১৯৫৮ সালের ঘটনা। ইউনিভার্সিটি অব শিকাগাের এনরিকো ফার্মি ইনষ্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার স্টাডিজের এক তরুণ অধ্যাপক দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে প্রকাশের জন্য একটি গবেষণাপত্র পাঠান। সূর্যের পৃষ্ঠের বাইরের দিকে যে করােনা রয়েছে, সেখান থেকে তীব্রগতিতে যে প্লাজমার ঢেউ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। এই ব্যাপারটা নিয়ে ওই গবেষণাপত্রে আলােচনা করা হয়। সূর্যের যে জ্বলন্ত পৃষ্ঠটা আমরা দেখি, সেটাকে বলা হয় ফোটোস্ফিয়ার। এই অংশের তাপমাত্রা প্রায়। 

সাড়ে ৫ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূর্যের যে কেন্দ্রীয় অংশে (কোর) নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া হয়, সেখানকার তাপমাত্রা কিন্তু এই ফোটোস্ফিয়ার থেকে অনেক অনেক বেশি—প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডিগ্রি। কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে আসতে আসতে প্লাজমার ঘনত্বের সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রাও কমতে থাকে। সমস্যা হচ্ছে, ফোটোস্ফিয়ারের বাইরে এই যে করােনা, সেখানকার তাপমাত্রা যেখানে কম হওয়ার কথা, সেটা না হয়ে ব্যাপক পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছে এবং করােনা থেকে সৌর প্লাজমা সুপারসনিক গতিতে (শব্দের বেগ থেকে বেশি বেগে) সৌরজগতে ছড়িয়ে পড়ছে।

 তরুণ ওই অধ্যাপক এ ব্যাপারটির নাম দিলেন ‘সােলার উইন্ড’ বা সৌরবায়ু। করােনা এবং সূর্যের চুম্বকক্ষেত্র নিয়ে তাঁর তাত্ত্বিক ওই হিসাব-নিকাশ এতটাই অদ্ভুত মনে হয়েছিল যে, দুজন রিভিউয়ার গবেষণাপত্রটিকে বাতিল করে দিয়েছিলেন। দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালের সে সময়কার সম্পাদক ছিলেন বিখ্যাত জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী সুব্রামনিয়ান চন্দ্রশেখর। 

তিনি বলেছিলেন, এ রকম একটা পেপার লেখার আগে লেখকের উচিত ছিল লাইব্রেরিতে গিয়ে ওই বিষয়ে অন্তত সামান্য পড়াশােনা করা। কারণ পুরাে ব্যাপারটাকেই মনে হচ্ছে ‘আটার ননসেন্স'! ওই ঘটনার ৬০ বছর পর, নাসা সূর্যে যে মহাকাশযানটিকে পাঠাচ্ছে, সেটার নামকরণ করা হয়েছে ওই গবেষণাপত্রের লেখকের নামেই। 

তরুণ ওই অধ্যাপকের নাম ছিল ইউজিন পার্কার। চন্দ্রশেখর গবেষণাপত্রটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু রিভিউয়ারদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে তিনি সেটা ছাপিয়েছিলেন। প্রভাবশালী কোনাে বিজ্ঞানীর সমালােচনা একজন তরুণ গবেষকের কাছে কেমন মনে হতে পারে, সেটা নিয়ে তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা ছিল। ১৯৩৫ সালে এক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে স্যার আর্থার এডিংটন সবার সামনেই শ্বেতবামন ও ইলেকট্রন ডিজেনারেসি প্রেশার নিয়ে চন্দ্রশেখরের কাজের যে সমালােচনা করেছিলেন, সেটা তাঁকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল।

যা হােক, ইউজিন পার্কারের পরে করােনা, সূর্যের চুম্বকক্ষেত্র, সৌরবায়ু এবং সূর্য থেকে আসা উচ্চশক্তির কণা নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। তাঁর কাজের প্রতি সম্মান জানিয়েই নাসা প্রথমবারের মতাে জীবিত কোনাে ব্যক্তির নামে একটা মহাকাশযানের নামকরণ করল। পার্কার সােলার প্রােব নামের এই মহাকাশযানটি সূর্যের ভীষণ কাছ থেকে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে। গত ১২ আগস্ট ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে একটি ডেল্টা ফোর রকেটে করে মহাকাশযানটিকে উৎক্ষেপণ করা হয়।

আমাদের সবচেয়ে কাছের এই তারাটিকে আমরা এত দিন যেভাবে চিন, জানতাম, সে ধারণার অনেকটুকুই বদলে দেবে এই পার্কার পােব। সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য মহাকাশযান পাঠানাের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে সত্তরের দশকে হেসি-4 ও হেলিওস বি নামে দুটি মহাকাশযান সূর্যের কাছাকাছি পাঠানাে হয়েছিল। মানুষের তৈরি কোনাে মহাকাশযানের সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি যাওয়া এবং সংসয় বেশি গতি অর্জন করার রেকর্ডও এদের একটির হেসি-বিব ১৯৭৬ সালের ১৭ এপ্রিল হেলিওস-বি ৪৩ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন কিলােমিটার দূর দিয়ে সুকে অতিক্রম করেছিল।

 এই দূরত্বটা বুধ গ্রহের কক্ষপথের দূরত্ব থেকে রুম। সেকেন্ডে ৭০ টলেমিটারেরও বেশি লেগে চার লেক করেছিল হেলিওক্কা-বি। সব ঠিকঠাক থাকলে শর্কর অবশ্য এই রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলবে। সূর্যের সামনে দিয়ে সেকেন্ডে প্রায় ২০০ কিলােমিটার বেগে হরে পার্কার। ১৯৯২ সালে নাসা আউটার প্ল্যানেট্রস সােপর স্রোব নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পের আওতায় তিনটি বেশ চ্যালেঞ্জিং মিশনের পরিবনাে করা হয়। ইউরােপণ আলটির নামে যে মহাকাশখানমি পাখনা করা হয়েছিল, সেটা ২০০৩ সাজো গতির শাহ ইউৱাপাতে পাঠানোর কথা ছিল।

 ঐ মিশনটির উদ্দেশ্য ছিল ইলোপাৱা হে ঢাকা পৃষ্ঠর নিচে তরল পানি আছে কি না, সেটা এবং সেখানে প্রাণের উপযােগিতা যাচাই করা। দ্বিতীয় মিশনটির নাম ছিল দুটো কুইপার এথেস। সেটি উৎক্ষেপণের কথা ছিল ২৫.৪ সা৮ে ডিসেম্বর। খরচ বেশি। হলেও তথধ্যে প্লটোৰ গ্রহের মর্যাদা ছিল। তাই সৌরঙ্গশরে একেবারে শেষ প্রান্তে একটা মঙ্গকাশযান পাঠানোর আইডিয়াটা একেবারে খারাপ খ্রিণ না৷ তৃতীয় মিশনটি ছিল লােলার প্রােব। 

২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে এটি উইক্ষেপণের কথা ছিল। সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে তিন সৌর বাসাণ সামান্য দূর থেকে এটি সূর্যকে পর্যবেক্ষণ ৰে, সূর্যের ভরােনা ও সােরবায়ুর গঠন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে, এমনটাই কথা ছিল। এই মিশনে বুধ গ্রহের পরিবর্তে নিজের বৃহস্পতির গাভিটি আসি বাবারের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এটা মিলে দৈর্ঘ্য অনেক বেশি বাড়িয়ে দিয়েছিল। ২০০৩ সালে নাসা পুনঠিনের অংশ হিসবে এই মিশনগুভেন্য বিভিন্ন কারণে বাতিল করা হয়।

কথিত মিশনগুলােকে নতুনভাবে পরিকল্পনা করা হয়। ২০১০ সালের দিকে আগের সােজর প্ৰেৰ মিশনটিকে সােলর teণৰ প্লাস নামে অপেক্ষাকৃত কম রাসা। একটি মিশনের আওতায় আনা হয়। বৃহস্পতির জাটি অ্যাসিষ্ট্রের পরিবর্তে এবার দুধ হয় গ্র্যাভিটি হাসিষ্ট ব্যবহার হবে। লোগোর মতো সূর্যের অত কাছে, মহাশয়ানটিকে না পাঠানাের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর কারণ হচ্ছে, সূর্যের যত কাছে একটা মহাকাশযানকে পাঠানো হবে, তা থেকে যানটিকে বাঁচানাের জন্য এই বেশি আধুনিক এবং খরচে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। চেষ্টা করা হচ্ছিল, এর কমিয়ে কীভাবে এ মিশনটিকে এগিয়ে নেওয়া যায়। সব মিলিয়ে এই মিশনের পেছনে ঘর মুছ, সে বিলিয়ন ডলার।

গত বহরের মে মাসে নাম অধ্যাপক ইউজিন পার্কাল্পের নামে সােলার প্রোটির নামকরণ করা হয়। পুরাে গানটির ডিজাইন এবং নির্মাণের কাজটি করেছে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের আড়াপ্লায়েড ফিজিকস লাবরেটরি। পার্কারের গতিপথ পার্কার সােলার প্রাণের যে ট্র্যান্সার বা সতিপথ, তার জন্য উক্ষপণের সময় অনেক বেশি মােন্টোমের ভরবেগ প্রয়োজন ছিন। সে গুনা পল্লির অংক্ষেপণ গ্র হয়েছে ডেন্ট ফোর হেভি রকেট ব্যবহার করে। 

১২ আগষ্ট রাত সাড়ে তিন রূপ ক্যানাভেল এফোর্স স্টেশন থেকে যখন মহাকাশযানটিতে উৎক্ষে লা হচ্ছে সুন সেবনে ইউনি পার্কও ছিলেননিজের চোখেই দেখেছেন এই ঐতিহাসিক ঘটনা। পাকারের প্রাথমিক মিশন ৭ বছর ধরে চলরে। এই ৭ বছরে এটি সূর্যের চারপাশে উপএক বশপথে মােট ২৪ বার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করবে। এই পুৱা সময়ে কিন্তু সূর্য থেকে এর দূরত্ব সমান হবে না। এর পথ ক্রমেই ছোট হতে থাকবে। 

সূর্যের কাছাকাছি যাওয়ার জানা এটি বুধ গ্রহের ঘাটি আসি ব্যবহার করবে। একটা গ্রহের খুব কাছ দিয়ে অতিক্রম করে, দুটি মহকহ বলবে বাহার কথার মাধ্যমে একটা মহাকাশযান হন! নিজের গতিবেগকে বাড়িয়ে কাে: কিংবা দিক পরিবর্তন মুরে, সেই ব্যাপারটিকে প্র্যাভিটি আসি বলা হয়। প্রায় প্রতিটি মহাশয়ই নিজের জানি হbনার জন্য এ মজটি করে থাকে। পারি বুধ হল কায় গিয়ে উড়ে ময়ান্ন মালাম সাত বছরে টি গ্র্যাভিটি অসিষ্ট ব্যবহার করবে নিরে কক্ষপথ পরিবর্তনের জন্য। ৱৈ বর্তমানে বুধ গ্রহের দিকে যাচ্ছে। 

আগামী ৩ লাস্কায় এটি প্রথমবারের মত বুধ হেঃ কাছ দিয়ে ঢাল যন্ত্র এক গ্ৰথমবায়ের মুহতা বুধের মহককে ব্যবহার কার সূর্যের চারদিকে নিজের যে উপবৃত্তাকার কক্ষপথ, সেটিতে প্রবেশ করবে। এই বক্ষলাহ সূর্যকে হ্রদক্ষি, শত গানটির সময় লাগপত্র ১৭০ নিন, যা কিনা লধর প্রদছিশকানের দুই তৃতীয়াংশ। বুৎ সূর্যকে যে সময়ে সুবার প্রযুিণ করবে, পার্কার একই সময়ে চিন্তার সূর্যকে [রে শ্বাসবে। কার প্রথমবারের মতাে সূর্যের কাছাকাছি যাবে এই বছরের নভেম্বরের তারিখে। এই সময়ে সূর্য থেকে পার্কার ২৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন কিলােমিটার (৮০ লাখ কিমি) দুরে থাকবে। 

সর্বশেষ বার, ২০১৪ সালে যখন এটি সপ্তমবারের মতাে বুধ গ্রহের কাছ দিয়ে যাবে, তখন বুধের মহাকর্ষকে ব্যবহার সুর এটি নিজের কক্ষপথকে কমিয়ে ৮৮ দিনে নিয়ে আসবে। এই কক্ষপথে থাকার সময়ই পার্কার সূর্যের সবচেয়ে কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে। এটি সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৪ দশমিক ১৩ মিলিয়ন কিলোমিটার কাছ দিয়ে যাবে, আর সে সময়ে এর বেগ সেকেন্ডে ২০০ কিলোমিটারের বেশি হবে। 

এই দূরত্বটা এত কিম যে, এই অঞ্চলে পার সৌরবায়ুর পতি সাবসনিক থেকে সুপারসনিক হয়ে যাওয়ার ব্যপারটাকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। পাশাপাশি উচ্চশক্তির বিভিন্ন কণা, যেগুলাে কেবল সূর্য থেকেই বের হচ্ছে, সেগুলাে নিয়ে সেন্সর ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করতে পারবে? বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ সূর্যের এত কাছাকাছি যে একটা মহাকাশযানকে পাঠানাে হচ্ছে, এর পেছনে বড়সড় কারণ আছে বৈকি। 

আমরা পৃথিবী থেকেও চাইলে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করতে পারি। পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে, এমন কোনাে স্যাটেলাইট থেকেও সেটা করা যায়। নাসার সোলার ডাইনামিকস অবজারভেটরি (Sto) সেটাই করছে। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। উচ্চশক্তি যেসব কণা সূর্য থেকে পৃথিবীতে আসে, সেসব কণা মাঝপথে মহাকাশের অন্যান্য উৎস থেকে আসা কণার সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া | করে। 

এ ছাড়া একই রকম কণা মহাকাশের অন্যান্য উৎস থেকে তো আসেই। শুধু সূর্য থেকে আসা কণাগুলােকে বিশ্লেষণ করার জন্য সূর্যের খুব কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে পারলে ভালাে হয়। এ ছাড়া সূর্যের চুম্বকক্ষে, করােনার উচ্চতাপমাত্রার পেছনের কারণ, সৌর প্লাঝামার উৎপত্তি ও গঠন, সৌরবায়ুর | উচ্চগতির কারণ এই ব্যাপারগুলাে নিয়ে অনুসন্ধান করার জন্য সূর্যের খুব কাছাকাছি যাওয়ার ফিল্প নেই। 

মানবজাতির সামনে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হলাে, আমরা চাইলেও অন্য কোনাে ক্ষন ছাছি গিয়ে পরীক্ষা- নিরীক্ষণ করতে পারব না। আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র একটাই—সূর্য। কাজেই মহাকাশের অনা অনেক নক্ষত্র কীভাবে তৈরি হয়েছে, বিবর্তিত হয়েছে, এদের গঠন কেনে, চারপাশের মণ্ডল কী নিয়ে তৈরি—এই ব্যাপারগুলাে নিয়ে গবেথণা করার ক্ষেত্রে সূর্য অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সূর্য প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন বছর আগে তৈরি একটা মেইন সিকোয়েন্স স্টার। আমাদের যে ছায়াপথ—মিল্কিওয়ে—সেখানে সূর্যের মতাে তারার সংখ্যা প্রায় ২০ বিলিয়ন। 

এক সূর্যকে নিয়ে ভালােভাবে জানতে পারলে আমরা আমাদেy গ্যালাক্সির প্রায় ১০ শতাংশ। ভ্ৰান্নাকে ভালােভাবে জানত্রে পাত্র। অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি সূর্যকে নিয়ে তথ্য সংগ্রহের জনা পার্কার সােলার প্রােবে বেশ কিছু অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। এসব যন্ত্রপাতিকে সূর্যের ভালো তোপ এবং রেষ্টিয়েশন থেকে রক্ষা করার আনা যানটির সামনে রয়েছে সাড়ে ৪ ইঞ্চি পুরু বর্ণন-কার্বন অস্পােজিট শিল্প। এই শিল্প বা ঢালটি প্রায় ১ হাজার ৪০০ র্ভিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পর্যন্ত সঙ্ক করতে পারবে। পার্কার যখন সূর্যের খুব কাছাকাছি পৌঁছাবে (হেলিওস-বি থেকে প্রায় ৭ গুণ কাছে}, তখন এই শিশুটির ছায়া পেছনের সব বৈজ্ঞানিক হলপাটিকে মাত্র ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখবে। 

৮ ফুট ব্যাসের ষড়ভুজাকৃতির এই শিশুটি কিন্তু বেশ হালকা, ওজন মাত্র ২৭ কেজি। পার্কার যেহেতু প্রচণ্ড বেগে সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে, সে জন্য পুরাে যানটির ওজন কম থানা জরুরি ছিল। শিশুটির ওপর আলুমিনিয়ামের সাদা একটি গুরর প্রলেপ দেওয়া আছে। ফলে সূর্যের আলাের বেশির ভাগই এটি প্রতিফলিত করতে পারে। যানটি তাপমাত্রা কম রাখার জন্য এটি বলা হয়েছে। সােলার বেড়িতে পাওয়ার সরবরাহর জন্য সোলার প্যানেল আৰহর করা হয়েছে। 

বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহের জন্য পার্কারে চারটি প্রধান অনুসন্ধান-উপযােগী সেটাপ রয়েছে। ১. ফিসএক্সপেরিমেন্ট (FIFI.Ds): এই ইনমেন্টগুলো বহার করে বিদ্যুম্বকীয় তরঙ্গ ও গে, পয়েন্টিং ফ্লাক্স, অ্যাবসলিউট প্লাজমা ঘনত্ব, ইলেকট্রন টেম্পারেচার ও রেডিও এমিশন সরাসরি পরিমাপ করা হবে। ২, ইন্টিগ্রেটেস্থ সায়েন্স ইনভেস্টিগেশন অব দ্য সান। (IS@IS) :সূর্য থেকে আসা উচ্চশক্তির (১০ কিলাে ইলেকট্রন ভোট হােকে ১০০ মেগা ইলেকট্রন ভােল্ট) ইলেকট্রন, প্রোটন ও ভারী আয়ন টুপি করার মাধ্যমে সেগুলোকে আলাদা । এবং সৌরবায়ু ও করােনার গঠনের সঙ্গে এদের সম্পর্ক কী, সেটা অনুসন্ধান করা হবে এই যুগের মাধ্যম।

 ৩, এই-মিশু ইমজার ফর সােলার প্লেব (WISPR) : পার্কারে সােলার স্রোবে জবি তােলার জনা কেবল এই একজোড়া টেলিস্কোপ রয়েছে। এরা শুরাণ সেয়মলেঃ প্রেহরের দিকের ছবি তুলবে। এ ছাড়া পার্কাৱের গতিপথে যখন সৌরবায়ু, শক বা অন্য কোনাে উল্লেখযােগ্য কিছু দেখা যাবে, সেগুলাের ছবিও তুলবে এই ক্যামেরা। অন্য সব যন্ত্র যেখানে সৌরমণ্ডলের তথ্য সংগ্রহ ও বৈশিষ্ট্যগত বিশ্লেষণ করবে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে। সেখানে উইসপার ছবি তােলার মাধ্যমে ওই বিশ্লেষণগুলােকে পূর্ণতা দেবে। 

৪. সােলার উইন্ড ইলেকট্রনস আলফাস অ্যান্ড প্রােটনস (SWEAP) : এ যন্ত্রটি সৌরবায়ুতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে। থাকা উপাদানগুলাে—ইলেকট্রন, প্রােটন ও হিলিয়াম আয়ন—গণনা করবে এবং এদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, যেমন গতিবেগ, ঘনত্ব, তাপমাত্রা ইত্যাদি নির্ণয় করবে) সূর্যের বুকে আমাদের চিহ্ন! পার্কারের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি প্রাথমিকভাবে আমাদের যেসব তথ্য পাঠাবে, সেখান থেকে হয়তাে খুব বেশি কিছু বুঝতে পার। যাবে না। তবে এসব তথ্য যখন বিশ্লেষণ করা হবে, তখন শতাব্দী ধরে সূর্যকে নিয়ে আমাদের যত সব প্রশ্ন, তার অনেকগুলােরই উত্তর পাওয়া যাবে।

 আগামী ৭ বছর জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানীদের চোখ থাকবে সে জন্য পার্কারের দিকে। * এ বছ৷ | মার্চের দিকে নাসা সাধারণ মানুষকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল নিজেদের নামকে সূর্যে পাঠাতে। প্রায় ১১ লাখ মানুষ নিজেদের নাম জমা দিয়েছিল। এই নামগুলো একটা মেমরি কার্ডে রেখে সেটাকে পার্কারের হাই গেইন। অ্যানটেনাটির নিচে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে আছে ইউজিন পার্কারের ছবি, আর তাঁর ১৯৫৮ সালের সেই বিখ্যাত পেপারটির কপি। গ্রিক মিথলজিতে ইকারাস চেয়েছিল অনেক উঁচুতে উড়তে। 

উড়তে উড়তে সূর্যের কাছাকাছি চলে যাওয়াতে তার মােমের তৈরি ডানা গলে যায়, আর ইকারাস পড়ে যায় সাগরের পানিতে। মানুষ এভাবে স্বপ্ন দেখেছে অনেকবারই। সূর্যের কাছাকাছি যাওয়ার স্বপ্ন। ইকারাস পারেনি, তাই বলে কি মানবজাতি থেমে থেকেছে! বিজ্ঞানের অগ্রগতি আর প্রযুক্তির উৎকর্ষে সূর্যের বুকে হাত রাখাটাও এখন মানুষের নাগালে। 

চলে এসেছে। পার্কার যখন সূর্যের উত্তপ্ত প্লাজমার মধ্য দিয়ে যাবে, তখন আমরা বুক ফুলিয়ে বলতে পারব, আমরা মানুষেরা সূর্যের বুকে নিজেদের নাম লিখে দিতে পেরেছি । সূত্র : নাসা,

https://www.nasa.gov/content/goddard/parker-solar-probe/

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ