ইন্টেলিজেন্স কোশেন্ট (আইকিউ): আইকিউ বুদ্ধি মাপার পুরনো, সাবেকি পদ্ধতি। মনের বয়স বাস্তব বয়সের সমান হলে আইকিউ হবে ১০০। আইকিউ-এর মান ৮০ থেকে ১০৯-এর মধ্যে হলে তাকে স্বাভাবিক বুদ্ধি ভাবা হয়। ৭০-এর নিচে হলে তা মানসিক অপর্যাপ্ত বিকাশের লক্ষণ। অন্যদিকে ১১০ বা তার বেশি আইকিউ তীব্র মেধার আভাস দেয়। আইকিউ মাপার লিখিত পরীক্ষা ছাড়াও মুখোমুখি প্রশ্নোত্তরে নানা ধরনের পদ্ধতি রয়েছে বিভিন্ন বয়সের মানুষের জন্য। আইকিউ কতটা সঠিকভাবে বুদ্ধি মাপে এ নিয়ে এখন সন্দেহের শেষ নেই। আইকিউ মাপতে গিয়ে সমবয়স্ক সব বাচ্চা মুখোমুখি হয় এক ধরনের প্রশ্নের। এ ক্ষেত্রে পারিবারিক শিক্ষার মান বা পরিবেশ, বাচ্চার মানসিক অবস্থা, সংস্কৃতিগত-ধর্মগত-জাতিগত ফারাক, বাচ্চার আবেগের মাত্রাকে মাথায় রাখার ব্যবস্থা নেই। আইকিউ মাপতে গিয়ে বাচ্চাকে এমন অনেক ধাঁধা বা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় যা তার পক্ষে উপযোগী নয়। এই পদ্ধতি বুদ্ধির মানের একটা (একমাত্র নয়) সূচক। তবে বুদ্ধি সংক্রান্ত আধুনিক গবেষণায় আইকিউয়ের গুরুত্ব দিন দিন কমছে। ইমোশন কোশেন্ট (ইকিউ) ছেলেবেলায় আনন্দের পাঠ মনে থাকে অনেক বেশি বয়সেও। বাবার আকস্মিক মৃত্যু খুব তাড়াতাড়ি বড় করে দেয় ছেলেমেয়েদের। বুদ্ধির বিকাশের সঙ্গে আবেগের গভীর সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে মনোচিকিৎসার জগতে এখন এসেছে বুদ্ধির সঙ্গে আবেগ ও সমাজকে জুড়ে দেয়ার ব্যবস্থা। বুদ্ধিকে এখন ‘সোশ্যাল ইন্টেলিজেন্স’ বা ‘সোসিওমেন্টাল ইন্টেলিজেন্স’ পর্যায়ে ভাবা হচ্ছে। এর অন্য নাম ‘ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স’ বা আবেগ-বুদ্ধি। এই মাপকাঠিতে মানসিক সক্রিয়তার মাপ হলো ‘ইমোশন কোশেন্ট’ (ইকিউ)। আইকিউ-এর চেয়ে সার্বিক বোধবুদ্ধি মাপতে ইকিউ অনেক বেশি কার্যকর। দেখা গেছে, যে কোনো বয়সে সামাজিক দায়দায়িত্ববোধ একজন মানুষের যে কোনো কাজের মান বাড়ায়। যে বাচ্চার মনে সুকুমার বৃত্তিগুলো বেঁচে থাকে, যে বাচ্চা অন্য বাচ্চাদের দুঃখকষ্টের ভাগ নিতে জানে, তার মানসিক সক্রিয়তা আত্মকেন্দ্রিক বাচ্চার চেয়ে বেশি। পশ্চিমের দেশগুলোতে তাই প্রথাগত শিক্ষার বদলে আবেগঘন শেখার ওপর বিশেষ জোর দেয়া হচ্ছে ১৯৯০-এর পর থেকে। দেখা গেছে কম বয়সে নানা ধরনের আবেগকে কাজে লাগাতে শিখলে বুদ্ধি বাড়ে দ্রুতলয়ে, যথেষ্ট মাত্রায়। আইকিউ স্কোরের চেয়ে ইকিউ বেশি প্রয়োজন।