কুরআন হাদিসের আলোকে বলবেন, ইসলামের দৃষ্টিতে পৃথিবীতে ধর্ষণকারীর শাস্তি কি?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call
ইসলামে ব্যভিচারকে অশ্লীল ও নিকৃষ্ট কাজ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি এর জন্য পার্থিব ও অপার্থিব শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

বিবাহিত ব্যভিচারীকে আমৃত্যু পাথর নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ শরিয়তে ব্যভিচারী বিবাহিত হলে তার শাস্তি রজম বা পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড। আর অবিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীকে ১০০ বেত্রাঘাত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইরশাদ হয়েছে, ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী তাদের প্রত্যেককে ১০০ কশাঘাত করবে...। (সুরা : নুর, আয়াতঃ ২)।

ইসলামী আইনবিদরা এই মর্মে ঐকমত্যে রয়েছেন যে ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিকে ধর্ষণের কারণে অভিযুক্ত করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে তার কোনো পাপ নেই। কেননা ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার ওপর বল প্রয়োগ করা হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উম্মতের ভুলবশত করা অপরাধ, ভুলে যাওয়া কাজ ও বল প্রয়োগকৃত বিষয় ক্ষমা করে দিয়েছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ২০৪৫)।

ধর্ষণকারীর শাস্তি ধর্ষণের ক্ষেত্রে এক পক্ষ থেকে ব্যভিচার সংঘটিত হয়। আর অন্য পক্ষ হয় মজলুম বা নির্যাতিত। তাই মজলুমের কোনো শাস্তি নেই। শুধু জালিম বা ধর্ষণকারীর শাস্তি হবে।

ধর্ষণের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় সংঘটিত হয়।

এক. ব্যভিচার।

দুই. বল প্রয়োগ।

তিন. সম্ভ্রম লুণ্ঠন।

ব্যভিচারের জন্য কোরআনে বর্ণিত ব্যভিচারের শাস্তি পাবে। ইসলামে ব্যভিচারের শাস্তি ব্যক্তিভেদে একটু ভিন্ন। ব্যভিচারী যদি বিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। আর যদি অবিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে ১০০ বেত্রাঘাত করা হবে।

হানাফি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাব অনুযায়ী, ধর্ষণের জন্য ব্যভিচারের শাস্তি প্রযোজ্য হবে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
কুরআন হাদিসের আলোকে এবং ইসলামের দৃষ্টিতে পৃথিবীতে ধর্ষণকারীর শাস্তি:

ধর্ষণ যিনা (ব্যভিচার) থেকেও এক ভয়াবহ পাপ। ধর্ষণের ক্ষেত্রে একপক্ষে যিনা সংঘটিত হয়। আর অন্যপক্ষ হয় মজলুম বা নির্যাতিতা। তাই মজলুমের কোনো শাস্তি নেই। কেবল জালিম বা ধর্ষকের শাস্তি হবে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে দুটো বিষয় সংঘটিত হয়-
১. যিনা
২. বলপ্রয়োগ/ ভীতি প্রদর্শন।
প্রথমটির জন্য কোরআনে বর্ণিত যিনার শাস্তি পাবে। পরেরটির জন্য ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, মুহারাবার শাস্তি হবে।
যিনার শাস্তি ইসলামে যিনার শাস্তি ব্যক্তিভেদে একটু ভিন্ন। যিনাকারী যদি বিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে। আর যদি অবিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে একশত বেত্রঘাত করা হবে।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। -সুরা নূর, আয়াত নং ২
হাদীসে এসেছে, অবিবাহিতের ক্ষেত্রে শাস্তি এক শত বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর বিবাহিত পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে একশত বেত্রাঘাত ও রজম (পাথর মেরে মৃত্যুদন্ড)। -সহীহ মুসলিম, হা. নং ১৬৯০)
এই হাদীসের কিছু ফকীহ বলেন, যিনাকারী অবিবাহিত হলে তার শাস্তি দুটো-
১. একশত বেত্রাঘাত।
২. এক বছরের জন্য দেশান্তর।
আর হানাফী ফকীহগণ বলেন, এক্ষেত্রে হদ (শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি) হলো একশত বেত্রাঘাত। আর দেশান্তরের বিষয়টি ক্বাযী বা বিচারকের বিবেচনাধীন। তিনি ব্যক্তি বিশেষে তা প্রয়োগ করতে পারেন।
দুই. বলপ্রয়োগের শাস্তি ফকীহদের একটি অংশ বলেন, ধর্ষণের মধ্যে ব্যভিচারের পাশাপাশি মুহারাবা (বলপ্রয়োগ/ ভীতি প্রদর্শন)ও পাওয়া যায়। মুহারাবা হলো, পথে কিংবা অন্যত্র অস্ত্র দেখিয়ে বা অস্ত্র ছাড়াই ভীতি প্রদর্শন করে ডাকাতি করা। এতে কেবল সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া হতে পারে, আবার কেবল হত্যা করা হতে পারে। আবার দুটোই হতে পারে। তবে সকল ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞদের মতে মুহারাবাকে পৃথিবীতে অনাচার সৃষ্টি, নিরাপত্তা বিঘিত্ন করণ, ত্রাস সৃষ্টি ইত্যাদি অর্থে উল্লেখ করেছেন। মুহারাবার শাস্তি আল্লাহ এভাবে উল্লেখ করেছেন– যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে  চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি। -সুরা মায়িদা, আয়াত নং ৩৩
এ আয়াত থেকে বিখ্যাত মালেকী ফকীহ ইবনুল আরাবী ধর্ষণের শাস্তিতে মুহারাবার শাস্তি প্রয়োগের মত ব্যক্ত করেছেন। এখানে হত্যা করলে হত্যার শাস্তি, সম্পদ ছিনিয়ে নিলে বিপরীত দিক থেকে হাত-পা কেটে দেয়া, সম্পদ ছিনিয়ে হত্যা করলে শূলীতে চড়িয়ে হত্যা করা – এরূপ ব্যখ্যা ফকীহগণ দিয়েছেন। আবার এর চেয়ে লঘু অপরাধ হলে দেশান্তরের শাস্তি দেয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ্য, ধর্ষক যদি বিবাহিত হয়, তাহলে এমনিতেই তাকে পাথর মেরে মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে। কিন্তু সে বিবাহিত না হলে তাকে বেত্রাঘাতের পাশাপাশি বিচারক চাইলে দেশান্তর করতে পারেন। কিংবা অপরাধ গুরুতর হলে বা পুনরায় হলে অবস্থা বুঝে মুহারাবার শাস্তিও প্রদান করতে পারেন। 
আশাকরি আপনার উত্তর পেয়েছেন। ধন্যবাদ।
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ