ঞান এগিয়ে এসেছে । চিকিৎসকরা সরাসরি এ জাতীয় পুরুষদের শুক্রাণু সংগ্রহ করেন এবং পরে তা মাতৃদেহ থেকে বের করে আনা ডিম্বতে সরাসরি প্রবিষ্ট করিয়ে ফার্টিলাইজেশনে পর্বটি সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করেন । এর পর এই ডিম্বটি পুনরায় মাতৃগর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয় ।

এ ভাবে সন্তান ধারণের ব্যবস্থা করতে যেয়ে সাধারণ ভাবে কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে । এর মধ্যে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা দেখা দেয় তা হলো, অনেক সময় ইন ভিন্টরো ফার্টিলাইজেশনের ফলে একাধিক সন্তানের জন্ম নেয় । এ ছাড়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে মায়ের জরায়ুতে ”সিস্ট” হতে পারে। এ ছাড়া স্বাভাবিক গর্ভ ধারণের ক্ষেত্রে সাফল্য যেমন ৩১ শতাংশ । ইন ভিন্টরো ফার্টিলাইজেশনের ক্ষেত্রেও সফলতার হার তার কাছাকাছি অর্থাৎ ২৮ থেকে ৩০ শতাংশ  ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ