শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

চাঁদ জয় করেছে মানুষ। অন্যগ্রহতেও চালিয়েছে অভিযান। কিন্তু যে সূর্য আমাদের। যাবতীয় শক্তির উৎস, পৃথিবীতে প্রাণ স্পন্দিত হচ্ছে যার জন্য, সেই সূর্য সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের পরিধি অতি নগন্য। চরম প্রতিকুলতার জন্যই এতদিন সূর্যে অভিযান চালাতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। সেই অচলায়তন ভেঙে এবার সূর্যের দিকে যাত্রা করেছে পার্কার প্রােব মহাকাশযান।

অনেক প্রশ্নের জবাবের অপেক্ষায় আমরা... আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বস্তুটি কী, কোনাে দ্বিধা ছাড়াই আমি উত্তর দেব সূর্য। সূর্যের আলাে ও তাপ ছাড়া আমরা অচল। 

আর সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ আমাদের ধরে রেখেছে তার কক্ষপথে। সূর্য একটি নক্ষত্র। এই যে নক্ষত্র, যেটা কিনা আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে, তার সম্বন্ধে আমরা কতটুকু জানি? সূর্য সম্বন্ধে অনেক কিছু আমরা পৃথিবীপৃষ্ঠে বসেই জানি, আর সূর্যের অন্য কিছু রহস্য সমাধানের জন্য গত ১২ আগস্ট তার দিকে রওনা হয়েছে পার্কার সৌরীয় মানুমন্দির। 

এটি একটি বৈজ্ঞানিক মহাকাশ যান, যা কিনা সূর্যপৃষ্ঠের ৬ মিলিয়ন বা ৬০ লাখ কিলােমিটার দূরত্ব পর্যন্ত পৌঁছাবে। সূর্য পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন বা ১৫ কোটি কিলােমিটার দূরে অবস্থিত। সূর্যের এত কাছে। আমরা কখনাে যাইনি। সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি বুধ গ্রহ যখন আসে, অর্থাৎ তার অনুসূর অবস্থানে, সূর্য থেকে তখন তার দূরত্ব হয় ৪৬ মিলিয়ন কিলােমিটার বা ৪ দশমিক ৬ কোটি কিলােমিটার। 

পার্কার মহাকাশ যান সম্পর্কে আলােচনার আগে দেখা যাক পৃথিবীপৃষ্ঠে বসেই সূর্য সম্বন্ধে আমরা কী কী জানতে পারি। নিউক্লীয় সংযােজন আমরা জানি সূর্য তার গভীর অভ্যন্তরে উচ্চতাপে ও উচ্চতাপে হাইড্রোজেন পরমাণু, আসলে প্রােটন থেকে হিলিয়াম পরমাণু সৃষ্টি করছে। 

এই সৃষ্টির পদ্ধতিকে আমরা বলি নিউক্লীয় সুংযােজন। এই সংযােজন প্রক্রিয়ায় ভর থেকে সৃষ্টি হয় শক্তি এবং সেই শক্তি কয়েক লাখ বছর পরে সূর্যপৃষ্ঠে উঠে আসে, আর তারপর মাত্র ৫০০ সেকেন্ডে সেটা পৃথিবীতে পৌঁছে যায়। যে নিউক্লীয় সংযােজন প্রক্রিয়ায় সূর্যের শক্তি সঞ্চারিত হচ্ছে, সেটা জানতে আমাদের সূর্যের কাছাকাছি না গেলেও চলবে। এই প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড গতিবেগের নিউট্রিনাে কণিকা। 

এই নিউট্রিনাে বস্তুর সঙ্গে বলতে গেলে কোনাে ধরনের মিথস্ক্রিয়া | উত্তর করে না। সেই কণিকাকে আমরা পৃথিবীতে বসেই অবলােকন করতে পারি, শনাক্ত করতে পারি বিশাল আয়তনের পর্যবেক্ষণ পেরেছি যন্ত্রে। তাই সূর্য কী করে তার শক্তি সৃষ্টি করে তা বােঝার জন্য হিলিয়াম আমাদের সূর্যের কাছাকাছি যেতে হবে নাা

। রয়েছে সূর্য কী দিয়ে তৈরি এবার দেখা যাক, কোন কোন মৌলীয় পদার্থ সূর্যের মধ্যে আছে। সেটাও আমরা পৃথিবীর বুক থেকেই বর্ণালি বিশ্লেষণের মাধ্যমে করতে পারি। সূর্যের দিকে তাক করা দূরবীনের পেছনে একটা বর্ণালি বিশ্লেষক স্পেকট্রোমিটার সূর্যের উপরিস্থিত। | অংশের মৌলীয় পদার্থের (যেমন হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, অক্সিজেন, কার্বন, নাইট্রোজেন, সিলিকন, ম্যাগনেশিয়াম। ইত্যাদি) উপস্থিতি নির্ধারণ করতে পারে। 

ওই পদার্থগুলাে দিয়ে সূর্যের সৃষ্ট শােষিত-বর্ণালির প্রস্থ ও ঘনত্ব এবং নক্ষত্রের বায়ুমণ্ডলের মডেলের ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি মৌলিক পদার্থের পরিমাণ নির্দিষ্ট করা যায়। সূর্যের স্পন্দন আর একটা পর্যবেক্ষণ যেটা পৃথিবীর বুক থেকে করা সম্ভব, সেটা হলাে সূর্যের স্পন্দন। 

সূর্যের পৃষ্ঠের ওঠানামা ডপলার প্রক্রিয়ায় সেখান থেকে বিকিরিত বর্ণালি লাইনে প্রতিফলিত হয়। এ ধরনের স্পন্দনের পর্যায়কাল কয়েক মিনিট ও মূলত সূর্যের উপরিভাগের নিচে, কেন্দ্র থেকে আসা শক্তি, যেখানে তাপ হিসেবে পরিচলনপ্রক্রিয়ায় সঞ্চারিত হয়, সেখানে সঞ্চারিত হয়। এ ছাড়া সূর্যের আর কী কী বৈশিষ্ট্য আমরা পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে নির্ধারণ করতে পারি?

 আমরা জানি, পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ চুম্বক মেরুতে সূর্য থেকে আসা আধানযুক্ত (চার্জযুক্ত) কণারা, যেমন ইলেকট্রন ও প্রােটন, বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন পরমাণুর ওপর আছড়ে পড়ে, তখন লাল-সবুজ রঙের আলাে সৃষ্টি করে। উত্তর মেরুর এই আলােকে আমরা সৌরীয় বায়ু | উত্তর আলাে বা অরােরা বােরিয়ালিস বলি। 

পৃথিবীপৃষ্ঠেও পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপিত উপগ্রহের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে সৌরীয় বায়ুতে ইলেকট্রন ও প্রােটন ছাড়া রয়েছে। হিলিয়াম, কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, লােহার ধনাত্মক আধানের আয়ন। যেহেতু এই পরমাণু-আয়নগুলাের আধান রয়েছে, সে জন্য পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র তাদের পথ পরিবর্তন করতে পারে। এই সৌরীয় বায়ুর গতিবেগ সেকেন্ডে ৩০০ থেকে ৭৫০ কিলােমিটার। প্রশ্ন হলাে সূর্যের বুক থেকে কণারা এত গতি কেমন করে পায়। এ প্রশ্নটির সি উত্তর পেতে হলে সূর্যের কাছাকাছে যেতে হবে। 

সে জন্য পার্কার বৈজ্ঞানিক মহাকাশ সূর্যের করােনার মধ্য দিয়ে যাবে। করােনা। সূর্যের যে পৃষ্ঠটা আমরা দেখি, তাকে ফোটোস্ফিয়ার বলে, যার পুরুত্ব হলাে মাত্র ৫০০ কিলােমিটার এবং যার তাপমাত্রা হলাে প্রায় ৫ হাজার ৫০০ ডিগ্রি কেলভিন। এরও পরে হলাে কম ঘনত্বের, ১০ হাজার কিলােমিটার পুরু, ক্রোমােস্ফিয়ার, যার তাপমাত্রা কিনা ৪ হাজার ডিগ্রি।

 এর পরে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কথা, কিন্তু কোনাে কারণে তাপমাত্রা বাড়তে ডপলার থাকে এবং সৌরীয় করােনা, যা কিনা সূর্যপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫ প্রতিফলিত মিলিয়ন বা ৫০ লাখ কিলােমিটার পর্যন্ত বর্ধিত, তার তাপমাত্রা হয়ে যায় প্রায় ১ মিলিয়ন বা ১০ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেখানে কেমন করে করােনার তাপমাত্রা সূর্যপৃষ্ঠ থেকে বেশি, সেটা সেখানে একটা বড় ধাঁধা। কিন্তু করােনার ঘনত্ব খুবই কম, পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠ-সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব থেকে কয়েক কোটি গুণ কম, কাজেই করােনার তাপমাত্রা বেশি হলেও সেই তাপকে থেকে সঞ্চারিত করার জন্য বেশি কণা নেই। 

তাপমাত্রা হলাে অনেক ও কণার যৌথ গতিশক্তির গড়। কাজেই কণার পরিমাণ কম হলে ) তাপশক্তির পরিমাণও কম হবে) ও পার্কার মহাকাশ যানের তাপনিরােধক ঢাল, তাই পার্কার সবুজ সৌরীয় করােনার মধ্যে থাকলেও ফোটোস্ফিয়ার থেকে আসা আমরা তাপই তাকে উত্তপ্ত করবে বেশি। বিজ্ঞানীরা সে জন্য একটা তাপ-নিরােধক ঢাল তৈরি করেছেন, যা কিনা ১ হাজার ৩৭০ বাড়বে ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে।

 বিজ্ঞানীদের কমলা মতে, অনুসূর অবস্থানে পার্কার কার্যত এর কম তাপমাত্রার দিয়ে মধ্য দিয়েই যাবে। এই তাপনিরােধক ঢালটি প্রায় আড়াই শুক্র মিটার ব্যাসের ও ১২ সেন্টিমিটার পুরু এবং একধরনের কার্বন কম্পােজিট ও কার্বন ফোম দিয়ে সেটি তৈরি। পার্কার মহাকাশ যানের সব নিরূপক যন্ত্রই ওই তাপনিরােধকের পেছনে থাকবে, যার ফলে সরাসরি সূর্যের দিকে সেগুলাে তাকাতে পারবে না। শুক্র গ্রহ অতিক্রমণ সূর্যের এত কাছে পৌঁছানাে একটা কঠিন ব্যাপার, মহাকাশ বলবিদ্যার একটা দুরূহ সমস্যা।

 এর মূল কারণ হলাে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে সেকেন্ডে প্রায় ৩০ কিলােমিটার বেগে চলছে, এই গতির দিক সূর্য থেকে পৃথিবীকে একটি সরলরেখা টানলে তার সঙ্গে লম্বভাবে অবস্থান করে; একে আমরা স্পর্শক গতি বলতে পারি। তাই কোনাে রকেট পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে উৎক্ষেপিত হলে সেটি পৃথিবীর এই স্পর্শক গতি বহন করে, সূর্যের কাছে। 

যেতেে হলে ওই স্পর্শক গতিকে প্রায় শূন্য করে দিতে হবে। অন্যদিকে স্পর্শক গতি যত কম হবে, সূর্যাভিমুখী গতি তত বেশি হবে। স্পর্শক গতিকে কমিয়ে আনার জন্য বিজ্ঞানীরা পার্কার যানটিকে প্রথমেই শুক্রগ্রহের দিকে পরিচালনা করেছেন, শুক্রের মাধ্যাকর্ষণ ব্যবহার করে পার্কারের স্পর্শক গতি কমবে, যার ফলে সেটি সূর্যের দিকে পতিত হবে (ছবি ১)। আবার যত সূর্যের কাছাকাছি সেটি যাবে, তার গতি তত বাড়বে। ২ নম্বর ছবিটি থেকে এ প্রক্রিয়াটি স্পষ্ট হবে। এখানে কমলা রেখাটি দিয়ে গতি বােঝানাে হয়েছে ও নীল রেখাটি দিয়ে সূর্যের থেকে দূরত্ব বােঝানাে হয়েছে। 

সবুজ নম্বর দিয়ে শুক্র গ্রহের খুব কাছ দিয়ে যানটির ভ্রমণ বােঝানাে হয়েছে। দেখা যাচ্ছে শুক্র গ্রহের কাছ দিয়ে যানটি সাতবার যাবে এবং প্রতিটি অতিক্রমণের পরে সূর্যের আরও কাছে যাবে। সূর্যপৃষ্ঠের সবচেয়ে কাছের অবস্থানে (২৪ নম্বর অনুসূর) ওই মহাকাশ যানের গতি হবে সেকেন্ডে ১৯০ কিলােমিটার। মানুষের তৈরি কোনাে যানের এটাই হবে সর্বোচ্চ গতি। ইউজিন পার্কার পার্কার মহাকাশ যানের নামকরণ হয়েছে শিকাগ্রো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইউজিন পার্কারের নামে। 

অধ্যাপক পার্কার ১৯৫৮ সালে সূর্যের বুকে কণাগুলাে কেমন করে অতি উচ্চগতিপ্রাপ্ত হয় এবং কেমন করেই বা তা সৌরীয় মাধ্যাকর্ষণের ফাঁদ পেরিয়ে সৌরজগতে ছড়িয়ে পড়ে, তা । নিয়ে মৌলিক গবেষণা করেন। এ ছাড়া করােনায় কেমন করে ফোটোস্ফিয়ার থেকে ও অতি উচ্চশক্তিসম্পন্ন কণার আবির্ভাব ঘটে, যার ফলে করােনার তাপমাত্রা ১০ লাখ ডিগ্রিতে উঠে যেতে পারে, সেটা নিয়েও পার্কার ও অন্যান্য বিজ্ঞানী বহু দশক গবেষণা করেছেন। এই দুটি সমস্যার সমাধানে সৌরীয় চৌম্বকক্ষেত্রের ভূমিকার কথা বিজ্ঞানীরা বলেছেন। তবুও সৌরবায়ু বা করােনার তাপমাত্রা সমস্যার সমাধান যে পুরােপুরি হয়েছে, তা নয়।পার্কার মানমন্দিরের যন্ত্র পার্কার মহাকাশ যানের মূল চারটি নিরূপক যন্ত্র এরও পরে বর্ণিত সমস্যাগুলাের সমাধানে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হয়। 

পার্কার সৌরীয় মানমন্দির করােনার বিদ্যুৎ ও চৌম্বকক্ষেত্রের মান ও গঠন নিরূপণ করবে। এ ছাড়া সেটি করােনার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত উচ্চগতির কণাদের (ইলেকট্রন, প্রােটন, হিলিয়াম, ইত্যাদি) বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করবে। পার্কারের একটি যন্ত্র ছবি তােলার জন্য, কিন্তু সেটি সরাসরি সূর্যের চিত্র ধারণ করতে পারবে না; বরং সেটি করােনার মধ্যে সূর্যের প্রতিফলিত আলাের ছবি তুলবে। কণার গতি জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যায় কণাকে উচ্চগতিসম্পন্ন করার প্রক্রিয়াকে যথাযথভাবে চিহ্নিত করা একটা বড় সমস্যা। এর মধ্যে একটা পদ্ধতি হচ্ছে তাপীয়। 

ধরা যাক, আমরা একটা পাত্রে পানি গরম করছি। সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছে হলে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পানি ফুটতে আরম্ভ করবে, এর মধ্যে কিছু পানির | অণু গতি পেয়ে পাত্র ত্যাগ করবে। ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তারা কত গতি পেতে পারে, খুব বেশি হলে প্রতি সেকেন্ডে ১ কি ২ কিলােমিটার। যেহেতু এই কণারা উষ্ণতা থেকে এই গতি অর্জন করেছে, সে জন্য আমরা একে বলি তাপীয় (therrmal) গতি। এই গণনাটা করা সম্ভব কণার গতির ম্যাক্সওয়েল- বােলটজম্যান বিতরণ থেকে। 

সূর্যের করােনা থেকে তাপীয় পদ্ধতিতে কণারা গড়ে সেকেন্ডে ১৪৫ কিলােমিটার গতি পেতে পারে, যা কিনা সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে অতিক্রম করার জন্য যথেষ্ট নয়, তার জন্য সেকেন্ডে ৬০০ কিলােমিটারের বেশি গতি প্রয়ােজন। তবে ম্যাক্সওয়েল-বােলটজম্যান তাপীয় বিতরণের একটা উচ্চগতির লেজ আছে, যার ফলে কিছু কণা ৬০০ কিলােমিটারের উর্ধ্বে গতি পাবে এবং সৌরীয় বায়ুর অংশ হবে। কিন্তু সৌরীয় বায়ু কণাদের গতি বিতরণ অনেক ক্ষেত্রেই ম্যাক্সওয়েল-বােলটজম্যান তাপীয় বিতরণ অনুসরণ করে না।

 বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই কণাদের ত্বরান্বিত করতে অতাপীয় (Nonthermal) পদ্ধতি বর্তমান। কী ধরনের অতাপীয় প্রক্রিয়া কণাকে ত্বরান্বিত করতে পারে? সৌরীয় চুম্বকক্ষেত্রের জটিল আকার ও সরণ অনেক ক্ষেত্রে এই কণার উচ্চগতির কারণ হতে পারে। সূর্যের ঘূর্ণন সূর্য নিজের অক্ষের চারদিকে ঘােরে, তবে এই ঘূর্ণন পৃথিবীর মতাে কঠিন বস্তুর ঘূর্ণন নয়। সূর্য কঠিন বস্তু নয়, এর বিভিন্ন অক্ষাংশ বিভিন্ন গতিতে ঘােরে। 

একে আপেক্ষীয় ঘূর্ণন (differential rotation) বলা হয়। সূর্য তার বিষুবরেখায় একবার ঘুরে আসতে ২৬ দিন সময় নেয়, তার মেরুর কাছে ফ্লোরিডার উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে পার্কার মহাকাশযানকে মহাশূন্যে নিয়ে যেতে প্রস্তুত ডেলটা রকেট এই সময়টা হলাে প্রায় ৩৩ দিন। এ ধরনের আপেক্ষীয় ঘূর্ণন সৌরীয় ঘূর্ণন চুম্বকক্ষেত্রকে পেঁচিয়ে দেয়। অনেক সময় পেঁচানো চুম্বকক্ষেত্র ছিড়ে যায় ও অন্য মেরুর ক্ষেত্রের সঙ্গে মিলে নতুন গঠন সৃষ্টি করে। এই ছিন্ন হওয়ার সময় চুম্বকক্ষেত্রের অনেক শক্তি বিকিরিত হয় এবং সেই শক্তি কণাদের উচ্চগতি দিতে পারে। 

এর ফলে কণাদের গতিদের একধরনের অতাপীয় বিতরণ দিয়ে বর্ণনা করা যায়। সৌরীয় বায়ুকণার গতি এ ধরনের প্রক্রিয়ায় সেকেন্ডে ৭৫০ কিলােমিটার পর্যন্ত হতে পারে। করােনার বস্তুকণা উদগিরণ (CME, coronal mass ejection), সৌরীয় বিস্তরণ (Solar flare), সৌরীয় অভিক্ষেপ (Solar prominence) ও সৌরীয় কলঙ্ক (Sunspot) সৃষ্টিতে চুম্বকক্ষেত্রের ভূমিকা রয়েছে। CME- এর সময় সৌরীয় বায়ু পৃথিবীর কক্ষপথের উপগ্রহ, যােগাযােগব্যবস্থা কিংবা আমাদের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থাপনায় বিপর্যয়ের সৃষ্টি করতে পারে। CME কখন এবং কীভাবে হয় সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুব কম। পার্কার মানমন্দির এ বিষয়ে আলােকপাত করবে বলে আশা করা যায়। স্পুটনিক উৎক্ষেপণের ৬১ বছর পর মানুষের তৈরি কোনাে মহাকাশ যান সূর্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। 

এটি এক অর্থে সব মানবজাতির সাফল্য। গত কয়েক দশকের কারিগরি অগ্রগতি ও মহাকাশ বলবিদ্যার প্রয়ােগ আমাদের সূর্যের কাছাকাছি যাওয়ার সুযােগ করে দিয়েছে। সূর্য আমাদের জন্য সবচেয়ে প্রয়ােজনীয় জ্যোতিষ্ক, তার সঙ্গে পূর্ণাঙ্গভাবে পরিচিত হতে পার্কার সৌরীয় মানমন্দির বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

https://www.nasa.gov/content/goddard/parker-solar-probe/

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ