আমাদের ত্বকে মেলানোসাইট নামে এক ধরনের কোষ থাকে, যা মেলানিন উৎপাদন করে। যাদের কম মেলানিন উৎপাদন হয় তাদের গায়ের রঙ সাদা হয় এবং বেশি উৎপাদন হলে গায়ের রঙ কালো হয়। চুলের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। যদি কোনো কারণে চুলের গোড়ার মেলানোসাইট কোষ নিষ্ক্রিয় হয়ে মেলানিনের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়- ফল স্বরূপ চুলের রঙ সাদা হয় যাকে আমরা চুল পাকা বলি। এটা যে কোনো বয়সেই ঘটতে পারে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, মেলানোসাইট কোষ কেন নিষ্ক্রিয় হয়? গবেষণায় দেখা গেছে, বংশগত কারণে অনেকের মধ্যে এ সমস্যাটি ঘটে। অল্প বয়সে যাদের চুল পাকে তাদের কারও কারও মধ্যে অটোইমিউন ডিজিজের কারণে মেলানোসাইট কোষ নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। ফলে চুলে মেলানিন না পৌছানোর কারণে চুল পাকে। এই অটোইমিউন ডিজিজে ত্বকে মেলানোসাইটের বিরুদ্ধে অ্যান্টি মেলানোসাইট অ্যান্টিবডি তৈরি হয় , যা মেলানোসাইট কোষকে ধ্বংস করে দেয়। গবেষনায় দেখে দেছে, খুব বেশি জ্বর, দীর্ঘমেয়াদি কোনো অসুখ এবং মানসিক দুশ্চিন্তায় অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ কারন হতে পারে। একটা কথা স্মরনযোগ্য, অল্প বয়সে কিংবা বেশি বয়সে চুল পাকার ব্যাপারটি কিন্তু হঠাৎ করে ঘটে না। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, প্রথমে কয়েকটি চুল পাকতে শুরু করে, পরে ধীরে ধীরে অন্যান্য চুলগুলোতে পাক ধরে। . বয়স হলে চুল সাদা হবে বা পেকে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অল্প বয়সে চুল পাকা মোটেও স্বাভাবিক নয়। কিন্তু বর্তমানে অনেকেরই কম বয়সে চুল পাকার প্রবণতা দেখা যায়। বয়সের আগে চুল পাকার পেছনে কাজ করে কিছু কারণও। এগুলোর মধ্যে ভেজাল খাবার, দূষণ, অনিয়মিত জীবনযাপন ও ক্ষতিকর কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনীর ব্যবহার অন্যতম। অকালে চুল পাকা প্রতিরোধ করতে জেনে নিন কয়েকটি আয়ুর্বেদিক উপায়। ১) হরতকীর গুঁড়া ১ চা চামচ, মেহেদি পাতা বাটা দুই চা চামচ এবং আধাকাপ নারকেল একসাথে মেশান। এবার ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে মিশ্রণটি ঠাণ্ডা করুন। পুরো চুলে লাগিয়ে ২ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। ২) ১০ গ্রাম মেহেদিপাতা, ১০ গ্রাম কেশুতপাতা, হরীতকীর ছাল, ২টি আমলকী, ৭-৮টি জবুফলের মাঝের অংশ ও বিটের রস ভালো করে ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে হেয়ার টনিক তৈরি করুন। এই টনিক নিয়মিত পুরো চুলে লাগান। ৪০ মিনিট রেখে ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। অসময়ে চুল পাকা প্রতিরোধ করতে পারবেন খুব সহজেই। ৩) আমলকীর রস, বাদামের তেল ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে সপ্তাহে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ দিন ব্যবহার করুন। চুল পাকা কমে যাবে। ৪) একটি দুটি করে চুল সাদা হতে শুরু করলেই মেহেদি, ডিমের কুসুম ও টকদই একসাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে চুলে লাগান। সপ্তাহে এক বার এই প্যাক ব্যবহার করুন। এই প্যাক চুল পাকা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ৫) ১ কাপ নারকেল তেল, ১ টেবিল চামচ মেথি গুঁড়া, ২ টেবিল আমলকী গুঁড়া একসাথে মিশিয়ে অল্প আঁচে জ্বাল দিন। তেল বাদামি রঙ ধারণ করলে নামিয়ে ফেলুন। ঠান্ডা হয়ে গেলে ছেঁকে নিন। এই তেল সপ্তাহে ২ দিন চুলের গোড়াসহ পুরো চুলে লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। ২ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল পাকার সমস্যা দূর হবে দ্রুত। এছাড়া চুলের ধরন অনুযায়ী নিয়মিত ভালো ব্যান্ডের শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। চুলের ক্রিম, জেল, স্প্রে, সিরাম, কালার ইত্যাদি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এ সবই বিভিন্ন ক্ষতিকর কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে, যেগুলো চুলের জন্য কোনোভাবেই ভালো নয়। নিয়মিত ফলমূল, রঙিন শাকসবজি, পুষ্টিকর খাবার খান ও প্রচুর পরিমাণে পান করুন। চুল সাদা হওয়া প্রতিরোধ তো করবেই, সেই সাথে চুল হবে সুন্দর ও ঝলমলে। তথ্যসূত্র: আরিয়ামান সুদ, হারবাল টেকনিক, ১৯৯৫

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ